Technology

ইমেইল বা ইলেকট্রনিক মেইল কিভাবে কাজ করে?

ইমেইল কি? ইমেইল নিয়ে বিস্তারিত

ইমেইল জিনিসটি বলতে হলে ইন্টারনেটের একেবারে বেসিক এবং সবথেকে বেশি ব্যবহার করা এবং একইসাথে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় মেসেজিং সার্ভিস বা কমিউনিকেশন সার্ভিস যা প্রায় সব ইন্টারনেট ইউজারই ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ইউজ করতে হলে গুগল অ্যাকাউন্ট দরকার এবং একটি গুগল অ্যাকাউন্ট মানেই একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট।

অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সব অ্যান্ড্রয়েড ইউজার যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের সবাই ইমেইল ব্যবহার করেন বা ব্যবহার না করলেও, অন্তত একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট আছে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, কারো ইমেইল অ্যাড্রেস টাইপ করেই আপনি যা ইচ্ছা লিখে কিংবা যেকোনো ফাইল অ্যাটাচ করে এই যে মুহূর্তের মধ্যেই যে ইমেইল পাঠিয়ে দিতে পারেন, এই ইমেইল জিনিসটি আসলে কিভাবে কাজ করে? আজকে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করা যাক

ইমেইল কি?

ইমেইল কিভাবে কাজ করে তা জানতে হলে আমাদেরকে একেবারে ইমেইলের শুরু দিক থেকে জানতে হবে। আপনি হয়তো জানেন না যে, ইমেইল বা ইলেকট্রনিক মেইল, কম্পিউটার কমিউনিকেশন সিস্টেমের অনেক পুরনো একটি মেথড। আমরা সবাই জানি যে, এমন একটা সময় ছিলো যখন কম্পিউটারগুলো ছিলো একেকটি বিশাল বড় বড় ম্যাশিন এবং সেগুলোকে ব্যবহার করাই ছিলো অনেক কঠিন কাজ। মানুষ তখন সেসব কম্পিউটারগুলোকে অ্যাক্সেস করার জন্য মানুষ ডায়াল-আপ টার্মিনাল ব্যবহার করতো। তখন একটি কম্পিউটার মাল্টিপল ইউজারের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হতো তাই সেখানে মাল্টিপল ইউজারের জন্য আলাদা আলাদা স্টোরেজও থাকতো। তখন একজন ইউজারের আরেকজন ইউজারের সাথে কমিউনিকেট করার দরকার পড়তো। সেই সময়টাতেই এই ইলেকট্রনিক মেইল নামক মেসেজিং সিস্টেমটির উদ্ভাবন করা হয়।

তবে তখন সিস্টেমটি এমন ছিলো যে, ইমেইলগুলো সেন্ড করা যাবে শুধুমাত্র একই কম্পিউটারের মাল্টিপল ইউজারদের মধ্যে, অন্তত ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এমনটাই চলছিলো। কিন্তু এরপর একদিন Ray Tomlinson নামের একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার প্রথম একটি ইমেইল সেন্ড করেন অন্য কম্পিউটারের একজন ইউজার ইউজারকে অ্যাড্রেস করে যেখানে অ্যাড্রেস করার কাজে তিনি @ চিহ্নটি ব্যবহার করেন। সেই @ চিহ্নটি আমরা এখনও সবধরনের ইমেইল অ্যাড্রেসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। এই পদ্ধতিটি আমাদের বর্তমান ইমেইলটি যেভাবে কাজ করে, এতটা কমপ্লিকেটেড ছিলো না, তবে আমাদের এখনকার ইমেইল টেকনোলজির শুরুটা সেখান থেকেই হয়েছিলো বলা যায়।

তখন ইমেইল শুধুমাত্র ছিলো কিছু সিম্পল টেক্সট একজনের থেকে আরেকজনের কাছে শেয়ার করার জন্য। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথেই ইমেইলের ও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে এবং আস্তে আস্তে ইমেইলে আরও অনেক নতুন নতুন ফিচার অ্যাড করা হয়েছে। তবে ইমেইলের মেইন কনসেপ্টটি সবসময়ই ছিলো Person A এর থেকে Person B এর কাছে কোন ডেটা ট্রান্সফার করা। এটা শুনতে খুবই সহজ এবং সাধারন মনে হলেও এর পেছনে কিছু প্রোসেস আছে যা বিহাইন্ড দ্যা সিনস কাজ করে বলতে পারেন, যখন আপনি একটি ইমেইল সেন্ড করেন বা রিসিভ করেন।

সেন্ডার থেকে রিসিপেন্ট

মেইল সেন্ড করা বুঝতে হলে আমাদেরকে জাস্ট এইটুকু জানলেই হচ্ছে যে, যে ইমেইলটি সেন্ড করে, তার কাছ থেকে ঠিক কি কি প্রোসেসের মধ্য দিয়ে ইমেইলটি প্রাপক বা যে মেইলটি রিসিভ করবে তার কাছে পৌঁছায়। ব্যাপারটিকে একটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যাক। ধরুন আপনি আপনার একজন বন্ধুকে একটি ইমেইল সেন্ড করছেন। এর জন্য আপনাকে যে ইমেইল অ্যাড্রেসটিতে মেইলটি সেন্ড করছেন সেই অ্যাড্রেসটি অনেকটা এমন [email protected]। আবার আপনার নিজের ইমেইল অ্যাড্রেসটির ফরম্যাটও একইরকম।

আপনি যখন কোন ইমেইল লিখে আপনার কাঙ্খিত অ্যাড্রেসে সেন্ড করেন, ইমেইলটি একটি সিম্পল মেইল ট্রান্সফার প্রোটোকলের সাহায্যে সেখানে থাকা একটি আউটগোয়িং মেইল সার্ভারে চলে যায়। এই Simple Mail Transfer Protocol (SMTP) হচ্ছে অনেকটা আপনার লোকাল পোস্ট অফিসের মতো যেখানে গিয়ে আপনি চিঠি পোস্ট করে আসেন এবং তারা আপনার চিঠিটি আপনার কাঙ্খিত অ্যাড্রেসে ডেলিভার করে দেয়। ইমেইলের ক্ষেত্রে এই SMTP জিনিসটিও একইভাবে কাজ করে।

এই SMTP সার্ভারটি আপনার মেইলটিকে চেক করে এবং দেখে যে আপনি এই মেইলটি কোথায় বা কোন অ্যাড্রেসে সেন্ড করতে চাইছেন। তবে SMTP সার্ভার কিন্তু কোন ডোমেইন বোঝে না। অথচ ইমেইলটি সঠিক অ্যাড্রেসে সেন্ড করার জন্য অবশ্যই ওই ইমেইল সার্ভারটির ডোমেইন জানার দরকার পড়ে। ডোমেইন নেম জানার জন্য এই অবুঝ SMTP সার্ভার কানেক্ট করে ডোমেইন নেম সিস্টেমের সাথে যাকে আমরা ছোট করে ডিএনএস সার্ভার নামে চিনি। ডিএনএস সার্ভারের কাছে যেহেতু সব ডোমেইনের আইপি অ্যাড্রেসের রেকর্ড থাকে, তাই ইমেইল সেন্ড করার জন্য ডিএনএস সার্ভারের অবশ্যই দরকার হবে। ডিএনএস সার্ভার সম্পর্কে যদি বিস্তারিত না জেনে থাকেন, তাহলে নিচের এই আর্টিকেলটি একবার পড়ে নিতে পারেন-

→ডিএনএস (DNS) কি এবং কেন দরকার হয়? ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কি?

এখন বলতে পারেন যে মেইল সেন্ড করার পরবর্তী কাজটি করে ডিএনএস সার্ভার। ডিএনএস সার্ভার খুঁজে বের করে যে আপনি যে ইমেইল অ্যাড্রেসে মেইল সেন্ড করছেন সেটি কোন ডোমেইনের আন্ডারে আছে। এটা অনেকটা আপনি যেখানে চিঠি সেন্ড করবেন সেখানে কোন PO Box আছে কিনা কিংবা সেখানে চিঠি পোস্ট করার মতো কোন কোন পোস্ট অফিস আছে তা খুঁজে বের করার মতো। মেইলের ক্ষেত্রে এই কাজটি করে থাকে ডিএনএস সার্ভার।

