১৬ লাখ হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট নিষিদ্ধ হলো যে কারণে
১৬ লাখ হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট নিষিদ্ধ হলো যে কারণে
শুধুমাত্র এপ্রিল মাসে ভারতে ১৬.৭ লাখ একাউন্ট ব্যান করে দেয় হোয়াটসঅ্যাপ। সম্প্রতি নিয়মিত মাসিক রিপোর্টে এই তথ্য জানায় মেটা এর মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্মটি। এসব একাউন্টের মধ্যে ১২২টি একাউন্ট অসংখ্য ব্যবহারকারীর অভিযোগের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাকি ১৬.৬৬ লাখ একাউন্ট ব্যান করা হয় অ্যাপটির নিয়মবহির্ভুত ব্যবহারের জন্য।
এই নিয়ে ভারতে অনেকবার একাউন্ট ব্যান করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, যার অংশ হিসেবে এবার ১৬ লাখ একাউন্ট ব্যান করা হলো। “কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আগে তা দমন করা অধিক কার্যকর বলে আমরা মনে করি,” উল্লেখিত রিপোর্টে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কতৃপক্ষ।
হোয়াটসঅ্যাপ ফ্রেমওয়ার্ক অনুসারে প্ল্যাটফর্মটি কোনো ধরনের ক্ষতি সাধনের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে নিশ্চিত হলে তারা একাউন্ট ব্যান করে দেয়। “আমাদের লক্ষ্য হলো এই ধরনের একাউন্ট যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করা ও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া, তাই এসব একাউন্ট ম্যানুয়ালি খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। এর পরিবর্তে আমরা একটি মেশিন লার্নিং সিস্টেম তৈরী করেছি যা প্রতিদিন ২৪ঘন্টা সপ্তাহে ৭দিন কাজ করবে,” উল্লেখ করা হয় উক্ত রিপোর্টে।
হোয়াটসঅ্যাপ জানায় যে বিভিন্ন কারণের ভিত্তিতে তারা একাউন্ট ব্যান করে থাকে, বিশেষ করে পরপর নেতিবাচক ফিডব্যাক বা অন্যান্য ব্যবহারকারী অধিক রিপোর্ট বা ব্লক করলে একাউন্ট ব্যান করা হয়ে থাকে। উক্ত রিপোর্টে আরো জানানো হয় যে রিপোর্ট পাওয়ার পর একাউন্ট ও ব্যবহারকারীর একটিভিটির উপর নজর রাখা হয়। এরপর যদি সিস্টেম কোনো ধরনের নিয়মবহির্ভুত কার্যকলাপ সনাক্ত করতে পারে, তবে একাউন্ট ব্যান করে দেয়।
এই জনপ্রিয় মোবাইল মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি মূলত মেশিন লার্নিং ও বিভিন্ন ধরনের এনালিটিক্যাল টুল ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্ম এর খারাপ ব্যবহারকারীদের ব্যান করে দেয়। পূর্বে মার্চ মাসে প্রায় ১৮লাখ একাউন্ট ব্যান করা হয় হোয়াটসঅ্যাপে, আবার ফেব্রুয়ারিতে ১৪.২৬লাখ একাউন্ট ব্যান করা হয়।
এর আগে জানুয়ারী মাসেও প্রায় ১৮.৫৮লাখ একাউন্ট ব্যান করে প্ল্যাটফর্মটি। ২০২১সালেও অসংখ্য একাউন্ট ব্যান করা হয় হোয়াটসঅ্যাপ থেকে। ২০২১সালের ডিসেম্বর মাসে ২০.৭৯লাখ একাউন্ট ব্যান করা হয় ও একই বছরের নভেম্বর মাসে ১৭.৫লাখ একাউন্ট ব্যান করা হয়।
এসব নিয়ম গতবছর থেকে কার্যকর করা হয় হোয়াটসঅ্যাপে। প্রতি মাসে প্রায় ৫০লাখের অধিক অভিযোগ রিপোর্ট করে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীগণ। প্রতিমাসে এসব অভিযোগের উপর ভিত্তি করে একটি রিপোর্ট পাবলিশ করে হোয়াটসঅ্যাপ যেখানে এই উল্লেখিত সমস্যা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। মূলত ব্যবহারকারীদের অভিযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে হোয়াটসঅ্যাপ।
কেন বন্ধ হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট?
ক্ষতিকর কাজ বলতে স্প্যামিং, প্রতারণা করা, শিশু নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধকে বোঝানো হয়। তাই হোয়াটসঅ্যাপে এসব কাজ করলে একাউন্ট ব্যান বা চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পোস্টে উল্লিখিত যেসব একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলো বিভিন্নভাবে হোয়াটসঅ্যাপের অপব্যবহার করেছে। স্থানীয় আইন এবং হোয়াটসঅ্যাপের নীতিমালা ভঙ্গ করলে সেসব একাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
হোয়াটসঅ্যাপ একটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড প্ল্যাটফর্ম। অর্থাৎ প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীদের আদানপ্রদান করা কোনো মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি দেখতে পায়না। তাই প্ল্যাটফর্ম মনিটরিং করতে বিভিন্ন ধরনের বিহেভিয়রেল সিগনাল ও মানুষের অভিযোগের উপর নির্ভর করে ক্ষতিকর একাউন্টগুলো ব্যান করে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ কতৃপক্ষ।
উল্লেখিত তথ্যের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ এর এআই ইউজার রিপোর্ট, প্রোফাইল ফটো, গ্রুপ ফটো ও ডেসক্রিপশন, ইত্যাদি আনএনক্রিপটেড তথ্যের উপর নির্ভর করে ক্ষতিকর একাউন্ট ডিটেক্ট করতে। নিজেদের এআই টুলসমূহ ও ইন-হাউস রিসোর্স এর সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি থেকে ক্ষতিকর ব্যবহারী নিধনের কার্যক্রমে সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করছে জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি।