Life Style

কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায় ? কেন ভালোমানুষ হব ?

কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায় ?

মান আর হুশ এই দুটো শব্দ দিয়ে মানুষ শব্দটি গঠিত। চেহারার কথা বলতে হলে দুটো পা, দুটো হাত, একটা মাথা থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না।

অনেক প্রাণীর দুটো পা আছে, দুটো হাত, আর একটা মাথা থাকে, প্রাণ থাকলেই যেমন প্রাণী হওয়া যায়, তেমন মান আর হুশ থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না।

কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেছিলেন, “গোটা মানুষের মানে চাই।”

আসলে মানুষ কে তা না জানলে ভালোমানুষ হয়ে ওঠা যাবে না।

খুব সহজ করে বলতে গেলে যার আত্মসম্মানবোধ থাকবে, মানবিক বৈশিষ্ট্য (দয়া, প্রেম, ক্ষমা, সহনশীলতা) থাকবে, ভালো খারাপ বিচার করার ক্ষমতা থাকবে, তাকেই মানুষ বলা হবে।

ভালোমানুষ আর মানুষের মধ্যে যে শুধুই অর্থগত পার্থক্য থাকে তা নয়, আচরণ গত অনেক পার্থক্য থাকে।

নিজেদের জানতে হবে, কেন ভালোমানুষ হব ? মানুষ আর ভালোমানুষের তফাৎ কি ? এর উত্তর না জানলে, ভালোমানুষ হয়ে ওঠা যাবে না।

Post Contents

কেন ভালোমানুষ হব ??

১) নিজেকে সৎ, চিন্তাশীল, আদর্শবান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য

২) সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য

৩) সমাজের বাকি মানুষকে অনুপ্রেরণা  যোগানোর জন্য

৪) সমাজের উপকার করার জন্য

৫) মানুষের  দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য

৬) সমাজের বাকি মানুষের আদর্শ হওয়ার জন্য।

কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায় ?

মানুষ আর ভালোমানুষের তফাৎ অনেক। একজন ভালো মানুষ কে সমাজের অন্যান্য মানুষ আলাদা নজরে দেখেন, তাকে সকলে সম্মান করেন।

কিন্তু কীভাবে ভালোমানুষ হওয়া যায় ? কিংবা সত্যি কি আজকের দিনে ভালো মানুষ হওয়া আদৌ সম্ভব ?

পাঠকের হয়তো মনে হতেই পারে, না, আজকের দিনে সম্পূর্ণ রূপে ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব নয়, ভালো মানুষ হয়ে এই সমাজে নিজেকে টিকিয়ে রাখা  অসম্ভব।

তবে বলে রাখি, ভালো মানুষ হওয়া অতটাও কঠিন কিছু নয়, চাইলেই যে কেউ হয়ে ওঠতে পারে একজন ভালো মানুষ।

কোন কোন বৈশিষ্ট্য গুলো নিজের মধ্যে ধারণ করলে একজন সাধারন মানুষ হয়ে উঠবে ভালো মানুষ ?

কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলি কেউ যদি জীবনে মেনে চলতে পারে তাহলেই তার মানসিক পরিবর্তন ঘটবে।

সে আগের থেকে অনেক ভালো এবং চিন্তাশীল হয়ে উঠবে।

এইভাবে ধাপে ধাপে তার মানসিক পরিবর্তন ঘটতে থাকবে। কি এইভাবে ধাপ গুলি, দেখে নেওয়া যাক।

১) নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে, নিজেকে জানতে হবে

উপরের বিষয়টি দেখেই হয়তো পাঠক চমকে উঠছেন। ভাবছেন, ভালো মানুষেরাও নিজেকে নিয়ে ভাবে ? তারা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে অপরের জন্য। তাদের মূলমন্ত্রই হল, “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।”

সে কথা  সত্য। কিন্তু বিষয়টা হল, পরোপকার করার মানে এই নয় যে নিজেকে অবহেলা করতে হবে।

বরং নিজেকে ভালোবাসতে পারা, নিজেকে চিনতে পারা, নিজেকে বুঝতে পারাই হলো ভালো মানুষ হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ।

যারা মানুষ হিসাবে সৎ, আদর্শবান সবসময়ই অন্যরা তাদের ভালোবাসে, এবং প্রশংসা করে।

কিন্তু অনেক সময় কাজের প্রাপ্য সম্মান না পেলে, লোকের ভালোবাসা না পেলে, হতাশাগ্রস্থ হয়ে যায়।

ফলে নিজেদের চিন্তাভাবনা এবং উদ্যোম হারিয়ে যায়।

কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রশংসা বা হতাশা কখনোই যেন নিজেদের লক্ষ্যভ্রষ্ট না করে।

