বাংলাদেশের কম্পিউটার এর ইতিহাস
বাংলাদেশের কম্পিউটারের ইতিহাস
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয় ষাটের দশকে এবং নববই-এর দশকে তা ব্যাপকতা লাভ করে। ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে 1964 সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের “তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান” প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আইবিএম “International Business Machines – IBM” কোম্পানির 1620 সিরিজের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার “Mainframe Computer”। যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল গবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ। ষাটের দশকে দেশে ও বিদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণাসহ ব্যাংক-বীমা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করে এবং এজন্য রুটিন হিসাবের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি প্রয়োজন হয়ে পড়ে হিসাবে দ্রুততা আনয়নের। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে হিসাব পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এসময় দেশের কয়েকটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ব্যয়বহুল “মেইনফ্রেম কম্পিউটার” স্থাপন করে।
বাংলাদেশে এর প্রথম কম্পিউটার IBM
1964 সালে জাহাজে চড়ে বিশাল এক কম্পিউটার এলো তৎকালীন পাকিস্তানে। “IBM” মেইন ফ্রেম 1620 কম্পিউটার কিন্তু কে কিভাবে করবে এই কম্পিউটার ব্যবহার? কেই বা জানে সেটার ব্যবহার? খোঁজ মিলল একজনের। তার নাম মোঃ হানিফউদ্দিন মিয়া। তিনি এই কম্পিউটারের ব্যবহার জানেন। কেননা এ্যানালগ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বিষয়ে ট্রেনিং করেছেন তিনি। অগত্যা, ডাক পড়ল তাঁর। পাকিস্তানের লাহোরে গিয়ে এই কম্পিউটারের ব্যবহারের আহ্বানও জানানো হলো তাঁকে। বলা হলো, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটারের চালক নাটোরের মোঃ হানিফউদ্দিন মিয়া কিন্তু বেঁকে বসলেন তিনি। নিজের দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না তিনি। কি আর করা! অবশেষে ঢাঁউস সাইজের কম্পিউটারটি গেল ঢাকার আণবিক শক্তি কমিশনে। হানিফউদ্দিনের হাতেই শুরু হলো সেটার ব্যবহার। এই হলো দেশের প্রথম কম্পিউটার ও কম্পিউটার অপারেটরের
কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখার সম্ভব ইতিহাস
কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখা সম্ভব হয় 1987 সালে এবং এ সাফল্যের কৃতিত্ব “মাইনুল ইসলাম” নামক একজন প্রকৌশলির। তিনি নিজের উদ্ভাবিত বাংলা ফন্ট “মাইনুলিপি” ব্যবহার করে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলার জন্য আলাদা কোনো “keyboard” ব্যবহার না করে ইংরেজি কি-বোর্ড দিয়েই কাজ চালানো হয়েছিল। ইংরেজি ও বাংলার আলাদা ধরনের বর্ণক্রম এবং বাংলার যুক্তাক্ষরজনিত সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের চার স্তর কি-বোর্ড “4 layer keyboard” ব্যবহারের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে। মাইনুলিপির পর পরই “শহীদলিপি” ও “জববারলিপি” নামে আরও দুটো বাংলা ফন্ট উদ্ভাবিত হয় এবং একই পদ্ধতিতে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহূত হয়। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ 1988 সালে আনন্দ কম্পিউটার্স নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তৈরি হয় অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস “বিজয়”। এ সময়েই প্রথম বাংলা কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি হয়।
প্রথম পর্যায়ের বাংলা কি-বোর্ডগুলির মধ্যে “বিজয়” এবং “মুনীর” উল্লেখযোগ্য। ইন্টারফেস পদ্ধতিতে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের “Operating System or OS” সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এবং এ কি-বোর্ডকে ক্রিয়াশীল করে ও ফন্ট নির্বাচন করে কম্পিউটারে বাংলা লেখা যায়। বিজয় ইন্টারফেসটি ছিল ম্যাকিনটোশ ভিত্তিক এবং অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য অত্যধিক হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো সীমিত, মূলত প্রকাশনার কাজেই তা ব্যবহূত হতো। IBM কম্পিউটারের ব্যবহারকারী আগাগোড়াই