Technology

স্মার্ট ওয়াইফাই রেফ্রিজারেটর সত্যিই কতোটা স্মার্ট?

স্মার্ট হোমে এর গুরুত্ব কতোটুকু?

এবারের দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসিউমার ইলেট্রনিক্স শো’তে স্যমসাং এবং এলজি তাদের উন্নত এবং আধুনিক ফিচার সম্বলিত নানারকম মডেলের স্মার্ট রেফ্রিজারেটর উপস্হাপন করে। এসব স্মার্ট রেফ্রিজারেটর গুলোকে নিয়ন্ত্রিত করা যায় ওয়াইফাই এর মাধ্যমে স্মার্ট অ্যাপলিকেশন দিয়ে। আর এবারের দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসিউমার ইলেট্রনিক্স শো’তে নতুন রকমের এইসব হোম অ্যাপ্লিয়ান্স বেশিরভাগ দর্শকের আকর্ষন কেড়ে নিয়েছিল। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানার চেষ্টা করব,কিভাবে এসব স্মার্ট তথা ওয়াইফাই রেফ্রিজারেটর ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে এবিষয়ে।


রেফ্রিজারেটরের ভেতর কি আছে তা দেখতে পারবেন

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসিউমার ইলেট্রনিক্স শো’তে উপস্থাপিত এসব বেশির রেফ্রিজারেটর এর ভেতর বিল্টইন ভাবে ওয়াইড অ্যঙ্গেল ক্যামেরা ফিট করা রয়েছে। আর যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী তাদের হাতের স্মার্টফোনটিকে ব্যবহার করে দেখতে পারবেন যে, তার রেফ্রিজারেটর সেই মুহূর্তে আসলে কি কি মজুদ আছে। আর এটা একজন মানুষের জন্য ব্যাপকভাবে কাজে আসবে যখন সে বাজার এর উদ্দেশ্যে যাবে।

অনেক ক্ষেত্রে আপনি এটি বলতে পারেন যে, এটা আবার কেমন ফিচার ; আমি তো আমার ফোন দিয়েই রেফ্রিজারেটর খুলে ভেতরে কী কী রয়েছে তার ছবি তুলতে পারি ; তাই না? তবে ব্যাপারটি তখন সম্ভব না যখন আপনি আপনার বাসার বাইরে রয়েছেন। যেহেতু আপনার রেফ্রিজারেটরটি একটি স্মার্ট রেফ্রিজারেটর এবং এটি ওয়াইফাই এর সাথে কানেক্টেড ; তাই আপনি আপনার বাসার বাইরে থাকলেও দেখতে পারবেন আপনার রেফ্রিজারেটর এর ভেতরে আসলে কি কি খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং আপনাকে কি কি কিনতে হতে পারে।

অনেক রেফ্রিজারেটরে আবার একটি করে টাচ মাল্টি উইন্ডো ডিসপ্লেও দেখতে পাওয়া যায়। আর এখান থেকেও আপনি চট করে দেখে নিতে পারবেন রেফ্রিজারেটর এর ভেতর আসলে কি কি আছে। আমাদের ভেতর যারা একটু বেশি অলস তাদের জন্য কাজের একটি সুবিধা পাওয়া যাবে তখন; যখন হয়ত আপনি ঘুমিয়ে বা শুয়ে আছেন তখন কিছু খেতে ইচ্ছে করল। তবে আপনি বুঝতে পারছেন না বা জানেন না আপনার রেফ্রিজারেটরে কি কি আছে সেক্ষেত্রে আপনি আপনার অ্যাপটা খুলে চট করে দেখে নিতে পারবেন।

ওয়াইফাই রেফ্রিজারেটরের টাচ স্ক্রিন

উপরে উল্লেখ করেছি যে এসব রেফ্রিজারেটর এর সাথে একটি করে টাচ স্ক্রিন ডিসপ্লে দেখা যায়। তবে এসব টাচ স্ক্রিন ডিসপ্লে থেকে কখনই আইপ্যাড বা অ্যান্ড্রোয়েড ট্যাবলেট এর মত ফিচার আশা করা ঠিক হবে না। আপনি এখানে এই ডিসপ্লেটি ব্যবহার করে বেসিক রান্না ঘরের ছোট খাট সুবিধা নিতে পারবেন, যেমন আপনি যদি এতে নানা রকম রেসিপির ভিডিও তুলে রাখেন ; এখান থেকে তা সার্চ করে দেখতে পারবেন। আপনি রান্না ঘরে বসে গান শুনতে পারবেন এমনকি মুভিও দেখতে পারবেন। তাছাড়াও ফ্রিজে তথা রেফ্রিজারেটরে কি আছে তা দেখতে পারবেন, ইতিমধ্যে তা উল্লেখ করেছি। এখানে আপনি একটি রিমাইন্ডার ক্যালেন্ডার এর মত ফিচার পাবেন, যার ফলে দেখা যাচ্ছে আপনার সেট করে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ দিনসমূহ সম্পর্কে আপনার রেফ্রিজারেটর আপনাকে জানিয়ে দেবে ; দারুন না? আর বাসার একটি রেফ্রিজারেটর এর থেকে এমন ফিচার পাওয়া যাবে, ব্যাপারটি খুবই মারাত্মক।

