তথ্য প্রযুক্তি

পাবলিক রিলেশন কি? What is Public Relations in Bengali?

ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ সবাই চায়। সবাই চায় তার ব্যবসা আরো প্রসারিত হোক, নতুন ব্র্যান্ড ছড়িয়ে পড়ুক সবার কাছে, যারা প্রতিনিয়তই নতুন কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এমনটা হলে আপনাকে ধারণা রাখতে হবে পাবলিক রিলেশন বিষয়ে। সাধারণত পাবলিক রিলেশনকে সংক্ষেপে পিআর (PR) বলা হয়। পাবলিক রিলেশন বলতে বোঝানো হয় একটি প্রতিষ্ঠান জনসাধারণের সাথে কীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে তাকে। মানে ভোক্তা বা জনসম্পর্কের বিষয়টিকেই বলা হয় পাবলিক রিলেশন। একে বলা যায় কোনো কোম্পানির ব্র্যান্ডের তথ্য বিস্তৃত করে দেয়া, যাকে ব্র্যান্ডিংও বলা যায়। শুধু পার্থক্য হলো পিআরে জোর দেয়া হয় যোগাযোগ এবং খ্যাতির ওপর, আর অন্যদিকে ব্র্যান্ডিংয়ে নির্ভর করা হয় ভিজুয়াল উপাদানের ওপর, যেমন প্রতিষ্ঠানের লোগো। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে পিআর মানে শুধু প্রেস রিলিজ নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। আমরা আজ এ টিটোরিয়ালে পাবলিক রিলেশন সম্পর্কে জানবো।

মিডিয়া : মালিকানাধীন বনাম পেইড বনাম অর্জিত

পাবলিক রিলেশনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় মালিকানাধীন, পেইড বা পরিশোধিত এবং অর্জিত মিডিয়া। সবগুলোরই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য একই সুনাম বাড়ানো, তবে তাদের কাজ করার ধরন বা কৌশল আলাদা। লক্ষ্য অভিন্ন হলে তা অর্জনের উপায় ভিন্ন ভিন্ন। আর পাবলিক রিলেশনকে ভালোভাবে সম্পাদনের জন্য এই তিনটি কৌশলকেই ব্যবহার করা উচিত। ব্যবসায়ে প্রচার, প্রসার বা অন্য কোনো কারণে সৃষ্ট যেকোনো কনটেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকাই হচ্ছে মালিকানাধীন মিডিয়া। মালিকানাধীন মিডিয়ার উদ্দেশ্য বেশিরভাগই হয় একটি পিআর ক্যাম্পেইন তৈরি করা। এটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পিআর সম্পর্কিত মিডিয়ার প্রচারাভিযান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য কৌশল। পিআর সম্পর্কিত মিডিয়াগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে এ সম্পর্কিত মিডিয়ার ওপর মনোযোগ দেয়া উচিত। মালিকানাধীন মিডিয়াগুলো হতে পারে—

  • সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট
  • ব্লগ কনটেন্ট
  • ওয়েবসাইট কপি

পেইড মিডিয়া

বাজারজাতকরণ বা মার্কেটিং বিশ্বে কোনো কনটেন্টের প্রমোশনের জন্য পে করা মানে অর্থ ব্যয় করা একটি সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। আর নিজস্ব মিডিয়ার প্রমোশন করাও খুব কমন একটি প্র্যাকটিস। এগুলো যেসব উপায়ে করা যেতে পারে-

  • সামাজিক মিডিয়া বিজ্ঞাপন
  • ইনফ্লুয়েসার বিপণন
  • পে-পার-ক্লিক (পিপিসি)

যেহেতু বেশিরভাগ সামাজিক প্ল্যাটফর্মে এখন আর আগের মতো পোস্ট অর্গানিকভাবে রিচ হয় না, তাই আপনার পোস্ট যাদেরকে দেখাতে চান তাদের সামনে পৌছানোর খুব ভালো উপায় এর জন্য কিছু অর্থ ব্যয় করা।

অর্জিত মিডিয়া

এই পিআর ধরনের কৌশল মানুষের মুখে মুখে ছড়ানোর শব্দ থেকে আসে। এর মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডের রিচ বুস্ট করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এ উদ্দেশ্য অর্জিত হয় আপনার মালিকানাধীন বিষয়বস্তু থেকে অর্জিত মিডিয়ার মাধ্যমেই। কিন্তু অর্জন করা গণমাধ্যমে প্রচলিত পিআর কৌশলটি সবচেয়ে কঠিন। যেহেতু এটি পাওয়ার শর্ত হচ্ছে আগে আপনার কিছু করতে হবে। অনেক প্রচেষ্টা এবং কঠোর পরিশ্রম করে এটি পেতে হয়, তাই তো একে বলা হয় ‘অর্জিত’। বলা হয়, আপনার খ্যাতি গড়ে তোলার জন্য অর্জিত মিডিয়া হচ্ছে সেরা কৌশল। এ কৌশলের কয়েকটি উপায় হচ্ছে–

  • শিল্প ব্লগে রিভিউ লেখা
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকের প্রশংসাপত্র রাখা
  • একটি সার্চ ইঞ্জিনে হাই র‌্যাঙ্ক অর্জন

পাবলিক রিলেশন বনাম মার্কেটিং

পিআর ও মার্কেটিং তাদের কার্যক্রমের দিক দিয়ে একই রকম। তবে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। পাবলিক রিলেশনের প্রধান লক্ষ্য আপনার ব্র্যান্ডের সুনাম বাড়ানো। এমন যে এর ফলে সর্বদা বিক্রির ওপর প্রভাব পড়বে। এটি সাধারণত পরোক্ষভাবে ব্র্যান্ডের প্রমোট করে থাকে। আর তার জন্য যেসব কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন হয়, সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে প্রেস রিলিজ লেখা অথবা কোনো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইভেন্টে বক্তৃতা রাখা।

অন্যদিকে মার্কেটিং বা বাজারজাত করার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বিক্রি বাড়ানো। ব্যবসায়ের সম্পর্কে কারো মনোভাব পরিবর্তন আনা এর উদ্দেশ্য নয়। বিপণন কৌশল কীভাবে মুনাফা বাড়ানো যায় সেদিকে লক্ষ রাখে। পাবলিক রিলেশন ও ইন বাউন্ড মার্কেটিং এর সাথে বেশ মিল রয়েছে। এ দুটো উপায় ব্যবহার করা হয় সবচেয়ে ভালো ফলাফলটি নিয়ে আসার জন্য। কারণ, বলা হয় ক্রেতারা পণ্য নয় কেনেন ব্র্যান্ড। কেউ যদি মার্কেটিংয়ের কারণে আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়, তবে বুঝতে হবে তিনি ইতোমধ্যেই আপনার ব্র্যান্ডের সাথে সম্পৃক্ত (পিআরের মাধ্যমে) আছেন। এ কারণে কোনো ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে মুনাফার পরিমাণও বাড়তে থাকে। তাই বলা হয় মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশন একে অপরের পরিপূরক।

ইনবাউন্ড পাবলিক রিলেশন কি?

ইনবাউন্ড রিলেশনকে বলা হয় পিআরের ভবিষ্যৎ। এতে আছে পিআরের সবচেয়ে শক্তির জায়গা (কনটেন্ট) এবং মেজারমেন্টকে সমন্বিত করেছে। এতে করে আপনার প্রতিষ্ঠানের পাবলিক রিলেশনের রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (আরওআই) প্রমাণ করা সম্ভব হয়। ইনবাউন্ড সবার কাছে জনপ্রিয় হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে এতে ঠিক কোন উপাদানটি কাজ করছে, আর কোন উপাদানটি কাজ করছে না, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। আর এটি খুব দরকারি একটি বিষয়, কেননা, এর ফলে কনটেন্ট পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনার ব্যবসায়কে কাভারেজ দেয়া মাধ্যমগুলো থেকে ব্যাক লিঙ্ক সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয়, তাহলে ইনবাউন্ড পিআর অ্যাপ্রোচ এটিকে চিহ্নিত করতে পারবে। সেক্ষেত্রে এ বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার পূর্ণ সুযোগ থেকে যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button