গবেষণা কাকে বলে ? গবেষণার প্রকারভেদ এবং বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
জ্ঞান বৃদ্ধি করা হল মানুষের মস্তিষ্কের খাদ্যের মতো।
আমাদের শরীর যেমন সময়মতো জল-খাদ্য না পেলে বেঁচে থাকতে পারে না- ঠিক তেমনই আমাদের মস্তিষ্ক জ্ঞান-চিন্তা-ভাবনা, আর সেই ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন না করতে পারলে, তা অকেজো হয়ে পড়ে।
আর, মস্তিষ্কের এই জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্যে সবথেকে জরুরি একটা পদক্ষেপ হল গবেষণা, অনুসন্ধান বা রিসার্চ।
আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তুই হল- গবেষণা মানে কি, এর উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, গুরুত্ব, ও প্রয়োজনীয়তা।
এই আর্টিকেলটি পড়লে, আপনার গবেষণা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরী হবে, যা আপনাকে যেকোনো নিজস্ব অনুসন্ধান পরিচালনা করতে সাহায্য করতে?
চলুন, তাহলে জেনে নেওয়া যাক, গবেষণা কি বা গবেষণা বলতে কি বুঝায় ?
গবেষণা কাকে বলে ? (গবেষণার সংজ্ঞা)
গবেষণা হল এক ধরণের পদ্ধতিগত অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া- যার সাহায্যে আমরা তথ্য সংগ্রহ করে থাকি, সমালোচনামূলক তথ্যের ডকুমেন্টেশন বা নথিকরণ করি এবং নির্দিষ্ট পেশাদার ক্ষেত্র কিংবা একাডেমিক শৃঙ্খলা দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসারে সেই ডেটা বা তথ্যের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে থাকি।
অন্যভাবে বলতে গেলে,
এই গবেষণা হল এমন এক ধরণের প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা গবেষক সমস্যা-সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর মূল্যায়ন বা সমাধান করতে বিভিন্ন উত্তরদাতাদের দ্বারা প্রদত্ত নির্দিষ্ট বা দরকারী তথ্য অনুসন্ধান করতে সাহায্য করে।
আসলে, রিসার্চ বা গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কৌশলের শিল্প বা আর্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
কিছু মানুষের মত অনুযায়ী, গবেষণা হল জ্ঞানলাভের একটা পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা; যেটা অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য তথ্য সংগ্রহ, মূল্যায়ন এবং ব্যাখ্যা করার একটা প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন পেশাদারি ক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের গবেষণা মূলত পরিচালনা করা হয় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে।
এর মধ্যেই কয়েকটি সাধারণ উদ্দেশ্যের কথা নিচে আলোচনা করা হল।
(শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণার উদ্দেশ্য)
– কোনো হাইপোথিসিস অর্থাৎ ব্যাখ্যামূলক কাঠামোর বৈধতা মূল্যায়ন করা
– যথাযথ পদ্ধতিতে মূল জ্ঞান ও অনুসন্ধানের ফলাফলকে একত্রিত করা।
– আরও অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্ন তৈরি করা
(মার্কেটিং জগতে গবেষণার উদ্দেশ্য)
– সম্ভাব্য ও নতুন গ্রাহকদের সনাক্ত করা
– বিদ্যমান গ্রাহকদের বোঝা
– বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা
– উৎপাদনশীল মার্কেটিং কৌশলের বিকাশ ঘটানো
– ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতাগুলো খুঁজে বার করা
– ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাগুলোকে একত্রিত করা
– নতুন ব্যবসার সুযোগ খুঁজে বার করা
গবেষণার বৈশিষ্ট্য:
তদন্তের যেকোনো ক্ষেত্রেই, গবেষণা তার নিজ-নিজ এলাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে থাকে।
