Technology

সোলার সেল? কিভাবে সোলার প্যানেল সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে?

সোলার সেল কতোটা দক্ষ?

আমরা কেন মাটি খুঁড়ে তেল বেড় করবো, আর কয়লা পুরিয়ে এনার্জি নিতে পরিবেশ দূষিত করবো? —যেখানে আকাশ থেকে নন-স্টপ এনার্জি আল্লাহ তা’আলার বদৌলতে আমাদের উপর সর্বদা বর্ষিত হচ্ছে। আপনি হয়তো সোলার সেল (Solar Cells) লাগানো ক্যালকুলেটর দেখেছেন—যেটা চলতে কখনোই ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না। আমাদের মাথার উপরে জ্বলজ্বল করে জ্বলা সূর্য, নিজে থেকেই এক বিশাল এনার্জির উৎস, ৫০০ কোটি বছর থেকে আমাদের এনার্জি সঞ্চার করে আসছে আর নিঃসন্দেহে আরো ৫০০ কোটি বা তার অধিক সময় আরামে এনার্জি সঞ্চারিত করেই যাবে। সোলার প্যানেল (Solar panels), সূর্যের এই অফুরন্ত এনার্জি থেকে অফুরন্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। শুধু ক্যালকুলেটর নয়, হাত ঘড়ি, বৈদ্যুতিক বাতি, মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট ইত্যাদি সবকিছুই সূর্য থেকে পাওয়ার নিয়ে কাজ করে। কিন্তু এই সেল কিভাবে আলোকে বিদ্যুৎতে রূপান্তরিত করে?—এই আর্টিকেলে আমরা বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো…


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

সোলার এনার্জি

সূর্য এক বিশাল বড় নিউক্লিয়ার পাওয়ারের গোলা, পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রত্যেক বর্গমিটারে, সূর্য প্রায় ১,০০০ ওয়াট এনার্জি বর্ষিত করে। যদি এই সম্পূর্ণ এনার্জিকে আমরা ক্যাচ করতে পারতাম, তবে আরামে আমাদের অফিস, বাড়ির বিদ্যুৎতের সকল চাহিদা মেটাতে পারতাম, তাও আবার সম্পূর্ণ ফ্রী’তে। যদি আমরা পুরো সাহারা মরুভূমি জুড়ে সোলার প্যানেল প্ল্যান্ট করতে পারি, তবে সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়ে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

কিন্তু ব্যাপারটা এতোটাও সহজ নয়। সূর্য কিন্তু পৃথিবীতে সরাসরি ইলেক্ট্রিসিটি সেন্ড করে না, বরং আলো এবং তাপ মিশ্রিত করে পাঠিয়ে দেয়। যদিও আলো এবং তাপ আমাদের জীবন অস্তিত্বের জন্য প্রচণ্ড প্রয়োজনীয় উপাদান। আলো, আমাদের দৃষ্টি প্রদান এবং গাছপালাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, ফলে আমাদের খাদ্য যোগান হয়, অপরদিকে তাপ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। —কিন্তু সরাসরি এই আলো এবং তাপ থেকে তো আর ঘরের বাতি জ্বলবে না, প্রয়োজন হবে ইলেক্ট্রিসিটির। তাই আমাদের এমন এক পদ্ধতি অনুসারে কাজ করতে হবে, যেখানে এই আলো আর তাপকে বিদ্যুৎতে রূপান্তরিত করা যাবে। —সোলার সেল ঠিক এই কাজটিই করে থাকে।

সোলার সেল কি?

 

সোলার সেল মূলত একটি ইলেট্রনিক ডিভাইজ, যেটা সরাসরি সূর্যের এনার্জিকে ইলেক্ট্রিসিটিতে রূপান্তরিত করতে পারে। এটি ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে স্যাটেলাইটের ডানাতেও দেখা যায়, সোলার সেলের আরেকটি নাম হচ্ছে ফোটোভোলটাইক (Photovoltaic) সেল বা পিভি (PV) —এখানে ফটো বলতে লাইট এবং ভোলটাইক বলতে ইলেক্ট্রিসিটিকে বুঝানো হয়েছে। অনেক গুলো সেল দ্বারা একত্রে গঠিত একটি প্যাকেজকে সোলার প্যানেল বলা হয়, এখানে প্রত্যেকটি সেল একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকে। সোলার সেল অনেকটা ব্যাটারির মতো কাজ করে, কিন্তু ব্যাটারি কেমিক্যাল থেকে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপাদিত করে আর সোলার সেল আলো থেকে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপাদিত করে।

ফোটোভোলটাইক সেল সাধারনত এক ধরনের সেমি কন্ডাক্টর ম্যাটেরিয়াল দ্বারা তৈরি হয়, যেমন- সিলিকন। যখন সূর্যের আলো এই সেলের উপর এসে আঘাত করে, আলো থেকে কিছু অংশ এই ফোটোভোলটাইক সেল শোষণ করে নেয়। অর্থাৎ আলো থেকে এনার্জি শোষিত হয়ে এই সেমি কন্ডাক্টর ম্যাটেরিয়ালে প্রবাহিত হয়, এই এনার্জি ইলেকট্রনকে আলাদা করে দেয় এবং মুক্তভাবে চলতে সাহায্য করে। আমরা লাইট নিয়ে বর্ণিত আর্টিকেলটি থেকে জেনেছি, আলোর সবচাইতে ক্ষুদ্র কণিকা রয়েছে, যাকে ফোটন বলা হয়। অর্থাৎ সূর্য আমাদের চারপাশে সর্বদা কোটিকোটি ফোটন বর্ষিত করছে। এখন এই ফটোনকে যদি ফোটোভোলটাইক সেলের উপর ফেলা হয় তো প্রত্যেকটি সেল কিছু ইলেক্ট্রিসিটির কিছু ভোল্ট উৎপাদিত করবে। আর প্যানেলে থাকা অনেক সেলের ভোল্ট যখন একত্রিত হবে, সেটা দ্বারা সহজেই কোন ইলেকট্রিক যন্ত্রকে পাওয়ার প্রদান করা যাবে।

সোলার সেল কতোটা দক্ষ?

