বর্তমান সময়ে প্রায় বেশিরভাগ লোকেরই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।
এর কারণ অনেক কিছু হতে পারে, যেমন অতি মাত্রায় ধুল-প্রদূষণ, সঠিক খাদ্যের অভাব, মানসিক চাপ, বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট চুলে ব্যবহার করা এবং ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো চুলের যত্ন করতে না পারা। প্রত্যেকটি মানুষেই চায় যাতে তাদের চুল সুন্দর এবং ঘন দেখায়,
আর তাঁর জন্য আজকাল মানুষ চুলের সুন্দর্য্যের জন্য পার্লারে অনেক টাকাও খরচ করে থাকে।
কিন্তু এই সুন্দর্য কিছু দিন বা কিছু মাসের জন্য থেকে থাকে, যেমন চুলে বিভিন্ন কালার করা, স্ট্রেটনিং করা, স্মুথনিং করা ইত্যাদি এগুলোর প্রভাব কেবল কিছুদিনের জন্যেই থেকে থাকে।
তবে, অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করার ফলে পরে গিয়ে আমাদের চুলগুলো ড্যামেজ হতে শুরু হয়,
এবং আমাদের চুল পরে ও পাতলা হতে শুরু করে।
জেনেনিন চুল ঘন করার ঘরোয়া পদ্ধতি – (সেরা ৯টি)
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমি আপনাদের কিছু ঘরুয়া উপকরণ ব্যবহার করে কিভাবে রুক্ষ, পাতলা চুলগুলো ঘন করা যায় তাঁর উপায় গুলো বলতে যাচ্ছি।
তাহলে বন্ধুরা দেরি না করে নিচে দেওয়া প্রত্যেকটি উপায় বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
১. ক্যাস্টর তেল
কোল্ড প্রেসড (ঠান্ডা চাপা ) ক্যাস্টর তেলের চিপচিপে গুনের কারণে এটি চুল ঝরার সমস্যাকে কম করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এতে ভিটামিন ই এবং ফেটি অ্যাসিড মজুত থাকায় এটি চুল গজাতে এবং লম্বা হতে সাহায্য করে থাকে
ক্যাস্টর তেল ব্যবহার করার জন্য একটি বাটিতে ক্যাস্টর তেল এবং নারিকেল তেল বড়াবড় মাত্রায় মিলিয়ে গরম করে নিতে হবে।
এখন এই তেলটি চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলের নিচে অবদি লাগিয়ে ফেলুন এবং হাত দিয়ে হালকা হালকা করে চুলের গোড়ায় মালিশ করুন।
এখন আসতে আসতে করে পুরো চুলটা চিরুনি দিয়ে আঁচড়ান যাতে পুরো চুলে তেলটা লাগে।
এরপর একটি তাওয়াল নিয়ে গরম জলে ভিজিয়ে নিন এবং তাওয়ালটি পুরো চুলে বেঁধে আধা ঘন্টার জন্য ছেড়ে দিন।
এরপর শ্যাম্পো দিয়ে চুলটা ধুয়ে ফেলুন দেখবেন চুলগুলো কতো সফ্ট লাগবে।
২. মেহেন্দি
মেহেন্দি আমাদের চুলে কন্ডিশনারের কাজ করে থাকে।
যদি আপনার চুলও রুক্ষ এবং প্রাণহীন হয়ে গেছে, তাহলে আপনি মেহেন্দির উপয়োগ করে আপনার রুক্ষ চুলগুলো ঘন এবং মুলায়ম করতে পারেন।
মেহেন্দি পাতা থাকলে সেটির পেস্ট বানিয়ে দুই ঘন্টার জন্য রেখে দিন তারপর সেই পেষ্টটি আপনার পুরো চুলে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে নিন।
এরপর মেহেন্দি শুখিয়ে গেলে চুল গুলো জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুল ধুয়ে এর পর সরিষার তেল লাগিয়ে কিছু ঘন্টা ছেড়ে দিন তারপর শ্যাম্পো দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
যদি মেহেন্দি পাতা না থাকে তাহলে মেহেন্দির পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
- প্রথমে একটি বাসনে মেহেন্দি ঘুলে নিন।
- তারপর এটি ২, ৩ ঘন্টার জন্য ছেড়ে দিন যাতে মিশ্রণটি ফুলে উঠে।
- এরপর মেহেন্দি লাগানোর আগে তাতে একটি ডিম এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণটি সম্পূর্ণ চুলে লাগিয়ে ফেলুন।
- মেহেন্দি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এরপর উপরে বলা মতে তেল লাগিয়ে শ্যাম্পো দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩. এলোবেরা জেল
চুল ঘন করার সেরা ৯টি ঘরোয়া পদ্ধতির মধ্যে আরো এক উপায় হলো এলোভেরা জেল।
এলোভেরাতে ময়শ্চারাইজিঙের গুন পাওয়া যায় এবং এটি চুলের গোড়ার PH স্তরকেও ঠিক করে থাকে।
এর জন্য প্রথমে এলোভেড়ার পাতা নিতে হবে তারপর পাতাটি ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
এরপর পাতাটির ধারালো সাইডগুলো ছুরির দ্বারা সাবধানে কেটে ফেলে দিতে হবে।
এবার, পাতাটির ভিতরের জেল গুলো চামচ দিয়ে বের করে মিক্সারে ভালো করে পেস্ট করে নিন।
এক্ষেত্রে যদি এলোভেরা গাছ না থাকে তাহলে রেডিমেড এলোভেরা জেলও ব্যবহার করতে পারেন।
এরপর একটি বাটিতে পেষ্টটি বের করে নিন এবং চুলের লম্বা অনুজাই নারকেল তেল মিশিয়ে নিন।
এখন, পেস্টটি চামচ দিয়ে মিশিয়ে ২মিনিটের জন্য রেখে দিন যাতে মিশ্রণটি ভালোভাবে মিক্স হয়ে যায়।
শেষে, পেষ্টটি চুলের গোড়ার থেকে পুরো চুলের নিচে অব্দি লাগিয়ে নিতে হবে।
যখন পুরো চুলে মিশ্রণটি লাগানো হয়ে যাবে, এরপর নিজের হাথের সাহায্যে চুলের গোড়ায় আসতে আসতে ম্যাসাজ করুন।
এই প্যাকটি লাগিয়ে কম পক্ষেও ২ থেকে ৩ ঘন্টা এভাবেই রেখেদিন তারপর শ্যাম্পো দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই ঘরুয়া উপায়টি ব্যবহার করলে আপনার চুল বৃদ্ধি হবে, চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং অবশই মাথার চুল ঘন হবে।
৪. মেথি
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য এবং চুলের খুশকি কমানোর জন্য মেথি খুবই লাভদায়ক।
মেথিতে প্রোটিন এবং ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা চুলের গোড়া শক্ত এবং চুল লম্বা করতে সাহায্য করে থাকে।
মেথির বীজে ভালো মাত্রায় আয়রন থাকে যা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে, তাই চুলের জন্য মেথি অনেক উপকারি।
মেথির বীজকে বিভিন্নভাবে চুলের জন্য ব্যবহার করা যায়।
যেমন,
- মেথির তেল বানানোর জন্য প্রথমে মেথির বীজ নারকেল তেলে মিশিয়ে গরম করুন যতক্ষণ বীজের রং লাল না হয়।
- এরপর তেলটি একটি পাত্রে ঢেলে নিন এবং তেলটি অল্প ঠান্ডা হলে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন।
- এটি আপনার চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন হতে সাহায্য করবে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটাবে।
- এরপর মেথির হেয়ার প্যাক বানানোর জন্য একটি কাপে ২, ৩ চামচ মেথি ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন।
- ভেজানো মেথিগুলো মিক্সারে পেস্ট বানিয়ে নিন এবং সাথে একটি ডিম মিশিয়ে প্যাকটি তৈরি করে নিন।
- আপনি চাইলে এতে টক দই মিশাতে পারেন।
- এরপর এই হেয়ার প্যাকটি পুরো চুলে লাগিয়ে এক ঘন্টার জন্য রেখেদিন।
- তারপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ও শ্যাম্পো করে ফেলুন।
এছাড়াও যাদের অনেক বেশি খুশকির সমস্যা থাকে তাঁরা মেথি ভেজানো জল দিয়ে চুল ঢুলেও খুশকি কম হয় এবং চুল পড়া কমে থাকে।
৫. পেঁয়াজের রস
পেঁয়াজের রসে এন্টিব্যাকটিরিয়াল গুন থাকে ফলে মাথার ত্বকে হওয়া বিভিন্ন সংক্রমণ দুর করে চুল পড়া কম করতে সাহায্য করে থাকে।
এতে প্রচুর মাত্রায় সালফার থাকে যা মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে এবং চুল গোড়া থেকে মজবুত বানাতে সাহায্য করে থাকে।
