জীবন কিভাবে সুন্দর করা যায় । আনন্দময় এবং সুখী জীবন গঠন করুন
জীবন কিভাবে সুন্দর করা যায় ? (সেরা ১০ টি উপায়)
জীবনের পথ সোজা নয়, আঁকা-বাঁকা, বন্ধুর তাই জিন্দেগী লম্বি নেহি বড়ি হোনী চাহিয়ে।
কিন্তু কিভাবে আমরা আমাদের জীবন সুন্দর করতে পারি ?
জীবন কিভাবে সুন্দর করা যায় ? (সেরা ১০ টি উপায়)
চলুন জীবন সুন্দর করার উপায় এবং কৌশল গুলো একে একে জেনেনেই। যদি নিচে বলা উপায় গুলোকে মেনে জীবনে এগিয়ে যেতে পারেন, তাহলে অবশই একটি অনেক সুন্দর, সুখী এবং আনন্দে ভরা জীবন গঠন করতে পারবেন।
১. প্রতিটি মুহুর্ত কে আনন্দময় করে তুলতে হবে
আমাদের জীবনের এক একটি সিঁড়ি হল আমাদের স্মৃতি। এই ভাবে আমরা এক একটি স্মৃতি কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি।
আমরা যদি আমাদের প্রতিটি মুহুর্তকে আনন্দময় করে তুলি তাহলে আমরা দেখব আমাদের পরবর্তী জীবনে কোনো আফসোস নেই।
আফসোস বর্তমান সময়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। আবার আফসোস সৃষ্টি করে হতাশার।
কোনো একটি ছেলে দেখা গেল সারা বছর ধরে পড়াশোনা করল না। পরীক্ষার সময় ফলাফল যথারীতি খারাপ হল, সে আফসোস করতে থাকল।
ঠিক সময়ে সে পড়াশোনা করলে আজ এই অবস্থা হত না। এই আফসোস তাকে পরবর্তী সময়েও মর্মাহত করবে।
তাই প্রতিটি সময়কে আনন্দময় করে তুলতে হবে। কোনও কাজ করার আগে, আমার দ্বারা এই কাজ হবে না বা আমি পারব না ভাবলে চলবে না।
আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
২. প্রতিটি মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার
কখন আপনার কোন মানুষটিকে জীবনে প্রয়োজন পড়বে তা আগে থেকে বলা যায় না।
দীর্ঘ এই জীবনের সফরে কত লোক পাশে দাঁড়াবে, কত লোক আবার পাশ থেকে সরে যাবে।
তাই কখনোই কোনো মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ, কাউকে খারাপ কথা বলা ঠিক না।
দেখা গেল যার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হল, কোনো এক বিপদের দিনে তাকেই সবথেকে বেশি প্রয়োজন।
একটি ঘটনা এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন –
একটি কারখানায় এক শ্রমিক ভদ্রলোক রোজ কারখানায় প্রবেশ এবং প্রস্থানের সময় গেটের সিকিউরিটি গার্ডকে গুড মর্নিং এবং গুড নাইট বলতেন।
একদিন ওই ভদ্রলোক কারখানায় প্রবেশের সময় গার্ডকে গুডমর্নিং জানিয়ে প্রবেশ করেন কিন্তু ছুটির পরে যখন সবাই একে একে চলে গেলেও ওই ভদ্রলোক আসছেন না দেখে গার্ড চিন্তিত হলেন, কারন উনি কারখানায় ঢোকার আগে গুডমর্নিং বলেছিলেন, গার্ড কারখানায় ঢুকে দেখেন ওই ভদ্রলোক অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছেন, গার্ড যদি না আসত এবং আর কেউ বাকি নেই ভেবে কারখানা বন্ধ করে দিত তাহলে ভদ্রলোকের কি দুর্গতিটাই হত।
কিন্তু ওনার ভালো ব্যবহার ওনাকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করল।
তেমনি, জীবনে চলার পথে আমরা যদি সব মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি তাহলে যে সেই মানুষটিকে আমরা পাশে পাব কেবল তা নয়, তবে আমরা মনের দিক থেকেও খুশী থাকব।
৩. নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো
বর্তমান সময়ে আমরা সবাই ব্যস্ত। সফলতার শীর্ষে ওঠার জন্য প্রতিটা সময় আমরা ছুটে যাচ্ছি। এই দৌড়ে দৌড়াতে গিয়ে নিজেদের পরিবারের সাথে আমরা সময় কাটাতে ভুলে যাই।
বাবা – মাকে বৃদ্ধাশ্রমে, ছেলে মেয়েকে বোর্ডিং স্কুলে রেখে যারা নিজেদের কর্মজীবনে সফলতা অর্জন করছে, যখন তাঁরা বার্ধক্যে পৌছাবে, তখন তাদের ছেলে মেয়েরাও তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে। আর তখন তারা অনুভব করবেন জীবনের সংজ্ঞা শুধু দৌড় নয়।
পরিবার পরিজনের থেকে দূরে গিয়ে জীবন কখনোই সুখের হয় না।
