আমি নিশ্চিত, “অ্যামোলেড” (AMOLED)— এই টার্মটি আপনি বহুবার শুনে থাকবেন, হয়তো মোবাইল ফোনের স্পেসিফিকেশন দেখার সময় অথবা মোবাইল শপের সেলস ম্যান আপনাকে বর্ণনা করেছে, এই ফোনে অ্যামোলেড ডিসপ্লে বা সুপার-অ্যামোলেড ডিসপ্লে রয়েছে। হয়তো আপনি জানেন অ্যামোলেড কি, বা না জানলেও চিন্তার কোন বিষয় নেই, এই আর্টিকেলে আমি এই টার্ম সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি, যাতে নেক্সট টাইম ফোন কেনার সময় আপনি অন্তত বুঝতে পারেন কি সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে।
অ্যামোলেড অ্যান্ড সুপার-অ্যামোলেড
আপনি অবশ্যই জানেন, এস-অ্যামোলেড (সুপার-অ্যাক্টিভ-ম্যাট্রিক্স অর্গানিক লাইট ইমিটিং ডায়োড) — ডিসপ্লে টেকনোলোজির একটি মার্কেটিং টার্ম, যেটা আজকের অনেক প্রকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইজে ব্যবহৃত করা হয়। কয়েক বছর ধরে এই ডিসপ্লে প্রযুক্তি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং বিশেষ করে স্যামসাং প্রোডাক্ট গুলোতে এটি বেশি ব্যবহার হতে দেখতে পাওয়া যায়। এমোলেড ডিসপ্লের “অ্যাক্টিভ-ম্যাট্রিক্স” অংশটি এটিকে ওলেড ডিসপ্লে থেকে আলাদা করে। এই টেকনোলোজির ডিসপ্লেতে শুধু লাইট প্রদর্শিত করানোরই ক্ষমতা থাকে না, বরং টাচ ডিটেক্ট করারো ক্ষমতা থাকে (অ্যাক্টিভ-ম্যাট্রিক্স অংশটি)। সুপার-এমোলেড ডিসপ্লে আবার আরেকটু আলাদা হয়ে থাকে।
আজকের ডিসপ্লে স্ট্যান্ডার্ড আইপিএস এলসিডি’র সাথে অ্যামোলেড’কে তুলনা করতে গেলে, অ্যামোলেড গভীর কালো কালার জেনারেট করতে বিখ্যাত। কেনোনা এমোলেড ডিসপ্লেতে কোন ব্যাকলাইট থাকে না, এর প্রত্যেকটি পিক্সেলকে লাইট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যখন কোন লাইটের দরকার নেই বা অন্ধকার সিন রয়েছে, জাস্ট পিক্সেল অফ করে দিলেই এটি পিওর ব্ল্যাক কালার জেনারেট করে, কেনোনা সেখানে কোন আলোই জ্বলছে না। কিন্তু আলাদা ডিসপ্লে টেকনোলজিতে পিক্সেল অফ হয়ে যাওয়ার পরেও ব্যাকলাইট জ্বলতে থাকে, ফলে পিউর ব্ল্যাক কালার পাওয়া যায় না।
এর মানে এটিও বুঝায় যে, অ্যামোলেড ডিসপ্লে’তে কালারের বিশাল রেঞ্জ প্রদর্শিত করানো সম্ভব। সাদা কালারের বিপরীতে ধীরেধীরে কালো পর্যন্ত অসংখ্য কালার প্রদর্শিত করানো সম্ভব, কেনোনা এখানে ব্ল্যাক একদম পিওর ব্ল্যাক হিসেবে প্রদর্শিত হয়। আর এই ক্ষমতার জন্য যেকোনো কালারকে আরোবেশি স্পন্দনশীল এবং পরিপৃক্ত বানানো যায়। অ্যামোলেড এবং সুপার অ্যামোলেড অনেকটা নামের দিকেও যেমন মিল রয়েছে কাজের দিকেও অনেকটা একই। দুই টেকনোলজির আলাদা নাম কখনোই হতো না, যদি একটি বিষয়ে পার্থক্য না থাকতো।
