যদি এক কথায় উত্তর দিয়ে বলি, তো হ্যাঁ! —আপনার সকল স্মার্ট ডিভাইজ গুলো আপনার উপর স্পাইং করছে। নিঃসন্দেহে আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, স্মার্ট টিভি, স্মার্ট স্পিকার আপনাকে প্রতিনিয়ত নানান ভাবে সাহায্য করছে, কেউ আপনার লাইফের এক একটি অংশে পরিণত হয়েছে, তো কেউ আপনার স্মার্ট হোম’কে পরিপূর্ণ করছে। কিন্তু এরই মাঝে স্মার্ট ডিভাইজ গুলো আপনার সকল তথ্য গুলোকে স্পাইং করে গভর্নমেন্টের জন্য ব্যাকডোর খুলে রাখছে। আপনার ডিভাইজ গুলো সর্বদাই শুনে যাচ্ছে আপনি কি করছেন আর কি বলছেন, সাথে আপনার যেকোনো অ্যাকট্যিভিটি রেকর্ড করে রাখছে।
প্রত্যেকটি স্মার্ট ডিভাইজ যারা ইন্টারনেটের সাথে তাদের নিজস্ব সার্ভারে কানেক্ট থাকে, প্রত্যেকে আপনার উপর স্পাইং করে তারপরেই আপনাকে ব্যক্তিগতকৃত সার্ভিস প্রদান করে। যেমন গুগলের কথায় চিন্তা করুণ, আপনার প্রত্যেকটা ভিজিট করা ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস লিস্ট করে রাখে, আপনার যেকোনো সার্চ কী-ওয়ার্ড রেকর্ড করে রাখে, আপনার জিপিএস ডাটা গুলো স্টোর করা হয়, এমনকি আপনার গুগল নাউ বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট’কে কি ভয়েস কম্যান্ড দিচ্ছেন সেগুলোও রেকর্ড করে সার্ভারে জমা রাখা হয়। আপনি ইউটিউবে কখন কোন ভিডিও দেখেন, কোনটা দেখেতে বেশি পছন্দ করেন, সবকিছুই ইউটিউব ভালোকরে জানে।
আপনি হয়তো এই পয়েন্টে এসে চিন্তা করছেন, “গুগল ডাটা স্টোর করছে তো কি হয়েছে, আমি নিশ্চয় কোন ক্রিমিন্যাল নয়, আর গুগল তো আমাকে আরো বেটার সার্ভিস প্রভাইড করার জন্য ডাটা স্টোর করে”। এখানে কথা গুগলের ডাটা স্টোর করা নিয়ে নয়। আপনার যেকোনো পার্সোনাল তথ্য ক্লাউডে থাকাটায় হচ্ছে প্রধান রিস্ক। চিন্তা করে দেখুন, এমন এক পরিবেশে আপনার ডাটা গুলো রয়েছে যেখানে আপনার বিন্দু মাত্র কোন কন্ট্রোল নেই, আপনি জানেন ই না সেখানে ফিজিক্যালি বা ভার্চুয়ালি কি ঘটতে পারে। যেকোনো হ্যাকার যেকোনো সময় আপনার ডাটা গুলো হ্যাক করতে পারে। আবার আপনার তথ্য গুলো আপনাকে বিন্দু মাত্র না জানিয়ে কোন তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমি কিছু কমন ডিভাইজকে আলোচিত করবো এবং জানাবো কিভাবে তারা আপনার পার্সোনাল সবকিছুকে স্পাইং করছে, কিভাবে সেগুলোকে আটকানো যেতে পারে!
স্মার্ট স্পীকার; আলেক্সা/গুগল হোম
অ্যামাজন আলেক্সা, গুগল হোম —সহ যতো এরকম স্মার্ট স্পীকার রয়েছে প্রত্যেকের ভয়েস কম্যান্ডের উপর কাজ করে। এদের প্রত্যেকেই হট কী-ওয়ার্ড শোনার পর থেকে কম্যান্ড গ্রহন করতে শুরু করে। যেমন গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট’কে “ওকে গুগল” বলার পরেই এটি চালু হয়ে যায় এবং কম্যান্ড গ্রহন করতে আরম্ভ করে। এর মানে হচ্ছে স্পীকারটি নিশ্চয় আপনার ভয়েস সবসময় মনিটর করছে, আপনি স্পীকার’কে কিছু বললে সেটাও মনিটর হচ্ছে স্পীকার’কে না বললে সেটাও মনিটর হচ্ছে।
ব্যাট আপনি কি জানেন, বিশেষ করে অ্যামাজন ইকো (আলেক্সা) আপনার সমস্ত কিছু রেকর্ড করে ক্লাউডে পাঠিয়ে দেয়? হ্যাঁ, আপনার লাইফের প্রত্যেক সেকেন্ডের রেকর্ডিং আলেক্সার কাছে রয়েছে, এবং অ্যামাজন ক্লাউড থেকে সেগুলো অ্যাক্সেস করা সম্ভব। মেনে নিলাম আপনি কোন অপরাধী নন, কিন্তু আপনি লিভিং রুমে আপনার স্ত্রী’র সাথে কি গল্প করেছেন সেগুলোও আলেক্সা রেকর্ড করে রাখবে, এখন চিন্তা করুণ এগুলো ব্যাপার কতোটা প্রাইভেট, আর সেগুলো ক্লাউডে জমা থাকা কতোটা রিস্কি!
কিভাবে আলেক্সা রেকর্ডিং খুঁজে পাবেন?
