আর্টিকেল

অ্যামাজন এর মালিক কে | অ্যামাজন কোম্পানির ইতিহাস

আমাজন কোম্পানির কিছু বিশেষ ইতিহাস

অ্যামাজন এর মালিক কে ? এবং অ্যামাজন কোম্পানির ইতিহাস কি ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। 

আমাদের ডিজিটাল যুগের সবথেকে বড় অবদানের মধ্যে একটি হল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যা গ্লোবাল শপিংয়ের ধারণাকে একেবারে আমূল বদলে দিয়েছে।

আর, এই ই-কমার্সের জগতের জায়ান্ট হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত হল অ্যামাজন (Amazon)।

অ্যামাজন.কম হল এক ব্যাপক ইন্টারনেট-ভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ।

এই ওয়েবসাইট বই, সঙ্গীত, সিনেমা, গৃহস্থালির সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স, ও আরও অন্যান্য অনেক পণ্য বিক্রি করে থাকে।

এই কোম্পানি সরাসরি অন্য খুচরা বিক্রেতা ও অ্যামাজন.কমের (amazon.com) লক্ষ-লক্ষ গ্রাহকদের মধ্যে মিডলম্যান হিসেবে কাজ করে।

এমনকি, এর ওয়েব পরিষেবা ব্যবসার মধ্যে রয়েছে- ইন্টারনেটে ডেটা স্টোরেজ ও কম্পিউটিং রিসোর্স বা “ক্লাউড কম্পিউটিং” ভাড়া দেওয়া।

আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো, অ্যামাজনের মালিক কে, এর ইতিহাস, সংগ্রাম ও সাফল্য নিয়ে। 

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, এর মালিকের সম্পর্কে –

অ্যামাজন কোম্পানির মালিক কে ?

অ্যামাজন এর মালিকের নাম কি ?

সর্বতোভাবে জেফ বেজোস নামে পরিচিত, জেফরি প্রেস্টন বেজোস হলেন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO)।

১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস ওয়াশিংটনের সিয়াটেলে তাঁর গ্যারেজে এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন।

যদিও, ২০২১ সালের জুলাই মাসে তিনি সিইও পদ ছেড়ে এই কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন।

জেফ, আসলে হলেন একজন উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও মিডিয়ার মালিক।

তাঁর অ্যামাজনের লাভজনক উদ্যোগই, বর্তমানে তাঁকে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।

যদিও, অতি সম্প্রতি, ২০২১ সালে অ্যান্ডি জ্যাসি আনুষ্ঠানিকভাবে জেফ বেজোসের পরিবর্তে অ্যামাজনের সিইও পদে আসীন হন।

জেফ বেজোস এই কোম্পানিতে ২৭ বছর সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করার প,র এই পদ থেকে সরে এসেছেন।

অ্যামাজনের ইতিহাস – (History of Amazon):

১৯৮৪ সালে বেজোস ফিজিক্স বা অঙ্ক বিষয়ের উপর নির্ভর করে, নিজের কেরিয়ার গড়ে তুলতে চাইলেও, পার্শিয়াল ডিফারেনশিয়াল সমীকরণের একটা অঙ্কে আটকে যাওয়াই বদলে দেয় তাঁর সিদ্ধান্ত।

পরে, ১৯৮৬ সালে তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর, তিনি ওয়াল স্ট্রিট ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক ডি.ই.শ অ্যান্ড কোং-এ নিযুক্ত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে সেখানকার সর্বকনিষ্ঠ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।

যদিও, ফিনান্স সেক্টরে বেজোস যথেষ্ট লাভজনক কর্মজীবনে নিযুক্ত ছিলেন, তবুও তিনি ই-কমার্সের সাথে যুক্ত হওয়ার একটা সুযোগ খুঁজছিলেন, যেটা তখনও এতটা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়নি।

নিজের একটা ই-কমার্স কোম্পানি খোলার জন্যেই ১৯৯৪ সালে, যখন তিনি তার চাকরি ছেড়ে দেন, তখন তিনি সিয়াটলে চলে যান।

ওখানে ভাড়া বাড়ির গ্যারাজে ইন্টারনেট বাজারের অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে ব্যবহার করে একটি অনলাইন বইয়ের দোকান খোলেন।

যদিও, তখন এটা অতিমাত্রায় একটা ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, খুব দ্রুতই তাঁর এই অনলাইন ব্যবসা সফলতার মুখ দেখে।

ঠিক, ১৯৯৪ সালেই বেজোসের তৈরী করা এই ই-বুক কোম্পানি অ্যামাজন.কম নামে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আর, ঠিক এইভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যামাজন কোম্পানির।

 

