নেটওয়ার্কিং

নেটওয়ার্কিং কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে?

কীভাবে নেটওয়ার্ক গঠিত হয়?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক (Computer Network) এর সুনাম না করলেই নয়, যদি আবিষ্কার না হতো আপনি এই লেখাটি পড়তে পারতেন না (ইন্টারনেট ব্যবহার করে) আর আমিও লিখতে পারতাম না (আমি কম্পিউটারে লিখি এবং সেটা আমার রাউটারের সাথে কানেক্টেড রয়েছে আর রাউটার ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড রয়েছে)। এটাতে কোন সন্দেহ নেই, যখন আপনি খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখবেন সেক্ষেত্রে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অত্যন্ত জটিল ব্যাপার কিন্তু যে ধারণা ব্যবহার করে কম্পিউটার গুলোকে একে অপরের সাথে কানেক্ট করে নেটওয়ার্কিং (Networking) করা হয় সেটি অনেক সহজ ব্যাপার। তো চলুন বিস্তারিত সবকিছু জেনে নেওয়া যাক…


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

একদম সহজ ভাষায় বলতে, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কিং এর অস্তিত্ব সেখানেই রয়েছে, যেখানে একাধিক কম্পিউটার একে অপরের সাথে কানেক্টেড হয়ে ডাটা এবং হার্ডওয়্যার রিসোর্স শেয়ার করে। আপনার সিঙ্গেল কম্পিউটার মেশিনটি এমনিতেই অনেক পাওয়ারফুল ডিভাইজ কিন্তু এর সাথে আরো কম্পিউটার বা যন্ত্রানুষঙ্গ (যেমন- মোডেম, প্রিন্টার, স্ক্যানার, রাউটার ইত্যাদি) যুক্ত করার মাধ্যমে আপনার মেশিনটি থেকে আরো বেশি কিছু করানো সম্ভব। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কম্পিউটার গুলো তার, ফাইবার অপটিক ক্যাবল, অথবা ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে কানেক্টেড থাকে যাতে বিভিন্ন আলাদা ডিভাইজ (নোড) গুলো একে অপরের সাথে কথা বলতে পারে। মানুষের চাহিদা অনুসারে আমরা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে থাকি।

নেটওয়ার্কিং এর প্রকারভেদ

আগেই বলেছি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কিং কিন্তু সহজ ব্যাপার নয় আবার নেটওয়ার্ক এক প্রকারেরও নয়; যেমন ধরুন আমি বর্তমানে ল্যাপটপ ব্যবহার করছি আর আমার ল্যাপটপ হোম রাউটারের সাথে কানেক্টেড রয়েছে। তাছাড়াও আমার ল্যাপটপের সাথে প্রিন্টার, এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ সহ আরো ছোটখাটো ডিভাইজ লাগানো রয়েছে, আর আমার বর্তমান অবস্থাকে আপনি প্যান (PAN) বা পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Personal Area Network) এর সাথে তুলনা করতে পারেন —আবার এটাকে সিঙ্গেল পার্সন নেটওয়ার্কও বলতে পারেন। কিন্তু আমি যদি কোন অফিসের উদাহরণ দেয়, যেখানে কিছু কম্পিউটার একসাথে কানেক্টেড থাকে, একসাথে একাধিক প্রিন্টার স্ক্যানার কানেক্টেড থাকে এবং ইন্টারনেট কানেকশন সকলের সাথে শেয়ার করা থাকে; তাহলে এটিকে ল্যান (LAN) বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network) বলা হবে। কিন্তু ল্যান কিন্তু আরো বিশাল আকারের হতে পারে, শুধু কোন অফিস বা স্কুলের কম্পিউটার বা হার্ডওয়্যার গুলো নয়, হতে পারে কোন এলাকার কম্পিউটার বা কোন দেশের বা পৃথিবীর সকল কম্পিউটার গুলোকে একত্রে কানেক্টেড করা যেতে পারে। আর এতো বিশাল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাকে ওয়্যান (WAN) বা ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network) বলা হয়। ইন্টারনেটই হলো ওয়্যান, যেটা সমস্থ পৃথিবীর কম্পিউটার গুলোকে কানেক্টেড রেখেছে।

