অর্থায়ন কি ? অর্থায়ন কাকে বলে ? অর্থায়ন কত প্রকার ও কি কি ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা অর্থায়নের বিষয়ে সম্পূর্ণটা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে চলেছি।
সারা পৃথিবী চলছে টাকার লেনদেন ও অর্থ প্রবাহের মাধ্যমে।
অর্থনীতির অধ্যায় থেকে শুরু করে, বিশ্বের সুবৃহৎ তথা ক্ষুদ্র মার্কেটের প্রধান চালিকা শক্তিই হল ফিনান্স (Finance) বা অর্থায়ন।
সোজা কথায় বলতে গেলে, ফাইন্যান্সিং বা অর্থায়ন হল এক ধরণের প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ফান্ড বা তহবিল সংগ্রহ করা বা প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলত, অর্থনীতির এই শাখাটি অর্থ ও আর্থিক বাজার সম্বন্ধিত ব্যাপারগুলো নিয়েও কাজ করে।
অর্থায়নকে অর্থের ব্যবস্থাপনা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
এই ধরণের ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিনিয়োগ, ঋণ, দেওয়া বা নেওয়া, বাজেট, সঞ্চয় ও ফোরকাস্টিং-এর মতো কার্যকলাপকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
আজকের আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো, ফিন্যান্স কাকে বলে ও এর প্রকারগুলো সম্পর্কে।
আসুন, প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, অর্থায়ন বলতে কি বুঝায় ?
অর্থায়ন কি বা কাকে বলে ?
অর্থায়ন কাকে বলে, বিষয়টা আপনারা নিচে মন দিয়ে পড়লেই সবটা বুঝতে পারবেন।
কোনো ব্যবসার কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ ও বৃদ্ধি করতে, যে পদ্ধতি অবলম্বন করে ব্যবসা-সংক্রাত সমস্ত আর্থিক ব্যাপারগুলোর হিসাব রাখা হয়, তাকেই অর্থায়ন বলে।
মূলত, এই ফিনান্স বা অর্থায়ন ঋণ (Debt) এবং ইকুইটি মূলধন (Equity Capital) নিয়ে গঠিত; যা সাধারণত মূলধন বিনিয়োগ, অধিগ্রহণ ও ব্যবসার উন্নতিতে সাহায্য করে থাকে।
অর্থাৎ, অর্থায়ন হল তহবিল প্রদানের প্রক্রিয়া, যা যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করে থাকে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কেনাকাটা বা বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা, ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে মূলধন প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে।
এই অর্থায়নের ব্যবহার যেকোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্যে একান্তই আবশ্যিক।
কারণ, এটি কোম্পানি গুলোকে তাদের নাগালের বাইরের থাকা পণ্যগুলোকে অবিলম্বে ক্রয় করার সুযোগ করে দেয়।
যেকোনো কোম্পানির কাছে প্রধানত দুই ধরণের অর্থায়নের বিকল্প থাকে।
তাই, এই অর্থায়নের বিকল্পগুলোকে প্রধানত দুইটি ভাগ রয়েছে –
১. ইক্যুইটি অর্থায়ন (Equity Financing):
আসলে, ইক্যুইটি হল যেকোনো কোম্পানির মালিকানারই আরেকটি শব্দ।
মূলত, ব্যবসাগুলো ইক্যুইটি বিক্রি করে, কারণ তারা চায় বিনিয়োগকারীরাই ব্যবসার সমস্ত ঝুঁকি যাতে বহন করে।
আর, সেক্ষেত্রে ব্যবসা ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীরা কোনো লাভই পায় না।
কোনো কোম্পানির ইক্যুইটি ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হল ব্যবসার কিছু নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়া।
এখানে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিকে কীভাবে পরিচালনা করবে (বিশেষ করে কঠিন সময়ে) ও শেয়ারের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী হয়ে ওঠে।
সুতরাং, মালিকানার বিনিময়ে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ কোনো কোম্পানিকে দেয় ও কোম্পানির ভবিষ্যতের উপার্জনের উপর নির্ভর করে কিছু পরিমাণ অর্থ দাবি করে।
সুতরাং, ইক্যুইটি থেকে পাওয়া অর্থ ফেরত দিতে হয় না।
