বাঁশ হলো এমন একটি জিনিস যেটা গ্রাম হোক বা শহর যেকোনো জায়গাতেই বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে ব্যবহার হয়ে থাকে।
তাই, বর্তমান সময়ে এরকম প্রচুর কৃষক রয়েছেন যারা বাঁশ চাষ করেও ভালো মুনাফা লাভ করছেন।
যেভাবে আজকাল কৃষকেরা বিভিন্ন ধরণের চাষ গুলো এবং বিভিন্ন ধরণের আলাদা আলাদা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাষ করছেন, ঠিক সেভাবেই আপনিও কিছু লাভজনক চাষ কার্য করে ভালো মুনাফা আয় করতে পারবেন।
আর এক্ষত্রে, আপনার জন্য বাঁশ গাছ চাষ করাটা একটি দারুন এবং লাভজনক কৃষি আইডিয়া প্রমাণিত হতে পারে।
বাঁশ চাষ পদ্ধতি তেমন জটিল প্রক্রিয়া না তবে এই চাষে অল্প সময় অবশই লেগে থাকে।
এমনিতে বাঁশের চাষ করার ক্ষেত্রে অধিক সময় লেগে থাকলেও এর থেকে ভালো পরিমানে মুনাফা আয় করা সম্ভব।
এছাড়া, বাঁশ এর চাষ করার প্রক্রিয়া অন্যান্য বিভিন্ন ফসল গুলোর চাষ প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেকটা সহজ।
আর তাই, বর্তমান সময়ে প্রচুর কৃষকেরা এই বাঁশের চাষ করতে প্রচুর রুচি রাখতে দেখা যাচ্ছে।
তাই, যদি আপনিও বাঁশ চাষ করার পদ্ধতি জেনেনিতে চাইছে, এবং এর থেকে ভালো লাভ আয় করার কথা ভাবছেন, তাহলে নিচে এর বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণটা বিস্তারিত ভাবে বলে দিয়েছি।
সাথে আমরা আপনাদের জানাবো যে, বাঁশ গাছের চাষ করে আপনারা কতটা লাভ আয় করতে পারবেন।
১. বাঁশ চাষ শুরু করার আগে এই বিষয় গুলো জেনে রাখুন
বাঁশের চাষ শুরু করার জন্য প্রথমে বাঁশের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিষয়ে খবর নেওয়া আবশ্যক।
যেমন বাঁশ চাষ করার জন্য কিধরণনের জমির দরকার, চাষ সম্পূর্ণ হতে কত সময় লেগে থাকে, সরকার থেকে পাওয়া সাহায্য ইত্যাদি।
এছাড়াও বাঁশের বিভিন্ন প্রকার গুলোর বিষয়ে যাচাই করা এবং সেই বিষয়ে জ্ঞান রাখাটা খুবই জরুরি একটি বিষয়।
আপনার অঞ্চলে কোন ধরণের বাঁশের চাহিদা বেশি এবং আপনি বাজারে কোন ধরণের বাঁশ বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করতে চান সেই হিসাবে বাঁশের প্রকার বেছে চাষ শুরু করা দরকার।
ভারতে প্রায় ১৩৬ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে ১০ প্রজাতির বাঁশ বেশি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে নিশ্চিত করে নিতে হবে যে আপনি কোন প্রকারের বাঁশ চাষ করলে সেটা লাভজনক হবে এবং বাজারে অধিক পরিমানে বিক্রি করা যাবে।
২. বাঁশ চাষ সম্পূর্ণ হতে কত সময় লাগে ?
বাঁশের চারা লাগানোর প্রক্রিয়া জুলাই মাসেই দিকে হয়ে যায়।
কিন্তু অন্য সব ফসলের মতো বাঁশের খেতি সিজেন হিসাবে বছরে বছরে করা হয়না, কারণ বাঁশ বড়ো হতে প্রায় অনেক সময় লেগে যায়।
তাই বাঁশের চাষ শুরু করার জন্য আপনার মধ্যে ধর্য্য থাকা অনেকটাই জরুরি।
বাঁশের চাষ সম্পূর্ণ হতে মোটামুটি তিন থেকে চার বছর সময় লেগে থাকে। তাই আপনি বুঝতেই পারছেন যে এই চাষ প্রত্যেক বছরে নতুন করে হয়ে থাকেনা।
প্রায় চার বছর পর বাঁশ কাটার জন্য তৈরি হয়ে যায়।
বাঁশের চাষ করার জন্য আপনাকে বার বার বাঁশের চারা লাগাতে হয়না।
এমনিতে এই চাষ সম্পূর্ণ হতে অনেক সময় লাগলেও এর থেকে লং টার্ম রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
কেননা, এক হেক্টর জমিতে প্রায় ১৫০০ বাঁশের চারা লাগানো যায়। তাই, বাঁশ গাছ সম্পূর্ণ রূপে তৈরি হয়ে যাওয়ার পর একেবারে লক্ষ লক্ষ টাকা সেগুলোকে বিক্রি করে আয় করতে পারবেন।
৩. বাঁশের চারা কিভাবে রোপন করা হয় ?
