আধুনিক সময়ে ইন্টারনেটে ভিডিও স্ট্রিমিং আমাদের কাছে যেন একদম ডাল-ভাত। দিনের অনেক সময় ইন্টারনেটে ফেসবুক এবং ইউটিউবে সময় দিয়ে আমরা নানারকম ভিডিও দেখার মাধ্যমে অনলাইনে ভিডিও স্ট্রিমিং এর অভিজ্ঞতা নিয়ে থাকি। আর একইভাবে সামগ্রিক দিক দিয়ে দেখা গেলে ইউটিউব এর মত প্ল্যাটফর্মে এভাবে সারা পৃথিবীর মানুষ মূহুর্তে প্রায় কোটি কোটি ঘন্টা ভিডিও ওয়াচটাইম তৈরি করে ফেলে।
এর বিপরীতে ভিডিও এনটেন্ট্রেইমেন্ট এর আরেকটি সোর্স হল আমাদের বাসা বাড়িতে থাকা ক্যাবল টেলিভেশন বা অন্যভাষায় যাকে বলা যায় স্যাটেলাইট টেলিভিশন। অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং ব্যাপক হারে বাড়লেও ; ক্যাবল টিভি বা স্যাটেলাইট টিভি এর অনেক আগে থেকেই মানুষের ভিডিও বিনোদন এর চাহিদা পূরন করে আসছে। আজকের আর্টিকেলে আমার মূল আলোচনা এই স্যাটেলাইট টেলিভিশন এবং অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং নিয়ে। আজ আমি খুবই সহজভাবে এই দুইটির একটি কমন পার্থক্য এবং এর কারনটা ব্যাখ্যা করব।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
স্যাটেলাইট টেলিভিশন
স্যাটেলাইট টেলিভিশন সাধারনত একটি জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট নির্ভর ব্রডকাস্টিং সার্ভিস এর ওপর ভিত্তি করে বাসাবাড়িসহ সকল জায়গায় ডিজিটাল ভিডিও কনটেন্ট পৌছে দেয়। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত স্যাটেলাইট সাধারনত পৃথিবী থেকে ৩৭ হাজার কিলোমিটার ওপরে একটি নির্দিষ্ঠ স্থানে অবস্থান করে ;যার ফলে হয়কি এটি সেই স্থানে থেকে পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট বরাবর থেকে পৃথিবীর সাথেই তার কক্ষপথ এর ওপর থেকে ঘুরতে থাকে। তাই পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ঠ স্থানের সাথে সেই স্যাটেলাইটটির যোগাযোগ সবসময় বজায় থাকে। চ্যানেল আই,এনটিভি,যমুনা টিভি এর মত ইত্যাদি স্যাটেলাইট টেলিভিশন সাধারনত এসব জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট এর ওপর নির্ভর করেই তাদের সম্প্রচার পরিচালনা করে থাকে।
প্রতিটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলকে কোনো নির্দিষ্ট স্যাটেলাইট এর সাথে তাদের সম্প্রচার চুক্তি করে নিতে হয়। অতঃপর সেই স্যাটেলাইট এর দিকে মুখ করে থাকা তাদের একটি আপলিংক অ্যানটিনা এর মাধ্যমে তাদের চ্যানেল এর লাইভ ভিডিও গুলি একটি নির্দিষ্ঠ উচ্চ ফ্রিকুয়েন্সীতে তারা স্যাটেলাইটটিতে পাঠায়। আপলিংক অ্যান্টেনাগুলে সাধারনত অনেক বড়; ৯-১২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ঠ ফ্রিকুয়েন্সিতে সিংনাল পাঠানোর স্যাটেলাইট এর ট্রান্সপন্ডার তা গ্রহন করে এবং তা আবার আরেকটি ফ্রিকুয়েন্সিতে ভূ-পৃষ্টে থাকা রিসিভার অ্যান্টেনা গুলোতে সেন্ড করে। আর এভাবে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর টেলিভিশন ভিডিও আমাদেরর টিভি সেটে ঢোকে।
