ভিপিএন দিয়ে কি ফ্রী নেট চালানো যেতে পারে?
ভিপিএন দিয়ে কি ফ্রী নেট চালানো যেতে পারে? বা নেটের গতি বাড়ানো যেতে পারে?
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, “ভাই, ভিপিএন দিয়ে কিভাবে ফ্রী নেট চালানো যেতে পারে?” — তো আমি এই আর্টিকেলে ভিপিএন দ্বারা ফ্রী নেট ব্যাবহার করা বা নেটের গতি কি আদৌ বাড়ানো যাবে কিনা এই ব্যাপারে আলোচনা করবো। আপনাকে বলে রাখছি, আজকের এই টপিক বেশ মজাদার হতে চলেছে, বিশেষ করে আপনি যদি ছোটবেলায় প্রক্সি ব্যাবহার করে ফ্রী নেট চালিয়ে থাকেন তো আজকের আলোচনায় বেশ মজার স্মৃতিচারণ হতে চলেছে!
ভিপিএন দিয়ে ফ্রী নেট
উত্তরটি আসলে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড নয়। হ্যাঁ আপনি ভিপিএন দ্বারা ফ্রী নেট ব্যাবহার করতে পারবেন। আবার না, আপনি ভিপিএন দ্বারা ফ্রী নেট চালাতে পারবেন না। আসলে ভিপিএন ব্যাবহার করে ফ্রী নেট চলবে কি চলবে না সেটা নির্ভর করে অনেক গুলো ফ্যাক্টরের উপরে। আমি যদি ফ্যাক্টর গুলো গভীর ভাবে আলোচনা করি, সেগুলো অনেক টেকনিক্যাল লেভেলে চলে যাবে, যেটা আমার অনেক পাঠক বন্ধুদের বুঝতে সমস্যা হতে পারে। তাই পানির মত সহজ ধারণা দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করবো।
এখন কথা হচ্ছে ফ্রী নেট চলেই বা কিভাবে? মানে অপারেটররা কি এতোই পাগল যে আপনাকে ফ্রী নেট চালানোর সুযোগ তৈরি করে রাখে? — এই প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর পেতে আপনাকে জানতে হবে অপারেটররা আপনাকে ইন্টারনেট সংযোগ কিভাবে প্রদান করে।
বেশিরভাগ অপারেটরদের এক বিশেষ ফায়ারওয়াল সিস্টেম থাকে। দেখুন, ওয়াইফাই ব্যাবহার করার জন্য আপনাকে কি করতে হয়? অবশ্যই নেটওয়ার্ক এ কানেক্ট হওয়ার জন্য আপনার সঠিক ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড জানতে হয়, রাইট? কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক এ কানেক্ট কানেক্ট হওয়ার জন্য কিন্তু কোন পাসওয়ার্ড প্রবেশ করাতে হয় না, জাস্ট সিম লাগানো থাকলেই আপনি নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত হতে পারেন।
কিন্তু ওয়াইফাই এর মতো জাস্ট কানেক্ট হলেই কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক এ ইন্টারনেট অ্যাকসেস শুরু হয়ে যায় না। টেকনিক্যাল ভাবে আপনি কানেক্টেড থাকলেও আপনার ইন্টারনেট অ্যাকসেস ব্লক করে রাখা হয় বিশেষ ফায়ারওয়াল দ্বারা। এখন আপনি তখনই ইন্টারনেট এর সাথে সম্পূর্ণ রূপে কানেক্টেড হতে পারবেন যদি কোন ডাটা প্যাক ক্রয় করেন।
ডাটা প্যাক ক্রয় করার পরে কিন্তু কোন ব্ল্যাক ম্যাজিক হয় না। জাস্ট ফায়ারওয়াল এ এক নির্দিষ্ট পরিমাণে লিমিট সেট করে দিয়ে আপনার কানেকশন ওপেন করে দেওয়া হয়। ধরুন, আপনি ১ জিবি ডাটা কিনেছেন, তো ফায়ারওয়ালে ১ জিবি ডাটা লিমিট তৈরি করে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ওপেন করে দেওয়া হয়। মানে ১ জিবি ডাটা ট্রানস্ফার শেষে আপনার কানেকশন আবার কেটে দেওয়া হবে আর আপনাকে নতুন প্যাক কিনতে হবে।
যাইহোক, ব্যাপারটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আসলে ডাটা ফাটা সবই ভেলকি, মূল ব্যাপার হচ্ছে ওদের ব্যাকএন্ড এ কাজ করা সেই বিশেষ ফায়ারওয়াল সিস্টেম! এখন এই সব কিছুর সাথে ভিপিএন আর ফ্রী নেটের সম্পর্কটা কি?