বাঁশের চারা রোপন করার প্রক্রিয়া প্রায় ধানের চারা রোপনের প্রক্রিয়ার মতোই হয়ে থাকে।
এক হেক্টর জমিতে ৪*৪ মিটারের দুরুত্বে বাঁশের চারা রোপন করা হয়ে থাকে।
যেই জাগায় চারা লাগানো হয়ে থাকে সেই জাগায় বৃষ্টি আসার আগে আগে কিছু মিটারের গর্ত বানিয়ে সেখানে চারার রোপাই করা হয়ে থাকে।
বাঁশের চারার দূরত্ব তিন থেকে চার মিটারের হওয়ার ফলে এর মধ্যের জায়গায় অন্য ফসলের চাষ করা সম্ভব।
যেমন তিল, চানা, আদা, হলুদ, জোয়ার, গম,মুগ, উরদ, সরশ ইত্যাদি এই ধরণের অন্যান্য ফসল গুলোর চাষ একসাথে করে কৃষকরা বছরে ভালো টাকা মুনাফা কামাতে পারে।
৪. কোন ধরণের কীট পতঙ্গ বাঁশের জন্য হানিকারক ?
বাঁশের চাষ করার সময় অনেক সাবধানতার সাথে ফসলকে কীটপতঙ্গ ইত্যাদির থেকে সুরক্ষা করে রাখতে হয় যাতে এর বৃদ্ধিতে কোনো রকম সমস্যা না আসে।
অনেক কীটপতঙ্গ থাকে যেগুলো ফসল নষ্ট করে দেয় কিন্তু এর মধ্যে কিছু বেশি ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ রয়েছে যেগুলো বাঁশের জন্য হানিকারক।
যেমন এফিডস, তরাজু, ডিমক, বিটল কারো ইত্যাদি।
৫. বাঁশ চাষে সরকার থেকে পাওয়া সাহায্য ?
ভারতে বাঁশের উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে সরকার থেকে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন সাহায্য নতুন করে আগে বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমান সময়ে কৃষকদের বাঁশের চাষ করতে উৎসাহিত করার জন্য কেন্দ্র সরকার থেকে বেম্বু মিশন শুরু করা হয়েছে যাতে উৎপাদন বাড়ানো যায়।
এক্ষেত্রে, সরকারি নার্সারি গুলোর থেকে বিভিন্ন প্রকারের বাঁশের চারা বিনামূল্যে দেওয়া, বিভিন্ন সাবসিডি দেওয়া ইত্যাদি এর অন্তর্গত দেওয়া হয়ে থাকে।
বাঁশের চাষ সম্পূর্ণ হতে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে থাকে এক্ষেত্রে তিন বছরে ২৪০ টাকা করে প্রতি প্লান্টে খরচ হয়ে থাকে। আর তাই সরকার থেকে ১২০ টাকা প্রতি গাছে দেওয়া হয়ে থাকে এবং সাবসিডি হিসাবে পাওয়া এই টাকা ৪০ বছর পর্যন্ত পাওয়া যায়।
বাঁশের চাষ শুরু করার জন্য ব্যবহার হওয়া মুলধনের ৫০ শতাংশ সরকার থেকে প্শোধ করা হয় এবং ৫০ শতাংশ কৃষক নিজের থেকে শোধ করে থাকে।
কিন্তু নর্থইস্ট অঞ্চলের ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া মূলধনের ৬০ শতাংশ সরকার থেকে শোধ করা হয় এবং ৪০ শতাংশ কৃষকরা শোধ করে থাকে।
৬. কি কি কাজে বাঁশের ব্যবহার করা হয় ?
বাঁশের বিভিন্ন রকম ব্যবহার হয়ে থাকে,
- খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাঁশের কোমল অংশ সব্জি হিসাবে রান্না করে খাওয়া হয়।
- বাঁশের বিভিন্ন ফার্নিচার বানানো হয়ে থাকে ।
- ঘর বানাতে বাঁশের ব্যবহার অধিক পরিমানে করা হয়।
- বাঁশ দিয়ে জলের বোতল, গ্লাস, প্লেট কাপ, চামচ,পাত্র ইত্যাদি বানানো হয়ে থাকে।
- ঘর সাজানোর জন্য ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন হস্তশিল্প বানানো হয়ে থাকে।
- এর মধ্যে ঔষুধিও গুন থাকায় অনেক রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বাঁশ।
- বাঁশ গাছের পাতা পশুর চারা হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৭. বাঁশ চাষে কতটাকা লাভ হয়ে থাকে ?
বাঁশের চাষ করে কৃষক লাখ টাকার ওপরে আয় করে থাকেন।
যদি এক হেক্টর জমিতে ১৫০০ প্লান্ট লাগানো হয়ে থাকে তাহলে তিন বছরে ২৪০ টাকা প্রতি প্লান্টে সরকার থেকে দেওয়া হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে আপনার মোট খরচের আধা সরকার থেকে সাবসিডি হিসাবে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
চার বছর পর যখন বাঁশ এর ফসল সম্পূর্ণ রূপে তৈরি হয়ে যাবে তখন, এক হেক্টর থেকে প্রায় ৩ থেকে ৩.৫ লাখ টাকা আপনার কামাই হয়ে থাকবে।
বাঁশের চাষ করার জন্য বার বার প্লান্ট লাগানোর আবশ্যক হয়না, কারণ বাঁশের প্লান্ট প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত চলে যায়।
ফলে সরকার থেকে পাওয়া সাবসিডিও বন্দ হয়না এবং বছরে বছরে পাওয়া যায়।
বাঁশের প্লান্ট কিছু মিটার দূরত্বে লাগানোর ফলে এর মধ্যের ফাঁকা জায়গায় অন্য ফসল এর চাষ করেও প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আলাদা ভাবে কামাতে পারে।
তাই বাঁশের চাষ একটি লাভবান চাষ হিসাবে বলা যেতে পারে।