কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রোগ্রাম বা স্ক্রিপ্ট যেগুলোকে স্পেশালি তৈরি করা হয় বা ডিজাইন করা হয় যাতে তা আপনার অপারেটিং সিস্টেমে প্রবেশ করে আপনার কোন ধরনের পারসোনাল বা প্রাতিষ্ঠানিক ডেটা চুরি করে নিতে পারে, বা আপনার পারসোনাল যেকোনো ইনফরমেশন যেমন আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টস এর পাসওয়ার্ড, আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরি, আপনার হার্ড ড্রাইভে থাকা পারসোনাল ফাইলস এর অ্যাক্সেস পেতে পারে এবং সেগুলোকে কোন খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করতে পারে। একটি কম্পিউটার ভাইরাস আরো কি কি করতে পারে তা হয়ত আপনি বা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারব না। আশা করি, এবার কিছুটা ধারণা পেয়েছেন যে, ভাইরাস কি এবং কি কাজে ব্যাবহার করা হয়।
এবার জানা যাক,
ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়?
কোন ধরনের একটি ভাইরাস যখন আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করে ফেলে বা আপনার সিস্টেমে এক্সিকিউট করা হয়, তারপরে এটি আপনার হার্ড ড্রাইভের বিভিন্ন ফাইলের সাথে নিজেকে লিংক করা বা কপি করার মাধ্যমে বা আপনার ইন্সটল করা কোন সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামে নিজেকে লিংক করার মাধ্যমে আবার কোন কোন সময় আপনার পিসির বুট সেক্টরে প্রবেশ করে আপনার অপারেটিং সিস্টেমের সর্বত্র ছড়িয়ে যেতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, আপনার পিসির যেসব ডেটা ফাইলে বা প্রোগ্রামে রাইট পারমিশন রয়েছে সেসব ফাইলস এবং প্রোগ্রামের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে থাকে। এরপর আপনার পিসিতে যদি আপনি একটি পেনড্রাইভ বা একটি এসডি কার্ড ইনসার্ট করেন, তখন সেটি আপনার এই সকল রিমুভেবল ডিভাইসেও প্রবেশ করে যদি তাতে রাইট পারমিশন থাকে। এরপরের বিষয়টি নিশ্চই ধারণা করতে পারছেন। এরপর ওই পেনড্রাইভটি বা এসডি কার্ডটি যতটি পিসিতে ইনসার্ট করা হবে, ততটি পিসিতেই ওই ভাইরাস প্রবেশ করবে এবং সেখানেও এই একই কাজ করবে। সাধারনত কম্পিউটার ভাইরাস একটি পিসি থেকে আরেকটি পিসিতে এভাবেই ছড়িয়ে যেতে থাকে।
তবে এখানে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়। তা হল, প্রথম পিসিতে ভাইরাসটি কিভাবে প্রবেশ করলো? এটা অনেকভাবেই ঘটতে পারে। অনেকসময় যদি আপনি কোন একটি র্যান্ডম ওয়েব সার্ভার থেকে একটি ফাইল ডাউনলোড করেন কোন ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই, তাহলে আপনার পিসিতে সহজেই ভাইরাস ঢুকতে পারে যদি ফাইলটির সাথে ভাইরাস বাইন্ড করা থাকে। আবার অনেকসময় দেখা যেতে পারে যে আপনাকে একটি ই-মেইল পাঠিয়ে ক্লিক-বেইট করে একটি ফাইল ডাউনলোড করতে বলা হল এবং আপনি ফাইলটি ডাউনলোড করলেন। সেভাবেও আপনার পিসিতে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আপনি কোন একটি আনসিকিওরড ওয়েবসাইট ভিজিট করার মাধ্যমেই ভাইরাস ইনফেক্টেড হতে পারেন। আসলে ভাইরাস কিভাবে আপনার পিসিতে প্রবেশ করবে তার হাজার হাজার পথ রয়েছে। এমনও অনেক ওয়ে আছে ভাইরাস দ্বারা ইনফেক্টেড হওয়ার, যেগুলো এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
অলরাইট, ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় তা জানলাম। এবার জানা যাক,
ভাইরাস কি কি করতে পারে?