তবে, এটি মালিকানার অংশীদারিত্বর কিছুটা ইকুইটি হোল্ডারের হাতে ছেড়ে দেয়।
সুবিধা:
- এই অর্থায়নের অর্থ ফেরত দিতে হয় না। সেখানে কোম্পানি লুট হলে বা দেউলিয়া হলেও শেয়ারহোল্ডারকে টাকা ফেরত দিতে হয় না।
- মাসিক অর্থপ্রদান করতে হয় না, তাই অপারেটিং খরচের জন্য হাতে নগদ অর্থ থাকে।
- বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা গড়ে তুলতে যথেষ্ট সময় দেয়। তাই, পণ্য বা ব্যবসার উন্নতির চাপ ছাড়াই প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যায়।
অসুবিধা:
- ব্যবসার মালিকানা ভাগ হয়ে যায়। কোম্পানির সিদ্ধান্ত মিলিতভাবে নিতে হয়।
- কোম্পানির লভ্যাংশের ভাগিদার বেড়ে যায়।
২. ঋণ অর্থায়ন (Debt Financing):
ঋণ হল এমন একটি দেনা; যা বেশিরভাগ সময়েই সুদের সাথে ফেরত দিতে হয়।
তবে, কর হ্রাসের কারণে, সাধারণত, এটি মূলধন বৃদ্ধি করার চেয়ে অনেকটাই সস্তা হয়ে থাকে।
আর, ঋণ হল যেকোনো নতুন ব্যবসার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থার একটি সাধারণ পন্থা।
তবে, ঋণ অবশ্যই পরিশোধ করতে হয় এবং ঋণদাতারা তাদের প্রদেয় অর্থ ব্যবহারের বিনিময়ে কোম্পানি থেকে সুদের হার লাভ করতে চান।
অনেকক্ষেত্রেই, ঋণদাতারা জামানত (নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে জমা রাখা সম্পদ) রেখে তবেই ঋণের অর্থ প্রদান করে থাকে।
নির্দিষ্ট সম্পদের বিনিময়ে অল্প পরিমাণ নগদ অর্থের জন্য ঋণ পাওয়া সহজ।
বিশেষ করে, যদি সম্পদটি জামানত হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
যদিও, ব্যবসার কঠিন সময়েও ঋণ পরিশোধ করতে হয়।
তাহলেও, কোম্পানির ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণটাই মালিকের নিজের হাতেই থাকে।
সুবিধা:
- কোম্পানি পরিচালনার কোনো নিয়ন্ত্রণ ঋণদাতার হাতে থাকে না কিংবা তার কোন মালিকানাও থাকে না।
- ঋণ পরিশোধ হলে ঋণদাতার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখা বাঞ্চনীয় নয়।
- ঋণের অর্থে পরিমাণের উপর নির্ভর করে সুদের টাকা কিন্তু কর হ্রাসের যোগ্য হতে পারে।
- মাসিক অর্থপ্রদান ও অর্থ প্রদানের ব্রেকডাউন, পরিচিত ব্যয় হিসেবে সঠিকভাবে ফোরকাস্টিং মডেলগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
অসুবিধা:
- মাসিক খরচের সাথে ঋণ পরিশোধ যোগ করলে, ঋণ পরিশোধ সহ সমস্ত ব্যবসার খরচ মেটাতে সর্বদা মূলধনের প্রবাহ থাকে।
- ছোট বা প্রাথমিক পর্যায়ের কোম্পানিগুলোর জন্য এই বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চয়তা আনতে পারে।
- মন্দার সময়ে ছোট ব্যবসার ঋণ পরিশোধ যথেষ্ট ধীর হতে পারে। অর্থনীতির কঠিন সময়ে, অত্যধিক যোগ্যতা না থাকলে ঋণ গ্রহণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
যাই হোক না কেন, কোম্পানির অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঋণ ও ইক্যুইটি উভয়েরই যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
তবে, বেশিরভাগ কোম্পানিই তাদের ব্যবসার ক্রিয়াকলাপের অর্থায়নের জন্য দুই ধরণের অর্থায়নের সংমিশ্রণই ব্যবহার করে থাকে।
মূলধন গঠন (Capital Structure):
শেষ পর্যন্ত, ঋণ ও ইক্যুইটি অর্থায়নের মধ্যে নেওয়া সিদ্ধান্তটাই যেকোনো কোম্পানির মূলধন কাঠামোকে নির্ধারণ করে থাকে।
সাধারণত, একটি ব্যবসার জন্য সর্বোত্তম মূলধন কাঠামোটি বিবেচনা করা হয়; যার ফলে, মূলধনের ওয়েটেড এভারেজ কস্ট বা সর্বনিম্ন ওজনযুক্ত গড় খরচ (WACC) বার করা হয়।
এই ধারণাটি যদিও তত্ত্বের দিক থেকে সত্য।
তবে বাস্তবে, কোম্পানির পরিচালকরা কতটা ঝুঁকিহীনভাবে চলতে চান, তার উপর নির্ভর করে তাদের অর্থায়ন পছন্দের প্রবণতা থাকে।
আর, মূলধনের ওয়েটেড এভারেজ কস্ট (WACC) যেকোনো ব্যবসার মোট অর্থায়নের খরচের একটা পরিষ্কার ধারণা দেয়।
অর্থায়ন কত প্রকার ও কি কি ?