সফলতায় বিহ্বল হলেও চলবে না আবার ব্যর্থতায় হতাশ হলেও চলবে না।

তার জন্যই নিজেকে জানতে হবে, নিজেকে বুঝতে হবে, নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

২) নিজের দুর্বলতা গুলি বুঝতে হবে এবং দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে

যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হল সমস্যাটি শনাক্ত করা, সমস্যা কী তা যদি জানা যায় তাহলে তা সমাধান করতে খুব বেশী কষ্ট হয় না।

যদি জীবনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে তা জীবনকে কষ্ট দেয় কিন্তু যদি ওই সমস্যার মূল বা উৎস যদি খুঁজে পাওয়া যায় কিংবা খুঁজে পাওয়ার পরও তার সমাধান না হয় বা মন যদি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে তাহলে, তা মনকে অনেক কষ্ট দেয়।

একই কথা কোনো মানুষের ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

একজন মানুষ কখনোই ১০০% আদর্শবান হতে পারেন না, ভুল সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হতে পারে। তেমনি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকে, খামতি থাকে, অপূর্ণতা থাকে।

এখন যদি সেগুলো কাটিয়ে উঠতে না পারা যায় তাহলে সেগুলোকে অস্বীকার করে বা গোপন করে তো কোনো লাভ নেই।

তাই নিজের জীবনের দুর্বলতা গুলোকেও চিহ্নিত করে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করতে হবে।

যদি দুর্বলতা গুলো কাটিয়ে না ওঠা যায় তাহলে তা বোঝার মতো অসহ্য হয়ে উঠবে।

৩)  নিজেদের রাগ কমাতে হবে

রাগ বা ক্রোধ হল একটি খারাপ জিনিস, যা অল্প অল্প করে আমাদের কে অন্ধকার,  ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।

যখন আমাদের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে বা  যখন আমরা কারো কাছে অপমানিত হই বা কেউ আমাদের আঘাত করে  তখন  স্বাভাবিকভাবেই আমরা রেগে যাই, এবং ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ি। রাগের মাথায় এমন কিছু করে বা বলে বসি, যা হয়তো করা বা বলা অনুচিত ছিল।

নিজেদের এই আচরণে  নিজেরাই অপরের কাছে অনেক ছোট হয়ে যাই, এবং ভবিষ্যতে অনেক অনর্থক বিপদও ডেকে আনি।

তাই নিজের  রাগকে নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এটি একটি নেতিবাচক মানসিক অনুভূতি যা আমাদের মনের ওপর দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে।

নিজেদের ক্রোধ থেকে  বাঁচার প্রধান উপায় হলো ক্ষমাশীল হয়ে ওঠা, নিজের মানসিক চিত্তকে সংযত করা।

তবে এটা বলা যতটা সহজ, নিজেদের জীবনে তার বাস্তব প্রয়োগ ঠিক ততটাই কঠিন।

কিন্তু তাই বলে তো নিজেদের হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

নিজেদের মনের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে তুলে দেওয়া যায় না। তাই যত নিজেদের মনের সঙ্গে  দ্বন্দ বা লড়াই চালিয়েই রাগ বা ক্রোধকে দমন করতে হবে।

তা না হলে ক্রোধ নিজেদের মনকে  ধীরে ধীরে অশান্ত করে তুলবে।

কিন্তু নিজেকে ভালোমানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে গেলে নিজেদের ধীর-স্থির-শান্ত করে তুলতে হবে।

৪) নিজেদের বিনয়ী এবং মার্জিত করে তুলতে হবে

আমরা অন্যের সম্পর্কে যা ভাবি, তার প্রতি আমাদের আচরণ সেইরকম হয়।

যাকে ভালো লাগে তার প্রতি ভালো আচরণ যাকে খারাপ লাগে তার প্রতি খারাপ আচরণ।

কিন্তু মনঃ রাখতে হবে কখনোই কারোর সাথে এমন আচরণ করা ঠিক নয় যা তাকে আঘাত দেবে।

সকলের সঙ্গেই বিনয়ী হয়ে মিশতে হবে। একজন ভালোমানুষের লক্ষন সে সবার সঙ্গে বিনয়ী হয়ে মিশবে।

নিজেদের থেকে নীচু কাউকে বিনয় প্রদর্শন বা সম্মান দেওয়া তাকে ভয় পাওয়ার জন্য নয়, অপরকে সম্মান দিলে তবে নিজে সম্মান পাওয়া যায়।

