অনেকেই আছেন যারা নিত্য পড়াশোনা করেন আবার অনেকে আছেন যারা বই প্রায় পড়েন না।
আবার অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা বিশেষ করে কেবল পরীক্ষার কিছুদিন আগে থেকেই পড়তে বসে থাকেন।
এখন ব্যাপার হল যদি তিনি নিয়মিত পাঠক বা অনিয়মিত পাঠক হন বা ফাঁকিবাজ ছাত্রছাত্রী,
এমন যদি কোনো উপায় হাতের নাগালে চলে আসে যার মাধ্যমে কম সময়ে যে কেউ অনেক বই পড়ে ফেলতে পারবেন, তাহলে বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের সব থেকে বেশি উপকার হবে।
যে সব ছাত্রছাত্রীরা পড়তে ভালোবাসে, তারা যেমন একাধিক বই পড়তে পারবে তেমনি যারা পড়তে চায় না তারাও অল্প সময়ে নিজেদের পড়াটা সেরে ফেলতে পারবে।
কিন্তু সেই রহস্যের চাবিকাঠি কি ? যাদের মনে এই প্রশ্ন জাগছে তারা লেখাটি অবশ্যই পড়বেন।
কম সময়ে বেশি পড়ার উপায় গুলো কি কি ?
আজকের এই লেখায় খালি কম সময়ে বেশি পড়ার উপায় বলা থাকবে এমন নয় সেই পড়া কিভাবে মনে রাখতে হবে তাও জানতে পারবেন এই লেখা থেকে।
১| পড়ার সময় নির্বাচন করতে হবে
পড়ার জন্য প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করতে হবে যে সময়ে আপনি নিজের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারবেন।
যদি আপনি ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠতে পারেন তাহলে তো খুবই ভালো। কেননা, ভোর বেলায় মন দ্রুত সন্নিবেশিত হয়।
তাই ভোরের সময় সহজে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা যায়।
যে যত দ্রুত পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারবে সে তত কম সময়ে পড়া আয়ত্ত করতে পারবে এবং অধিক পড়াশোনা করতে পারবে।
তাই প্রথমেই সময় নির্বাচন করে নিতে হবে, এমন কোনো সময় বেছে নেওয়া উচিত নয় যখন আশেপাশের পরিবেশ আপনার একাগ্রতা কে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
ধরা যাক আপনি যখন পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছেন তখন আপনার থেকে কিছুটা দূরে একটি জটলা হচ্ছে, তার শব্দ আপনার কানে আসছে, আপনার একাগ্রতা নষ্ট হবেই।
তাই যে সময় পরিবেশ শান্ত থাকবে যেমন ভোর বেলা, সন্ধ্যাকাল বা রাত্রিতে তখন পড়াশোনা করতে বসলে সহজে মনোনিবেশ করতে পারা যাবে এবং কম সময়ে অধিক একাগ্রতার সাথে পড়াশোনা করা যাবে।
২| পছন্দের বিষয় নির্বাচন করে পড়া আরম্ভ করুন
কম সময়ে বেশি পড়াশোনা করার জন্য প্রথমে আপনাকে সঠিক সময় নির্বাচন করতে হবে এবং তারপর আপনার পছন্দের বিষয়টি পড়তে আরম্ভ করুন।
আপনার পছন্দের সময়, এবং আপনার পছন্দের বিষয়টি পড়তে আরম্ভ করলে সহজে আপনার পড়াশোনায় মনোনিবেশ হবে।
পড়াশোনায় সহজে মনোনিবেশ করতে পারলে কম সময়ে এবং কম পরিশ্রমে আপনার পড়া তৈরি হয়ে যাবে।
অনেকেই ভাবেন ভোরের বেলায় অঙ্ক কষলে মন ভালো থাকে আবার অনেকে মনে করেন ভোরের বেলায় পড়া মুখস্থ হয়।
তবে সবটাই আপনার উপর নির্ভরশীল।
তবে আপনি সঠিক সময়ে আপনার পছন্দের বিষয়টি নির্বাচন করতে পারছেন কিনা তা হল আসল ব্যাপার।
আপনি এমন একটি বিষয় পড়তে আরম্ভ করলেন যা আপনার অপছন্দ কিন্তু আপনি মনস্থির করলেন যে আপনি তা পড়বেন,
এক্ষেত্রে দেখা যাবে সময় নষ্ট হল, কিন্তু আপনার পড়া কিছুই হল না।
তাই সঠিক সময়ে আপনার পছন্দের বিষয়টি পড়তে আরম্ভ করুন। এতে মন স্থির হলে তারপর অন্যান্য পড়া আরম্ভ করতে পারেন।
৩| যেকোনো বইয়ের ভূমিকা মন দিয়ে পড়তে হবে
যেকোনো বইয়ের ভূমিকা হল বইটির সারসংক্ষেপ। তাই বইটি পড়ার আগে বইটির ভূমিকা ভালো করে পড়তে হবে।
বইয়ের ভূমিকাটি ভালো করে পড়ে নিলে বইটির সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা আপনার তৈরি হবে।
লেখক কি লিখতে চেয়েছেন তা অনুমান করতে পারবেন।
তখন বইটি পড়তে আপনার আগ্রহ বাড়বে এবং কম সময়ে বইটি অনেক টুকু পড়ে ফেলতে পারবেন।
জনৈক লেখক বলেছিলেন কোনো বইয়ের ভূমিকা হল এক ক্ষেত ধানের জলার মধ্যে একটি ধানের শীষ।
একটি শীষ দেখেই বোঝা যায় ধানক্ষেতটি কেমন হবে, তেমনি ভূমিকাটি পড়ে বোঝা যাবে বইটি কেমন হবে।
তাই যদি সময় বাঁচাতে চান তাহলে যে বইটি পড়তে চাইছেন তার ভূমিকাটি অবশ্যই পড়েনিন।
৪| মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি করতে হবে
মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি করতে পারলে খুব সহজেই আপনি কম সময়ে যেকোনো বই পড়ে ফেলতে পারবেন।
এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বলা দরকার,,
স্বামী বিবেকানন্দ তখন রাজস্থানের খেতড়ী তে। রাজা অজিত সিংহের বাড়ী।
তখন স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর আর এক গুরু ভাই স্বামী অভেদানন্দ ছিলেন।
তিনি প্রত্যহ স্থানীয় লাইব্রেরি থেকে একটি করে বই নিয়ে এসে স্বামী বিবেকানন্দ কে পড়তে দিতেন।
একদিন সেই লাইব্রেরিয়ান স্বামী অভেদানন্দ কে প্রশ্ন করলেন “আপনি যে রোজ এত বই নিয়ে যান, কে পড়ে ?”
অভেদানন্দজী তখন তাকে স্বামীজীর কাছে নিয়ে গেলেন।
বিবেকানন্দ হেসে লাইব্রেরিয়ানকে বললেন আপনি বইগুলি থেকে যা ইচ্ছা তাই ধরুন। লাইব্ররিয়ান অবাক।
তাই, আপনিও যদি নিজের মানসিক একাগ্রতা বৃদ্ধি করতে পারেন তাহলে আপনিও খুব কম সময়ে বেশি পড়তে পারবেন।
একাগ্রতা বৃদ্ধির জন্য আপনি নিম্নলিখিত পদ্ধতি গুলো অনুসরন করতে পারেন,
- যখন যে কাজটি করছেন, সেই কাজটি তে সম্পূর্ণ ভাবে মনোনিবেশ করতে হবে।
- একটি কাজ কয়েকটি ধাপে করার চেষ্টা করতে হবে।
- দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
৫| কয়েকটি অধ্যায়ে ভাগ করে পড়ার চেষ্টা করতে পারেন
যে বই বা লেখাটি পড়ছেন বা পড়তে চাইছেন সেটি যদি বিভিন্ন অধ্যায়, বল্লী, বা প্যারাতে ভাগ করা থাকে তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে আপনি এক একটি প্যারা, অধ্যায় বা বল্লী শেষ করার চেষ্টা করুন।
ধরা যাক আপনি প্রথম অধ্যায়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করেছেন।
এবং দেখা গেল আপনি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ওই অধ্যায়টি সমাপ্ত করেছেন।
তারপরের অধ্যায়ের জন্য ঠিক আগের মতো একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন, এবং চেষ্টা করুন ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অধ্যায়টি শেষ করতে।
এইভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যখন আপনার এক একটি অধ্যায় পড়া সমাপ্ত হয়ে যাবে, তখন দেখা যাবে আপনি খুব কম সময়েই অনেকটা পড়া পড়ে ফেলেছেন।
৬| অক্ষরের বদলে শব্দ বা বাক্যটিকে একসঙ্গে পড়ার চেষ্টা করতে পারেন
পড়ার সময় বেশির ভাগ মানুষ প্রথমে প্রতিটি অক্ষর পড়ে তারপর শব্দ এবং শেষে বাক্য পড়েন। তাই একটি পৃষ্ঠা পড়তে অনেক সময় ব্যয় হয়।
তাই আপনি পড়ার সময় আলাদা আলাদা করে অক্ষর না পড়ে প্রথমে এক একটি শব্দকে এবং কিছু দিন এইভাবে পড়ার পর অভ্যাস হয়ে গেলে একসঙ্গে একটি বাক্যকে পড়ে ফেলার চেষ্টা করুন।
ধরা যাক একটি বাক্য আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
এখন আপনি যদি “রবীন্দ্রনাথ, ঠাকুর” … এই ভাবে পড়তে থাকেন তাহলে অনেক সময় নষ্ট যাবে তাই তার পরিবর্তে “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” … পড়ুন।
এবার যদি পুরো লাইনটা একসঙ্গে পড়ে ফেলতে পারেন তাহলে সময় অনেক কম লাগবে এবং বাক্য সহজেই মনে থাকবে।
যদি কোনো বইয়ের একটি পৃষ্ঠায় ২১ টি লাইন থাকে আর আপনি যদি এক একটি লাইন পড়তে পারেন তাহলে অনেক কম সময়ে আপনি একটি বই পড়ে ফেলতে পারবেন।
এইভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে একটির সঙ্গে দুটি লাইন তারপর একসঙ্গে একটি পৃষ্ঠাও পড়ে ফেলা সম্ভব হয়।
এই প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের একটি ঘটনা বলে রাখি,
স্বামী বিবেকানন্দ তখন বেলুড় মঠে। মঠের লাইব্রেরিতে ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়া বইটি এসেছে।
স্বামী বিবেকানন্দ এক একটি পাতা দেখছেন আর ওল্টাচ্ছেন।
তখন ওনার একজন শিষ্য ওনাকে কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কি বই টি আদতে পড়ছেন?”
স্বামীজী তখন বললেন, “আমি বইয়ের এক একটি পাতা একসঙ্গে পড়ছি। তাই এত দ্রুত বই পড়া হয়ে যাচ্ছে।”
এই একই ভাবে ভগৎ সিং বইই পড়তেন।
এই ভাবে আপনি অনেক কম সময়ে একাধিক বইই পড়ে ফেলতে পারবেন, তবে এর জন্যে অভ্যেস এবং চর্চা জরুরি।
৭| পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলি চিহ্নিত করে রাখতে পারেন
আপনি যখন কোনো একটি লেখা পড়ছেন তখন সেই লেখায় যে লাইন গুলি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি চিহ্নিত করে রাখতে পারেন।
ধরা যাক পড়ার সময় আপনি গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলিকে পেনসিল বা পেনের সাহায্যে আন্ডার লাইন করে রাখতে পারেন বা বিভিন্ন রঙের মার্কার দিয়ে আন্ডারলাইন করে রাখতে পারেন।
এতে পরবর্তীকালে আপনাকে যদি পুনরায় বইটি পড়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি কম সময়ের মধ্যেই আন্ডার লাইন করা লাইন গুলো দেখে নিতে পারবেন এবং পড়ে নিতে পারবেন আর আপনাকে কষ্ট করে পুরো বইটি পড়তে হবে না।
আপনার সময় অনেকাংশে বেঁচে যাবে।
এছাড়া, এমনিতেও দেখা গেছে যে পেন্সিল বা মার্কার দিয়ে আন্ডারলাইন করে পড়লে মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ে এবং পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্ত হয়।
৮| নিজের নির্বাচিত সময়ের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে
আপনি হয়তো পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করেছেন কিন্তু দেখা গেল আপনার কার্যকারী সময়ের অনেকটাই বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে, নিজের মোবাইলে গেম খেলতে বা ভিডিও দেখতেই অপব্যয় হয়ে গেল। সেইটি চলবে না।
বরাদ্দ সময়ের সঠিক এবং উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে।
তবেই আপনার লক্ষ্য পূরণ হবে। হাতের কাছে বই নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। নিজেকে বোঝাতে হবে, আমাকে পারতেই হবে।
নিজের সময়ের সঠিক ব্যবহার করার কৌশল আপনাকে জানতে হবে।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আপনি যদি ঠিক ঠিক ভাবে উপরে উল্লিখিত প্রতিটি ধাপ নিজের পড়াশোনার সময় মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনিও কম সময়ে অনেক বেশি পড়াশোনা একসঙ্গে করে ফেলতে পারবেন।
এবং কেবল পড়াশোনায় করাটাই নয়, আপনি সেগুলোকে অনেক তাড়াতাড়ি মনেও রাখতে পারবেন।
আশা করছি, কম সময়ের মধ্যে বেশি পড়াশোনা করার জন্য কি কি করতে হবে সেই বিষয়ে আপনারা সবটা বুঝতেই পেরেছেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে, আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশই শেয়ার করবেন।