তবে, রিসার্চ বা অনুসন্ধানের বেশ কতগুলো স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে;
সেগুলো হল-
১. গবেষণা নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যিক:
যেকোনো গবেষণাই নিয়ন্ত্রণমূলক হওয়া উচিত।
নাহলে, দুই বা ততোধিক ভেরিয়েবল বা পরিবর্তশীল উপাদানগুলো (সেটি অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক দুইই হতে পারে) একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, গবেষণার ফলাফলে ত্রুটি আনতে পারে, যা একেবারেই কাম্য নয়।
আর, যদি গবেষণা নিয়ন্ত্রণযোগ্য না হয়, তবে সেখান থেকে কোনো নির্দিষ্ট গবেষণা প্রতিবেদন তৈরী করা সম্ভব হবে না।
২. গবেষণা কঠোর হওয়া বাঞ্চনীয়:
যেকোনো অনুসন্ধান প্রক্রিয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
যাতে, অনুসন্ধানকারীরা প্রাসঙ্গিক ও উপযুক্ত প্রকৃতির প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সঠিক ফলাফলে উপনীত হতে পারে।
গবেষণা তথ্য দুই ধরণের বিজ্ঞান অর্থাৎ, শারীরিক ও সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে গঠিত হয়।
আর, এই দুটি বিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে থাকে।
৩. গবেষণা পদ্ধতিগত হওয়া প্রয়োজন:
গবেষণা পদ্ধতিগত না হলে গবেষক কোনোভাবেই নিখুঁত গবেষণার নকশা বা প্রক্রিয়া তৈরী করতে পারবে না।
আর, সঠিকভাবে গবেষণার নকশা তৈরী না করা গেলে, প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় ও মূল্যায়ন করা দুটোই কঠিন হয়ে পড়বে।
এই কারণেই, একটা নিখুঁত বা পদ্ধতিগত গবেষণা প্রক্রিয়া তৈরী করলে, তা আপনাকে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।
৪. গবেষণা বৈধ হওয়া একান্তই আবশ্যক:
অর্থাৎ, একটা গবেষণায় একজন গবেষক যেসব তথ্য সংগ্রহ করছে, তা অবশ্যই সঠিক ও যাচাইযোগ্য হতে হবে।
এখানে গবেষককে নিজেই নিজের তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে যাচাই করে নিতে হবে।
আর, এক্ষেত্রে সংগৃহীত তথ্য যদি ন্যায্য ও বৈধ হয়, তাহলে গবেষণাটিও নৈতিক প্রকৃতিরই হবে।
৫. গবেষণা পরীক্ষামূলক হওয়া জরুরি:
যেকোনো গবেষণার উপসংহার, সম্পূর্ণরূপে পর্যবেক্ষিত নৈতিক ও সঠিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করেই লেখা উচিত।
৬. গবেষণা যেন জ্ঞানের ভিত্তি হয়:
গবেষণা হল জ্ঞানের উদ্দেশ্যে থাকা জ্ঞানের ভিত্তি।
যা বিভিন্ন সামাজিক, ব্যবসায়িক বা সরকারী সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশিকা বা নিয়ম প্রদানের একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।
এটি বিভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ- যা আমাদেরকে গবেষণার প্রতিটি ক্ষেত্রের নতুন উন্নয়নগুলোকে কার্যকরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
৭. গবেষণা বিশ্লেষণাত্মক হওয়া উচিত:
যেকোনো গবেষণা পদ্ধতি থেকে যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, সেই সমস্ত তথ্যেরই সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ থাকাটা খুবই দরকারি।
কারণ, এই বিশ্লেষণাত্মক তথ্যগুলো গবেষণার ব্যাখ্যাগুলোকে ত্রুটিমুক্ত করতে সাহায্য করে।
৮. উদ্দেশ্য, নিরপেক্ষতা ও যৌক্তিকতা:
সমস্ত গবেষণারই ফলাফল যুক্তিগতভাবে অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করেই নির্মিত হয়।
পরিমাণগত কিংবা পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করে, গবেষণার তথ্যগুলো সংখ্যাসূচক পরিমাপে রূপান্তরিত করা হয় ও পরিসংখ্যানগতভাবে তা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও, গবেষণা যৌক্তিক হওয়াও বাঞ্চনীয়।