ফিনান্স বা অর্থায়ন ব্যক্তিগত স্তর থেকে শুরু করে দেশীয় কাজকর্মের প্রতিটা স্তরে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই অর্থ ব্যবস্থাপনার পদ্ধিতিটি ব্যবসায়ী ও অব্যবসায়ী উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্যেই সমানভাবে প্রয়োজনীয়।
আর, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এই অর্থায়ন প্রক্রিয়া ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে।
তাই, এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে অর্থায়নকে মোট ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে –
১. ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অর্থায়ন:
ব্যক্তির আয়ের উৎস, ও পরিমাণ নির্ধারণ করে সেই আয় কিভাবে খরচ করলে পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ হয়, সেই পরিকল্পনাকে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অর্থায়ন বলে।
যেকোনো পরিবারেরই আয়-ব্যয়ের নানান খাত আছে।
তবে, এই অর্থায়ন অনুসারে, পরিবারের সবথেকে প্রয়োজনীয় ব্যয়কে প্রধান প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।
যখন কোনো ব্যক্তির আয় তার খরচের অনুসারে পর্যাপ্ত না হয়, তখন তিনি নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন।
আর, তাই পারিবারিক অর্থায়নে নিয়মিত আয়ের ভিত্তিতে ব্যয়সমহু নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
ব্যক্তিগত অর্থায়নের ক্ষেত্রে, কোনো ব্যক্তি তার স্থায়ী সম্পদ, যেমন- গাড়ি, ইলেকট্রনিক, ও ঘর নির্মাণের জন্যে ব্যাংকের থেকে ঋণ নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে, পরিবারের আয় ও সংগৃহীত তহবিলের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ যদি কম হয়, তবে অতিরিক্ত তহবিল ভবিষ্যতে ব্যবহার করার জন্যে সঞ্চয় করা যেতে পারে।
এই ধরণের অর্থায়নের মধ্যে পড়ে শিক্ষা ঋণ, রিয়েল এস্টেট, জীবন বীমা পলিসি, ও আরও অন্যান্য ইন্স্যুরেন্স।
আর, ব্যক্তিগত ফিনান্স সম্পূর্ণভাবে একজন ব্যক্তির চাহিদা, উপার্জনের ক্ষমতা, লক্ষ্য, সময় ও আরও অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
২. ব্যবসায় বা কর্পোরেট অর্থায়ন:
যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই অর্থায়ন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
এই অর্থায়নের প্রকারে অর্থ সংগ্রহের উৎস থেকে শুরু করে বিনিয়োগের খাত, সমস্ত কিছু নির্ধারণ করা হয়।
যেকোনো ব্যবসাতেই ঝুঁকি, লাভ ও লোকসান দুইই উপস্থিত থাকে।
তাই, ব্যবসার প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা লাভের জন্যে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ ও বিনিয়োগের প্রয়োজনে, যে ধরণের অর্থায়ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করে তাকেই ব্যবসায় অর্থায়ন বলে।
এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে যেকোনো কোম্পানি তহবিল সংগ্রহ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো পূরণ করে থাকে।
মূলত, এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তিন ধরণের হয়ে থাকে –
১. একক মালিকানা ব্যবসা,
২. অংশীদারি ব্যবসা ও
৩. যৌথ মালিকানা ব্যবসা।
এই তিন ধরণের ব্যবসাতেই বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের পন্থা অবলম্বন করা হয়।
আর, এই ধরণের কর্পোরেট অর্থায়নে ঝুঁকি এবং সুযোগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হয় ও সম্পদের মূল্য বৃদ্ধির উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
এখানে মূলত মূলধনের জোগাড়, অর্থের উৎস, করের হিসাব, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও আরও নানা বিষয়ে নজর দেওয়া হয়ে থাকে।
৩. অব্যবসায়িক অর্থায়ন:
অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বলতে বোঝায়, সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যারা মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে।
এইসব প্রতিষ্ঠান মুনাফার তুলনায় মানুষের ও দুঃখী-অভাবীদের সেবায় বেশি নিযুক্ত থাকে।