আমাজন কোম্পানির কিছু বিশেষ ইতিহাস

১৯৯৪ সালেই জেফ বেজোস প্রথম একটা ইন্টারনেট এন্টারপ্রাইজ শুরু করার ধারণা পান।

ডি ই শ-এর বিনিয়োগের জন্য নতুন উদ্যোগের সন্ধানে ইন্টারনেট সার্ফ করার সময় তিনি দেখেন যে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রতি মাসের ব্যবহার প্রায় ২৩০০% বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আর, তিনি সাথে-সাথেই ইন্টারনেট মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রির ব্যাপক সম্ভাবনাগুলোর কথা বুঝতে পেরেছিলেন।

এবং, ঠিক তখন থেকেই তিনি ইন্টারনেট ব্যবসা বিকাশের উদ্যোক্তা সম্ভাবনাগুলো দেখা শুরু করেছিলেন।

ওয়াশিংটনের বিক্রয় করের মাত্রা কম হওয়ার দরুন, বেজোস আমাজনকে এটার গ্রাহকদের কাছ থেকে বিক্রয় কর না দিয়েই প্রায় সব বই ক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন।

তিনি প্রথমে তাঁর নিজের অর্থের $১০,০০০ দিয়ে অ্যামাজনকে চালু করেন।

তিনি, তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি, ও ছোট কর্মীদের সাথে তাঁর ভাড়া বাড়ির গ্যারেজ থেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যামাজন পরিচালনা করেন।

নাম দিয়ে যায় চেনা:

১৯৯৪ সালের ৫ই জুলাই, বেজোস তাঁর অনলাইন ব্যবসাকে ক্যাডাব্রা ইংক. (Cadabra, Inc) নামে অন্তর্ভুক্ত করেন।

পরবর্তীতে, এটাই অ্যামাজন নামে পরিচিত হয়।

তবে, ক্যাডাব্রা নামটি বেজোসের আইনজীবী ও আরও অনেকে ‘ক্যাডাভার’ (Cadaver) ভেবে ভুল উচ্চারণ করতে থাকেন।

এছাড়াও, অ্যামাজন নামটি ফাইনাল করার আগে, জেফ এই কোম্পানিটির নাম রেখেছিলেন রিলেন্টলেস (Relentless) এবং তিনি এই নামেই ডোমেন নেইম (relentless.com) কিনেছিলেন।

আর, মজার কথা হল এই যে, এখনও relentless.com ডোমেন নেইম দিয়ে সার্চ করলে, আপনাকে এটি অ্যামাজনেই রিডাইরেক্ট করে দেবে।

অ্যামাজনের সংগ্রাম ও সাফল্য – (Struggles & Achievements of Amazon)

চলুন, এইবার আমরা সংক্ষেপে জানি, সাল-ভিত্তিক অ্যামাজনের সংগ্রাম ও সাফল্যের কাহিনী সম্পর্কে –

১৯৯৭ সাল: জনসাধারণকে যুক্ত করা হয়

অ্যামাজন প্রতি শেয়ারে $১.৯৬ মূল্যে, প্রায় $৩০০ মিলিয়ন মূল্যায়নের সাথে সর্বজনীন করা হয়েছে (পরবর্তীতে স্টক ভাগ হওয়ার পরে  $১৮-এ সামঞ্জস্য করা হয়েছে)।

আপনাকে যদি ১৯৯৭ সালে অ্যামাজন শেয়ার $১০০০ আইপিওতে বিনিয়োগ করতে হতো, তবে ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ সেই শেয়ারগুলোর মূল্য হয়েছিল $১১৩৭০০০-এর বেশি।

অ্যামাজনের ক্রমবর্ধমান সাফল্যের সাথে, এর কিছু বৃহত্তর প্রতিযোগীর নিশানাতেও পড়তে হয়, যথা- বার্নস এন্ড নোবেল, ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানিগুলো প্রকাশ্যেই এই ই-কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে।

১৯৯৯ সাল: অ্যামাজন তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের অনুমতি দেয়-

অ্যামাজন ব্যবসার সম্পূর্ণ নতুন একটা কাঠামো তৈরী করে।

এই সময় থেকে এই কোম্পানি তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের সাইটের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য কেনাবেচার অনুমতি দেয়।

যাতে, এখান থেকে ভোক্তারা বিরল, অনন্য আর বিশেষ আইটেমগুলো খুঁজে পেতে পারে।

ফলবশতঃ, আমাজন তৃতীয় পক্ষ বিক্রির অনুমতি দেওয়ার, মাত্র চার মাসের মধ্যেই এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৫০০০০-এরও বেশি হয়ে ওঠে।

২০০৫ সাল: উদ্ভাবনী লয়াল্টি প্রোগ্রাম “প্রাইমিং”

২০০৫ সালে জেফ বেজোস একটি কাস্টমার লয়াল্টি প্রোগ্রাম ঘোষণা করেন।

যেখানে বলা হয় যে, যেকোনো অর্ডারে বিনামূল্যে দুই দিনের মধ্যে পণ্য শিপিং করা হবে ও আরও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হবে, তবে তার জন্যে কাস্টমারদেড় প্রতি বছর $৭৯ দিতে হবে।

এই প্রাইম আমাজনকে বিশাল সাফল্য এনে দিয়েছে।

বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে এই কোম্পানির প্রায় ১১২০ লক্ষেরও বেশি সদস্য আছে।

অ্যামাজন প্রাইম শুরু হওয়ার সাথে-সাথেই এটি গ্রাহকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ও তারা লয়াল কাস্টমারে পরিণত হয়।

বেজোস প্রথম দিক থেকেই অ্যামাজনের গ্রাহকদের সুবিধা ও চূড়ান্ত সন্তুষ্টির উপর নজর রেখেছিলেন।

আর, প্রাইম সেই ধারণাটিকেই বাস্তবে রূপান্তরিত করে।

অর্থাৎ, প্রাইম মেম্বারশিপ পণ্যগুলোর উপর যে বিশেষ ছাড় বা সুবিধা দেয়, এমনকি টিভি কিংবা সঙ্গীতসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে; তা কেবলমাত্র গ্রাহকদের পরম সন্তুষ্টি প্রদানের জন্যই করা হয়েছে।

২০১৫ সাল: পরিষেবার মান বৃদ্ধি করা

২০১১ সাল থেকে এই কোম্পানি অ্যামাজন ইকো (আলেক্সা-এনাব্লেড)-এর বিকাশ ঘটাতে শুরু করে আর অবশেষে ২০১৫ সালের জুন মাসে এই ইকো ডিভাইসগুলোকে মার্কেটে নিয়ে আসে৷

আর, আলেক্সার মতো ইন-হোম ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্টের ধারণাটি তখন অনেকের কাছেই অভিনব ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

আর, এই ডিভাইসগুলো থেকে খুব কম সময়েই অ্যামাজন যথেষ্ট মুনাফা লাভ করতে থাকে।

এই কোম্পানির সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিভাইস হল অ্যালেক্সা-এনাবেল্ড ইকো ডট।

বর্তমানে, অ্যামাজন অ্যালেক্সাকে বহু স্মার্ট হোম ডিভাইসের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

আর, প্রায় প্রতিদিনই আলেক্সার ফাংশনগুলোকে আপডেট করা হয়ে থাকে।

এখনকার সময়ে প্রায় ১০০০ লক্ষেরও বেশি অ্যালেক্সা-এনাবেল্ড ডিভাইস বিক্রি হয়েছে।

এবং, এর বিক্রি ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২০ সাল: কোভিড-১৯-এর সময়ে ব্যাপক পরিষেবা প্রদান

করোনা মহামারীর বিশ্বব্যাপী প্রভাবের দরুন অগুনতি সংস্থা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও, অ্যামাজনের মতো বিশিষ্ট কোম্পানি ব্যাপকভাবে পরিষেবা বাড়িয়েছে।

এই সময়ে বেজোস কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রমে ফিরে আসার সাথে-সাথেই, এই কোম্পানির কর্মীদের সুরক্ষা না দেওয়ার জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন।

তবে, মহামারী ও লকডাউন চলাকালীন বিশ্বব্যাপী আমাজানের পরিষেবা সারা পৃথিবীর বুকেই অব্যাহত ছিল।

তাই, ধরা যায় যে, কোভিড-১৯ ও তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আমাজনকে তার ইতিহাসের অন্য যেকোনো ঘটনার চেয়ে অনেকটাই বেশি প্রভাবিত করবে

পরিশেষে:

কেবলমাত্র আমেরিকাতেই নয় বরং ভারতের মতো দেশেরও অ্যামাজনের যথেষ্ট দৌরাত্ম রয়েছে।

এই কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, এর বর্তমান আয় হল $৪৭৭.৭৪ বিলিয়ন।

এছাড়াও, বর্তমানে এই ই-কমার্স জায়ান্টে প্রায় ১৬০৮০০০ ফুল ও পার্ট-টাইম কর্মচারী নিযুক্ত রয়েছে।

এর পাশাপাশি, ২০২২ সালে প্রাইমের মেম্বারশিপ ১৫৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।

আমাদের আজকের অ্যামাজন এর মালিক কে এবং এর ইতিহাস নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button