দেখুন, প্রত্যেকটা অপারেটরের কিছু না কিছু ফ্রী সার্ভিস থাকে যেগুলোতে ডাটা চার্জ করা হয় না, মানে ঐ বিশেষ ওয়েবসাইট বা অ্যাপ এক্সেস করতে ফায়ারওয়াল আপনাকে বাধা প্রদান করে না। ধরুন, আপনি রবি ব্যাবহার করছেন, সেক্ষেত্রে তাদের মাই রবি অ্যাপ কিংবা তাদের ওয়েবসাইট (robi.com.bd) ডাটা ব্যালেন্স না থাকলেও এক্সেস করতে পারবেন। আপনার ডাটা ফুরিয়ে গেলে আপনি নিশ্চয় অ্যাপ থেকে নতুন প্যাক কেনেন, কিন্তু অ্যাপে এক্সেস নিতেও তো ইন্টারনেট জরুরী তাই না? তাই অপারেটররা নিজেদের এমন কিছু সার্ভিস ফ্রী করে রাখে।
এখন আসল খেলা কিন্তু এখানেই! ঔ ফ্রী সার্ভার গুলোতে ফায়ারওয়ালে কোন রেস্ট্রিকশন থাকে না। আচ্ছা, কেমন হতো যদি ফায়ারওয়াল এর চোখে ফাঁকি দেওয়া যেতো। মানে আমি ওপেন ইন্টারনেট ই ব্যাবহার করবো কিন্তু ফায়ারওয়াল মনে করবে আমি তাদের ফ্রী সার্ভারেই পড়ে রয়েছি। হ্যাঁ, এই কনসেপ্ট এর উপরেই ভিপিএন বা প্রক্সি ব্যাবহার করে ফ্রী নেট চালানো হয়!
আপনি যে অপারেটর ব্যাবহার করে ফ্রী নেট চালাতে চান প্রথমে তার ফ্রী সার্ভার খুঁজে বের করতে হবে। এখন সব ফ্রী সার্ভারে কিন্তু এটা কাজ করবে না, অপারেটররা এখন অনেক সেয়ানা হয়ে গেছে। তারা ফায়ারওয়াল কে আরো উন্নত করে ফেলেছে। ২০১১-১২ সালের দিকে সকল অপারেটর গুলোর ফ্রী সার্ভারে এরকম সমস্যা ছিল, বিশেষ এক প্রক্সি ব্রাউজার তৈরি করে ফ্রী সার্ভার গুলোকে কাজে লাগিয়ে ফ্রী নেট সুবিধা পাওয়া যেতো। ওদের সিস্টেম মনে করতো আপনি কেবল তাদের ফ্রী সার্ভারের সাথেই যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু আপনি আসলে ওদের সার্ভারকে প্রক্সি রূপে ব্যাবহার করে ওপেন ইন্টারনেট ইউজ করছেন।
ভিপিএন ঠিক একই স্টাইলে কাজ করে। আপনি ভিপিএন সার্ভারের সাথে কানেক্ট হলে আপনার সকল ট্রাফিক ভিপিএন সার্ভারের মধ্যে দিয়েই যাওয়া আসা করে। আপনার অপারেটর দেখতে পায় আপনি সারাদিন এক সার্ভারেই পরে রয়েছেন, কিন্তু পেছনের দিক দিয়ে আপনি দুনিয়ার সকল ওয়েবসাইট আরামে ভিজিট করতে থাকেন। এখন আপনার অপারেটরের কোন ফ্রী সার্ভারকে যদি ভিপিএন সার্ভারের প্রক্সি হিসেবে ব্যাবহার করানো যায়, তাহলে আপনার অপারেটরের ফায়ারওয়াল সহজেই বাইপাস হয়ে যাবে। মানে রবি মনে করবে আপনি সারাদিন (robi.com.bd) ওয়েবসাইটেই বসে রয়েছেন, কিন্তু আপনি গোপন টানেল দিয়ে দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর আপনার ডাটা চার্জ ও লাগছে না। এক্ষেত্রে আপনার ডাটা কিন্তু ঠিকই ব্যবহৃত হচ্ছে, আপনার অপারেটরও জানতে পারছে আপনি জিবি উপরে জিবি ডাটা ব্যবহার করছেন, কিন্তু সিস্টেম আপনাকে সেটা করতে এলাও করছে কেননা আপনি তাদের নজরে তাদের ফ্রী ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন।
তো ভিপিএন ব্যাবহার করে আপনি কেবল তখনই ফ্রী নেট ব্যাবহার করতে পারবেন যদি ঐ অপারেটরের এমন কোন ফ্রী সার্ভার থাকে। তাছাড়া ভিপিএন নিজে থেকে ফ্রী ইন্টারনেট দিতে সক্ষম নয়। অনেক অপারেটর অনেক কম দামে সোস্যাল প্যাক বিক্রি করে থাকে। এখন ঐ প্যাক গুলো পারচেস করে সোস্যাল সাইট কে প্রক্সি হিসেবে কাজে লাগিয়ে অনেকে সোস্যাল ডাটা প্যাক ব্যাবহার করে ওপেন ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারেন। — তো আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল ভাবে না জানলেও বেসিক ব্যাপার গুলো এতক্ষণে বুঝে গেছেন।
ভিপিএন কি নেটের গতি বাড়াতে পারে?