পরিবারের লোকজনের থেকে দূরে, বৃদ্ধাশ্রমে যাঁরা আছেন তাঁরাই জানেন তাদের জীবন মোটেই সুখের নয়।
জীবনের কোনো একটি পর্যায়ের সুখ সামগ্রিক সুখ কিন্তু যিনি সম্পূর্ণ জীবনটাই সুখ অনুভব করেছেন, তিনিই বলতে পারেন তাঁর জীবন সত্যই সুন্দর।
তাই জীবনকে সুন্দর করতে হলে নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটান, নিজের বাবা-মা, ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটান।
মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন। দেখবেন কর্মজীবনের ক্লান্তি আর নেই।
৪. সময়ের কাজ সময়ে করার চেষ্টা
আমরা খুব কম লোক আছি যারা সময়ের কাজ সময়ে করি। তবে নিজেদের জীবনটিকে সুন্দর করে তুলতে গেলে আমাদের দীর্ঘসূত্রতা ত্যাগ করতে হবে। যে কাজটি যে সময়ের সেই সময়েই কাজটি করতে হবে।
দীর্ঘসূত্রতা আমাদের অলস করে তোলে।
এই অলসতা আমাদের কর্মহীন করে তোলে আর কর্মহীন জীবন কখনো সুন্দর হতে পারে না।
আপনার শখের বাগানটি যেমন আপনি অতি যত্নে এবং পরিশ্রম করে গড়ে তোলেন তেমনি আপনার জীবনটাকেও সুন্দর করে তুলতে হলে চাই মেহনতি মনোভাব।
প্রতিটি কাজের নিদিষ্ট সময় থাকে। সেই কাজটি তখন না করলে পরবর্তীতে কাজটি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে যা মোটেই সুখকর নয়।
৫. হতাশ হবেন না
হতেই পারে আপনি জীবনের কোন একটি পর্যায়ে সফল হয়েছেন আবার কোনো একটি পর্যায়ে আপনি ব্যর্থ।
চড়াই উতরাই তো লেগেই থাকে জীবনে।
আবার হয়ত কখনও আপনি যা পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাতেই ব্যর্থ হচ্ছেন, তবে হতাশ হবেন না।
সফলতা ব্যর্থতা প্রত্যেকের জীবনেই লেগেই আছে।
তবে কখনো নিজের অন্তরে হতাশার সৃষ্টি করবেন না।
এডিশন ১০০০ বার ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু তিনি হতাশ হননি। ১০০১ বারে তিনি সফল হন। তিনি আশা ছেড়ে দেননি।
তাই জীবনকে সফল এবং সুন্দর করতে গেলে কখনোই হতাশ হওয়া ঠিক নয়।
৬• দৃঢ় মানসিকতা
আমরা নিজেরাই নিজেদের জীবন গঠন করি এবং তাকে সফল ও সুন্দর করে তুলি।
জীবনের প্রতিটি পর্যায় মসৃণ নাও হতে পারে। তাই বলে ভয় পেলে চলবে না।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হলে আমরা কি পরীক্ষা দেব না ? দেব।
যেভাবে পরীক্ষায় ঠান্ডা মাথায় উত্তর গুলি ভেবে দিতে হবে তেমনি জীবন কে সুন্দর করে তুলতে গেলে চাই দৃঢ় মানসিকতা।
এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলা যাক –
স্বামী বিবেকানন্দ যখন বেনারসে, একদিন দুর্গা মন্দির থেকে ফিরছেন। হঠাৎ একপাল বানর স্বামীজীর পিছু নিল।
স্বামীজী ছুটতে লাগলেন, বানরগুলো ওনাকে প্রায় তাড়া করতে লাগলেন।
এমন সময় এক বৃদ্ধ সাধু তাকে বললেন “থামো জানোয়ার গুলোর মুখোমুখি রুখে দাঁড়াও“।
আমাদেরও কঠিন পরিস্থিতি দেখে ভয় পেলে চলবে না।
কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মাথা ঠান্ডা রেখে লড়াই করতে হবে।
সফল হতে হবে কঠিন সময়ে, তবে জীবন সুন্দর হবে।
তাই দৃঢ় মানসিকতা না থাকলে সুন্দর জীবন গঠন সম্ভব নয়।
৭. ক্রোধের বশবর্তী না হওয়া
আপনি মানুষের সঙ্গে যে ভাবে কথা বলবেন সবসময় এটা আশা করবেন না যে আপনার উল্টোদিকের মানুষটিও আপনার সঙ্গে ভালো ভাবে কথা বলবে। এটা কখনোই সম্ভব নয়।
ভালো, খারাপ দুইপ্রকার মানুষ আছেন, তাই তাদের ব্যবহার একরকম নয়।
তবে যদি কেউ আপনার সঙ্গে খারাপ ভাবে বা আপনাকে আঘাত দিয়ে কথা বলে তাহলে অযথা রাগ করবেন না।
জীবন একটা লম্বা সফর। কত যাত্রী আসবে, আবার কত যাত্রী ছেড়ে চলে যাবে।
মনে রাখবেন ওই ভদ্রলোক আপনার যাত্রার অল্পক্ষণের সঙ্গী।
এক বাসে একটি সিটে এক বৃদ্ধা বসেছিলেন। পাশের সীটে এসে বসলেন একটা ভদ্রমহিলা। ভদ্রমহিলা নিজের ব্যাগ রাখতে গিয়ে বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন।