আমার মনে হয়না এটা খুব বেশি ব্যাখ্যা করে বলার দরকার হবে। কারণ, একটি কম্পিউটার ভাইরাস আপনার সম্পূর্ণ সিস্টেমের কনট্রোল পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে। আপনার পিসির সম্পূর্ণ সিস্টেমের কনট্রোল নিতে পারলে কি কি করা সম্ভব সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। আপনার পিসিতে ভাইরাস ইঞ্জেক্ট করার পরে সেটার সাহায্যে আপনার সব পারসোনাল ডেটা এনক্রিপ্ট করে ফেলতে পারে এবং ভাইরাসটির ক্রিয়েটর আপনার কাছে পারসোনাল ডেটার মুক্তিপণ হিসেবে টাকা দাবী করতে পারে। আপনি নিজেই ভালো বুঝবেন যে আপনার সিস্টেমে রাখা আপনার পারসোনাল ডেটা কি কি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা সম্ভব।
কম্পিউটার ভাইরাস সাধারনভাবে কখনো আপনার কম্পিউটারের কোন ফিজিক্যাল ক্ষতি করতে পারেনা। কিন্তু একটি কম্পিউটার ভাইরাস চাইলে আপনার অপারেটিং সিস্টেম এবং আপনার সফটওয়্যার এবং পারসোনাল ফাইলসের সর্বোচ্চ ক্ষতি করতে পারবে। একটি কম্পিউটার ভাইরাস আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করে আপনার কম্পিউটারকে জম্বি কম্পিউটারে পরিবর্তন করে দিতে পারে। জম্বি কম্পিউটার কি? জানেন না? তাহলে এই আর্টিকেলটি দেখতে পারেন। আশা করি এই বিষয়টিও ভালভাবেই বুঝতে পারবেন।
→ জম্বি কম্পিউটার কি? আপনার কম্পিউটারটি জম্বি নয় তো?
প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস কোনটি?
কখনো কি মনে এই প্রশ্ন এসেছে যে প্রথম তৈরি করা কম্পিউটার ভাইরাস কোনটি এবং কে-ই বা তৈরি করেছিল এই ভাইরাসটি? যদি এটা জানার ইচ্ছা থাকে, তবে শুনুন, প্রথম তৈরি হওয়া কম্পিউটার ভাইরাসের নাম ছিল Elk Cloner যেটি তৈরি করেছিলেন রিচ স্ক্রেন্টা নামক একজন বালক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে এই ভাইরাসটি তৈরি করেছিল যখন সে ১৫ বছর বয়সী একজন হাই স্কুল স্টুডেন্ট ছিল। সে এই প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসটি তৈরি করেছিল ১৯৮২ সালে। এই ভাইরাসটি তখনকার সময়ে কম্পিউটারের ফ্লপি ডিস্ককে টার্গেট করেছিল। এই ভাইরাসটি কোন ক্ষতিকর ভাইরাস ছিলনা। বরং এটি ছিল বেশ মজার একটি কম্পিউটার ভাইরাস। এই ভাইরাসটি কম্পিউটারে প্রবেশ করলে পিসির প্রতি ৫০ তম বুটের সময় স্ক্রিনে ছোট্ট একটি কবিতা শো করত।
ভাইরাস থেকে বাঁচতে কি করতে হবে?
এখানে খুব সহজেই বলা যায় যে, ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইন্সটল করা, যেটি আপনার পিসিকে ভাইরাস থেকে ১০০% সুরক্ষা প্রদান করবে। কিন্তু বিষয়টা ঠিক এতোটা সহজ নয়। হ্যাঁ, অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইন্সটল করা হচ্ছে ভাইরাস থেকে বাঁচার তুলনামুলকভাবে বেশি কার্যকরী এবং সহজ উপায়। কিন্তু অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আপনার পিসিকে ভাইরাস থেকে ১০০% সুরক্ষা প্রদান করে, এটি একটি ভুল ধারণা। তাই একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইন্সটল করে নিশ্চিন্ত থাকার কোন মানে নেই। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হওয়ার সাথে সাথে কম্পিউটার ভাইরাসগুলোও আরও বেশি উন্নত এবং আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। তাই একটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আপনাকে ১০০ ভাগ সুরক্ষা প্রদান করতে পারবে না।
ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণভাবে বাঁচতে হলে এবং ভাইরাস এর বিষয়ে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকতে হলে আপনাকে আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আমি কয়েকটি উপায় বলছি যেগুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন যদি ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণভাবে বাঁচতে চান।
→ সম্ভব হলে অবশ্যই পেইড অ্যান্টিভাইরাস ব্যাবহার করুন। ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস খারাপ নয়, কিন্তু সেগুলো পেইড ভার্শনের মত এত বেশি ফাংশনালিটি অফার করবে না।
→ আপনার অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম সবসময় ১০০% আপডেটেড রাখুন। নিয়মিত ভাইরাস ডেফিনেশন আপগ্রেড করুন।
→ যেকোনো ধরনের উইন্ডোজ আপডেট আসলে যত দ্রুত সম্ভব উইন্ডোজ আপডেট করুন। আপডেট কখনোই অবহেলা করবেন না। (মোস্ট ইম্পরট্যান্ট)
→ সবসময় ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট থেকে প্রোগ্রামস এবং সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন। ডাউনলোড করার পরেও ফাইলটি স্ক্যান না করে ওপেন করবেন না।
→ কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় ব্রাউজার থেকে ভিজিট না করার জন্য কোন ধরনের ওয়ারনিং আসলে, কখনোই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন না।
→ কোন প্রোগ্রাম যদি আপনার কাছে সাসপিশিয়াস মনে করে বা আপনার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়, সেটি আনইন্সটল করে দিন।
→ কোন ধরনের পিসি স্পীড বুস্টার বা র্যাম ক্লিনার ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
→ পিসিতে যেকোনো রিমুভেবল ড্রাইভ ইনসার্ট করার আগে অবশ্যই সেটি ভালভাবে অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম দিয়ে স্ক্যান করে তারপর ওপেন করবেন।
→ অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামে যদি শিডিউলড স্ক্যান বা অটোমেটিক স্ক্যান অন রাখার অপশন থাকে, তবে তা অন রাখুন।
→ সম্ভব হলে প্রত্যেকদিন আপনার ডেটা ইউজেস চেক করুন। যদি মনে হয় যে বিনা কারণেই ডেটা ব্যাবহার হচ্ছে, তাহলে সাথে সাথে নেট ডিসকানেক্ট করুন এবং ভাইরাস স্ক্যান করুন এবং যদি দরকার হয়, উইন্ডোজ রি-ইন্সটল করুন।
তো এই ছিল কম্পিউটার ভাইরাস। আশা করি এই বিষয়ে অল্প হলেও ধারণা দিতে পেরেছি এবং কিভাবে ভাইরাস থেকে পিসিকে বাঁচাতে পারবেন সে বিষয়েও কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এটা আসলে খুব কঠিন কিছু নয়। আপনি পিসি সম্পর্কে সচেতন হলেই এবং চোখ-কান খোলা রেখে পিসির বিহেভিওর লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে আপনার পিসি ভাইরাস ইনফেক্টেড কিনা। এছাড়া ভাইরাস এবং এর প্রোটেকশন নিয়ে ওয়্যারবিডিে আরো আর্টিকেলে কভার করা হয়েছে। আপনি সাইট সার্চ বারে ” ভাইরাস ” লিখে সার্চ করলেই এই সম্পর্কিত সব আর্টিকেল পেয়ে যাবেন।
আজকের মত এখনেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। ভালো থাকবেন।