অনলাইন স্ট্রিমিং
অন্যদিকে অনলাইন স্ট্রিমিং এ যা হয় তা হল, অনলাইন থেকে প্রাপ্ত মিডিয়ার ডাটা ফাইলটি কোনো নির্দিষ্ঠ প্লেয়ার এর মাধ্যমে প্লে করা হয়। ইউটিউবও কিন্তু এক প্রকারের ভিডিও প্লেয়ার বা মিডিয়া প্লেয়ার। এটা ইউটিউব বা গুগলের এই প্লাটফর্ম আপলোড কৃত সকল মিডিয়া ফাইলকে প্লে বা প্রদর্শন করে দর্শকদের মাঝে উপস্থাপন করে। একইভাবে অনেকে হয়ত ভিডমেট ডাউনলোড সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকবেন; লক্ষ্য করবেন যে এটাও কোনে ভিডিও ডাউনলোড করার আগে তা প্লে করিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে,এটাও একটি অনলাইন ভিডিও প্লেয়ার। অনলাইন স্ট্রিমিং এর ভেতর ভিডিও ফাইলগুলো একটি ব্যান্ডউইথ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় ; যেখানে স্যাটেলাইট টেলিভিশনপ তা প্রবাহিত হত সিংনাল ফ্রিকুয়েন্সি হয়ে। আর অনলাইন লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং এর ভেতর হয়কি, সরাসরি সার্ভার হতে ট্রান্সমিট করা কোনো মিডিয়া ফাইল আপনি সরাসরি আপনার অনলাইন প্লাটফর্ম টিতে দেখতে পান।
স্যাটেলাইট টিভি vs অনলাইন স্ট্রিমিং
এখানে আমরা কথা বলছি এই অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং এবং ক্যাবল বা স্যাটেলাইট টেলিভিশনে যে ভিডিও কনটেন্ট আমরা উপভোগ করছি তা নিয়ে। আসলে এদের ভেতর মূল পার্থক্যটা কি তা বুঝতে হলে আমাদের অবশ্যই ধারনা নিতে হবে এটি আসলে আদৌ কিভাবে কাজ করে। যদি আমরা একটা স্পষ্ট ধারনা পাই যে; হ্যা এটা এভাবে কাজ করছে এবং সেটা এভাবে তবে এদের ভেতরকার পার্থক্য বা কোনো কারনকে আমাদের কাছে উদ্ধার করা অনেক সহজ হবে।
অনলাইন বিশেষ করে ইউটিউবে কোনো ভিডিও স্ট্রিম করার সময় যখন ভিডিওটির বাফারিং চালু হয় তখন তার চাইতে খারাপ কিছু আমার মনে হয় সে মুহূর্তে আর কিছু লাগে না। অনেকসময় আমাদের ইন্টারনেট সংযোগ স্লো থাকার কারনে হয়ত অনলাইন স্ট্রিমিং এ এমন বাফারিং শুরু হয়ে যায় যে, বাধ্য হয়ে আমরা তখন ইউটিউব,ফেসবুক বা আইফ্লিক্স থেকে উঠে টেলিভিশন এর সামনে বসি। আর টেলিভিশনে আমাদের এই বাফারিং এর ব্যাপারটি বলতে গেলে একদমই নেই।
এখানে টেলিভিশন হোক বা অনলাইনে ভিডিও স্ট্রিমিং ভিডিও ফাইলটি নেটওয়ার্ক মডেম বা টেলিভিশন বক্সে তো ১০১০০১০১১০ এরকম বাইনারি সংকেতেই তো আসছে নাকি? তবে দুটি দিকে এত ভিন্নতা কেন? কোনো স্যাটেলাইট টেলিভিশন আসলে কতটা উন্নত তা নির্ভর করে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলটি কত রেজুলেশন এর ভিডিও কত ফ্রিকুয়েন্সীতে জিও স্টেশনারী স্যাটেলাইটে পাঠাচ্ছে ;অবশ্য এখানে স্যাটেলাইটটির গুণ এবং কার্যক্ষমতার ব্যাপারটিও উঠে আসে। যাই হোক এখানে পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় থাকা ক্যাবল টিভি অকারেটররা তাদের রিসিভার অ্যান্টেনা থেকে স্যাটেলাইট থেকে ট্রান্সমিট করা ফ্রিকুয়েন্সী সিংনাল গ্রহন করে। অতঃপর আপনার বাসায় সেখান থেকে একটি ক্যাবল টিভি লাইন এসে যুক্ত হয়। এখানে প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেল এর আপলিংক ফ্রিকুয়েন্সি এবং কোয়ালিটি আলাদা আলাদা হওয়ার কারনে আপনার টেলিভিশন বক্সেও একেক টিভি চ্যানেল এর কোয়ালিটি এবং ফ্রেকুয়েন্সী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আসে। একারনেই হয়ত অনেক সময় আপনি দেখবেন যে চ্যানেল এক্স কত ক্লিয়ার কখনই চ্যানেল এর ডিস্টার্ব হয় না আবার এই চ্যানেলটি একটু আবহাওয়া বিরূপ হলেই সমস্যা দেখা দেয়।
অন্যদিকে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং এর পুরো ব্যাপারটা একদম পুরোপুরিভাবে ভিন্ন ধরনের। এখানে যা হয় ভিডিও ফাইলকে একটি কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে ব্যান্ডউইথ এর মাধ্যমে ছাড়া হয় অতঃপর তাকে ইন্টারনেটের ব্যাপক গজবাধা ট্রাফিক এর মধ্য দিয়ে তার কাঙ্খিত রিসিভার এর কাছে যেতে হয়। উচ্চ গতির ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে অনেক সময় একবার আপলোডেড অনলাইন মিডিয়া কনটেন্ট একেবারেই অনেক বেশি লোড হয়ে যায় বলে আমরা বাফারিং এর স্বীকার হই না। তবে অনলাইনে লাইভ ভিডিও ব্রডকাস্ট করার ক্ষেত্রে অনেকসময় দেখা যয়, যত ভালো নেটওয়ার্কই হোক একটু লেটেন্সি হয় আর যার ফলে আমরা ভিডিও বাফারিং এর স্বীকার হই। আর ইন্টারনেট কানেকশন স্লো হলে তো কথাই নাই, এটা আমাদের নিত্যদিন এর সঙ্গী।
শেষ কথা
তবে আধুনিক প্রযুক্তি এত বেশি উন্নতি এবং ওয়্যারলেস ভিত্তিক প্রযুক্তির এতটা অগ্রগতির সময় প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা দাবী করছেন যে খুবই শীঘ্রই ক্যাবল টেলিভিশন এর প্রচলন শেষ হবে এবং মানুষ অনলাইন টেলিভিশন এর দিকে ঝুঁকবে ; আর যাকে আমরা বলতে পারি অনলাইন স্ট্রিমিং টেলিভিশন। আমেরিকায় গত বছর স্লিং টিভি এবং প্লেস্টেশন তাদের অনলাইন ভিত্তিক টেলিভিশন সার্ভিস চালু করেছে; যা প্রচলিত ক্যাবল টেলিভিশন এর বিকল্প হিসেব আরও বেশি সুবিধাও পাচ্ছে। আমেরিকান ডিস নেটওয়ার্ক এর একটি প্রতিষ্ঠান হলো স্লিং টিভি ; যেখানে সেখানকার প্রচলিত টেলিভিশন চ্যানেল গুলো দেখা যাবে আরও অনেক কম খরচে। একই ভাবে যদি বাংলাদেশী মোবাইল টেলিভিশন প্লাটফর্ম রবি টিভি এর কথা বলি তাহলে কিন্তু ভুল হবেনা। এখানে আমরা রেগুলার চ্যানেল মাসিক ৭০ টাকা প্যাকেজ সিলেক্ট করলে সারামাস এসব কিছু টেলিভিশনের মতই মোবাইলেও দেখা যাবে।