আমরা আমাদের চারপাশে LED বা এলইডি শব্দটি প্রায়ই শুনতে পাই। তা, LED বাল্ব, ল্যাম্প থেকে শুরু করে LED টিভি, এই কথাগুলোর সাথেকম–বেশি আমরা সবাই পরিচিত।কিন্তু, আমরা আসলেই কি জানি বা বুঝি যে, কি এই LED বা তার কাজই বা কি? কিংবা, এতগুলো মেশিনের ক্ষেত্রে তার ফাঙ্কশনটাই বা কি ?যদিও বা না জেনেই থাকেন তাহলে চিন্তা করবেননা, কেননাআজকে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে চলেছেন LED সংক্রান্ত নানা ধরণের বিষয় সম্পর্কেআসুন, তাহলে আমরা প্রথমেই জেনে নিই, আসলে এই LED মানে কি ?
LED কি বা কাকে বলে ?
বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, এই LED হল এক ধরণের অর্ধপরিবাহী যন্ত্রাংশ বা সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস।
যখন একটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ এই এলইডি যন্ত্রাংশের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত হয় তখন এর থেকে আলোকরশ্মি বা আলো বিচ্ছুরিত হয় বা বেরিয়ে আসে।
যখন কোনো বিদ্যুৎ তরঙ্গ একটি LED-এর মধ্য দিয়ে যায়, তখন ইলেকট্রনগুলো পুনরায় ছোট ছোট্ট ছিদ্র গুলোর সাথে মিলিত হয়ে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলো নির্গত করে।
আর, এই এলইডি বিদ্যুৎ তরঙ্গকে কেবলমাত্র সামনের দিকে প্রবাহিত করে আর বিপরীতদিকে থাকা বিদ্যুৎ তরঙ্গগুলোকে আটকে দেয়।
এইবার সোজা কথায় বললে,
এই LED হল এমন একটি যন্ত্রাংশ, যা বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা সরঞ্জাম গুলোতে আলোক সৃষ্টিকারী উৎস হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আশা করছি, LED বলতে কি বুঝায়, বিষয়টা বুঝতেই পেরেছেন।
এছাড়া, LED-কে ছোট করে এলইডি বলে ডাকলেও, এর একটা সম্পূর্ণ নাম কিন্তু রয়েছে।
আগে আমরা সেই নামটা জেনে নিই।
LED পুরো নাম কি ?
LED শব্দের সম্পূর্ণ অর্থ হল লাইট–এমিটিং ডায়োড কিংবা বাংলাতে অর্থ করলে তার মানে দাঁড়ায়, আলোক–নির্বাহী ডায়োড।
কোথায় কোথায় সবথেকে বেশি LED-এর ব্যবহার দেখি ?
আপনার মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে টাঙানো বড় বড় বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড, ডিজিটাল অ্যালার্ম ঘড়ি, স্মার্টওয়াচ সর্বত্রই স্পষ্ট LED স্ক্রিনের ব্যবহার আমরা দেখে থাকি।
আসল কথা হল, যেসব ডিভাইস বা যন্ত্র আমাদেরকে সময় দেখায় কিংবা বিভিন্ন ধরণের তথ্য ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রদর্শন করে, সেই সব যন্ত্রগুলোতেই বেশিরভাগ সময় এই LED যন্ত্রটির ব্যবহার করা হয়।
আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে,
আমরা ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন অনুযায়ী এই এলইডির ব্যবহার গুলোকে ভাগ করে নিতে পারি।
তাই, ব্যবহারের দিক থেকে দেখতে গেলে,
এই LED ব্যবহৃত হয় অ্যালার্ম, সিকিউরিটি সিস্টেম, রিমোট–নিয়ন্ত্রিত অপারেশন, অপটিক্যাল কমিউনিকেশন, রোবোটিক্স ইত্যাদি সহ বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্যে তৈরী যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে।
যেহেতু, LED সিস্টেম অনেকটাই বেশি টেকসই, কম খরচ–সাপেক্ষ ও কম বিদ্যুৎ পরিষেবায় কাজ করতে পারে,
তাই অনেক বাণিজ্য ক্ষেত্রেই এই ব্যবস্থাকে বেশি করে কাজে লাগানো হয়ে থাকে।
এছাড়াও, LED ব্যবহার করলে অতি কম সময়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব এবং সহজে স্যুইচিং–ও করা যায়,
এই সব কারণেই বাজারে চরমভাবে এই ধরণের ডায়োড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নিচে বেশ কয়েকটি প্রচলিত LED-এর ব্যবহার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
১. টিভি, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের পর্দার পিছনের ব্যাক-লাইটিং জন্য ব্যবহৃত LED.
২. মোটরগাড়ির হেডলাইট, ব্যাকলাইট ও ইন্টেরিয়র লাইটিং-এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এলইডি।
৩. ডিমলাইট কিংবা মৃদু আলোর উৎস তৈরিতে ব্যবহৃত LED.
এলইডি (LED) কিভাবে কাজ করে ?
