News

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি? এবং আইনের ধারা সমূহ।

এই আর্টিকেলে. আমরা আলোচনা করব- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি? এর সংজ্ঞা, এবং আইনের উল্লেখযোগ্য ধারাসমূহ।

বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত আইন হল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ইন্টারনেট বা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে যেসব অপরাধ সংগঠিত হবে, তা প্রতিহত করা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রণীত হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি?

ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিধানকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (Digital Security Act) বলে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল উদ্দেশ্যই হল ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে করা অপরাধ প্রতিরোধ এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদান।

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রণীত হয়। সাম্প্রদায়িকতা, চরমপন্থা, স্যোশাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়

যদিও আইনটি নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, বিশেষ করে সংবাদপত্রের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এটি শুধু সাংবাদিক নয়, যেকোনো পেশার যে কাউকে হয়রানির জন্য এই আইনের অপব্যবহার করা যেতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল-এর অধিকাংশ ধারা জামিন অযোগ্য বলে বিবেচিত। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কোনরূপ আদালতের আদেশ বা পরোয়ানা ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার ও তদন্ত পরিচালনা করা যাবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। অভিযোগ গঠনের ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে এর মধ্যে করা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশিরভাগ ধারাই জামিনঅযোগ্য। তবে, ২৯ ধারাসহ ২০, ২৫ ও ৪৮ ধারার অপরাধে জামিনের বিধান আছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা সমূহ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর কিছু উল্লেখযোগ্য ধারা দেওয়া হল।

১৭ ধারা: যদি কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোয় বেআইনি প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট বা অকার্যকরের চেষ্টা করে一 তাহলে অনধিক সাত বছরের জেল এবং জরিমানা ২৫ লাখ টাকা। ক্ষতিসাধন করলে সর্ব্বোচ ১৪ বছরের কারাদন্ড এবং জরিমানা এক কোটি টাকা।

১৮ ধারা: ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশ বা সহায়তা করলে সর্ব্বোচ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা ১০ লাখ টাকা।

১৯ ধারা: বেআইনিভাবে যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম হতে কোনো উপাত্ত, উপাত্ত ভাণ্ডার, তথ্য বা উদ্বৃতাংশ সংগ্রহ করেন বা কোনো উপাত্তের অনুলিপি সংগ্রহ করেন一তাহলে সর্ব্বোচ সাত বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা ১০ লাখ টাকা।

২০ ধারা: কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন বা ধ্বংস করলে সর্ব্বোচ তিন বছরের সাজা এবং জরিমানা তিন লাখ টাকা।

২১ ধারা: যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও অপপ্রচার চালানো বা উহাতে মদদ প্রদান করেন一 তাহলে উক্ত ব্যক্তির অপরাধের শাস্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

২৫ ধারা: ক.যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয়প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করার, বা বিভ্রান্তি ছড়াবার, বা তদুদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন一 তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ অপরাধের জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

২৭ ধারা: যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে এবং জনগণের মাঝে ভয়ভীতি সঞ্চারের জন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা করায়, তাহলে সর্ব্বোচ সাজা ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা।

২৮ ধারা: যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কিছু ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করে一তাহলে সর্ব্বোচ ১০ বছরের সাজা এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা ।

২৯ ধারা: যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের ৪৯৯ ভঙ্গ করে কোনো অপরাধ করেন一 তাহলে সর্ব্বোচ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।

৩০ ধারা: কোন ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

৩২ ধারা: যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা সংরক্ষণে সহায়তা করেন一 তাহলে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আর এই অপরাধ যদি একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার করেন বা বারবার করেন一 তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

৩৪ ধারা: যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করেন一তাহলে সর্ব্বোচ ১৪ বছরের সাজা এবং জরিমানা এক কোটি টাকা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button