পড়া মনে রাখার উপায়: পড়াশোনা মুখস্থ করার সময়ে অনেকেরই অভিযোগ থাকে যে, পড়া মনে থাকছে না।
আর, পড়া মুখস্থ করা আমাদের মতো অনেক পড়ুয়ার কাছেই কঠিন হতে পারে।
যেহেতু, স্কুল, কলেজ বা উনিভার্সিটির একাধিক ক্লাসগুলোর পড়া, মনে রাখার চেষ্টাও আবার অনেকের কাছে হতাশাজনক হয়ে ওঠে।
এই অবস্থায়, অনেক শিক্ষার্থীরাই ভাবে যে, তাদের পড়া মনে রাখার ক্ষমতা কম কিংবা স্মৃতিশক্তি কম।
কিন্তু, তা একেবারেই নয়!
পড়া মুখস্থ করা শুধুমাত্র বিশাল শক্তিশালী স্মৃতিশক্তি নিয়ে জন্মনো মানুষদের একার অধিকার নয়।
বরং, সঠিক মুখস্থ করার প্রশিক্ষণ থাকলে, সহজেই পড়াশোনা মনে রাখা সম্ভব।
অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের মতে, ভিজ্যুয়ালাইজেশন কৌশল শেখা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী কৌশল ব্যবহার করলে, বড় তথ্য নিমেষেই মনে রাখা সম্ভব।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব পড়ুয়ারা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী কৌশল ব্যবহার করে, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি ভালোভাবে পড়া মনে রাখতে পারে।
এই কৌশলগুলো কিন্তু আপনাকে আপনার স্মৃতি বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে।
আপনাকে এই পদ্ধতিগুলো দীর্ঘকাল ধরে কোনো তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
অবশেষে, এই ধরনের কৌশল বোঝার ও উচ্চভাবের চিন্তার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
Post Contents
পড়াশোনা মনে রাখার উপায় গুলো কি কি ?
ভিজ্যুয়াল ও স্থানিক স্মৃতিবৃদ্ধিকারী কৌশলগুলো ছাড়াও, আরও অনেক কৌশল রয়েছে, যেটা আপনার মস্তিষ্ককে তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করতে, ব্যবহার করতেই পারেন।
আর, আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো – পড়া মনে রাখার সেরা ৭টি উপায় নিয়ে।
১. প্রথমে তথ্য বোঝার চেষ্টা করুন:
আপনি যেই তথ্য বা পড়াশোনা বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারছেন, তা মুখস্থ করা আপনার কাছে অনেকটাই সহজ হবে।
তাই, কোনো কিছু বিনা-বুঝে মুখস্থ করার চেষ্টা না করে, আগে সেই পড়াগুলোকে ভালো করে, মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন।
তাহলে, দেখবেন যে, পড়া আগে বুঝে নিলে, আপনি সহজেই সেটা মুখস্থ করে নিতে পারছেন।
২. সংযোগ করার চেষ্টা করুন:
যে পড়াটা আপনি মুখস্থ করেছেন, সেটা এমন কিছুর সাথে সংযুক্ত করার চেষ্টা করুন, যেটা আপনি ইতিমধ্যেই জানেন।
নানান ধারণার সাথে মিলিয়ে দেওয়া পড়াশোনার তুলনায় সংযোগহীন তথ্যগুলো মনে রাখা অনেকটাই কঠিন।
আর, আপনি যদি কোনো তথ্যের সাথে আপনার নতুন পড়াগুলোকে সংযুক্ত না করতে পারেন, তাহলে খাপছাড়া কোনো সংযোগ করার চেষ্টা করুন।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি পারদের বয়েলিং পয়েন্ট ৩৫৬.৭ °C এই তথ্যটা মনে রাখার চেষ্টা করছেন।
এইবার, আপনার বাড়ির ল্যান্ডলাইনের শেষ চারটে নম্বরও হল ৩৫৬৭।
এক্ষেত্রে, আপনি আপনার ল্যান্ডলাইন ফোনটিকে ফুটন্ত পারদের মধ্যে ফেলে দেওয়ার কল্পনা করে, এই দুটি তথ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করুন।
এটি অবাস্তব শোনালেও পড়া মনে রাখার পক্ষে যথেষ্ট কার্যকরী।
৩. ঘুমোনোর আগে পড়ুন:
বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক তথ্য প্রক্রিয়া ও সংরক্ষণ করে।
তাই, ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে, তথ্য পর্যালোচনা করার চেষ্টা করলে দেখবেন যে, পড়াগুলো আপনার স্মৃতিতে রয়ে গেছে।
৪. নিজেই নিজেকে পরীক্ষা করুন:
আপনি যে তথ্যগুলো মনে রাখার চেষ্টা করছেন, তা ভালোভাবে মনে রাখতে গেলে নিজেই নিজের পরীক্ষা নিন।
শুধুমাত্র, নোটস বা পাঠ্যপুস্তককে বারবার না পড়ে, নিজেকে সেই পড়া-সংক্রান্ত কুইজের মতো প্রশ্ন করতে থাকুন।
শিক্ষার্থীরা মনে করে যে, তারা পড়া মনে রাখে বারবার পাঠ করে।