বিজ্ঞানের কথায় বলতে হলে, এলইডি সিস্টেম ইলেক্ট্রোলুমিনেন্স পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ করে।
এই ইলেক্ট্রোলুমিনেসেন্স হল এমন একটি অপটিক্যাল বা আলোকসংক্রান্ত ঘটনা বা বৈদ্যুতিক ঘটনা, যেখানে একটি উপাদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বৈদ্যুতিক তরঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় সেখান থেকে আলো তৈরী বা নির্গত হয়।
তাহলে এলইডি কিভাবে আলো জ্বালাতে পারে ?
ব্যাপারটা হল, এই LED যন্ত্রাংশে থাকে p ও n টাইপ (পসিটিভ ও নেগেটিভ/ধনাত্মক ও ঋণাত্মক) সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী ডায়োড।
আর, এই p-টাইপ অংশে থাকে ছিদ্র আর n-টাইপ অংশে থাকে ইলেক্ট্রনের সমষ্টি।
তাই, বিদ্যুৎ তরঙ্গ থেকে আলো তৈরী করতে গেলে, বিদ্যুৎ তরঙ্গের সংস্পর্শে আসার পর, এই p-টাইপের ছিদ্রগুলোর সাথে n-টাইপের ইলেক্ট্রনগুলোর মধ্যে সংখ্যালঘু ইলেক্ট্রন ও সংখ্যালঘু ছিদ্রের আদানপ্রদান প্রক্রিয়া চলে।
এই প্রক্রিয়াটি ঘটে ঠিক p ও n টাইপ অংশ দুটোর সংযোগস্থলে।
এই বিদ্যুৎ তরঙ্গ আদানপ্রদানের সময় p ও n টাইপের সংযোগস্থলে তখন ইলেক্ট্রনের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
আর, তখনই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাহকের (ইলেক্ট্রন) সাথে পুনর্মিনলন প্রক্রিয়ায় (রিকম্বিনেশন) অতিরিক্ত সংখ্যালঘু বাহক (ছিদ্র) পুনরায় মিলিত হয়ে ফোটন বা পসিটিভ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
যেহেতু, রিকম্বিনেশন প্রক্রিয়ার ফলে ফোটন (পসিটিভ) আকারে শক্তি নির্গত হয়, তাই এই শক্তি সাধারণত তাপশক্তির আকারেই পরিবর্তিত হয়।
তবে, LED-এর ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলুমিনেন্স প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হওয়ার ফলে এখানে বিদ্যুৎ শক্তি তাপের পরিবর্তে আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
LED কি ধরণের উপাদান দিয়ে তৈরী ?
আমরা আমাদের সামনে নানাধরণের রঙের LED আলো দেখে থাকি।
একটি এলইডি তৈরির সময় যে প্রধান সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী ব্যবহার করা হয়, তা বিশেষ কিছু ধাতু যৌগের সমন্বয়ে তৈরী করা হয়।
যেকোনো LED-এর রঙ সেমিকন্ডাক্টর তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উপাদানের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে থাকে।
এলইডিতে ব্যবহৃত দুটি প্রাথমিক উপাদান হল অ্যালুমিনিয়াম গ্যালিয়াম ইন্ডিয়াম ফসফাইড অ্যালয় আর ইন্ডিয়াম গ্যালিয়াম নাইট্রাইড অ্যালয়।
হলুদ, কমলা ও লাল রঙের আলো পেতে অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে, নীল, সবুজ বা সাদা আলো পেতে ইন্ডিয়াম অ্যালয় ব্যবহার করা হয়।
এই উপাদানগুলোর সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন করলে তা LED-এর আলোর রঙ পরিবর্তন করে দিতে পারে।
যদিও ৯০–এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত LED-এর রঙের বৈচিত্র্য বড়ই কম ছিল।
আর, বিশেষ করে বাণিজ্যিক নীল এবং সাদা রঙের LED-এর কোনো অস্তিত্বই ছিল না।
গ্যালিয়াম নাইট্রাইড (GaN) উপাদানের উপর নির্ভর করে এই ধরণের আলোর রঙের ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে এবং এই ধরণের নানা রঙের আলোর ব্যবহার বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
LED লাইটের ধরণ:
আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে তৈরী সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের LED-এর কথা নিচের তালিকাটিতে যুক্ত করা হল–
১. মিনিয়েচার LED
২. ফ্ল্যাশ LED
৩. হাই–পাওয়ার বা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন LED
৪. লাল সবুজ নীল LED
৫. বাই ও ট্রাই–রঙ
৬. লাইটিং LED
৭. আলফানিউমেরিক LED
LED আলোর সুবিধা:
১. এলইডি আলো কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে আলোক শক্তি উৎপন্ন করতে পারে আর এই আলোগুলো কম ভোল্টেজেও ভালো কাজ করতে সক্ষম।
২. কোনো সময় ব্যয় না করেই, নিমেষের মধ্যে LED-এর আলো জ্বলে যায়।
৩. LED আলো এক বর্ণের বা এক রঙের (মনোক্রোম্যাটিক) হয়ে থাকে।
৪. তারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে এবং অনেক বেশি টেকসই হয়।
আমাদের শেষ কথা,,
আজকে আমাদের এলইডি নিয়ে রচিত আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
LED কাকে বলে (What is LED in Bengali) এবং কিভাবে কাজ করে, এই বিষয়ে নিয়ে লিখা লেখাটি ভালোলাগলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলটি সত্যি ভালো লেগে থাকলে, অবশই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।