অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স কিনতে চাচ্ছেন?পূর্বে এই প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো জানুন!
অ্যান্ড্রয়েড টিভি কেনার প্রয়োজনীয়তা
অ্যান্ড্রয়েড” — গুগলের বিশ্ব জনপ্রিয় এই মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম আজ শুধু মোবাইল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। ঘড়ি থেকে শুরু করে টিভি’তে পর্যন্ত এই অপারেটিং সিস্টেম রাজত্ব হাসিল করে নিয়েছে। ২০১৪ সালের দিকে গুগল টিভি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই অ্যান্ড্রয়েড টিভি খুবই দ্রুত সেই জায়গা দখল করে নেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড টিভি বলতে আপনি কি বোঝেন? অবশ্যই এটি এমন একটি টিভি যা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রিত। এতে আরো বেটার এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া সম্ভব, আরো বেটার রিমোট কন্ট্রোল সাপোর্ট, বিশেষ করে অ্যাপ রান করানোর সুবিধা।
ঠিক যেমন গুগল শুধু মাত্র একা অ্যান্ড্রয়েড ফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানি নয়, ঠিক তেমনি অ্যান্ড্রয়েড টিভি প্রস্তুতকারী কোম্পানিও অনেক রয়েছে মার্কেটে। অ্যান্ড্রয়েড টিভি দুই ধরনের হয়ে থাকে, প্রথমত, একটি ডেডিকেটেড টিভি, যেটার সাথে বিল্ডইন অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল থাকে এবং সেই অনুসারেই কাজ করে। দ্বিতীয়ত, একটি অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স, যেটা অনেকটা মিনি মিডিয়া প্লেয়ারের মতো দেখতে, এটি যেকোনো এইচডি টিভিকে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বানিয়ে দেয়। অনেক কোম্পানি অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স তৈরি করে, রেজার, এনভিডিয়া, সাওমি ইত্যাদি টিভি বক্স তৈরি করে।
এই আর্টিকেলে আমি অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স কেনার আগে আপনার যেগুলো জানা প্রয়োজনীয় সেই ব্যাপার গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স
যদি আপনি রেগুলার টিভির সেই একই ফাংশন আর ক্যাবল টিভির একই প্রোগ্রাম দেখে বোরিং হয়ে যান, অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স আপনাকে এই সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। আপনার সম্পূর্ণ নতুন টিভি কিনতে হবে না, বরং আপনার আগের এইচডি বা ফুল এইচডি টিভিটিকে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স ব্যবহার করে স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে পরিনত করে ফেলতে পারবেন। টিভিতে ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত করার মাধ্যমে ইন্টারনেট কন্টেন্ট যেমন ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, বা যেকোনো ওয়েব ভিডিও ওয়েবসাইট থেকে ভিডিও স্ট্রিম করতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্সকে একটি টিভি কন্ট্রোলার বলতে পারেন, আপনার টিভিতে কি দেখানো হবে, সেটা সম্পূর্ণই ঐ বক্স নির্ধারণ করবে, এমনকি আপনার টিভির রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করারও প্রয়োজন পড়বে না, আপনাকে বক্সের রিমোট ব্যবহার করে কাজ করতে হবে। আপনার টিভি শুধু মনিটর হিসেবে কাজ করবে। যেমনটা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সিপিইউ বক্স সমস্ত কিছু কাজ করে, মনিটর জাস্ট প্রদর্শিত করাতে সাহায্য করে। টিভিতে অ্যান্ড্রয়েড রান করানোর সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েডকে বিশাল স্ক্রীনে উপভোগ করার সুবিধা। সাথে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, গেম, যেকোনো মুভি যেকোনো সময় প্লে করতে পারবেন। শুধু আপনার বর্তমান টিভিকে এভি বা এইচডিএমআই পোর্টের সাথে কানেক্ট করে কাজ করতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্সের পাশাপাশি টিভি স্টিক বা টিভি ডঙ্গলের কথাও শুনেছেন নিশ্চয়, এটিও টিভি বক্সের মতোই একই সব ফিচার প্রদান করে, সাথে পোর্টাবিলিটি প্রদান করে থাকে। টিভি বক্সকে আপনি কোথাও বহন করতে বা সরানোরা করা ঝামেলা হতে পারে, যদিও আজকের টিভি বক্স গুলো আকারে অনেক ছোট হয়ে গেছে, কিন্তু টিভি স্টিক গুলো আরো বেশি সুবিধা প্রদান করে থাকে।
সব টিভি বক্স একভাবে কিন্তু তৈরি হয় না!
