গুগল প্লে প্রটেক্ট | অ্যান্ড্রয়েডের নতুন সিকিউরিটি সিস্টেম — বিস্তারিত!
গুগল প্লে প্রটেক্ট কিভাবে কাজ করে?
আজকের সাইবার ওয়ার্ল্ডে ম্যালওয়্যার অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। আগে ম্যালওয়্যার থেকে শুধু কম্পিউটার আক্রান্ত হওয়ারই ভয় ছিল, কিন্তু বর্তমানে লাখো মোবাইল ডিভাইজ ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে মোবাইলের ক্ষেত্রে বা বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারকে নিয়ন্ত্রন করা, মানে ম্যালওয়্যার থেকে ডিভাইজ গুলোকে সুরক্ষিত রাখা অনেকটা সহজ ব্যাপার। কেনোনা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য অ্যাপ ডাউনলোড করার একটি নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে (গুগল প্লে স্টোর) —যেখানে উইন্ডোজ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কোনই নির্দিষ্ট অ্যাপ স্টোর নেই, সাধারণত যেকোনো সফটওয়্যার গুগল সার্চ করে খুঁজে পেতে হয়, এতে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে যায়।
আপনি হয়তো আগে থেকেই আপনার স্মার্টফোনে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করে রেখেছেন, কিন্তু সেটা মোটেও প্রয়োজনীয় নয়। আপনি যদি গুগল প্লে স্টোর ব্যাতিত অ্যাপ অন্য কোন সাইট থেকে ডাউনলোড না করে ব্যবহার করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার ফোন ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হবে না। আগে থেকেই গুগল প্লে স্টোর অনেক সিকিউর ছিল, কিন্তু বর্তমানে গুগল আরো এক্সট্রা সিকিউরিটি প্রদানের ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। গুগল একটি নতুন ফিচার উন্মুক্ত করেছে, যার নাম গুগল প্লে প্রটেক্ট, আর এই ফিচারটি দাবী করে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজকে ম্যালওয়্যার এবং আলাদা বিপদজনক জিনিষ থেকে রক্ষা করবে। তো মূলত এই আর্টিকেলে আমি গুগল প্লে প্রটেক্ট কিভাবে কাজ করে, এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর হ্যাঁ, আপনি যদি ফোনে আলাদা কোন অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইন্সটল করে রাখেন তো সেটাকে নির্ভয়ে এক্ষুনি অ্যানইন্সটল করে দিন, কেনোনা স্মার্টফোনে অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামের কোনই প্রয়োজনীয়তা নেই!
গুগল প্লে প্রটেক্ট
সূচনাতেই বলেছি, এটি একটি নতুন অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি ফিচার, যেটার মাধ্যমে গুগল আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজে লেটেস্ট সিকিউরিটি প্রদান করবে। আপনি যদি লেটেস্ট প্লে স্টোর চালিয়ে থাকেন, তো নিশ্চয় কয়েকদিন যাবত অ্যাপ ইন্সটল করার সময় প্লে স্টোরে দেখে থাকবেন, “ভেরিফাইড বাই গুগল প্লে প্রটেক্ট” লাইনটি লেখা রয়েছে। এর মানে হচ্ছে ঐ অ্যাপটি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত, সেটা গুগল দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার সময়ই নয়, এই সিস্টেমটি আপনার ডিভাইজকেও সর্বদা স্ক্যান করবে এবং ম্যালওয়্যার একটিভিটি হচ্ছে কিনা সেটা স্ক্যানে চেক করবে।
এই গুগল প্লে প্রটেক্ট ফিচারটিকে অল-ইন-ওয়ান সিকিউরিটি প্যাক বলতে পারেন। এই মুহূর্তে এটি মোট তিনটি কাজ করতে পারে; অ্যাপ স্ক্যানিং, ব্রাউজার সিকিউরিটি, এবং ডিভাইজ ট্র্যাকিং। যেকোনো অ্যাপ এটি রিয়াল টাইমে স্ক্যান করতে পারে, আবার যে অ্যাপটি আপনি বছর খানেক ধরে আপনার ফোনে ব্যবহার করে আসছেন, সেটাকেও লাগাতার স্ক্যান করতে থাকে, কোন সমস্যা খুঁজে পেলেই আপনাকে অ্যালার্ট দিয়ে দেওয়া হবে।
এটি কিভাবে কাজ করে?