প্রোটোকল

কম্পিউটার সবসময় যুক্তিকে অনুসরণ করে, আর যেখানেই যুক্তি রয়েছে সেখানেই রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে একটি আর্মির সাথে তুলনা করতে পারেন। যেমন আর্মিতে থাকা সকল সদস্য ঐ দলের নিয়ম অনুসরণ করে ঠিক তেমনি নেটওয়ার্কে থাকা সকল কম্পিউটার ঐ নেটওয়ার্কের কানুন অনুসরণ করেই কাজ করে। উদাহরণ স্বরূপ ল্যান এর কথা বলা যাক, ল্যানে প্রত্যেকটি কানেক্টেড থাকা নোড (কম্পিউটার বা অন্যান্য যন্ত্র যেমন- প্রিন্টার, স্ক্যানার) গুলো একটি সাধারন প্যাটার্নে যুক্ত থাকা আবশ্যক, যাকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলা হয়। আপনি চাইলে লাইন করে লম্বা আঁকারে কম্পিউটার গুলোকে কানেক্টেড করতে পারেন, এখানে একটি কম্পিউটার থেকে লাইন আরেকটি কম্পিউটারে, আরেকটি থেকে আরেকটিতে ইত্যাদি করে কাজ করবে। আবার স্টার সেপে মেশিন গুলোকে কানেক্টেড করানো যেতে পারে কিংবা রিং আঁকারে একটি কানেকশন লুপ তৈরি করে মেশিন গুলোকে কানেক্টেড করানো যেতে পারে। পাশের চিত্রটির দিকে অনুসরণ করলে আপনি আরো পরিষ্কার ধারণা পাবেন। তাছাড়া নেটওয়ার্কে থাকা কম্পিউটার গুলো একই রুল অনুসরণ করে একে অপরের সাথে কথা বলে, একে প্রোটোকল বলা হয়। একই লাইনের সাথে সংযুক্ত হয়ে ডিভাইজ গুলো একই সময়ে ডাটা আদান এবং প্রদান দুইটাই করে ফলে প্রোটোকলে না চললে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে আর একে অপরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হবে না।

অনুমতি এবং নিরাপত্তা

নেটওয়ার্কিং এ অনুমতি এবং নিরাপত্তা একটি অত্যাবশ্যক জিনিস। কোন কম্পিউটার আপনার নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত রয়েছে বলেই এটি আপনার যেকোনো আদেশ পালন করবে না। আপনার অপর কম্পিউটার থেকে কোন তথ্য পেতে চাইলে বা কোন রিসোর্স ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই আপনার কাছে তার অনুমতি থাকতে হবে। যেমন ধরুন ইন্টারনেটের কথা, যেখানে কোটিকোটি ওয়েবসাইট সার্ভারে রয়েছে এবং আপনি যখন ইচ্ছা সেগুলোর পেজকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। কিন্তু এর মানে এটা নয় আপনি ওয়েব সার্ভার থেকে প্রত্যেকটি সিঙ্গেল ফাইল অ্যাক্সেস করতে পারবেন। আমি যেমন আপনার পার্সোনাল ফাইল গুলো অ্যাক্সেস করতে পারবো না ঠিক আপনিও আমার গুলো অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। তবে আপনি যদি কাওকে অনুমতি দিয়ে থাকেন, সে অ্যাক্সেস করতে পারবে।

ইন্টারনেটে কানেক্টেড থেকে বেশিরভাগ পার্সোনাল কম্পিউটার গুলো শুধু আউটগোয়িং কানেকশন প্রদান করে যাতে সেটি আরেকটি কম্পিউটারের সাথে লিঙ্ক করতে পারে কিন্তু ইঙ্কামিং কানেকশন সম্পূর্ণ ব্লক করে রাখে। সার্ভার গুলো বিশেষ সফটওয়্যার এবং নির্দিষ্ট অনুমতি সাপেক্ষে ইঙ্কামিং কানেকশন ওপেন রাখে। ইঙ্কামিং কানেকশন অফ রাখলে কেউ সেই কম্পিউটারে অ্যাক্সেস করতে পারে না, ঐ কম্পিউটারের ডাটা রীড করা যায় না, এবং রীড করার রিকোয়েস্টকে অগ্রাহ্য করে দেয়। হ্যাকাররা কোন কম্পিউটারের অ্যাক্সেস পেতে চাইলে অবশ্যই ঐ কম্পিউটারের ইঙ্কামিং কানেকশনের উপর ক্ষমতা পেতে হয়। নেটওয়ার্কে আপনার কম্পিউটারকে সুরক্ষিত রাখতে ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ইঙ্কামিং ট্র্যাফিকের উপর এবং আউটগোয়িং ট্র্যাফিকের উপর নজরদারী করা সম্ভব।

কীভাবে নেটওয়ার্ক গঠিত হয়?

একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বা নেটওয়ার্কিং করতে মূলত নোড গুলোকে একটি লিঙ্কে কানেক্টেড করা প্রয়োজনীয়। আজকের দিনে অফিস ইউজে এবং হোম ইউজে ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্কে ডিভাইজ গুলোকে কানেক্টেড করানো একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক অফিসে বা বড় বড় নেটওয়ার্কে তার ব্যবহার করা হয়। কেনোনা তার বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল ওয়্যারলেস প্রযুক্তি থেকে অনেকবেশি দ্রুততর এবং সুরক্ষিত।

আপনার কম্পিউটারকে আরেকটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করাতে প্রথমত কি প্রয়োজনীয়? নেটওয়ার্কে থাকা প্রত্যেকটি নোডের একটি বিশেষ সার্কিট থাকা প্রয়োজনীয়, যেটাকে নেটওয়ার্ক কার্ড বা নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বা এনআইসি বলা হয়। আজকের দিনের নতুন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ গুলোতে নেটওয়ার্ক কার্ড বিল্ডইন ভাবে থাকে। কিন্তু আপনার কম্পিউটারটি যদি পুরাতন হয়ে থাকে, আপনাকে এতে আলাদা করে একটি নেটওয়ার্ক কার্ড লাগিয়ে নিতে হবে যাতে এটি নেটওয়ার্কে থাকা অন্য কম্পিউটার গুলোর সাথে কানেক্টেড হতে পারে। প্রত্যেকটি নেটওয়ার্ক কার্ডের সাথে একটি ইউনিক আলাদা কোড নাম্বার থাকে যাতে সেই কার্ডটিকে আলাদাভাবে চেনা যায় আর এই নাম্বারকে ম্যাক অ্যাড্রেস (MAC) বা মিডিয়া অ্যাক্সেস কন্ট্রোল অ্যাড্রেস (Media Access Control) বলে। ম্যাক অ্যাড্রেসকে ফোন নাম্বারের সাথে তুলনা করতে পারেন। আমরা কোন নাম্বারে এসএমএস পাঠানোর জন্য যেমন ম্যাসেজ টাইপ করে সেই নাম্বারে পাঠিয়ে দেই, ঠিক তেমনি নেটওয়ার্কে থাকা কোন কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারকে কোন ম্যাসেজ পাঠাতে চাইলে সেটা তার ম্যাক অ্যাড্রেস বনাম পাঠিয়ে দেয়। তাছাড়া ম্যাকের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে থাকা কোন ডিভাইজের কোন ফাইল অ্যাক্সেস করার পারমিশন রয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়। ধরুন আমি রাউটারে কোন নির্দিষ্ট ডিভাইজের ম্যাক হোয়াইট লিস্ট করে রাখলাম, তাহলে শুধু ঐ ডিভাইজটিই আমার নেটওয়ার্কে কানেক্টেড হতে পারবে। অন্যান্য ডিভাইজ যখন কানেক্ট হতে চাইবে তার ম্যাক চেক করা হবে এবং ম্যাচ না করলে কানেকশন প্রদান করা হবেনা। এভাবে হ্যাকার বা নেটওয়ার্ককে অপরিচিত ডিভাইজ কানেক্ট হওয়া থেকে বাঁচা যেতে পারে।

তাছাড়া আপনি যতোবড় নেটওয়ার্কিং করবেন আপনার ততোবড় লাইনের প্রয়োজনীয়তা পড়বে। যদি ওয়্যারলেসের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চান এবং নেটওয়ার্কটি যদি বড় হয় তবে সিগন্যাল বুস্ট করার জন্য রিপিটার বা সিগন্যাল বুস্টার ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়াও আপনার সুইচ, হাব, রাউটার ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা পড়বে।

আপনি জানলেন নেটওয়ার্কিং কি এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কীভাবে একে অপরের সাথে কম্পিউটার গুলোকে কানেক্টেড রাখে। আরো অনেক বিষয় ছিল আলোচনা করার মতো কিন্তু সেগুলো অনেক জটিল ব্যাপার, কোন আলাদা পোস্টে সেগুলোকে সহজে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এমনিতে আজকের পোষ্ট নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, আমি সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button