এখন SMTP সার্ভারটি যেহেতু ডিএনএস এর সাহায্যে জেনে গিয়েছে যে মেইলটি ঠিক কোন অ্যাড্রেসে এবং কোন ডোমেইনে যাবে, তাই SMTB সার্ভার এখন আপনার এই মেইলটিকে আপনার কাঙ্খিত প্রাপক মেইল অ্যাড্রেসের ডোমেইনের মেইল এক্সচেঞ্জ সার্ভার (Mail Exchange Server) এর কাছে ট্রান্সফার করে দেয়। ইমেইল অ্যাড্রেস প্রোভাইডারের প্রত্যেকেরই মেইল আদান-প্রদানের জন্য একটি ডেডিকেটেড মেইল এক্সচেঞ্জ সার্ভার থাকে। SMTB মূলত সেখানেই ইনকামিং এবং আউটগোয়িং মেইলগুলোকে ট্রান্সফার করে দেয় তাদের নির্ধারিত অ্যাড্রেস অনুযায়ী। এরপর এই ইমেইলগুলো সার্ভার থেকে আপনার ইমেইল ইনবক্সে আসে দুই ধরনের পদ্ধতিতে বা দুই ধরনের ক্লায়েন্ট বা প্রোটোকলের সাহায্যে। একটি হচ্ছে POP এবং আরেকটি IMAP। মেইল প্রোভাইডাররা এই দুটির যেকোনো একটি ক্লায়েন্ট ব্যাবহার করে আপনার মেইল আপনার কাছে পৌঁছে দিতে।

POP এবং IMAP

এই দুটি প্রোটোকল একটু অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা যাক। POP এর ফুল মিনিং হচ্ছে Post Office Protocol। এর কারন হচ্ছে, এই প্রোটোকলটি পোস্ট অফিসের মতোই কাজ করে অনেকটা। আপনি ঠিক পোস্ট অফিসের মতোই এখানে সার্ভারে বা আপনার মেইলবক্সে লগইন করতে পারবেন, আপনার কাছে আসা সব মেইল রিসিভ করতে পারবেন এবং দেখে আবার সার্ভার থেকে লগআউট করতে পারবেন বা চলে যেতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার মেইলগুলো শুধুমাত্র আপনার একটি ডিভাইসে লগইন করা ইমেইল অ্যাকাউন্টেই আসবে এবং আপনি একটি ডিভাইসেই ঐ মেইলগুলো রিসিভ করতে পারবেন। মেইল রিসিভ করার জন্য আপনাকে সার্ভারের সাথে কানেক্টেড থাকারও দরকার হবেনা। আপনি যদি শুধুমাত্র একটি ডিভাইস থেকেই মেইলগুলো অ্যাক্সেস করেন তাহলে এই প্রোটোকলটিই তার জন্য বেস্ট।

আর IMAP প্রোটোকলটি আরেকটু আলাদা এবং আরও একটু স্মার্ট। যেখানে POP হচ্ছে ক্লায়েন্ট অরিয়েন্টেড প্রোটোকল, সেখানে IMAP অনেকটা সার্ভার অরিয়েন্টেড প্রোটোকল। এই প্রোটোকলে আপনার ইমেইলগুলো ডিভাইস অনুযায়ী থাকবে না, বরং থাকবে সার্ভার অনুযায়ী। মেইলগুলো আপনার মেইল ইনবক্সে বা মেইল সার্ভারে স্টোর হবে এবং আপনি আপনার যেকোনো ডিভাইস থেকে মেইলগুলোকে রিসিভ করতে পারবেন এবং অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার সার্ভারে বেশি জায়গা এব বেশি ব্যান্ডউইথ দরকার হবে। এছাড়া মেইলের আপডেটগুলোও সাথে সাথে সার্ভারে আপডেট হয়ে যাবে যাতে সবজায়গায় একইরকম থাকে। মডার্ন প্রায় সব ইমেইল প্রোভাইডাররাই ইমেইল সেন্ড এবং রিসিভের কাজে IMAP প্রোটোকল ব্যাবহার করে থাকে।

এভাবেই কাজ করে ইমেইল বা ইলেকট্রনিক মেইল। আশা করি কিছুটা হলেও ধারনা দিতে পারেছেই এই ব্যাপারে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button