এর উত্তরটিও আগের উত্তরের মতোই “হ্যাঁ” আবার একই সাথে “না”। যদি সাধারণ ভাবে নরমাল ভিপিএন কানেক্ট করেন সেক্ষেত্রে আপনার ইন্টারনেট স্পিড খানিকটা কমে যাবে। কেননা প্রত্যেকবার আপনার রিকোয়েস্ট ভিপিএন সার্ভার হয়ে তারপরে আপনার কাছে আসবে বা আপনার রিকোয়েস্ট করা ওয়েব সার্ভারে কাছে যাবে। এতে পিং আরো হাই হবে।
এখন ভিপিএন ব্যাবহার করেও গতি বাড়ানো যেতে পারে। যদি আপনার আইএসপি এর এমন কোন সার্ভার জানা থাকে যেটার স্পিড সাধারণ নেটের স্পীডের চেয়ে বেশি তাহলে ঔ সার্ভারকে প্রক্সি সার্ভার বানালে আপনার ইন্টারনেটের স্পীড অনেক গুনে বেড়ে যেতে পারে।
আচ্ছা চলুন বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই, আমি উদাহরণ দিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের যাদের আইএসপি বিডিআইএক্স সাপোর্ট করে তারা ভালো করেই জানেন যে, সাধারণ ইন্টারনেট থেকে বিডিআইএক্স এর স্পীড বেশি হয়ে থাকে। যেমন আপনার সাধারণ নেট স্পিড যদি ২০ মেগাবিট হয়ে থাকে, তো বিডিআইএক্স ৫০ মেগাবিট হয় (এটা নির্দিষ্ট নয়, আপনার আইএসপি এর উপরে স্পিড নির্ভর করে)।
এখন আপনি যদি কোন বিডিআইএক্স সার্ভারে ভিপিএন হোস্ট করেন আর সেই ভিপিএন কে আপনার কম্পিউটারে কানেক্ট করেন সেক্ষেত্রে আপনার সকল ইন্টারনেট ট্রাফিক বিডিআইএক্স এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। আপনার আইএসপি মনে করবে আপনি কোন বিডিআইএক্স সার্ভারেই কানেক্টেড রয়েছেন, কিন্তু উল্টা পথে আপনি দুনিয়ার সবকিছুই ভিজিট করতে পারবেন তাও ৫০ মেগাবিটের বিডিআইএক্স স্পিড এ!
তো বুঝলেন ব্যাপার টা? — এখন অনেকেই আমাকে বলবেন, “ভাই, কিভাবে বিডিআইএক্স এর স্পীড এ সকল ইন্টারনেট ব্যাবহার করবো?” — ঠিক আছে, কমেন্ট সেকশনে যদি ভালো সাড়া পাই, আমি দ্রুতই একটি টিউটোরিয়াল পাবলিশ করে ফেলবো। অনেকেই রয়েছেন যাদের সাধারণ ইন্টারনেট স্পীড মাত্র ৫-১০ মেগাবিট কিন্তু বিডিআইএক্স স্পিড অনেক বেশি! তাদের জন্য সত্যি এটা গেম চেঞ্জিং ফ্যাক্টর। তবে এই সিস্টেম গুলো মোটেও আইএসপিদের পছন্দের কোন ব্যাপার নয়, কেননা বেশি স্পীড দেওয়ার কথা বলেই তারা বেশি চার্জ করে থেকে, এক্ষেত্রে আপনি বেশি স্পীড আনলক তো করে ফেলছেন কিন্তু তারা তো আর বেশি কামাতে পারলো না!