কারণ, যৌক্তিকভাবে ধারণাগুলোকে নেড়েচেড়ে না দেখলে, কোনো গবেষকই তার অনুসন্ধানে বেশি দূর এগোতে পারে না।
৯. গবেষণা হ্রাসমূলক হওয়া প্রয়োজনীয়:
একজন গবেষকের ফলাফলগুলো অন্য গবেষকদের কাছে উপলব্ধ থাকতে হবে, যাতে একই বিষয় নিয়ে বারবার অনুসন্ধান না করা হয়ে যায়।
১০. গবেষণা অনুলিপিযোগ্য হওয়া দরকারি:
পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফলগুলো নতুন পরিবেশে ও অন্যান্য অবস্থায়, আলাদা সময়ের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ নতুন একদল নতুন মানুষের উপর কি ফলাফল দিতে পারে, তা পরীক্ষা করার জন্যে পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোর ফলাফল ব্যবহার করার অনুমতি থাকাটা দরকারি।
১১. গবেষণা কর্মমুখী হওয়া আবশ্যিক:
যেকোনো গবেষণার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত- ফলাফল বেরোনোর পর সেটার বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়ে বিশ্বে কোনো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসা।
গবেষণার প্রকারভেদ:
বিভিন্ন ধরণের গবেষণা রয়েছে- যাদেরকে আমরা তাদের উদ্দেশ্য, অধ্যয়নের গভীরতা, তথ্য বিশ্লেষণের ধরণ, ঘটনাপ্রবাহ অধ্যয়নে ব্যয়িত সময় ও আরও নানান কারণের ভিত্তিতে ভাগ করে থাকি।
তবে, এটা মনে রাখা উচিত যে, কোনো গবেষণা প্রকল্পই নির্দিষ্ট একই ধরণের গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
তা সত্ত্বেও আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো গবেষণার প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করলাম।
– তথ্য বিশ্লেষণের ধরণের ভিত্তিতে গবেষণার ধরণ-
১. পরিমাণগত (কোয়ান্টিটিভ) গবেষণা:
পরিমাণগত গবেষণার ক্ষেত্রে সংগৃহীত তথ্যগুলোকে সংখ্যার নিরিখে জোগাড় করা হয়ে থাকে।
আর, এই ধরণের গবেষণার সারাংশগুলো এই সংগৃহীত সংখ্যাগুলোর উপরই তৈরী করা হয়।
মূলত, গ্রাফের সাহায্যে এই পরিমাণগত গবেষণার ফলাফল পরিমাপ করা হয়।
২. গুণগত (কোয়ালিটিটিভ) গবেষণা:
কোনো গবেষণার গুণগত মান বলতে তার অসাংখ্যিক উপাদানগুলোকেই বোঝায়।
এখানে তথ্যগুলোকে পরিসংখ্যানের বদলে, তার গুণগত দিক থেকে বিচার করে সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়।
তবে, এই ধরণের তথ্যের ফলাফল খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য হয় না।
– গবেষণার প্রকৃতির ভিত্তিতে গবেষণার ধরণ-
১. বর্ণনামূলক (ডেস্ক্রিপটিভ) গবেষণা:
তথ্যগুলোকে বর্ণনামূলক পদ্ধতিতে বিবেচনা করা হলে, কিংবা জরিপ ও কেস স্টাডি করার মাধ্যমে তথ্যের স্পষ্টতা নির্ধারণ করা হলে, তখন সেই গবেষণাকে বর্ণনামূলক গবেষণা বলে মনে করা হয়।
এই গবেষণাগুলো উদাহরণ সহকারে তথ্য নির্ধারণ ও ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে- যা কখনোই প্রত্যাখ্যাত হয় না।
তথ্য ব্যাখ্যা করার জন্য বর্ণনামূলক গবেষণায় অনেক ধরণের পরিবর্তনশীল উপাদান বা ভেরিয়েবল ব্যবহার করা হয়।
২. বিশ্লেষণাত্মক (এনালিটিক্যাল) গবেষণা:
বিশ্লেষণাত্মক গবেষণার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই নিশ্চিত হওয়া তথ্যগুলোকে ব্যবহার করে ও তথ্যের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
এই পদ্ধতিগুলো কিন্তু পরিমাণগত গবেষণার পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করেই করা হয়ে থাকে।
অধ্যয়নের উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে গবেষণার ধরণ-
১. ফলিত (অ্যাপ্লায়েড) গবেষণা:
ফলিত গবেষণার হল এক ধরণের সক্রিয় অনুসন্ধানের মতো, যেখানে শুধুমাত্র একটা কার্যক্ষেত্রকেই বিবেচনা করা হয়।
আর, এই গবেষণার বেশিরভাগই তথ্যই সাধারণীকৃত করা হয়ে থাকে।
ভেরিয়েবল বা উপাদানগুলোকে ধ্রুবক হিসাবে ধরে এখানে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
যাতে, এই ধরণের প্রায়োগিক গবেষণায়, গবেষণার পদ্ধতিগুলো সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ধরণের গবেষণায় প্রযুক্তিগত তথ্য ও ভাষা ব্যবহার করেই সারাংশ প্রস্তুত করা হয়।
২. মৌলিক (ফান্ডামেন্টাল) গবেষণা:
মৌলিক গবেষণা হল অনন্য বিষয়বস্তু নিয়ে করা গবেষণা- যেটি এমন একটি উপাদান বা তত্ত্ব খুঁজে বের করার জন্য পরিচালনা করা হয়; যা পৃথিবীতে আগে কখনও হয়নি।
এখানে বেশ কয়েকটি কার্যক্ষেত্র থাকে, আর এই গবেষণার লক্ষ্যই থাকে কীভাবে প্রাচীন বিষয়বস্তুগুলোতে পরিবর্তন আনা যায় বা নতুন কিছু তৈরি করা যায়, সেগুলো খোঁজা।
এই গবেষণার সারাংশগুলো সম্পূর্ণরূপে সাধারণ ভাষায় ও যৌক্তিক ফলাফলগুলোর উপর নির্ভর করেই প্রস্তুত করা হয়।
– পদ্ধতির ভিত্তিতে গবেষণার ধরণ-
১. অনুসন্ধানমূলক (এক্সপ্লোরেটারী) গবেষণা:
অনুসন্ধানমূলক রিসার্চগুলো তত্ত্ব ও তাদের ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়।
তবে, এখানে কোনোরকমের উপসংহার থাকে না।
এই গবেষণার কোনো সঠিক কাঠামো থাকে না।
আর, এখানে গবেষণার পদ্ধতিগুলো অধ্যয়নের জন্য কোনো নমনীয় ও অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এখানে হাইপোথিসিস পরীক্ষা করা হয় না ও ফলাফলগুলো দুনিয়ার কোনো কাজেই খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে না।
এখানের ফলাফলগুলো শুধুমাত্র গবেষণাকে আরও উন্নত করতে কাজে লাগে।
২. চূড়ান্ত (কনক্লুসিভ) গবেষণা:
এই ধরণের গবেষণার লক্ষ্য থাকে, অনুসন্ধানের বিষয় সম্পর্কে একটা সঠিক উত্তর প্রদান করা।
আর, এই গবেষণার নিজস্ব অনুসন্ধান পদ্ধতিও থাকে।
একটা সুপরিকল্পিত কাঠামো কিন্তু হাইপোথিসিস তৈরী, সমাধান ও সঠিক ফলাফল দিতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।
এখানে ফলাফল সাধারণ হয় ও তা বিশ্বের কাজে লাগানো যায়।
গবেষকরা এই ধরণের সমস্যাগুলোর সমাধানকে সমাজের কাজে ব্যবহার করে আনন্দ অনুভব করে থাকেন।
৩. সমীক্ষা (সার্ভে):
সঠিকভাবে প্রমাণ না করা গেলেও, যেকোনো গবেষণা পদ্ধতিতেই সমীক্ষা নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই সমীক্ষাগুলো একসাথে প্রচুর পরিমাণে রিয়েল-টাইম তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।
খুব কম খরচে ও দ্রুত অনুসন্ধান করার শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হল সার্ভে।
এটি পরিমাণগত ও গুণগত- উভয় ধরণে তথ্য সংগ্রহের পক্ষেই হল একটা আদর্শ পদ্ধতি।
পরিমাণগত সমীক্ষাগুলো অবশ্যই গুণগত সমীক্ষার উপর বিবেচনা করেই করা উচিত- কারণ, পরিমাণগত সার্ভে সবসময়েই সংখ্যাসূচক ফলাফলের ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত তথ্য দেয়।
৪. কেস স্টাডিজ:
কেস স্টাডি হল গবেষণা পদ্ধতির সেরা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এখানে গবেষকদের বিভিন্ন ক্ষেত্র বিবেচনা করে, সঠিক তথ্যগুলো নির্বাচন করতে হয়।
এই ধরণের পদ্ধতি গবেষণা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরিতে ও গবেষণার ভিত্তি তৈরি করতে সহায়তা করে।
এর থেকে বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব বিবেচনা করা যায়, যা গবেষণার বিষয় সম্পর্কে সঠিক পর্যালোচনা তৈরি করতে পারে।
গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
নানান গবেষণাগুলো অজানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভের অন্যতম সেরা মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