অনেকে আবার বিনয়ী কিংবা মার্জিত আচরণকে মানুষের দুর্বলতা হিসাবে ভাবে।

যদি একজন সবল মানুষ বিনয়ী হয় তাহলে বুঝতে হবে তিনি প্রকৃতই ভালোমানুষ।

কেউ যদি সবসময় কারো প্রতি বিনয়ী থাকে, বা মার্জিত আচরণ করে, তাহলে তার সমালোচনা না করে বরং তার থেকে নিজেদের কিছু শেখা উচিত।

বিনয়ী ভাব মানুষের  সবচেয়ে বড় শক্তিমত্তার জায়গা।

৫) অপরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, এই কথাটা ভুলে গেলে চলবে না।

নিজের উন্নতির সাথেও সমাজের কথা, সমাজের মানুষের কথা ভাবতে হবে।

শুধু নিজের সফলতার সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে গেলে চলবে না।

নিজেদের  আশেপাশের সবাইকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়ে একা এগিয়ে গিয়ে কি খুব বেশি লাভ আছে ? নেই।

কারণ মানুষ একা একা বাঁচতে পারে না।

নাম, যশ, খ্যাতি এগুলি উপাধি মাত্র, জীবনের সঙ্গী হয়।

খ্যাতি-সম্মান-প্রতিপত্তির মালিক হয়েও কি লাভ  যদি আপনজনদের সাথে একটি দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়।

সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও দেখা দেবে একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা।

সাফল্যমণ্ডিত জীবনও কখনো কখনো হতাশা, অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে।

এ কারণেই, শুধু নিজেকে নিয়ে পড়ে থেকে আত্মকেন্দ্রিক হলে চলবে না, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে আশেপাশের পিছিয়ে পড়া মানুষের দিকে।

নিজেদের চেষ্টা করতে হবে, চারজন সাহায্যপ্রার্থীর মধ্যে থেকে যদি একজনকেও সাহায্য করতে পারা যায়, সেটি হবে আদর্শের প্রতিফলন।

আরো একটি কথা, কাউকে সাহায্য করার মানে নিঃস্বার্থ উপকার করে ফেলা তা নয়।

আজ যাকে সাহায্য করা হল, ভবিষ্যতে হয়তো কোনো একদিন সেও সাহায্যের কথা মনে রেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।

৬) নিজেদের অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে

বর্তমান সমাজে কেবল নিজেদের দুঃখ গুলোই বেদনাদায়ক আর বাকিদের দুঃখ গুলো অনুভূতিহীন।

নিজেদের  আশেপাশে কত মানুষ দুঃসহ দিনযাপন করছে, তা ভেবে দেখারও সময় নেই।

কারণ আমরা নিজেদের এতটাই ব্যস্ত করে রেখেছি যে পাশের মানুষটি কেমন আছে তা জানার প্রয়োজন বোধ করি না।

অনেকেই শুধু নিজের সামান্য দুঃখটাকে প্রচার করে বেড়ায়। মনে রাখতে হবে “তবু সে দুঃখ বড়ো নয় তারি পথে যে হাঁকিয়া ফেরে”.

আসলে এই সমাজে সবাই কেমন যেন প্রতিযোগিতানির্ভর হয়ে উঠেছে, সফলতার দৌড়ে নিজেদের মানবিক অনুভূতি গুলো বিসর্জন দিয়ে সাফল্যের শিখরে উঠতে ব্যস্ত। প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রতিযোগিতা।

কে কত বেশি খারাপ আছে, তা প্রচার করার প্রতিযোগিতা!

যে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবে, সেই পাবে কিছু মিথ্যে মানুষের সহানুভূতি। জীবনটা তার সার্থক হয়ে যাবে এই তার মানসিকতা।

নিজেদের এই জাতীয় মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যদের আবেগ-অনুভূতির দিকে যত্নশীল হতে হবে।

তাদের আবেগ-অনুভূতিকে, তাদের অবস্থা-পরিস্থিতি-পারিপার্শ্বিকতা গুলোকে উপলব্ধি করতে হবে।

কেবল তাহলেই আমরা প্রকৃত সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে পারব।

তখন অন্য কারো দুঃখ-কষ্টকে আমরা তাচ্ছিল্য করতে পারব না। বরং মনে হবে বিপদের দিনে তাদেরকে যতটা সম্ভব সাহায্য করি।

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, কীভাবে হবেন একজন ভালো মানুষ ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে সম্পূর্ণ বিস্তারিত ভাবে জানতে পারলাম।

আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন যে, ভালো মানুষের গুনের তালিকা গুলো কিভালো মানুষ কাকে বলে এবং কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়

আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।

এছাড়া, আপনাদের কাছে অনুরোধ রইলো যাতে আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button