Computer

কম্পিউটারের প্রকারভেদ এবং কার্যাবলী

বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। আর যুগ ব্যবস্থাকে সহজ করে দিয়েছে কম্পিউটার নামক অসাধারণ মস্তিস্ক। আজকাল কম্পিউটার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে, পারমাণবিক চুল্লি, চিকিৎসা, আবহাওয়া, ইমিগ্রেশন, ব্যাংকিং ইত্যাদি সেক্টরে কম্পিউটার একটি অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কম্পিউটার আসলে কি? এটির ব্যবহার এমন নানা প্রশ্ন আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। চলুন কম্পিউটারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।

কম্পিউটার কি?

কম্পিউটার এমন একটি মেশিন যা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া করতে পারে। সবশেষে ব্যবহারকারীর জন্য নির্দিষ্ট ফলাফল এনে দেয়। বেশিরভাগ কম্পিউটার বাইনারি সিস্টেম ০ ও ১ এর উপর নির্ভর করে ডেটা সংরক্ষণ, অ্যালগরিদম গণনা এবং তথ্য প্রদর্শনের মতো কাজগুলো সম্পূর্ণ করে। সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার অত্যন্ত জটিল কাজগুলো সম্পাদন করতে পারে, যেমন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেওয়া ইত্যাদি।

কম্পিউটার হল এমন একটি ইলেকট্রনিক মেশিন যা ব্যবহারকারীর দ্বারা প্রদত্ত বিভিন্ন ধরণের নির্দেশাবলী পরিচালনা করে, এবং শেষে ব্যবহারকারীর জন্য সঠিক আউটপুট তৈরি করে। কম্পিউটার সব ধরনের সহজ এবং জটিল অপারেশন করতে সক্ষম। কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তাই এতে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার উপাদান যেমন সার্কিট, ট্রানজিস্টর এবং তার ইত্যাদি থাকে।

কম্পিউটারের প্রকারভেদ

কম্পিউটার কাজের ধরন এবং অপারেটিং সিস্টেম অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রতিটি কম্পিউটার আলাদা আলাদা কাজে পারদর্শী। যাইহোক, কাজের ধরন অনুসারে কম্পিউটার প্রধানত ৪ প্রকার। যেমন:

  1. সুপার কম্পিউটার
  2. মেইনফ্রেম কম্পিউটার
  3. মিনি কম্পিউটার এবং
  4. মাইক্রো কম্পিউটার

১. মাইক্রো কম্পিউটার

মাইক্রোকম্পিউটার আকারে ছোট। এটি ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সমতুল্য। মাইক্রো কম্পিউটারগুলো বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেমন CPU (Central processing unit), মাইক্রোপ্রসেসর, ইনপুট/আউটপুট ডিভাইস এবং মেমোরি বা অন্যন্য স্টোরেজ ডিভাইস। 

মাইক্রো কম্পিউটার উদাহরণ:

পিসি

স্মার্টফোন

নোটবুক

পিডিএ

মাইক্রো কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • এটি আকারে সবচেয়ে ছোট।
  • এতে সীমিত সংখ্যক সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়।
  • এটি ব্যক্তিগত কাজ এবং অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এক সময়ে শুধুমাত্র একজন ব্যবহারকারী কাজ করতে পারেন।
  • কম ব্যয়বহুল এবং ব্যবহার করা সহজ।
  • এটি ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর বিশেষ দক্ষতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই।
  • সাধারণত, একটি একক সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে গঠিত।
  • এটি মাল্টিটাস্কিং যেমন প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা ইত্যাদি করতে সক্ষম।

২. মিনি কম্পিউটার

প্রথম মিনি কম্পিউটারটি ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হয়। সুপার কম্পিউটার এবং মেইনফ্রেম কম্পিউটারের তুলনায় মিনি কম্পিউটার আকারে ছোট হয়। এটিতে বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন ট্রানজিস্টর এবং কোর মেমোরি ব্যবহার করা হয়েছিল। ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট কর্পোরেশন এর মাধ্যমে প্রথম মিনি কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে। 

মিনিকম্পিউটার এমন একটি কম্পিউটার যা আকারে ছোট, কম ব্যয়বহুল। এটি মেইনফ্রেম অথবা সুপার কম্পিউটারের চেয়ে কম শক্তিশালী কিন্তু পার্সোনাল কম্পিউটারের চেয়ে ব্যয়বহুল এবং বেশি শক্তিশালী। মিনি কম্পিউটারগুলো বৈজ্ঞানিক এবং প্রকৌশল গণনা, ব্যবসায়িক লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ, ফাইল আদান প্রদান এবং ডাটাবেস পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হত।

মিনি কম্পিউটারগুলো ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে আবির্ভূত হয়েছিল এবং এটি ৭০ দশকে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করেছিল। কিন্তু ১৯৮০ এবং ১৯৯০ সালের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।

মিনি কম্পিউটারের কিছু উদাহরণ

ট্যাবলেট পিসি

ডেস্কটপ মিনি-কম্পিউটার

স্মার্টফোন

নোটবুক

৩. মেইনফ্রেম কম্পিউটার

মেনফ্রেম কম্পিউটার প্রাইমারি মেমরি (RAM) এবং একাধিক প্রসেসর ব্যবহার করে। এটি সমস্ত ওয়ার্কস্টেশন এবং এর সাথে যুক্ত টার্মিনাল পয়েন্টগুলোর জন্য একটি কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট হিসাবে কাজ করে। মেইনফ্রেম কম্পিউটার প্রচুর পরিমাণে ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একইসাথে হাজার হাজার ব্যবহারকারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। 

মেইনফ্রেম কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যাংকিং, বীমা এবং টেলিকম সেক্টরের মতো বড় সংস্থাগুলোর ব্যবহারের জন্য আদর্শ করে তোলে, যেগুলোতে উচ্চ পরিমাণে ডেটা পরিচালনা এবং প্রক্রিয়া করতে হয়। এছাড়াও এটির অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:
  • এটি বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রক্রিয়া করতে পারে। যেমন ব্যাংকিং খাতে এক সেকেন্ডে লাখ লাখ লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে।
  • সঠিক ইনস্টলেশনের পরে একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত মসৃণভাবে চলতে পারে।
  • এটি বিশাল মেমোরি বা স্টোরেজ ডিভাইস পরিচালনায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেয়।
  • এটি প্রসেসর এবং ইনপুট/আউটপুট টার্মিনালগুলোর মধ্যে তার কাজের চাপ বিতরণ করার ক্ষমতা রাখে।
  • মেইনফ্রেম কম্পিউটারে প্রক্রিয়াকরণের সময় ত্রুটির সম্ভাবনা কম থাকে। তবে, যদি কোন ত্রুটি ঘটে, এটি তার কর্মক্ষমতা প্রভাবিত না করে দ্রুত ঠিক করতে পারে।
  • এটি সংরক্ষিত ডেটা,  তথ্য এবং ডেটার অন্যান্য চলমান আদান-প্রদান রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে।

৪. সুপার কম্পিউটার

সুপার কম্পিউটার অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং খুব দ্রুত কাজের জন্য পারদর্শী হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার হচ্ছে এই সুপার কম্পিউটার। একটি সুপারকম্পিউটারে হাজার হাজার প্রসেসর থাকে। তাই এর কাজের গতিও অন্যন্য কম্পিউটার থেকে সবচেয়ে বেশি।

সুপারকম্পিউটারগুলো বেশিরভাগই বড় আকারের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রকৌশল ক্ষেত্রগুলোতে স্থাপন করা হয় কারণ এসব স্থানে প্রচুর পরিমাণে ডেটাবেস রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। সুপার কম্পিউটার ডিজাইনের সাথে জড়িত অসংখ্য অংশ এবং উপাদানগুলোর কারণে আকারে খুব বড় হয়।

সুপার কম্পিউটারের উদাহরণ

একটি সুপার কম্পিউটারের উদাহরণ হল তিয়ানহি-২ (Tianhe-2), যা চীনের গুয়াংজুতে ন্যাশনাল সুপার কম্পিউটার সেন্টারে অবস্থিত। এটি ৩.১২ মিলিয়ন কোর বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এছাড়াও আরো অনেকগুলো সুপার কম্পিউটার রয়েছে। যেমন:

টাইটান

সেকোইয়া

মীরা

জুকুইন

সুপারএমইউসি

সুপার কম্পিউটারের কাজ

  • মহাকাশ অনুসন্ধান
  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস
  • পারমাণবিক পরীক্ষা

তথ্য আদান-প্রদান এবং অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে আবারো তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন: এনালগ, ডিজিটাল, এবং হাইব্রিড কম্পিউটার।

১. অ্যানালগ কম্পিউটার

আমাদের চারপাশের অনেক কিছু ক্রমাগত পরিবর্তনশীল। ডেটার এই ক্রমাগত পরিবর্তনশীল স্ট্রিমটিকে এনালগ ডেটা বলা হয়। অ্যানালগ কম্পিউটারগুলো আবহাওয়া তথ্য, বৈজ্ঞানিক এবং শিল্প কলকারখানায় যেমন বৈদ্যুতিক প্রবাহ, ক্যাপাসিটরের ফ্রিকোয়েন্সি এবং রোধ পরিমাপ করতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চলন্ত গাড়ির গতি নির্ণয় করতেও এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার হয়।

এনালগ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • এটি ক্রমাগত আকারে ডেটা প্রদর্শন করে।
  • এর পরিমাপের একক হল ভৌত মান। যেমন তাপমাত্রা এবং চাপ।
  • ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ব্যবহার করে সংকেত প্রদান করে।
  • এর মেমোরি ইউনিট এবং কম্পিউটিং টার্মিনাল নেই।
  • ইনপুট/আউটপুট ডিভাইস নেই।
  • এটি ভৌত ডিভাইসগুলোর ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ডেটা নির্ধারণ করতে সক্ষম করে। যেমন- থার্মোমিটার।
  • উদাহরণ হল – স্পিডোমিটার, টেলিফোন লাইন ইত্যাদি।
  • এর উপাদানগুলো হল রেজিস্টার এবং ক্যাপাসিটর।
  • ধীর গতি
  • এটি পরিচালনার জন্য প্রযুক্তিগত কর্মীদের প্রয়োজন।

২. ডিজিটাল কম্পিউটার

ডিজিটাল কম্পিউটারে সমস্ত গণনা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপগুলো বাইনারি সিস্টেম ০, ১ ডিজিট আকারে উপস্থাপন করা হয়। এই কম্পিউটারগুলো শিল্প, গাণিতিক গণনা এবং অন্যান্য জটিল গণনাগুলোও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

ডিজিটাল কম্পিউটারের উদাহরণ

  • সুপার কম্পিউটার
  • মেইনফ্রেম কম্পিউটার
  • মাইক্রো কম্পিউটার এবং
  • মিনি কম্পিউটার

৩. হাইব্রিড কম্পিউটার

হাইব্রিড কম্পিউটার এনালগ এবং ডিজিটাল উভয় কম্পিউটারের সংমিশ্রণে গঠিত। এটি এনালগ এবং ডিজিটাল উভয় ধরনের ডেটা সম্পাদন করতে সক্ষম। এই কম্পিউটারগুলো অ্যানালগ সংকেত আকারে ইনপুট নেয়, সেগুলোকে ডিজিটালে রূপান্তর করে এবং ডিজিটাল আকারে আউটপুট তৈরি করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button