এই দুই টেকনোলজি যে ডিভাইজ গুলোতে ব্যবহার করা হয়, এদের ডিসপ্লে লাইট এবং টাচ সেন্সর একসাথে কাজ করে। কিন্তু এস-অ্যামোলেড ডিসপ্লেতে টাচ ডিটেক্ট করার লেয়ার যেটিকে ডিজিটাইজার বা ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রীন লেয়ার বলা হয়, সরাসরি স্ক্রীনের সাথেই লাগানো থাকে—যেখানে অ্যামোলেড ডিসপ্লেতে এই লেয়ার সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ইন্সটল করা থাকে। আর এর জন্য এতে অনেক সুবিধারও সৃষ্টি হয়, যেহেতু ডিসপ্লে এবং টাচ লেয়ার একসাথে থাকে, তাই এস-অ্যামোলেড ডিসপ্লের সাথে বানানো ডিভাইজ গুলো আরোবেশি স্লিম করা সম্ভব হয়। আরো হাইয়ার কন্ট্র্যাস্ট লেভেল পাওয়া যায় এবং যেহেতু ডিসপ্লে এবং টাচ লেয়ারের মধ্যে কোন গ্যাপ থাকে না, তাই আরো প্রাণবন্ত ডিসপ্লে তৈরি করা সম্ভব হয়। যেহেতু এটি লেটেস্ট ডিসপ্লে টেকনোলজি ব্যবহার করে, তাই এটি কম গরম হয় এবং কম ব্যাটারি কনজিউম করে। আর যখন ব্ল্যাক কালার প্রদর্শিত করানো হয়, পিক্সেল একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়, এতে অনেক ব্যাটারি সেভিং সম্ভব হয়ে থাকে। ডিরেক্ট টাচ লেয়ার ডিসপ্লেতে লাগানো থাকার জন্য সুপার-অ্যামোলেড ডিসপ্লেতে টাচ আরোবেশি সংবেদনশীল হয়। আপনি সূর্যের মধ্যে বা বাইরে অনেক ভালো ডিসপ্লে কালার কোয়ালিটি পেয়ে যাবেন, কেনোনা এখানে লাইট খুব কম রিফ্লেক্ট করে, কেনোনা এতে খুব বেশি লেয়ারই নেই। সাথে হাইয়ার রিফ্রেশ রেট আপনাকে বেটার রেসপন্স দিতে সাহায্য করে।
আরো টাইপের সুপার-অ্যামোলেড ডিসপ্লে
সুপার-এমোলেড ডিসপ্লের সাথে কিছু প্রস্তুতকারী কোম্পানি আরো কিছু আলাদা ফিচার যুক্ত করে, এর নাম মার্কেটিং টার্মের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করে ব্যবহার করে। যেমন- সুপার-অ্যামোলেড প্লাস স্ক্রীন, এইচডি সুপার অ্যামোলেড, ফুল এইচডি সুপার-অ্যামোলেড ইত্যাদি। এখানে এইচডি সুপার অ্যামোলেড বলতে বুঝানো হয়, এমোলেড ডিসপ্লে এবং সাথে (১২৮০x৭২০) এইচডি রেজুলেসন। ফুল এইচডি এমোলেড ডিসপ্লেতে (১৯২০x১০৮০) রেজুলেসন থাকে। কিন্তু প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাদের ডিভাইজে ব্যবহার করা ডিসপ্লে কালার কোয়ালিটি আরো বর্ধিত করে দিয়েছে এবং আরো এনার্জি সেভার বানিয়েছে।
অ্যামোলেড ডিসপ্লে’তে আরেকটি টার্ম থাকে, যাকে পেনটাইল (PenTile) বলা হয়— পেনটাইল বা পেনটাইল ম্যাট্রিক্স একটি সাবপিক্সেল আরেঞ্জমেন্ট সিস্টেম। সাধারণ ডিসপ্লে প্যানেল গুলোতে আরজিবি (RGB- রেড-গ্রিন-ব্লু) স্টাইলে পিক্সেল সাজানো থাকে। কিন্তু পেনটাইলে আরজিবিজি (RGBG- রেড-গ্রিন-ব্লু-গ্রিন) প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়, এতে কম পিক্সেলে আরো অনেক হাই রেজুলেসন জেনারেট করা সম্ভব হয়, কিন্তু এর অসুবিধা হচ্ছে, এতে ইমেজ এতোটা সার্প দেখানো সম্ভব হয়না যতোটা আপনি আশাবাদী, কেনোনা এতে কম পিক্সেল থাকে। তবে সুপার-অ্যামোলেড প্লাস ডিসপ্লে তে আরজিবি-আরজিবি প্যাটার্ন থাকে, ফলে এতে অসাধারণ কালার সাথে সুপার শার্পনেস পাওয়া সম্ভব হয়ে থাকে।
অ্যামোলেডের কিছু অসুবিধা
হ্যাঁ, এটা সকলেই মানতে বাধ্য, অ্যামোলেড স্ক্রীন এই মুহূর্তে বাজারের সেরা স্ক্রীন বিশেষ করে অসাধারণ উজ্জ্বল কালার প্রদর্শিত করার দিক থেকে, সাথে পিওর ব্ল্যাক কালার এবং অবশ্যই এটি অনেক এনার্জি সেভ করে। কিন্তু এরও কিছু অসুবিধা রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কেও আপনার জ্ঞান রাখা প্রয়োজনীয়।
প্রথমত, হ্যাঁ, এই টেকনোলজিতে তৈরি করা ডিসপ্লে অনেক অসাধারণ কালার জেনারেট করে এতে কন সন্দেহ নেই, কিন্তু যদি ডিসপ্লে বেশি কালার সর্বদা শো করতেই থাকে, এতে বেশি ব্যাটারি লাইফ ব্যয় হয়। এজন্য অ্যামোলেড ডিসপ্লে ফোনে ব্ল্যাক ওয়ালপেপার ব্যবহার করার মাধ্যমে বেশি ব্যাটারি সেভিং করা সম্ভব হয়। অর্গানিক ম্যাটেরিয়াল গুলো অবশেষে ডেড হয়ে যায়, ফলে অ্যামোলেড ডিসপ্লে এলইডি এবং এলসিডি’র তুলনায় অনেক দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে এই ডিসপ্লের কালার জেনারেট করার ক্ষমতাও কমে আসে এবং বেটার আর জেনারেট করার ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। এমোলেড ডিসপ্লেতে স্ক্রীন বার্ন-ইন রিস্ক থাকে, যেহেতু ডিসপ্লেতে আলাদা টাইপের পিক্সেল প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয় ব্লূ কালার অনেক দ্রুত ডেড হয়ে যায় এবং গ্রিন এবং রেড একলা থেকে যায়। যদি আপনার ডিসপ্লেতে হাই নাম্বার ওফ পিক্সেল-পার-ইঞ্চি থাকে সেক্ষেত্রে এই সমস্যা খুব একটা বুঝতে পারা যায়না!
প্রশস্ত ভিউইং অ্যাঙ্গেল, বিশাল কালার রেঞ্জ সমর্থন, গ্রেট ব্ল্যাক, এবং অন্ধকার কালারের জন্য বেটার ব্যাটারি লাইফ দিতে অ্যামোলেড স্ক্রীনের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। আর আপনি নিশ্চয় এই স্ক্রীন সম্পর্কে একেবারে বিস্তারিত সবকিছু জানলেন। আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক উপকারি ছিল, যেকোনো প্রশ্নে আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।