প্রতিশব্দ কাকে বলে? প্রতিশব্দের উদাহরণ ও প্রয়োজনীয়তা।
একটি শব্দের একই অর্থ বুঝাবার জন্য বাংলা ভাষায় একাধিক শব্দ রয়েছে, এদেরকে প্রতিশব্দ বলে। প্রতিশব্দকে সমার্থক শব্দও বলা হয়। যেমন— আকাশের প্রতিশব্দ হচ্ছে- গগন, অম্বর, আসমান ইত্যাদি।
প্রতিশব্দের প্রয়োজনীয়তা
১। ভাষার সৌন্দর্য ও যথার্থ অর্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিশব্দের ব্যবহার একান্ত জরুরি।
২। শব্দের অর্থ এবং বাক্যাদির ব্যাখ্যার সময় প্রতিশব্দের প্রয়োজন হয়।
৩। ভাষাকে সুন্দর, মার্জিত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলতে প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়।
৪। বার বার একই শব্দ ব্যবহার না করে তার প্রতিশব্দ ব্যবহার করলে রচনা সরল ও সুন্দর হয়।
৫। প্রতিশব্দগুলো উত্তমরূপে জানা থাকলে রচনার পুনরাবৃত্তি দোষ ঘটে না এবং ইচ্ছে ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয়।
নিচে কিছু শব্দের প্রতিশব্দ দেওয়া হলো :
অকস্মাৎ : আচমকা, হঠাৎ, সহসা, অতর্কিত, দৈবাৎ।
অকাল : অসময়, অবেলা, দুর্দিন, অশুভ সময়, কুক্ষণ, দুঃসময়।
অক্ষয় : চিরন্তন, ক্ষয়হীন, অশেষ, অনন্ত, অনিঃশেষ, অন্তহীন, অন্তবিহীন, অবিনাশী।
অতিথি : মেহমান, অভ্যাগত, আগন্তুক, নিমন্ত্রিত, আমন্ত্রিত, কুটুম।
অদ্ভুত : উদ্ভট, আজব, আজগুবি, তাজ্জব, বিস্ময়কর, আশ্চর্য, অভিনব, অস্বাভাবিক।
অনেক : বেশি, বহু, প্রচুর, প্রভৃত, পর্যাপ্ত, অধিক, অত্যন্ত, অতিশয়, অতিরিক্ত, অত্যধিক, বাড়তি, দেদার।
অন্ধকার : আঁধার, তিমির, তমসা।
অবকাশ : সময়, ফুরসত, অবসর, ছুটি, সুযোগ।
অভাব : অনটন, দারিদ্র্য, দৈন্য, দীনতা, দুরবস্থা, গরিবি, অসচ্ছলতা, অপ্রাচুর্য।
অলস : আলসে, নিষ্ক্রিয়, নিষ্কর্মা, অকর্মা, শ্রমকাতর, অকেজো, অকর্মণ্য, শ্রমবিমুখ, নিরুদ্যম, জড়প্রকৃতি।
অশ্ব : ঘোড়া, ঘোটক, হয়, তুরগ, তুরঙ্গম।
আইন : বিধান, কানুন, ধারা, নিয়ম।
আকাশ : গগন, আসমান, অম্বর, ব্যোম, নভ, অন্তরীক্ষ, দ্যুলোক, নীলিমা।
আগুন : অগ্নি , অনল, বহ্নি, পাবক, হুতাশন।
আনন্দ : খুশি, আমোদ, মজা, পুলক, হর্ষ, আহ্লাদ, ফুর্তি, সন্তোষ, পরিতোষ, প্রমোদ, উল্লাস, উচ্ছ্বাস।
ইচ্ছা : আকাঙ্ক্ষা, আশা, অভিলাষ, প্রার্থনা, চাওয়া, স্পৃহা, অভিপ্রায়, সাধ, অভিরুচি, প্রবৃত্তি,মনোরথ, ঈপ্সা, অভীপ্সা, বাসনা, কামনা, বাঞ্ছা।
উত্তম : শ্রেষ্ঠ, সর্বশ্রেষ্ঠ, ভালো, উদ্ধৃষ্ট, প্রকৃষ্ট, সেরা, অতুলনীয়, প্রধান।
একতা : ঐক্য, মিলন, একত্ব, অভেদ, অভিন্নতা।
কঠিন : শক্ত, দৃঢ়, কঠোর, কড়া, জটিল, রুক্ষ।
কথা : উক্তি, বাক্য, বচন, কথন, বাণী, ভাষণ, বিবৃতি, জবান, বুলি, বোল, বাক।
কন্যা : মেয়ে, দুহিতা, আত্মজা, নন্দিনী, তনয়া, পুত্রী, ঝি।
কপাল : ললাট, রাত, ভাল, অদৃষ্ট, ভাগ্য, নিয়তি, নসিব।
কবুতর : কপোত, পায়রা, পারাবত, নোটন।