যেভাবে সকল স্মার্টফোন একই স্টাইলে বা একই ফিচারে প্যাকড হয়ে তৈরি হয়না, ঠিক সেইভাবেই অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স বা অ্যান্ড্রয়েড টিভি স্টিক একই স্টাইলে তৈরি হয় না। গত বছরের বেস্ট টিভি বক্স হয়তো এই বছরের উপহাস হয়ে দ্বারায়। এখানেও মোবাইলের মতো র্যামের টার্ম চলে আসে। অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্সের ক্ষেত্রে যতোবেশি র্যাম মডেল নিতে পারেন আপনার জন্য ভালো, এতে মুভিজ প্লে, কিন্তু অ্যাপ রান এবং গেমিং এর ক্ষেত্রে বুস্ট পেয়ে যাবেন। কমপক্ষে ২ জিবি র্যাম ওয়ালা টিভি বক্স কিনতেই হবে। ইন্টারন্যাল স্টোরেজ বেশিরভাগ বক্সে ৮ জিবি দেখাতে পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করে ইন্টারন্যাল স্টোরেজ বাড়ানো সম্ভব। সাথে এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করেও আপনি স্টোরেজ এক্সপান্ড করতে পারেন।
সাথে অবশ্যই বাইরের দেশের টিভি বক্স কেনা থেকে বিরত থাকবেন, সবসময় নিজের দেশের সেলার থেকে টিভি বক্স কেনার চেষ্টা করবেন। চায়না থেকে প্রোডাক্ট ইম্পোর্ট করিয়ে হয়তো কিছু টাকা কমে টিভি বক্স পেয়ে যাবেন, কিন্তু সাপোর্ট আর ওয়ারেন্টির বিষয়ে আপনাকে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। যদি সেই প্রোডাক্ট আপনার দেশে থাকা কোম্পানি থেকে কেনেন, সেক্ষেত্রে মানুষিক দিক থেকে অনেক শান্তিতে থাকতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স কেনার পূর্বে আরেকটি কথা মাথায় স্পষ্ট করে ঢুকিয়ে রাখুন, সেটা হচ্ছে অবশ্যই আপনার ভালো ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে। মুভি, ভিডিও, ইউটিউব নেটফ্লিক্স ইত্যাদি স্মুথভাবে রান করানোর জন্য অবশ্যই কমপক্ষে ১০ মেগাবিট/সেকেন্ড ইন্টারনেট প্রয়োজনীয় হবে, না হলে কখনোই ইন্টারনেট কনটেন্ট সুবিধা মতো উপভোগ করতে পারবেন না। তাই অবশ্যই নিশ্চিত করুণ, পূর্বে যেন আপনার কাছে ভালো ইন্টারনেট কানেকশন থাকে। আর অ্যান্ড্রয়েড টিভিকে অফলাইনে চালানোর কোনই মজা পাবেন না।
অ্যান্ড্রয়েড টিভি কেনার প্রয়োজনীয়তা
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার অ্যান্ড্রয়েড টিভি কেনার প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু। অবশ্যই আপনি যদি নর্মাল কোন এইচডি টিভি চালিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সলিউশন হতে পারে, বিশেষ করে নর্মাল টিভিকে স্মার্ট টিভিতে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে। নতুন টিভি কিনতে গেলে সেখানে কয়েক হাজার বিশেষ করে ২৫-৩০ হাজারের মতো খরচ হয়ে যেতে পারে, সেখানে ১০ হাজারেরও কম খরচ করার মাধ্যমে যেকোনো টিভিকে স্মার্ট টিভি’র রুপ প্রদান করতে পারবেন।
তবে আপনি যদি আরো সস্তা সলিউসন পেতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেও আপনার সাধারণ এইচডি টিভিকে অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে পরিনত করে ফেলতে পারেন। কিভাবে? — এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নিন!
তো আপনি অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স কেনা পছন্দ করবেন নাকি টিভি স্টিক, অথবা সরাসরি বিল্ডইন অ্যান্ড্রয়েড টিভি কিনতে পছন্দ করবেন? আমাদের সবকিছু নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যদি এখানে উল্লেখ্য করতে ভুলে যাই, অবশ্যই কমেন্ট করে নিচে জানিয়ে দিন!