পেঁয়াজের রস চুলে ব্যবহার করার জন্য ক্যাস্টর তেল বা নারকেল তেল ২ চামচ এবং পেয়াঁজের রস ২ চামচ মিলিয়ে নিন।
এরপর মিশ্রণটি চুলের গোরায় লাগিয়ে ভালো করে মালিশ করুন।
এভাবে একঘন্টা রেখেদিন তারপর মাইল্ড শ্যাম্পো দিয়ে চুলগুলো ধুয়ে ফেলুন।
এই তেলটি সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করুন।
৬. টক দই
শরীরের জন্য দই যেমন উপকারী ঠিক সেভাবেই আপনার চুলের জন্য দই খুব উপকারী।
এটির ব্যবহারের ফলে আপনার পাতলা এবং রুক্ষ চুলে এক নতুন জান চলে আসে।
এবং দইয়ের ব্যবহার আপনার চুল লম্বা হতেও সাহায্য করে থাকে।
তাই, দইয়ের পেস্ট বানিয়ে আপনার চুলে লাগিয়ে নিতে হবে।
- এর জন্য প্রথমে একটি বাটিতে প্লেন দই নিন।
- এবং তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে ভালো করে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন।
- এবার পেস্টটি আপনার পুরো চুলে গোড়া থেকে নিচে পর্যন্ত লাগিয়ে নিন এবং আধা ঘন্টার জন্য রেখেদিন।
এরপর জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
এভাবে দইয়ের ব্যবহার করলে আপনার চুল মুলায়ম ও ঘন হবে।
৭. আমলা
আমলাতে এন্টি -ইনফ্লেমেটেরি, এন্টি অক্সিজেন, এন্টিবায়োটিক গুন থাকে যা চুলকে গোড়া থেকে মজবুত বানাতে সাহায্য করে থাকে।
এছাড়া, আমলাতে ফেটি অ্যাসিড থাকে যা চুলের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে থাকে।
এর ব্যবহার করার জন্য এক চামচ আমলা পাওডার নারকেল তেলে মিশিয়ে ভালোকরে ফুটিয়ে নিন।
এরপর তেলটি ছেকে নিন এবং অল্প ঠান্ডা হওয়ার পর রাত্রে ঘুমানোর আগে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিন।
পরেরদিন সকালে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়াও আপনার কাছে যদি তাজা আমলা উপলব্ধ থাকে, তাহলে তাঁর রস বের করে তুলার সাহায্যে চুলের গোড়ায় লাগান এবং হালকা হালকা মালিশ করে কিছু সময় পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এতে আপনার চুল প্রাকৃতিক ভাবে ঘন, কালো এবং সুন্দর হয়ে দাঁড়াবে।
৮. স্বাস্থ্যকর খাদ্য
ঘন চুল পাওয়ার জন্য আপনাকে ঘরুয়া উপায়ের সাথে সাথে খাদ্যের প্রতি ধ্যান দিতে হবে এবং নিজের খাদ্যের তালিকায় স্বাস্থ্যকর আহার যুক্ত করতে হবে।
সুস্থ্য এবং ঘন চুলের জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস, ওমেগা ৩ফেটি অ্যাসিড থাকা খাদ্য যেমন দুধ ,ডিম ,মাছ, শাক সব্জি, ফল, কাঠবাদাম, আখরোট ইত্যাদি নিজের খাদ্যে সামিল করতে হবে।
৯. মানষিক চাপ
বর্তমান সময়ে চুল পড়ার আরো একটি মুখ্য কারণ হলো মানষিক চাপ।
আপনি যদি আপনার চুল ঘন করার বিষয়ে ভাবছেন, তাহলে মাথার চুল পড়া কিভাবে কমাবেন সেই বিষয়ে ভাবতেই হবে।
এই ব্যস্ততা ভরা জীবনে প্রতিটি ব্যক্তি কম বেশি কিছু না কিছু মানুষিক চাপের মধ্যে থাকতে দেখা যায়।
তাই ভেতর থেকে সুস্থ্য থাকতে হলে প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য হলেও কিছু শারীরিক ব্যায়াম, প্রাণায়াম এবং ধ্যান করা দরকার।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানলাম, মাথার চুল ঘন করার উপায় বা চুল ঘন করার সেরা ৯টি ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো কি কি।
যদি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে সেটা নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে সেটাও অবশই জানাবেন।