তবে একটা বিষয় থেকে যায় যে, অনেকে যারা ট্যাবলেট ব্যবহারে অভ্যস্থ তাদের কাছে রেফ্রিজারেটর এর এই ইন্টারফেসটি ভালো নাও লাগতে পারে। আর সে ব্যাপারটি নির্মাতা প্রতিস্ঠান তথা স্যামসাং,এলজিও স্বীকার করেছে। এবং তারা এব্যাপারে সফটওয়্যার তথা অপারেটিং সিস্টেম নির্মাতা প্রতিস্ঠান যেমন গুগলের দৃষ্টি আকর্ষন করছে। তারা জানিয়েছে গুগল যেমন স্মার্ট টেলিভিশন এর জন্য অ্যান্ড্রয়েড টিভি ওএস তৈরি করেছে। তেমনি যেন স্মার্ট ফ্রীজ এর টাচ ইন্টারফেসের জন্যেও অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে ভাবে।

রেফ্রিজারেটরে থাকছে স্মার্ট ভয়েস অ্যাসিসটেন্ট

এসব রেফ্রিজারেটর এর ক্ষেত্রে সবচাইতে আকর্ষনীয় যে ফিচার তা হল এগুলোর ভেতর থাকা বিল্ট ইন অ্যালেক্সা ভয়েস অ্যাসিসটেন্ট। এগুলোর ভেতর থাকা অ্যালেক্সা ভয়েস অ্যাসিসটেন্ট আপনার কাছে রান্না ঘরের একটি ভার্চুয়াল সহযোগীর মত কাজ করবে। তবে একটি বিষয় তা হল ভয়েস অ্যাসিসটেন্টটি কেবল ইংরেজী ভাষার জন্য প্রযোজ্য।

রান্না ঘরে কাজ করতে করতে আপনার মনে হল যে আপনার কাছে পর্যাপ্ত সামগ্রী যেমন: ডিম,দুধ,রুটি এসব নেই। এখন আপনাকে দৌড়ে দোকানে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। এসব স্মার্ট ফ্রিজের বিল্ট ইন অ্যালেক্সা আপনার গ্রোসারি আইটেম লিস্ট করে রাখতেও আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে। আপনি শুধু বলবেন, Alexa, add [item] to my shopping list। তারপর আপনি দোকানে গিয়ে আপনার অ্যালেক্সা অ্যাপটি খুলবেন আর কি কি লিস্টে যোগ করার জন্য বলেছিলেন তা দেখতে পারবেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই কাজের একটি ফিচার হল টাইমার। রান্নাঘরে যেকোন কিছুর ক্ষেত্রে টাইমার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পর্যাপ্ত সময়ের বেশি হয়ে গেলে আপনার কষ্ট অনেক সময় মাটি হয়ে যেতে পারে। আর আপনার সেই কষ্ট মাটি হওয়া থেকে যদি রক্ষা করতে পারে আপনার পছন্দের রেফ্রিজারেটর তাহলে কতনা ভালো হয়। আপনি এসব স্মার্ট ওয়াইফাই রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করে, রান্নাঘরের যেকোন প্রযোজনে টাইমার সেট করতে পারবেন। যেমন আপনি বললেন, Alexa, set a timer for 20 minutes। তারপর আপনার টাইমার যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন রেফ্রিজারেটর আপনাকে সজাগ করে দিবে।যখন রান্না করতে করতে আপনার ভালো লাগছে না, তখন আপনার মন চাঙ্গা করার জন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আপনার পাশের রেফ্রিজারেটর এই কাজটি করে দিবে। আপনি কেবল ভয়েস কমান্ড করলেই আপনার রেফ্রিজারেটর আপনাকে গান শুনিয়ে দিবে। যেমন আপনি বলতে পারেন, Alexa, play some 90s music। এমনকি আপনি সরাসরি স্পটিফাই থেকেও গান শুনতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন, Alexa, play (playlist name) playlist on Spotify.

আশা করি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলে আপনি আলোকপাত করেছি এমন একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র সম্পর্কে যা নিকট ভবিষ্যতে আমাদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হবে। দারুন কনসেপ্ট এর এই রেফ্রিজারেটরটি বর্তমানে কেবল পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। পরীক্ষামূলক একটি মডেল কেবল দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসিউমার ইলেট্রনিক্স শো’তে উপস্থাপন করা হয়েছে, আর আমি এখানে উপস্থাপিত বিষয়গুলো তুলে ধরেছি মাত্র। ভালো লাগলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button