যখন এইসব প্রতিষ্ঠানের জন্যে অর্থ সংগ্রহ ও পরিকল্পিত বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়, তখন সেই প্রক্রিয়াকেই অব্যবসায়িক অর্থায়ন বলা হয়।
এইসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা একান্তভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।
এইখানে অর্থায়নের প্রধান লক্ষ্য থাকে সর্বোত্তম অর্থ সংগ্রহের উৎসগুলো খুঁজে বের করা।
আর, সঠিকভাবে অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে সেবামূলক কর্ম করে যাওয়া।
অনাথ আশ্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ধরণের অব্যবসায়িক অর্থায়নের উদাহরণ।
নানান ধরণের চ্যারিটি ও অনুদানের মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নমূলক কাজের জন্যে ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং, এই ধরণের অর্থায়নের প্রধান লক্ষ্য হল অর্থ সংগ্রহের সঠিক উৎস খুঁজে বের করা ও সেরা সেবাদানের ব্যবস্থা করা।
৪. সরকারি বা পাবলিক অর্থায়ন:
এই ধরনের অর্থায়ন ব্যবস্থাটি রাজ্য, পৌরসভা, প্রদেশগুলো তথা সরকারের প্রয়োজনীয় অর্থের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
এখানে জনগণের জন্যে সরকারের দ্বারা পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত যুক্ত থাকে।
পাবলিক অর্থায়নে আয়ের বন্টন, সম্পদ বরাদ্দকরণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
আর, কোনো দেশের সরকার মূলত কর থেকে তহবিল গঠনের পাশাপাশি, ব্যাঙ্ক বা বীমা কোম্পানি থেকে ধার করার মাধ্যমেও দেশ পরিচালনা করে থাকে।
এই ধরণের অর্থায়নে সরকারী সত্তার সাহায্যে প্রয়োজনীয় ব্যয় সনাক্ত করা হয়।
এখানে দেশের জনগণের জন্যেই রাজস্ব উৎসের ব্যবস্থা করা হয়।
পাবলিক ফিনান্সে বাজেট প্রক্রিয়া এবং তহবিলের উৎস নির্ধারণ করাও হয়ে থাকে।
এছাড়াও, সরকারি প্রকল্পের জন্য ঋণ প্রদান করাও এই ধরণের অর্থায়নের প্রধান কাজ।
আর, কর ব্যবস্থাপনাও এই অর্থায়ন ব্যবস্থার মধ্যেই পড়ে।
৫. আন্তর্জাতিক বা ট্রেড অর্থায়ন:
এই ধরণের অর্থায়নের ক্ষেত্রে সরকারি, ব্যবসায় ও অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মূলধন বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ও বিনিয়োগ, এবং কোনো দেশের আমদানি ও রপ্তানির বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভক্ত করে থাকে।
এই ধরণের অর্থায়নে মূলত কোনো দেশের আর্থিক বা বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়াও, এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থায়নে আমদানি-রপ্তানি খাতসহ নানা বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়ে থাকে।
যেকোনো মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি একান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
যেহেতু, তারা পৃথিবীর একাধিক দেশে ব্যবসা করে, সেই কারণে সেই কোম্পানিগুলোকে প্রতিটি দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে ও কি করে লাভজনক বিনিয়োগ করা সম্ভব; সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে এই প্রতিষ্ঠানগুলো যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তার ব্যবস্থাপনা করাই হয় এই আন্তর্জাতিক অর্থায়নের মূল লক্ষ্য।
এছাড়াও রয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রো ফিনান্স।
এই ধরণের অর্থায়ন এমন ব্যক্তিদের জন্য তৈরিই করা হয়েছে, যাদের আর্থিক পরিষেবাগুলো সরাসরি ভোগ করার ক্ষমতা নেই।
এদের মধ্যে রয়েছে বেকার ও নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা।
বিভিন্ন ব্যাঙ্কগুলো অতিরিক্ত পরিষেবাগুলো তাদের মাইক্রো ফিন্যান্সের দ্বারা অফার করতে পারে, যেমন- সেভিং অ্যাকাউন্ট, মাইক্রোইনস্যুরেন্স ও প্রশিক্ষণ।
ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হল এই সমস্ত অভাবী ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
ফিন্যান্স কাকে বলে ? বা অর্থায়ন কি নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।