কষ্ট : যন্ত্রণা, দুঃখ, ক্লেশ, আয়াস, পরিশ্রম, মেহনত।
কান : কর্ণ, শ্রবণ, সুতি, শ্রবণেন্দ্রিয়।
কান্না : ক্রন্দন, কাঁদা, রোদন, অশ্রুপাত।কিরণ : রশ্মি, শিখা, আলোকচ্ছটা, কর, প্রভা, দীপ্তি, জ্যোতি, অংশু।
কুল : বংশ, গোত্র, গোষ্ঠী, জাত, বর্ণ।
কূল : তীর, তট, বেলাভূমি, সৈকত, ধার, বালুকাবেলা, কিনারা, পুলিন, পাড়।
খবর : সংবাদ, বার্তা, তথ্য, সমাচার, বিবরণ, সন্ধান, বৃত্তান্ত, খোঁজখবর।
খাদ্য : খাবার, খানা, ভোজ্য, ভক্ষ্য, আহার্য, অন্ন, রসদ।
খারাপ : মন্দ, নিকৃষ্ট, দুষ্ট, নষ্ট, অভদ্র, অশ্লীল।
খোঁজ : সন্ধান, অন্বেষণ, অনুসন্ধান, খোঁজা, তালাশ।
গভীর : অগাধ, অতল, গহন, প্রগাঢ়, নিবিড়।
গৃহ : বাড়ি, ঘর, আলয়, ভবন, নিলয়, নিকেতন, সদন, আগার, আবাস, বাটি, কুটির।
চাঁদ : চন্দ্র, শশী, শশধর, শশাঙ্ক, বিধু, সোম, নিশাকর, সুধাংশু, সুধাকর, ইন্দু, সিতাংশু, হিমাংশু, মৃগাঙ্ক।
চুল : কেশ, অলক, চিকুর, কুন্তল, কবরী।
চোখ : চক্ষু, নয়ন, আঁখি, অক্ষি, নেত্র, লোচন।
জন্ম : উৎপত্তি, উদ্ভব, সৃষ্টি, ভূমিষ্ঠ, জনম, আবির্ভাব।
ঝড় : ঝঞা, তুফান, সাইক্লোন, ঝটিকা, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়।
ঝোঁক : টান, প্রবণতা, আকর্ষণ।
ঠিক : যথাযথ, সত্য, সঠিক, যথার্থ, উপযুক্ত, নির্ভুল, ন্যায্য, ভালো।
ঢেউ : তরঙ্গ, কল্লোল, উর্মি, বীচি, হিল্লোল, লহরী।
তৃষ্ণা : পিপাসা, তিয়াসা, তেষ্টা, আকাঙ্ক্ষা।
তৈরি : গঠন, নির্মাণ, গড়া, বানানো, প্রস্তুত।
দয়া : অনুগ্রহ, করুণা, কৃপা, অনুকম্পা, মায়া।
দলিল : নথি, চুক্তিপত্র, কাগজপত্র, পাট্টা, দস্তাবেজ।
দিন : দিবস, দিবা, অহ, অহ্ন, বার, রোজ, বাসর, অষ্টপ্রহর।
দেহ : শরীর, গা, গাত্র, বপু, তনু, অঙ্গ, অবয়ব, কাঠামো, আকৃতি।
নতুন : নবীন, আনকোরা, আধুনিক, অধুনা, অবচিীন।
নদী : নদ, গাঙ, স্রোতস্বিনী, তটিনী, প্রবাহিনী, নিঝরিণী, কল্লোলিনী।
নারী : মানবী, মহিলা, স্ত্রী, স্ত্রীলোক, মেয়ে, ললনা, অঙ্গানা, বনিতা।
নিত্য : সতত, সর্বদা, প্রত্যহ, নিয়মিত, চির, চিরস্থায়ী, অক্ষয়, অনন্ত, রোজ।
পদ্ম : কমল, উৎপল, পঙ্কজ, কুমুদ, কুবলয়, শতদল, অরবিন্দ, রাজীব, নলিনী, সরোজ।
পর্বত : পাহাড়, অদ্রি, ভূধর, গিরি, শৈল, অচল।
পাখি : পক্ষী, বিহগ, বিহঙ্গ, খগ, খেচর, চিড়িয়া, পাখপাখালি।
পাথর : পাষাণ, প্রস্তর, শিলা, উপল, অশ্ম, কঙ্কর।
পানি : জল, সলিল, নীর, পয়ঃ, বারি, অপ, উদক, জীবন, অম্বু।
পুত্র : ছেলে, আত্মজ, নন্দন, দুলাল, সুত, তনয়, খোকা, কুমার।
পৃথিবী : জগৎ, ভুবন, সংসার, বিশ্ব, ধরা, ধরণী, ধরিত্রী, বসুমতী, বসুন্ধরা, পৃথ্বী, দুনিয়া, ভূ, ভূমণ্ডল, মর্ত্য, বসুধা, অবনী, মহী, মেদিনী, ক্ষিতি।
বন : অরণ্য, জঙ্গল, কানন, বনানী, বনবাদাড়, কুঞ্জ, কান্তার, বিপিন, অটবী।
বাতাস : বায়ু, হাওয়া, পবন, সমীর, সমীরণ, অনিল, মরুৎ, প্রভঞ্জন।
বিদ্যুৎ : তড়িৎ, বিজলি, বিজুরি, অশনি, ক্ষণপ্রভা, সৌদামিনী, দামিনী, চপলা।
বিবাহ : বিয়ে, পরিণয়, পাণিগ্রহণ, উদ্বাহ, নিকা, শাদি।
বৃক্ষ : গাছ, তরু, দুম, শাখী, পাদপ, মহীরুহ, উদ্ভিদ।
ব্যবধান : ফাঁক, ছিদ্র, অন্তর, তফাত, ভেদ, পার্থক্য।
মন : অন্তর, দিল, পরান, চিত্ত, হৃদয়, অঃকরণ, প্রাণ, অন্তরাত্মা।
মা : জননী, মাতা, মাতৃ, মাতৃকা, আম্মা, গর্ভধারিণী, জন্মদাত্রী, প্রসূতি।
মৃত্যু : মরণ, ইন্তেকাল, বিনাশ, নিপাত, পরলোকগমন, লোকান্তর, চিরবিদায়, দেহত্যাগ, শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ, ইহলীলা-সংবরণ, পঞ্চত্বপ্রাপ্তি।
মেঘ : জলদ, জলধর, নীরদ, বারিদ, ঘন, জীমূত, অভ্র, অম্বুবাহ।
যুদ্ধ : লড়াই, সংঘর্ষ, সংগ্রাম, সমর, যুদ্ধবিগ্রহ, রণ, সংঘাত।
রাজা : নৃপতি, নৃপ, সম্রাট, বাদশাহ্, নৃপেন্দ্র, নরপতি, ভূপতি, ভূপাল।
রাত : রাত্রি, রজনী, নিশি, নিশা, নিশীথ, নিশীথিনী, যামিনী, শর্বরী, বিভাবরী।
রানি : মহিষী, সম্রাজ্ঞী, বেগম, রাজ্ঞী, রাজপত্নী।
সমুদ্র : সাগর, সিন্ধু, সায়র, দরিয়া, জলধি, অকূল, পাথার, বারিধি, রত্নাকর, নীলাম্বু, পয়োধি, বারীন্দ্র, অর্ণব, পারাবার।
সাপ : সর্প, অহি, ফণী, নাগ, ভুজগ, ভুজঙ্গ, আশীবিষ, উরগ, বিষধর, পন্নগ।
সিংহ : কেশরী, পশুরাজ, মৃগেন্দ্র, মৃগরাজ।
সুন্দর : মনোরম, মনোহর, শোভন, সুদৃশ, চারু, রমণীয়, রম্য, কমনীয়, কান্তিমান, লাবণ্যময়, সুদর্শন, ললিত।
সূর্য : রবি, তপন, ভানু, ভাস্কর, আদিত্য, সবিতা, প্রভাকর, দিবাকর, বিভাবসু, দিনমণি, মার্তণ্ড, অংশুমালী, অরুণ।
স্ত্রী : পত্নী, ভার্যা, সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী, দারা, জায়া, বধূ, বউ, বিবি, বেগম, গৃহিণী।
স্বর্ণ : সােনা, সুবর্ণ, কাঞ্চন, কনক, হিরণ, হিরণ্য, হেম।
স্বামী : পতি, কান্ত, নাথ, বল্লভ, দয়িত।
হাত : হস্ত, কর, বাহু, ভুজ, পাণি।
হাতি : গজ, হস্তী, করী, দ্বিপ, বারণ, মাতঙ্গ, কুঞ্জর, দন্তী, দ্বিরদ, পিল।
হীন : নীচ, অধম, নিন্দনীয়, অবনত, গরিব, অক্ষম, শূন্য, ক্ষীণ।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১। ‘অগ্নি’ শব্দের প্রতিশব্দ কোনগুলো?
ক) অংশু, জ্যোতি
খ) অতি, অতীব
গ) অংশু, কর
ঘ) বহ্নি, হুতাশন
২। ‘আশীবিষ’ অর্থ কী?
ক) ভুজঙ্গ খ) মার্তণ্ড
গ) হুতাশন ঘ) মাতঙ্গ
উত্তরঃ-
১ : ঘ); ২ : ক);
আরো পড়ুনঃ-
১। শব্দ কাকে বলে? ধ্বনি ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য কি? শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
২। পারিভাষিক শব্দ কাকে বলে? পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব।
৩। যুগ্ম শব্দ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? যুগ্ম শব্দের উদাহরণ।
৪। বিপরীত শব্দ কাকে বলে? বিপরীত শব্দের শ্রেণিবিভাগ ও প্রয়োজনীয়তা।