বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ছাড়া আমরা আমাদের জীবন কল্পনা করতে পারিনা।
কারণ, এখনের সময়ে প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় ইন্টারনেট এর।
শিক্ষা, ব্যাংকিং, যোগাযোগ, প্রযুক্তি, মনোরঞ্জন এগুলোকে ধরে অন্যান্য প্রচুর ক্ষেত্রে আজ ইন্টারনেট এক প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই Internet technology আমাদের বিভিন্ন জটিল সমস্যা গুলোর সমাধান করতে সক্ষম হয়ে দাঁড়িয়েছে যার জন্য এর অবদান কখনোই ভুলতে পারা যাবেনা।
কিন্তু, যেখানে ইন্টারনেট বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে থাকে, ঠিক সেভাবেই কিছু সাংঘাতিক জটিল সমস্যা গুলোর কারণ কিন্তু এই ইন্টারনেট।
চলুন, নিচে আমরা ইন্টারনেট নামের এই গুরুত্বপূর্ণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনেনেই।
ইন্টারনেট কি ? (What is internet in Bengali)
যদি আমরা সোজা এবং সরল ভাবে বুঝতে চাই তাহলে ইন্টারনেট শব্দটি দুটি আলাদা আলাদা শব্দের দ্বারা তৈরি হয়েছে – Inter এবং Net.
ইন্টার (Inter) মানে হলো পরস্পরে সংযুক্ত হয়ে থাকা এবং নেট (Net) মানে হলো জাল।
তাই সরাসরি বললে, ইন্টারনেট মানে হলো একাধিক কম্পিউটার গুলোর পরস্পরে সংযুক্ত হয়ে থাকা একটি জাল।
এই জালের মধ্যে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত (connect) হওয়ার ক্ষেত্রে একটি রাউটার (router) এবং সার্ভার (server) এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
Internet হলো বিশ্বের সব থেকে বড় কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।
কোটি কোটি কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস গুলোর একটি global network এই ইন্টারনেট।
Internet এর মাধ্যমে প্রায় যেকোনো ধরণের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব, বিশ্বের যেকোনো জায়গায় থাকা যেকোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব এবং অন্যান্য বিভিন্ন কাজ গুলো এর মাধ্যমে সম্ভব।
ইন্টারনেট হলো এমন একটি গ্লোবাল সিস্টেম (Global System) যেখানে পরস্পরে সংযুক্ত হয়ে থাকা বিভিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক (computer networks) গুলো রয়েছে।
আর এই network এবং computer device গুলোর সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে Internet protocol suite (TCP/IP) ব্যবহার করে থাকে।
সোজা ভাবে ইন্টারনেট কাকে বলে ?
Internet এর ফুল ফর্ম হলো ‘interconnected networks“.
ইন্টারনেটকে আবার অনেক জায়গায় “World Wide Web (www)” বা সোজা ভাবে “Web” বলেও বলা হয়।
ইন্টারনেট হলো একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক (Global network) যার দ্বারা বিভিন্ন আলাদা আলাদা জায়গায় থাকা computer device গুলো পরস্পরে ডাটার (data) আদান প্রদান (exchange) করার উদ্দেশ্যে সংযুক্ত হয়ে থাকে।
পরস্পরে সংযুক্ত এই কম্পিউটার গুলো তাদের মধ্যে ডাটার এক্সচেঞ্জ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন আলাদা আলাদা মাধ্যমের ব্যবহার করতে পারে।
যেমন, E-Mail, Online chatting, Video conferencing, Social Networking, E-Commerce transaction, downloading / uploading file ইত্যাদি।
ইন্টারনেট এর মাধ্যমে তথ্য (information) প্রচার, সংগ্রহ এবং বিশ্বজুড়ে যেকোনো জায়গার থেকে যেকোনো জায়গায় যোগাযোগ (communication) সম্ভব।
Internet কি, বিষয়টা হয়তো এখন ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন।
ইন্টারনেট এর ইতিহাস – History Of Internet
ইন্টারনেটে সেবার শুরু করা হয় আমেরিকার ডিফেন্স (defence) বিভাগের দ্বারা।
বলা হয় যে, যুধ্যের সময় তথ্যের আদান প্রদান এবং সঞ্চার এর প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে এই ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়।
১৯৬৯ সালে আরপানেট (ARPANET) নামের একটি নেটওয়ার্ক (network) বিকশিত করা হলো।
ARPANET এর সম্পূর্ণ নাম বা ফুল ফর্ম হলো “Advanced Research Projects Agency Network“.