কিন্তু, কোনো কিছু বারবার না পড়ে নিজেকে সেই পড়া সম্পর্কে প্রশ্ন করুন, আর দেখুন, সেই পড়ার কোন জায়গাগুলো আপনি মনে করতে পারছেন না।
যে অংশগুলোকে মনে করতে পারছেন না, সেগুলো মেমরি কৌশলগুলো ব্যবহার করে পড়ার চেষ্টা করুন।
এছাড়াও, পড়া মুখস্থ করার কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন অপেক্ষা করে, তবেই নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, যদি মনে থাকে, তাহলে জানবেন, আপনার পড়া মুখস্থ হয়ে গেছে।
৫. পড়াগুলো লেখার চেষ্টা করুন:
লেখা আমাদের ভালোভাবে তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করে।
কারণ, আমাদের হাত ও মস্তিষ্কের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
তাই, ক্লাসে বসে লেকচার শোনার সময়ে রানিং নোটস লেখার চেষ্টা করুন।
আর, ক্লাস শেষ হলে সেই নোট আবার লিখুন বা পুনর্বিন্যাস করুন।
আপনি যখন পড়া মনে রাখতে চাইছেন, বা পড়াটা লিখছেন, তখন উচ্চস্বরে পড়ার চেষ্টা করে, পড়াটি কল্পনাও করুন।
৬. অর্থপূর্ণ গ্রুপ তৈরি করুন:
পড়া মুখস্থ করার জন্য একটা ভালো কৌশল হল – অর্থপূর্ণ গোষ্ঠী তৈরি করা; যা তথ্যগুলোকে সহজ করে তুলতে পারে।
ধরুন, আপনি নোবেল গ্যাস যথাক্রমে – নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), হিলিয়াম (He), রেডন (Rn), ওগানেসন (Og), ক্রিপ্টন (Kr) ও জেনন (Xe)- এগুলোর নাম মুখস্থ করতে চাইছেন।
এইবার, আপনি এই প্রতিটি গ্যাসের সাংকেতিক চিহ্নগুলোর প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে NAH-ROKX বলে মনগড়া একটা শব্দ বানালেন।
সুতরাং, এই শব্দটির একটা গোষ্ঠী তৈরী হল, এর ফলে আপনি সহজেই পড়া মুখস্থ করে নিতে পারলেন।
৭. স্মৃতিবিদ্যা ব্যবহার করুন:
স্মৃতিবিদ্যা হল এমন এক কৌশল – যা তথ্যকে স্মরণীয় করে তোলে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, মুঘল শাসকদের নাম মনে রাখার বেশ একটা প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে;
যেমন – বাবার (বাবর) হল (হুমায়ূন) আবার (আকবর) জ্বর (জাহাঙ্গীর) সারিল (শাহজাহান) ঔষধে (ঔরাঙ্গজেব)।
কিংবা, সরলের অঙ্কের BODMAS (Brackets, Orders, Division, Multiplication, Addition, Subtraction) রুলের কথাই মনে করে দেখুন না!
৮. নিজের সাথে কথা বলুন:
অদ্ভুত মনে হলেও, পড়া মুখস্ত করার ক্ষেত্রে নিজের সাথে কথা বলাটা একটা কার্যকরী পড়া তৈরী করার রাস্তা হতে পারে।
পড়াগুলো হাইলাইট বা বারবার পড়ার বদলে, জোরে জোরে পড়াগুলো নিয়ে নিজের সাথে আলোচনা করুন।
৯. মিলিয়ে-মিশিয়ে পড়ুন:
বিজ্ঞানের সংজ্ঞাগুলো মুখস্থ করার পরে, সাথে সাথে কয়েকটা অঙ্ক করে নিয়ে, তারপরেই ইতিহাসের ঐতিহাসিক তারিখ ও শালগুলো মুখস্থ করতে থাকুন।
এইভাবে, আবার আপনার বিজ্ঞান, অঙ্ক ও ইতিহাসের পড়াগুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পড়তে থাকুন।
প্রথমে এই পদ্ধতিটি বিভ্রান্তিকর মনে হলেও, একইভাবে পড়তে থাকলে পড়া তৈরী করা অনেকটাই সহজ হয়ে দাঁড়ায়।
১০. পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে পড়ুন:
অধ্যয়নের সময় যতটা সম্ভব পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার করুন।
এতে, আপনি আপনার মস্তিষ্কের আরও বেশি অংশ ব্যবহার করতে পারবেন ও পড়াগুলো ভালো করে মনে রাখতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি দৈহিক গঠনতন্ত্রের বিষয়ে পড়ছেন, তবে অ্যানাটমির মডেলগুলো বেছে নিন আর প্রতিটা অংশগুলোকে অনুভব করে উচ্চস্বরে তাদের নাম মুখস্থ করুন।
এগুলো ছাড়াও, এক্সারসাইজ করলে আপনার মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
এর ফলে, আপনি আপনার পড়া সহজেই মুখস্থ করতে পারেন।
এমনকি, ছবি, গান কিংবা জিঙ্গেল আপনার মস্তিষ্কের ডানদিকের অংশ ব্যবহার করে আপনাকে সমীকরণ ও তালিকার মতো জটিল জিনিস মনে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
আমাদের আজকের পড়া মনে রাখার উপায় গুলো নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।