- অ্যামাজন ডিভাইজে যান
- এবার আপনার ইকো (স্মার্ট স্পীকার) সিলেক্ট করুণ
- এবার ম্যানেজ রেকর্ডিং সিলেক্ট করুণ
এখানে আপনি আপনার সকল রেকর্ডিং ডাটাবেজ পেয়ে যাবেন, জাস্ট সব গুলোকে ডলিট করে ফেলুন। এরপরের পদক্ষেপ হবে, জাস্ট আলেক্সা বা গুগল হোম এর মাইক মিউট করে রাখুন। যখন আপনি এই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করছেন না, তখন মাইক্রোফোন অফ রাখাটাই বেস্ট সলিউসন হবে। আলেক্সা এবং গুগল হোম উভয় ডিভাইজেই ফিজিক্যাল বাটন রয়েছে, জাস্ট প্রেস করে মাইক অফ করে রাখুন।
স্মার্ট টিভি
কিছু স্মার্ট টিভি’তে মাইক্রোফোন রয়েছে আবার কিছু স্মার্ট টিভি রিমোট কন্ট্রোলেও মাইক্রোফোন থাকে ভয়েস কম্যান্ড নেওয়ার জন্য। তো এভাবে আপনার ভয়েস স্পাইং হতে পারে কিন্তু স্মার্ট টিভিতে বিশেষভাবে মেটাডাটা স্পাইং করা হয়। স্মার্ট টিভি গুলোকে অবশ্যই ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড করানোর প্রয়োজন পড়ে। এই টিভি গুলো আপনার ভিউইং হ্যাবিট স্পাই করে এবং আপনাকে টার্গেটেড অ্যাডস দেখানো হয়। ভিজিও নামের একটি টিভি ব্যান্ড একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে এরা ইউজারদের ডাটা ইউজারদের বিনা অনুমতিতে বিক্রি করে দেয়।
আপনি যদি না চান আপনার টিভি এতোটা স্মার্ট হোক, তো টিভির সেটিং থেকে আপনার প্রয়োজন অনুসারে প্রাইভেসি অফ অন করে রাখুন। এই লিঙ্ক থেকে দেখে নিন, কিভাবে বিভিন্ন ব্যান্ড এবং মডেল অনুসারে টিভির স্পাইং অফ করবেন। স্মার্ট টিভি কেনার আগে চিন্তা করে দেখুন, আপনার সত্যিই কি স্মার্ট টিভি কেনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, নাকি শুধু প্রযুক্তির পেছনে দৌড়াতে গিয়ে স্মার্ট টিভি কেনার চিন্তা করছেন। আপনার টিভিতে যদি ওয়েবক্যাম লাগানো থাকে, সেটা সহজেই যেকোনো হ্যাকার হ্যাক করতে পারে। চিন্তা করে দেখুন, টিভির ওয়েবক্যাম দিয়ে কোন ব্যাক্তি সর্বদা আপনার ঘরের উপর নজর রাখতে পারবে।
কম্পিউটার
আপনার কম্পিউটার সবচাইতে স্মার্ট ডিভাইজ এবং এদ্বারা ভার্চুয়ালি প্রায় যেকোনো কাজ করানো সম্ভব। আর আলাদা ডিভাইজ গুলোর চেয়ে কম্পিউটার’কে হ্যাক করাও অনেক সহজ ব্যাপার। হ্যাক তো দুরের কথা, আপনার কম্পিউটার থেকে সকল পার্সোনাল ডাটা সবসময়ই গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক ট্র্যাক করেই চলেছে। তারপরে, আপনি সিকিউরিটি আর্টিকেল গুলো থেকে এতদিনে নিশ্চয় জেনেছেন, কতোভাবে কতো প্রকারে আপনার কম্পিউটার’কে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করানো সম্ভব।
আবার আপনার কম্পিউটারের সাথে লাগানো থাকা মাইক বা ওয়েবক্যাম বিশাল সিউরিতি রিস্কের সৃষ্টি করতে পারে। ওয়েবক্যাম হ্যাক হওয়া নিয়ে একটি বিস্তারিত আর্টিকেলে আমি এই ব্যাপারে বর্ণনা করেছি। কম্পিউটার নিরাপত্তা নিয়ে আমি ইতিমদ্ধেই অনেক আর্টিকেল পাবলিশ করেছি, সেগুলো অনুসরন করুণ। অবশ্যই একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করুণ এবং সেটাকে নিয়মিত আপ-টু-ডেট রাখুন। সেকেন্ডারি অ্যান্টিম্যালওয়্যার টুল ব্যবহার করুণ। যখন প্রয়োজন নেই সে সময় ওয়েবক্যামে টেপ পেঁচিয়ে রাখুন, কিংবা কম্পিউটার থেকে অ্যানপ্ল্যাগ করে রাখুন।
পরিশেষে এতোটুকুই বলবো, কোন কিছু স্মার্ট মানে এই নয় সেটা শুধু আশীর্বাদই বয়ে আনবে। তাই স্মার্ট ডিভাইজ কেনার আগে অবশ্যই ভেবে দেখুন সেটা আপনার সত্যিই কতোটুকু প্রয়োজনীয়। খাল কেটে কুমীর এনে তারপরে কুমীরের খাঁচা তৈরি করার চেয়ে এটাই বেটার নয় কি, কুমীরকে আসতেই না দেওয়া! হ্যাঁ, স্মার্ট ডিভাইজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আমাদের, বিশেষ করে একজন টেকী ব্যাক্তি হিসেবে আমার সকল প্রকারের ডিভাইজের সাথে ডীল করতে হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই সিকিউরিটির কথা মাথায় রাখতে হবে!