পদার্থ বিজ্ঞানের বেসিক নীতি অনুসারে, আমরা কোন শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে পারি না—সব কিছু এই জগতে আগে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে এবং আমরা শুধু শক্তির এক রুপ থেকে আরেক রূপে তাকে পরিবর্তিত করতে পারি। অর্থাৎ সোলার সেল কখনোই সূর্য থেকে প্রাপ্ত এনার্জির চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ কনভার্ট করতে সক্ষম নয়। বেশিরভাগ সেল সূর্য থেকে প্রাপ্ত এনার্জির ১০-২০ শতাংশই ইলেক্ট্রিসিটিতে কনভার্ট করতে পারে। আর একটি সিলিকন সেল ম্যাক্সিমাম ৩০ পারসেন্ট পর্যন্তই এনার্জি কনভার্ট করতে পারে। কেনোনা সূর্যের আলোতে বিভিন্ন তরঙ্গের ফোটন থাকে, কিন্তু ফোটোভোলটাইক সেল মাত্র নির্দিষ্ট তরঙ্গকে ক্যাচ করতে পারে এবং তার উপর কাজ করতে পারে। আর বাকি এনার্জি টুকু কাজে লাগে না বা নষ্ট হয়ে যায়। আজকের সবচাইতে অত্যাধুনিক সেল ৪৫% পর্যন্ত ইলেক্ট্রিসিটি কনভার্ট করতে পারে।

বর্তমান জেনারেশন লেটেস্ট সেল আগের দ্বিতীয় এবং প্রথম জেনারেশন থেকে অনেক বেশি উন্নত। এটি ৩০% এর উপর পাওয়ার কনভার্ট করতে সক্ষম সাথে এতে খরচও অনেক কম পড়ে।

বাড়িতে সোলার প্যানেল

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মতো চরম সমস্যা থেকে বাঁচতে সৌর বিদ্যুৎ সত্যিই অনেক কার্যকারী উপায়। তাছাড়া আমাদের দেশের বিদ্যুৎতের যে অবস্থা, এতে নিজের ঘরেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা ভালো। সৌর বিদ্যুৎ’এর সবচাইতে ভালো ব্যাপার হলো এটি সম্পূর্ণ ফ্রী আর সেটআপ করতেও তেমন টাকা লাগে না। ঘরের ছাদে বা বাহিরে চাহিদা অনুসারে সোলার প্যানেল লাগানো থাকে, এবং রাতে পাওয়ার ব্যাকআপ পাওয়ার জন্য রেগুলার ব্যাটারি লাগানো থাকে। ব্যাটারির সাথে একটি চার্জ কন্ট্রোলার লাগানো থাকে, কেনোনা ব্যাটারি যদি ওভার চার্জ না হয়, তবে সেটা অনেক ভালো ব্যাকআপ দিতে সক্ষম হয়। ব্যাটারি একবার ফুল চার্জ হয়ে গেলে কন্ট্রোলার আর পিভি মডিউল থেকে ব্যাটারিতে কারেন্ট প্রবাহিত করে না।

সোলার সেলের সাথে একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে, প্যানেল থেকে এবং ব্যাটারি থেকে যে বিদ্যুৎ সরাসরি আসে, সেটা ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট। কিন্তু বাড়ির টিভি, ফান, সহ প্রায় যেকোনো যন্ত্রপাতি চালাতে প্রয়োজন এসি বা অলটারনেটিং কারেন্ট; তাই একটি ইনভার্টার লাগানো থাকে যেটা ডিসি কে এসি তে রূপান্তরিত করে। বেশিরভার ইনভার্টার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। তবে আজকের কিছু লেটেস্ট সোলার মডিউল যেটার নাম এসি মডিউল; যেখানে বিল্ডইনভাবে ইনভার্টার লাগানো থাকে। তাছাড়া বাইরে সোলার প্যানেল টি ঠিকঠাক মতো সূর্যের দিকে মুখ করে ইন্সটল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনার বাড়িতে সম্পূর্ণ সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম সেটআপ করে নেওয়ার জন্য, আমি রেকমেন্ড করবো কোন লাইসেন্স ধারী ইলেক্ট্রিশিয়ানকে হায়ার করার, এতে আপনার কাজ পারফেক্ট হবে, সাথে সামনের ১৫-২০ বছর ফ্রী’তে বিদ্যুৎ উপভোগ করতে পারবেন।

শেষ কথা

সূর্য সত্যিই অনেক শক্তিশালী একটি শক্তির উৎস, যা থেকে পরিবেশ বান্ধব ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি পাওয়া সম্ভব। আর সবচাইতে ভালো ব্যাপার হলো এই এনার্জি ব্যবহার করা একদমই ফ্রী। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আশা করছি আপনি সোলারের সুবিধা এবং কাজ করার ধরণ সম্পর্কে জানতে পারলেন এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হলেন। তো আপনার বাড়িতে কি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রয়েছে? নাকি আপনি সৌর বিদ্যুৎ ইন্সটল করতে চাচ্ছেন? সবকিছু আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button