বেশি এবং এ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করেই 1992 সালের প্রথম দিকে “বর্ণ” নামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা ওয়ার্ডপ্রসেসিং সফটওয়্যার উদ্ভাবন করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের দুজন ছাত্র রেজা-ই আল আমিন আব্দুল্লাহ ( অঙ্ক ) ও মোঃ শহীদুল ইসলাম ( সোহেল )। প্রতিভাবান দু কিশোর প্রোগ্রামারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সেইফওয়ার্কস-এর পক্ষ থেকে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ ওয়ার্ডপ্রসেসরটির উদ্ভাবন ছিল বাংলা সফটওয়্যারের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
ওয়ার্ডপ্রসেসরটি ছিল “ডস” “Disk Operating System – DOS” ভিত্তিক, কিন্তু প্রোগ্রামটির নিজস্ব আঙ্গিক ছিল উইন্ডোস Windows” -এর মতো। বর্ণ-তে তিন ধরণের কি-বোর্ড ব্যবহার করা যেতো মুনীর, বিজয় এবং ইজি কি-বোর্ড “Easy keyboard” বর্ণ সফটওয়্যারটিতে কি-বোর্ড পুনর্গঠনের “Customise” সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ, কেউ ইচ্ছা করলে নিজের পছন্দ বা সুবিধা অনুযায়ী নতুন কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি করে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল। পরবর্তীকালে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ক্রমাগত উন্নত থেকে উন্নততর সংস্করণের ওয়ার্ড প্রসেসর বাজারে ছাড়তে থাকলে 1993 সালে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে “IBM” কম্পিউটারের আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম “Microsoft Windows” -এর সঙ্গে ব্যবহারের জন্য ইন্টারফেস “বিজয়” উদ্ভাবিত হয়। 1994 সালে “লেখনী” নামেও একটি ইন্টারফেস তৈরি হয়। যদিও “আবহ” 1992-এর শেষে উদ্ভাবিত “IBM” কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস, কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে এটি তেমন একটা ব্যবহূত হয়নি।
বাংলাদেশের কম্পিউটারের ইতিহাস
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয় ষাটের দশকে এবং নববই-এর দশকে তা ব্যাপকতা লাভ করে। ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে 1964 সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের “তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান” প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আইবিএম “International Business Machines – IBM” কোম্পানির 1620 সিরিজের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার “Mainframe Computer”। যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল গবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ। ষাটের দশকে দেশে ও বিদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণাসহ ব্যাংক-বীমা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করে এবং এজন্য রুটিন হিসাবের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি প্রয়োজন হয়ে পড়ে হিসাবে দ্রুততা আনয়নের। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে হিসাব পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এসময় দেশের কয়েকটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ব্যয়বহুল “মেইনফ্রেম কম্পিউটার” স্থাপন করে।
ষাটের দশকের শেষ দিকে তদানীন্তন হাবিব ব্যাংক “IBM 1401” কম্পিউটার এবং ইউনাইটেড ব্যাংক “IBM 1901” কম্পিউটার স্থাপন করে। প্রধানত ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব-নিকাশের জন্য ব্যবহূত এসব কম্পিউটার ছিল তৃতীয় প্রজন্মের “মেইনফ্রেম” ধরনের। স্বাধীনতার পূর্বে, 1969 সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে স্থাপিত হয় একটি “IBM 360” কম্পিউটার। “আদমজী জুট মিলে” ও এ সময় একটি “মেইনফ্রেম কম্পিউটার” স্থাপিত হয়েছিল। সীমিত পরিসরে হলেও স্বাধীনতা পূর্বকালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স কৌশল প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার-এর অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়। 1972-এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নামক প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয় IBM 370, IBM 9100 এবং IBM 4341 প্রভৃতি বৃহৎ কম্পিউটার।