ARPANET প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল United States Department of Defense এর Advanced Research Projects Agency (ARPA) দ্বারা।
১৯৭০ সালে Vinton Gray Cerf এবং Robert E. Kahn দ্বারা সর্ব প্রথমে ইন্টারনেট শুরু করা হয়।
এদুজনকে ইন্টারনেটের ফাদার (father of internet) বলেও বলা হয়।
Ray Tomlinson দ্বারা ১৯৭২ সালে প্রথম ইমেইল পাঠানো হয়েছিল।
১৯৭০ এর দশকে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এর ব্যবহারের উদ্দেশ্যে FTP & TCP / IP বিকশিত করা হলো যার মাধ্যমে লোকেরা পরস্পরে যোগাযোগ করতে পারলেন এবং ডাটা শেয়ার করার সুবিধা শুরু হলো।
একজন English scientist যার নাম ছিলেন Sir Timothy Berners-Lee তিনি ১৯৮৯ সালে World Wide Web (www) ইভেন্ট (invent) করেছিলেন।
1990 সালে উনার দ্বারা প্রথম web browser লিখা ও তৈরি করা হয়েছিল।
6 August 1991 তারিখে world wide web (www) জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত / উপলব্ধ করা হলো।
World wide web (WWW) কি ?
বন্ধুরা ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) দুটো কিন্তু আলাদা আলাদা জিনিস।
Internet হলো পরস্পরে সংযুক্ত একাধিক কম্পিউটার গুলোর একটি global network যেটার মাধ্যমে কম্পিউটার গুলো পরস্পরে সংযোগ স্থাপন করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ, শেয়ার, ট্রান্সফার ইত্যাদি কাজ গুলো করে থাকে।
তবে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) হলো ইন্টারনেটের একটি ভাগ যেটা hypertext documents গুলোকে support করে থাকে।
ইন্টারনেটের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের ডাটা (data) গুলোকে দেখার (view) জন্য এবং নেভিগেট (navigate) করার জন্য ইউসার দের অনুমতি দিয়ে থাকার প্রক্রিয়াটি হলো ওয়েব (web).
ইন্টারনেট হলো বিভিন্ন কম্পিউটার গুলোর একটি নেটওয়ার্ক,
যেখানে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হলো সমস্ত ওয়েব পেজের সংগ্রহ (collection of webpages) যেগুলো এই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর মধ্যে পাওয়া যায়।
World wide web কে কেবল web বলেও বলা হয়।
ইন্টারনেট এর ব্যবহার – Uses of the Internet
আগেকার সময়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার তেমন অধিক পরিমানে করা হতোনা।
কারণ, এর ইতিহাস দেখলেই আমরা বুঝতে পারি যে ইন্টারনেটের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা কেবল কিছু বছর আগের থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রথম অবস্থায় ইন্টারনেটের ব্যবহার কেবল বৈজ্ঞানিক কাম-কাজ, গবেষণা এবং সুরক্ষা (defence) বিভাগের দাঁড়া করা হতো।
কিন্তু যখন সাধারণ জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ করে দেওয়া হলো, দিনের পর দিন এর ব্যবহার বাচ্চা থেকে বয়স্ক লোকেরাও করতে শিখলেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সাংঘাতিক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইন্টারনেটের ব্যবহার বর্তমান সময়ে প্রচুর ক্ষেত্রে করা হয়। তবে নিচে আমি মূল এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার গুলোর বিষয়ে বলে দিচ্ছি।
- মনোরঞ্জন এর ক্ষেত্রে (gaming, streaming ইত্যাদির ক্ষেত্রে).
