সঠিক ভাবে মার্কেটিং করার কৌশল, নিয়ম এবং ধরণ
সঠিক ভাবে মার্কেটিং করার কৌশল, নিয়ম এবং ধরণ
মার্কেটিং করার কৌশল (Marketing skills in Bengali): যতই আমাদের ডিজিটাল দুনিয়ার প্রসার ঘটছে, ততই আমাদের ব্যবহারের পণ্য বা পরিষেবাগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছি।
ক্রমবর্ধমান যাচাই-বাছাইয়ের প্রতিযোগিতায় পড়ে, অনেক কোম্পানিই তাদের কাঁধে তাদের পণ্য বা পরিষেবার দক্ষতা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে তৎপর হয়ে উঠছে।
আর, এই দক্ষতা প্রদর্শনেরই সেরা উপায় হিসেবে বেছে নিচ্ছে সঠিক বিপণন বা মার্কেটিং করার নিয়ম।
অতীতের সাথে-সাথে বর্তমানেও মার্কেটিং হয়ে উঠেছে যেকোনো পণ্য বাজারজাত করার অবশ্যম্ভাবী সফল মাধ্যম।
আর, যেকোনো সফল মার্কেটিং কৌশলই গ্রাহকদের মনে কোনো কোম্পানি সম্পর্কে আস্থা গড়ে তুলতে ও তার পণ্য বা পরিষেবা ক্রয় করতে সরাসরি প্রভাবিত করে থাকে।
তাই, যেকোনো কোম্পানিই মার্কেটিং-এর জন্যে বড় বাজেট খরচ করে।
কারণ, এই মার্কেটিং-এর উপর ব্যাপকভাবে কোনো কোম্পানির সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা নির্ভর করে।
আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো, মার্কেটিং করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল সম্পর্কে, যা আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে এনে দিতে পারে কাঙ্খিত সাফল্য।
Post Contents
প্রথমে জানি, মার্কেটিং বা বিপণন কি ?
মার্কেটিং হল এমন একটা প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান তথ্য তৈরি, যোগাযোগ, বিতরণ ও অফার প্রদান করে নিজেদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করে।
মার্কেটিং-কে কোনো সংস্থার দ্বারা সরাসরি তার গ্রাহকদের উদ্দেশ্য করে পণ্য কিংবা পরিষেবার প্রচার হিসাবেও ধরা যেতে পারে।
সাধারণভাবে বলতে গেলে, বিপণন হল গ্রাহকদের বোঝার ও তাদের সাথে কোনো প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি ও বজায় রাখার পদ্ধতি।
এবার জানা যাক, মার্কেটিং কৌশল কি ?
মার্কেটিং বা বিপণন কৌশল গুলো হল সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর ও তাদেরকে কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবার ক্রয় করানো মাধ্যমে তাদেরকেই ক্রেতাতে পরিণত করার উপায় বা পদ্ধতি।
বিপণন কৌশলের মধ্যে কোনো ব্যবসার মূল্য প্রস্তাব, ব্র্যান্ডের মূল বার্তা, লক্ষ্য গ্রাহকদের জনসংখ্যা-সংক্রান্ত তথ্য, সাইকোগ্রাফিক্স ও অন্যান্য উচ্চ-স্তরের উপাদানগুলোকে বিবেচনা করা হয়।
আর, মার্কেটিং পেশাদাররা এই বিপণন কৌশল ও প্রচারাভিযানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেন; আর নিশ্চিত করেন যে, প্রচারগুলো যাতে কোম্পানি ও গ্রাহকদের জন্য উপযুক্ত হয়।
৮ টি কার্যকর মার্কেটিং কৌশল – (মার্কেটিং করার কৌশল)
সঠিক সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে আর মিডিয়ার অপচয় এড়াতে বিভিন্ন মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে;
এই কৌশলগুলো হল –
১. ব্র্যান্ডের গল্প বলা:
উদ্দেশ্য- মনোযোগ আকর্ষণ করা।
বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, গল্প বলার মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের স্মৃতিতে তথ্য গেঁথে দিয়ে ও তাদের সাথে আবেগকে নাড়া দেওয়া।
তাই, আপনার ওয়েবসাইটে যেখানে আপনার কোম্পানির কাজ ও ইতিহাস সম্পর্কে লেখা থাকে, সেইখানেই লেখাগুলোকে গল্পের আকারে বানিয়ে নিন।
যা আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাকে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে দীর্ঘদিন মনে রাখতে সাহায্য করবে।
আর, তার কোনো পণ্য বা পরিষেবা কেনার সময়ে আপনার কোম্পানির কথাই প্রথমে মনে পড়বে।
২. ডিজিটাল পি.আর:
উদ্দেশ্য- নতুন গ্রাহদের কাছে পৌঁছানো।
২০২২ সালে মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১৪৭ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটিয়েছে, যা আগের বছরের থেকেও ২ মিনিট বেশি।
সুতরাং, আমরা আগের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি সময় কাটাচ্ছি।
আর, ঠিক এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে জনসংযোগ পেশাদাররা (পি.আর) শুধুমাত্র নিউজ আউটলেটের প্রকাশনাগুলোতে তাদের কোম্পানির গল্পগুলো দেওয়ার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে।
আর, তার পাশাপাশি কোম্পানির ওয়েবসাইট ও সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইলগুলোতেও ট্র্যাফিক বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে যাতে একসাথে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।
৩. সারাউন্ড-সাউন্ড টেকনোলজি:
উদ্দেশ্য- গ্রাহকদের চর্চার মধ্যে থাকা।
এই মার্কেটিং কৌশল বর্তমানে সবথেকে বেশি পরিচিত মার্কেটিং কৌশলগুলোর মধ্যে একটি।
এই পদ্ধতি অনুযায়ী মনে করা হয় যে, কোম্পানির নিজের মালিকানাধীন চ্যানেল ও সম্পদ থেকে প্রকৃত ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম নয়।
তাই, এই কোম্পানিগুলোর প্রয়োজন যে, যখন অন্য কেউ তাদের পণ্য বিবেচনা করে, তখন সেখানেও সেই তাদের উপস্থিত থাকাটা জরুরি।
যেমন –
– ওয়েবসাইট রেভিউস
– বিশিষ্ট ইনফ্লুয়েন্সারদের সোশ্যাল টাইমলাইন
– সম্ভাব্য গ্রাহকেরা যে মিডিয়া ব্যবহার করে সেখানে প্রচার (আর্টিকেল, পডকাস্ট ও ভিডিও)
৪. ব্র্যান্ডের সম্প্রচার:
উদ্দেশ্য- বর্ধিত সচেতনতার জন্য পারস্পরিক মার্কেটের সাথে যুক্ত হওয়া।
বড় কোম্পানিগুলো প্রায়ই তাদের ব্র্যান্ড প্রসারিত করে, এমন ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত হয়ে, যেখানে নতুন পণ্য বিকাশের জন্য তাদের কোনো মার্কেট শেয়ার নেই।
যেমন- আমাজন প্রথমে অনলাইন বই বিক্রি করলেও, বতর্মানে আমাজন বিভিন্ন এন্টারটেইনমেন্ট ব্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে আমাজন প্রাইম খুলেছে।
পারস্পরিক মার্কেটে প্রবেশ করে যেকোনো ব্র্যান্ড তার ইউনিক এসোসিয়েশন ও গুণমানকে রক্ষা করতে পারে।
৫. ভিডিও মার্কেটিং:
উদ্দেশ্য- ভিডিও সামগ্রীর সুবিধা নিয়ে নতুন দর্শকদের কাছে পৌঁছানো।
ভিডিও মার্কেটিং দ্রুত হারে ব্লগ ও ইনফোগ্রাফিকের মার্কেটিং কৌশলকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
ভিডিও মার্কেটিং-এর এতো চাহিদার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ-
– নমনীয়তা:
ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করে কোনো কোম্পানি সেটা তার ব্লগে এম্বেড করতেই পারে।
এমনকি, তা সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতেও পারে এবং আরও অনেক কিছু করতে পারে৷
– অর্গানিকভাবে কনটেন্ট শেয়ারের মাধ্যম:
গুগল ভিডিওগুলোকে SERPs (সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজেস)-এ দেখায়।
ইউটিউব নিজেই হল একটি স্বতন্ত্র সার্চ ইঞ্জিন আর গুগলের পরেই জনগণের দ্বারা দ্বিতীয় সর্বাধিক ভিসিট করা সাইট।
– সফলভাবে এনগেজমেন্ট তৈরি করা সম্ভব:
মানুষ বর্তমানে টিভির থেকেও বেশি ভিডিও দেখছে, তাই ভিডিওর মাধ্যমে ব্যবসার কনটেন্ট জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যথেষ্টই কার্যকরী একটা কৌশল।
তাই, এখনকার গ্রাহকেরা কেবল অডিও কনটেন্টই খোঁজে না বরং তারা ভিডিও কনটেন্টও খোঁজে।
সমস্ত সচেতন বিপণনকারীরা এনগেজিং কনটেন্ট ও পুনঃউদ্দেশ্য-ক্ষমতার আকারে বিনিয়োগের যথার্থ রিটার্ন (রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট- ROI) পাচ্ছেন।
৬. কমিউনিটি গঠন:
উদ্দেশ্য: দীর্ঘমেয়াদী এনগেজমেন্ট তৈরী করা ও কর্তৃপক্ষ গঠন করা।
এনগেজমেন্ট ও ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়ানোর সেরা উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হল- সম্ভাবনা, ব্যবহারকারী, গ্রাহক ও ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।
অনেক কোম্পানি তাদের সামাজিক মিডিয়া, অনলাইন বোর্ড ও তাদের নিজস্ব পরিচালনাধীন নেটওয়ার্ক/ফোরামে তাদের নিজস্ব ডিজিটাল কম্যুনিটি তৈরি করছে।
কমুনিটি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে, কোম্পানিগুলো সম্পর্ক গড়ে তোলে, আর নিজেদেরকে ইন্ডাস্ট্রির একজন কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এইভাবে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডগুলো তাদের সাথে গ্রাহকদের সম্পর্ককে উন্নত করে তোলে।
৭. কন্টেক্সচুয়াল মার্কেটিং:
উদ্দেশ্য- ব্যক্তিগতকৃত কনটেন্টের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের এনগেজমেন্ট বাড়ানো।
কন্টেক্সচুয়াল মার্কেটিং হল দর্শকদের ক্রেতাতে পরিণত হওয়ার যাত্রা অনুসারে, ব্যক্তিগতকৃত কনটেন্ট ওয়েবসাইটে দেখানোর একটা পদ্ধতি।
এই মার্কেটিং কৌশলে কোম্পানিগুলো তাদের ওয়েবসাইট থেকে যাবতীয় হাবিজাবি তথ্য সরিয়ে দিয়ে, কেবল তার প্রতিটি গ্রাহকের কাছে যেসব বিষয়বস্তু সবথেকে বেশিগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোই পরিবেশন করে থাকে।
এইভাবে বিষয়বস্তু পরিবেশন করলে কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সফল হয়।
৮. রিটার্গেটিং:
উদ্দেশ্য- হারিয়ে যাওয়া ট্রাফিক পুনরুদ্ধার করা
রিটার্গেটিং-এর অর্থ হল, ধরুন, কোনো কাস্টমার আপনার কোম্পানি থেকে পণ্য বা পরিষেবা নেওয়ার জন্যে আগ্রহ দেখালেও, কোনো কারণবশত সে তা তৎক্ষণাৎ নিল না।
তখন রিটার্গেটিং ব্যবহার করে সেই অন্যান্য সাইটে ওই গ্রাহক দ্বারা নির্বাচিত পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে, তাকে তার প্রাথমিক আগ্রহের কথা মনে করিয়ে দিতে হয় (যথা- ব্যানার বিজ্ঞাপন বা ফেইসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে)।
প্রকৃতপক্ষে, এই বিজ্ঞাপনগুলো ইন্টারনেটে তার সম্ভাব্য গ্রাহককে অনুসরণ করে, যাতে গ্রাহকের মনে সেই পণ্যটি ক্রয়ের সম্পর্কে আগ্রহ বাড়তে থাকে।
এই কৌশলটি কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশ কার্যকরী হয়েছে।
পরিশেষে:
আপনি যখন কোনো নতুন মার্কেটিং পরিকল্পনা করেন কিংবা কোনো পুরানো পরিকল্পনাকে নতুনভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন, তখন সেক্ষেত্রে আপনার নতুন মার্কেটিং কৌশলগুলো বিবেচনা করাই শ্রেয়।
যদিও, আপনার বিপণন কৌশল সঠিক হতেও পারে, তবে সময়ের সাথে সাথে, পুরানো মার্কেটিংয়ের কৌশলগুলো নতুন মার্কেটে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারিয়ে ফেলতেই পারে।
তাই, নতুন পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আপনার ব্যবসার প্রচার আপনি সফলভাবেই করতে পারেন।
আমাদের আজকের মার্কেটিং করার কৌশল নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।