গুগল প্লে প্রটেক্ট সিস্টেম মেশিন লার্নিং টেকনিক ব্যবহার করে অ্যাপ স্ক্যান করে এবং ম্যালওয়্যার ডিটেক্ট করে। প্লে প্রটেক্ট অ্যাক্সেস করার জন্য আপনাকে আপনার ফোন থেকে Settings -> Google -> Security– > Google Play Protect অপশনে যেতে হবে। এখানে আরেকটি বিশাল সুবিধা হচ্ছে, শুধু প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার সময়ই নয়, আপনি আলাদা যেকোনো সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলেও এই সিস্টেম ঐ অ্যাপ গুলোকেও স্ক্যান করবে এবং আপনার ডিভাইজকে সুরক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করবে। আপনি হয়তো মডেড গেম আলাদা সোর্স থেকে ডাউনলোড করেন, কেনোনা সেগুলো প্লে স্টোরে পাওয়া যায় না, গুগল প্লে প্রটেক্ট এই অ্যাপ গুলোকে সরাসরি ম্যালওয়্যার হিসেবে চিহ্নিত করবে না, আগে এর আচরন স্ক্যান করবে তারপরেই অ্যাপটি ম্যালওয়্যার কিনা সেটা ডিটেক্ট করবে।
এই ফিচারের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করার ক্ষমতা রয়েছে—অর্থাৎ এটি বিলিয়ন ডিভাইজ গুলোকে স্ক্যান করার সময়, ডিভাইজ গুলো থেকে কি ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা মনে রেখে পরবর্তী সময়ে নিজের স্ক্যানিং ম্যাথডকে আরো শক্তিশালী করতে পারবে। কোন ধরণের ম্যালওয়্যার, বা নতুন নতুন মোবাইল ভাইরাস গুলো কিভাবে আচরন করছে সেটার উপর ভিত্তি করে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ নতুন ম্যালওয়্যারকে ডিটেক্ট করতে সক্ষম হবে। আর এটা করাও অনেক সহজ ব্যাপার, কেনোনা গুগল সিস্টেম অবশ্যই ভালো করে যানে কোন অ্যাপটি আজব ব্যবহার করছে। ধরুন আপনি একটি ক্যামেরা অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, তো ঐ অ্যাপের কাজ শুধু ক্যামেরা আর স্টোরেজের সাথে তাই না? এখন ঐ অ্যাপটি যদি আপনার কন্টাক্ট লিস্ট অ্যাক্সেস করতে চায় তাহলে নিশ্চয় কোন গণ্ডগোল রয়েছে, তাই না? ক্যামেরা অ্যাপ কন্টাক্ট লিস্ট দিয়ে কি করবে? ঠিক এইভাবেই প্লে প্রটেক্ট বিভিন্ন অ্যাপের আচরণ স্ক্যান করে।
সাথে যখনই কোন অ্যাপে কোন গণ্ডগোল ডিটেক্ট করা হয়, আপনাকে সাথে সাথে নোটিফিকেশন দিয়ে দেওয়া হবে, “এই অ্যাপটি ক্ষতিকর”। নোটিফিকেশনে সরাসরি অ্যানইন্সটল বাটন দিয়েই দেওয়া হবে, জাস্ট সেখানে ট্যাপ করার মাধ্যমে অ্যাপটি আপনার সিস্টেম থেকে রিমুভ হয়ে যাবে। তাছাড়া এটাও বলা হয়েছে, কোন অ্যাপ প্লে স্টোরে আপলোড করার সময়ই সেটাকে টেস্ট করা হবে এবং পাবলিশ করার অনুমতি প্রদান করা হবে।
অন্যান্য সিকিউরিটি ফিচার
পূর্বেই বলেছি, এই ফিচারটি শুধু অ্যাপ স্ক্যানিং নয়, সাথে সেফ ব্রাউজিং এবং ডিভাইজ ট্র্যাকিং করার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে। পূর্বের গুগল সেফ ব্রাউজিং প্রোটেকশন এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ ম্যানেজার বর্তমানে এই প্রোজেক্টেরই একটি অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো অনিরাপদ লিঙ্ক ভিজিট করার সাথে সাথে আপনাকে ম্যালওয়্যার অ্যালার্ট প্রদান করা হবে, এবং সাইটটি আপনার ব্রাউজারে লোডই হবে না। কেনোনা গুগল ডাটাবেজ থেকে চেক করে দেখবে সাইটি নিরাপদ কিনা।
ডিভাইজ খুঁজে পাওয়া এখন আরো সহজ ব্যাপার হয়ে গেছে। যে ডিভাইজে প্লে প্রটেক্ট এনাবল করা রয়েছে, তাকে খুঁজে পেতে জাস্ট android.com/find —এই লিঙ্কে প্রবেশ করতে হবে, এবার একই অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করার মাধ্যমে ডিভাইজটি রিং, লক, এবং ডাটা ইরেজ করতে পারবেন। আলাদা অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে আপনার অন্য ডিভাইজটি খুঁজে পাওয়ার জন্য Find My Device অ্যাপটি ডাউনলোড করেও কাজ করতে পারেন।
আমার কাছে এই সিকিউরিটি সিস্টেম সত্যিই অসাধারণ লেগেছে, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার। গুগল অফিশিয়াল ভাবে এরকম হাই কোয়ালিটি সিকিউরিটির জন্য একটি ফিচার উন্মুক্ত করেছে যেটা সত্যিই অনেক ভালো কথা। তাই আলাদা অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করে ফোনকে স্লো করে থাকলে এক্ষুনি সেটাকে অ্যানইন্সটল করে দিন। আর গুগল প্লে প্রটেক্ট সম্পর্কে আপনার মতামত কি? কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন!