Technology

এইচডি টিভি | কীভাবে এটি সাধারন টিভি থেকে আলাদা?

এইচডি টিভি মানেই কি এইচডি পিকচার?

আপনার চারপাশের পৃথিবীর দিকে একবার নজর ঘুরিয়ে দেখুন—যদি আপনার চোখ ভালো থাকে, তবে সবকিছু একদম ঝকঝকে পরিষ্কার দেখতে পাবেন। আপনি সরাসরি কোন বস্তুকে যতো ঝকঝকে দেখতে পান সেই বস্তুটির ডিজিটাল ফটোগ্রাফ কিংবা টিভি বা কম্পিউটার মনিটরে সেই বস্তুটির ইমেজ কখনোই এতোটা পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায় না। আপনি টিভি স্ক্রীনের কয়েক ইঞ্চি সামনে থেকে দেখলে, হাজার হাজার কালার ডট (পিক্সেল) লক্ষ্য করতে পারবেন এবং হয়তো দেখতে পারবেন পিকচার ঝিকিমিকি করছে। আর এই জন্যই বর্তমানে ভালো ইমেজ কোয়ালিটি পাওয়ার জন্য হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশন ব্যবহার করা হয়—যাকে সংক্ষেপে বলা হয়, এইচডি টিভি। সাধারন টিভির তুলনায় এইচডি টিভির পিকচার কোয়ালিটি অনেক ঝকঝকে হয় এবং এতে পিকচার ঝিকিমিকি করে না। তাছাড়া এইচডি টিভিতে মুভিজ গুলোকে তাদের অরিজিনাল ওয়াইড স্ক্রীন রেজুলেসনে দেখতে পাওয়া যায় এবং দুই পাশের চারকোনা কালো পর্দা থাকে না। তো এইচডি টিভি কীভাবে এতো বড় স্ক্রীনে এতো পরিষ্কার পিকচার উৎপন্ন করে? —চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

চোখ, টিভি এবং ডিজিটাল ক্যামেরা

আমাদের চোখে আলো সনাক্ত করার জন্য ১৩০ মিলিয়নের মতো কোষ থাকে, যে গুলোকে রোডস এবং কোনস বলা হয়। অর্থাৎ ডিজিটাল ক্যামেরার ভাষায় আমাদের চোখ হলো ১৩০ মেগাপিক্সেল। একটি অত্যন্ত হাই কোয়ালিটির প্রফেশনাল ডিজিটাল ক্যামেরার তুলনায় আমাদের চোখের রেটিনায় কোন ইমেজ প্রায় ১০ গুন বেশি উচ্চ রেজুলেসনের হয়ে থাকে। অর্থাৎ আজকের দিনের টিভি স্ক্রীন, কম্পিউটার মনিটর আর যাই হোক না কেন আমাদের চোখের চেয়ে ভালো পিকচার উৎপন্ন করতে সক্ষম নয়।

বহু বছর ধরে টেলিভিশন প্রযুক্তি অ্যানালগ সিগন্যালের উপর কাজ করতো এবং টিভি গুলো ক্যাথোড রে টিউব বা সিআরটি প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল। অবিরাম মিলতে থাকা রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে টিভি গুলো কাজ করতো এবং এই রেডিও সিগন্যালকে ট্র্যান্সলেট করে ভিডিও এবং অডিওতে পরিণত করা হতো। এই অ্যানালগ সিগন্যাল টিভিতে কোন এন্টেনা বা স্যাটেলাইট থেকে আসতো। ডিভিডি প্লেয়ারে ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগে পরিণত করিয়ে টিভিতে প্রদর্শিত করানো হতো। যাই হোক, সেটা অনেক আগের কথা, যদিও এখনো অনেকের বাড়িতেই বড় ঢোক ওয়ালা বুড়ো টিভি রয়েছে।

অ্যানালগ প্রযুক্তিতে কাজ করা টিভি কখনোই বেটার পিকচার কোয়ালিটি প্রদান করতে সক্ষম হয় না। এই টিভি গুলোতে লম্বালম্বি ভাবে প্রায় ৭০০ পিক্সেল এবং সমতল ভাবে প্রায় ৫০০ পিক্সেল থাকে (আসলে ৭০৪x480 রেজুলেসন থাকে) এবং অ্যানালগ টিভিকে এসডি টিভি বা স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন টেলিভিশন বলা হয়ে থাকে যা মুটামুটি ০.৩৩ মেগাপিক্সেল পিকচার উৎপন্ন করতে পারে। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি একটি ৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা থাকে তবে সেটি একটি এসডি টিভির তুলনায় ১০ গুন বেশি ভালো পিকচার উৎপন্ন করতে পারবে।

অ্যানালগ সিগন্যাল এবং এই প্রযুক্তিতে কাজ করা সিআরটি টেলিভিশন গুলো কখনোই এতোটা উন্নত হয় না এবং কিছু কিছু টিভিতে পিকচার ঝিকিমিকি করতে দেখতে পাওয়া যায়। যাই হোক, অ্যানালগ টিভির পরে আসে ডিজিটাল টেলিভিশন বা ডিটিভি। ডিটিভি আলট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি বা ইউএইচএফ এর উপর কাজ করে এবং যেহেতু এটি ডিজিটাল সিগন্যাল ক্যাচ করে তাই ছোট পর্দাতেও ভালো কোয়ালিটির পিকচার দিতে পারে। ডিজিটাল টিভির ব্রডকাস্টার রা একই ফ্রিকোয়েন্সিতে একাধিক সিগন্যাল ব্রডকাস্ট করতে পারে এবং এতে একটি চ্যানেলের সাথে আরেকটি চ্যানেল পেঁচিয়ে যায় না।

বেশি পিক্সেল = উন্নত পিকচার কোয়ালিটি

বর্তমানের টিভি গুলো ডিজিটাল ক্যামেরার মতো কাজ করে। এমনকি আপনি বর্তমানে যে কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তা যদি এইচডি হয়ে থাকে তবে হয়তো ১৩৬৬x৭৬৮ রেজুলেসন বা ১৯২০x১০৮০ রেজুলেসনের হয়ে থাকবে। এইচডি রেজুলেসন সাধারনত ১২৮০x৭২০ পিক্সেল (৭২০পি) যা একটি ১ মেগাপিক্সেল ডিজিটাল ক্যামেরার মতো এবং ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল (ফুল এইচডি বা ১০৮০পি) যা একটি ২ মেগাপিক্সেল ডিজিটাল ক্যামেরার মতো হয়ে থাকে। পুরাতন কম্পিউটার মনিটর বা সিআরটি মনিটর বা টিভি গুলোর রেজুলেসন ৮০০x৬০০ বা ৬৪০x৪৮০ হয়ে থাকতো। পুরাতন মনিটরের একটু সামনে থেকে দেখলেই ডট ডট দেখতে পাওয়া যেতো যেটা অনেকটা কোন ইটের দেওয়ালের এক একটা ইটের মতো দেখতে লাগতো।

এইচডি টিভি তে সাধারনত ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল বা ১২৮০x৭২০ পিক্সেল রেজুলেসন থাকে। আর কোন ডিসপ্লেতে যতো বেশি পিক্সেল থাকবে সেটি কোন ইমেজকে ততো বিস্তারিত করে প্রদর্শিত করতে সক্ষম হবে। বেশি পিক্সেল মানে এইচডি টিভি তে প্রদর্শিত পিকচার আরো হাই রেজুলেসন এবং বড় স্কেলের হয়ে থাকে ফলে পিকচার ঝাপসা দেখায় না। পিকচার ঝাপসা দেখানো এসডি টিভির সবচাইতে বড় সমস্যা ছিল; ছোট স্ক্রীনে তেমন সমস্যা হতো না কিন্তু একই সিগন্যাল থেকে যখন বড় স্ক্রীনে পিকচার দেখানো হতো তখন সেটা ঝাপসা হয়ে যেতো।

প্রশস্ত স্ক্রীন

এইচডি টিভি তে বেশি রেজুলেসন থাকার পাশাপাশি এটি প্রশস্ত স্ক্রীন এবং ইমেজ দিতে সক্ষম। এ জন্য বাজারের সকল এইচডি টিভি গুলো আঁকারে দেখতে আয়তক্ষেত্রাকার হয়ে থাকে যেখানে পুরাতন এসডি টিভি গুলো বর্গাকার হয়ে থাকতো। পুরাতন টিভির ৭০৪x৪৮০ রেজুলেসনের পিকচার ১.৫ গুন লম্বার চেয়ে প্রশস্ত বা ৪ঃ৩ দৃষ্টিভঙ্গি অনুপাত প্রদান করে। কিন্তু নতুন ১৯২০x১০৮০ এইচডি টিভি ১৬ঃ৯ দৃষ্টিভঙ্গি অনুপাতের হয়ে থাকে, যা কোন মুভির অনুপাতের সাথে মিলে যায়। আপনি যখন এসডি টিভিতে কোন মুভি দেখার চেষ্টা করেন তখন সেটি তার স্ক্রীনের চারিপাশে পূর্ণ করার জন্য ইমেজকে জুম করে দেয়, কারণ পুরাতন টিভির রেসিও মুভি অনুপাত সাথে মিল করে না। এইচডি টিভিতে বেটার এবং বিগার দৃষ্টিভঙ্গি অনুপাত পাওয়া সম্ভব।

ডিজিটাল সিগন্যালে উন্নত ইমেজ কোয়ালিটির সাথে বেশি ফ্রেম রেট প্রদান করা সম্ভব। আপনারা জানেন, কোন ভিডিওই আসলে চলমান হয়না। একসাথে অনেক গুলো পিকচার আমাদের চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের কাছে সেটিকে চলমান মনে হয়। প্রত্যেক সেকেন্ডে যতোবেশি পিকচার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, ভিডিও প্লেব্যাক ততো স্মুথ বলে মনে হবে, যদিও ফ্রেম রেটের একটি লিমিট আছে। যাই হোক, এইচডি টিভি তে ২৪ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৬০ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত দেখানো যায়। তাছাড়া ডিজিটাল সিগন্যালে বেটার অডিও কোয়ালিটি পাওয়া যায় এবং ব্রডকাস্টার রা সঠিক রেজুলেসনের পিকচার ব্রডকাস্ট করতে পারে।

এইচডি টিভি মানেই কি এইচডি পিকচার?

আপনি এইচডি টিভিতে কেবল তখনই এইচডি কোয়ালিটির পিকচার দেখতে পারবেন যখন এর সিগন্যালের মাধ্যমে এতে এইচডি পিকচার পাঠানো হবে। অর্থাৎ ব্রডকাস্ট করা পিকচার রেজুলেসনও ১২৮০x৭২০ বা ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল হতে হবে। ডিভিডি প্লেয়ারের পিকচার কোয়ালিটি এইচডি টিভি এর তুলনায় লো তবে ব্লুরে প্লেয়ার অনেক ভালো কোয়ালিটির পিকচার দিতে সক্ষম।

সুতরাং এইচডি টিভি পাওয়ার জন্য আপনাকে কি করতে হবে? আপনি অবশ্যই পুরাতন এসডি টিভিতে এইচডি চালাতে পারবেন না। কেনোনা এসডি টিভি এবং এইচডি টিভি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে কাজ করে, এরা আলাদা রেজুলেসনে কাজ করে, আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি অনুপাতে কাজ করে এবং আলাদা সিগন্যালের উপর কাজ করে। আবার আপনি সাধারন ডিজিটাল টিভিতেও এইচডি টিভি উপভোগ করতে পারবেন না। এইচডি টিভি উপভোগ করতে আপনার একটি এইচডি টেলিভিশন সেটের প্রয়োজন পড়বে এবং সাথে এইচডি ডিকোডারের প্রয়োজন পড়বে। এইচডি ডিকোডারটি হতে পারে কোন ব্লুরে প্লেয়ার বা সেট-টপ বক্স।

শেষ কথা

তো এই ছিল আজকের আলোচনা, আশা করি হাই ডেফিনিশন টিভি সম্পর্কে অনেক কিছু বিস্তারিত জেনে গেছেন এবং জেনে গেছেন কীভাবে এটি সাধারন টিভি থেকে আলাদা এবং কীভাবে এটি ঝকঝকে কোয়ালিটির পিকচার উৎপন্ন করতে সক্ষম। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে লাইক করুন, কমেন্ট করুন এবং আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button