- ব্যাংকিং সম্পর্কিত কাজ গুলো করা হচ্ছে।
- ইন্টারনেট হলো যোগাযোগের সব থেকে দ্রুত মাধ্যম। ভিডিও, ভয়েস, টেক্সট ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব।
- শিক্ষার ক্ষেত্রে এর অবদান প্রচুর। ঘরে বসেই আজ যেকোনো বিষয়ে জ্ঞান নেওয়া সম্ভব।
- জরুরি documents এবং files গুলোকে ইমেইল এর মাধ্যমে আদান-প্রদান (send & receive) করা সম্ভব।
- বিশ্বের যেকোনো জায়গার থেকে যেকোনো জায়গায় থাকা লোকেদের সাথে যোগাযোগ করা এবং নতুন বন্ধু বানানো।
- অনলাইন পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বর্তমানে প্রচুর করা হচ্ছে।
- ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন কেনাকাটা করা সম্ভব।
- প্রত্যেক দিনের খবর (news) অনলাইনে জেনেনিতে পারবেন।
- যেকোনো ধরণের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
- বিভিন্ন ধরণের সেবা গুলোর জন্য অনলাইনে বিল পেমেন্ট ও রিচার্জ করতে পারবেন।
- যেকোনো ব্যবসার প্রচার করতে পারবেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
- বিজ্ঞাপন এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রচুর করা হচ্ছে।
- বিভিন্ন ফাইল গুলোকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের কম্পিউটারে ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে।
- আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে কাজ করে প্রচুর লোকেরা টাকা ইনকাম করছেন।
এর বাইরেও ইন্টারনেটের প্রচুর অন্যান্য ব্যবহার গুলো রয়েছে।
ইন্টারনেটের ফলে কি কি ক্ষতি হতে পারে ?
Internet এর সুবিধা ও লাভ যতটা বেশি ততটাই এর থেকে প্রচুর ক্ষতি হওয়ার সুযোগ অবশই রয়েছে।
- এর সব থেকে বড় ক্ষতি হলো ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাস হয়ে যাওয়া। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো ধরণের তথ্য, ফাইল বা ডাটা সংগ্রহ করা সম্ভব। তাই অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে করতে ইন্টারনেট ছাড়া থাকতেই পারেননা। ফলে তাদের সময় নষ্ট হয় এবং প্রাপ্যজনিও কাজ গুলো হয়না।
- ইন্টারনেটে প্রচুর তথ্য রয়েছে যদিও প্রত্যেক তথ্য সঠিক হতে লাগবে বলে কথা নেই। অনেক ভুলভাল তথ্য এখানে রয়েছে যার ফলে অনেক সময় আপনি ভুল জ্ঞান পেয়ে থাকেন।
- প্রচুর হ্যাকার (hackers) রয়েছেন যারা অবৈধ প্রক্রিয়া গুলোর দ্বারা আপনার কম্পিউটার ডিভাইস থেকে ডাটা গুলো চুরি বা নষ্ট করতে পারে।
- Internet এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের computer virus গুলো আপনার device এর মধ্যে ঢুকতে ও ছড়িয়ে যেতে পারে।
- বাচ্চা দের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত রাখা উচিত। কারণ, ইন্টারনেটে এরকম প্রচুর ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে অশ্লীল এবং আপত্তিজনক videos ও images রয়েছে।
- যেকোনো ধরণের ভুল খবর বা তথ্য অনেক তাড়াতাড়ি এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।
- ইন্টারনেটের ব্যবহার সাবধানে করা উচিত। কারণ এখানে প্রচুর ওয়েবসাইট গুলো আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করে থাকে। আপনার ব্যাংক এর তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টাও করা হয়। তাই কেবল, বিস্বাসী (trusted) ওয়েবসাইট গুলো ব্যবহার করা দরকার।
- ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয় ব্যবহারের ফলে আপনার সময় বাঁচে যদিও এর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের ফলে আপনার প্রচুর সময় নষ্ট হয়ে থাকে।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আজকে আমরা ইন্টারনেট এর বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য জেনেনিলাম এবং ইন্টারনেট কি (What is internet) এর সাথে সাথে এর সাথে জড়িত অন্যান্য বিষয় গুলো জানলাম।
ইন্টারনেট মানে কী, বিষয়টি নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।
আমার সব সময় এটাই চেষ্টা রয়েছে যাতে আমি আপনাদের সম্পূর্ণ কাজের তথ্য দিতে পারি।
তাই, এই আর্টিকেল আপনাদের অনেক কাজে আসবে বলে আমি আশা করছি।