গবেষণা মানুষকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকে বোঝার সুযোগ করে দেয়।
এইগুলো গভীরভাবে কোনো বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করতে সাহায্য করে৷
কিছু ক্ষেত্রে, গবেষণা হল সাফল্যেরই একটা অপরিহার্য অংশ।
আবার অন্যদিকে, অনেকের কাছেই গবেষণার প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে।
অর্থাৎ, গবেষণার ফলাফলগুলো একটা আপেক্ষিক ধারণ হলেও, সমাজে এর অনেক গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আছে; সেগুলো হল-
১. জ্ঞানের সম্প্রসারে গবেষণার মতো ভালো পদ্ধতি আর কিছুই হতে পারে না।
কোনো বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞানলাভ করতে গবেষণাই হল শ্রেষ্ঠতম উপায়।
২. বিজ্ঞান তথা বিশ্বের সমস্ত বিষয়ই পরিবর্তনশীল, সেক্ষেত্রে পরিবর্তনশীলতা জন্ম দেয় আরও অনেক-অনেক তথ্যের।
যে কারণে, গবেষকেরা প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন তথ্য আহরণের তাগিদে, গবেষণাকে এতো মূল্যবান হিসেবে মনে করে।
৩. যেকোনো ধরণের গবেষণাই আপনাকে গবেষণা-সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর প্রতিবন্ধকতাগুলোকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করে।
যার ফলে, আপনি আপনার গবেষণার মাধ্যমে সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান খুঁজে বের করতেও পারেন।
৪. গবেষণা আপনাকে বিপুল তথ্য সম্পর্কে অবহিত করে তোলে ও আপনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনার মনে একটা ধারণা ও মতামত তৈরী করে দেয়।
যার ফলে, আপনার গবেষণার বিষয় সম্পর্কে, আপনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
যা, আপনার গবেষণাকে লোকজনের সামনে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
৫. গবেষণা আপনাকে সবচেয়ে অনন্য কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
যাতে, আপনি সবথেকে প্রয়োজনীয় সূত্রগুলো বের করে নিয়ে, আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে সহজেই পৌঁছতে পারেন।
৬. এটি আপনাকে নানান বিষয়বস্তু সম্পর্কে মানুষদের অবহিত করে তুলতে সাহায্য করে।
যা সমাজ কল্যাণের কাজে ব্যবহার করে মানবজাতির কল্যাণ সাধন করা সম্ভব।
৭. কোনো সমস্যা সমাধানের জন্যে গবেষণা হল সবথেকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।
যা থেকে সমস্যা সমাধানের বহু পথ উন্মুক্ত হতে পারে।
অথচ, খাতায়-কলমে অনুসন্ধানের পর, যেটা সবথেকে প্রাসঙ্গিক বলে প্রমাণিত হয়- সেটাই বাস্তবে প্রয়োগ করলে, তা গবেষণা ক্ষেত্রে অনেক সময়, পন্ড শ্রম ও বিপুল খরচের হাত থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
৮. আপনার কৌতূহলকে উস্কে দিতে গবেষণার কোনো জবাব নেই।
আর, গবেষণার মাধ্যমে কৌতূহল নিবারণ আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে।
যার মাধ্যমে আপনি মানসিক দিক থেকে বেশি করে পসিটিভ চিন্তাভাবনা পারবেন ও আপনার মধ্যে উদ্বিঘ্ন ভাবও অনেকটা কমবে
আমাদের শেষ কথা,,
আমাদের আজকের গবেষণা কি বা গবেষণা কাকে বলে নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
আশা করছি, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা গবেষণার প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট এবং মানে সহ সম্পূর্ণটা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পেরেছেন।
আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে সেটা নিচে কমেন্টের মাধ্যমে অবশই জানিয়ে দিবেন।