তবে যখন তিনি বৃদ্ধার কাছে ক্ষমা চাইলেন তখন বৃদ্ধা বললেন –
“আমরা অল্প সময়ের জন্য এই বাসের যাত্রী, আপনার উপর আমি রেগে নেই। দীর্ঘ জীবনে কত যাত্রীই পাশে এসে বসবে, সে দিকে খেয়াল না করে নিজের কাজে মন দেওয়া ভালো“।
আপনার সঙ্গে কে ভালো ব্যবহার করল, কে খারাপ ব্যবহার করল এইগুলো নিয়ে ভাবতে যাবেন না।
বা যারা খারাপ ব্যবহার করল তাদের ওপর রাগ করবেন না।
আপনি আপনার মনে রাগ পুষে রেখে নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করছেন।
তাই আপনার জীবনটি সুন্দর করে তুলতে গেলে মনে কখনো রাগ, হিংসা, অহংকারকে আশ্রয় দেবেন না।
৮. একাগ্রতা এবং মনঃসংযম
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব লক্ষ্য থাকে। কেউ ডাক্তার, কেউবা ইঞ্জিনিয়ার কেউ আবার উকিল হতে চায়।
যখন সে নিজ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারে তখন সে সফল হয় এবং তার সফলতা তার জীবনকে সুন্দর করে তোলে।
জীবনে সফলতার জন্য চাই একাগ্রতা। আমরা কোনো কাজে যত বেশি একাগ্র হই সেই কাজটিতে সফলতা তত দ্রুত আসে।
মন স্থির না হলে কোনো কাজ সুষ্ঠু ভাবে হয় না।
এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা জানাই –
একদিন এক পুকুর পাড়ে এক লোক মাছ ধরছিলেন, এক পথিক ওই পথে তাকে দেখতে পেয়ে বারবার ডাকার পরেও তিনি কোনো জবাব না দিয়ে ছিপের ফাতনার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
মাছ ধরার পর পথিকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কি কিছু বলছিলেন ?” পথিক ওনার একাগ্রতা দেখে অবাক।
মনকে স্থির করে একাগ্রতা।
আমাদের জীবনে, মনকে স্থির করে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানো সবথেকে কঠিন।
তাই জীবনকে সুন্দর করে তুলতে গেলে আমাদের একাগ্র হয়ে নিজেদের সফল করতে হবে।
৯. ভ্রমন
কর্মব্যস্ত জীবন থেকে মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও ছুটি নিন।
মাঝে মাঝে ব্রেক দরকার হয়।
এই ছুটিগুলি আপনার মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি দূর করবে, পরবর্তী কাজে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে।
একটানা কর্মজীবনের দৌড়ে যে কাজ আপনার কাঁধে বোঝা হয়ে যাচ্ছে, দেখবেন এই অল্প দিনের ছুটি সেই কাজের বোঝা নামিয়ে দেবে।
তাই সুন্দর জীবন গঠনের জন্য ভ্রমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এটি একদিক থেকে যেমন আমাদের মানসিক শান্তি প্রদান করে তেমনই এটি আমাদের নতুন উৎসাহ প্রদান করে।
১০. সামাজিক কাজে নিজেকে যুক্ত রাখা
নিজেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখুন। সামাজিক কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখলে আপনার নিজস্ব পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে, সৎ মানুষদের সঙ্গে আপনার পরিচয় হবে।
সামাজিক কাজে নিজেকে যুক্ত রাখলে আপনার উদারমনষ্কতা বৃদ্ধি পাবে, এটি আপনার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মনকে যত সংকীর্ণ করবেন দেখবেন আপনার মানসিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাই জীবনকে সুন্দর করতে গেলে মনকে সুন্দর করতে হবে।
আমরা প্রত্যেকেই যে শুধু সফল জীবন চাই তা নয় তার সঙ্গে সুন্দর জীবন অত্যন্ত আবশ্যক।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, জীবনকে সুন্দর করে তোলার ১০ টি পদ্ধতি উপরে আমরা আলোচনা করলাম।
পাঠক এই লেখাটি পড়ে যদি নিজেদের জীবনকে প্রকৃত অর্থে সুন্দর করে তুলতে পারেন তাহলেই লেখাটি সার্থক।
“জীবন কিভাবে সুন্দর করা যায়“, বিষয়টি নিয়ে লিখা আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সত্যি পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।