নবম-দশম শ্রেণির ষষ্ঠ অধ্যায় : বস্তুর উপর তাপের প্রভাব
প্রশ্ন-৩। বাষ্পীভবন কয় পদ্ধতিতে সংঘটিত হতে পারে?
উত্তরঃ দুই পদ্ধতিতে।
প্রশ্ন-৪। ফারেনহাইট স্কেলে ঊর্ধ্ব স্থিরাংকের মান কত?
উত্তরঃ ফারেনহাইট স্কেলে ঊর্ধ্ব স্থিরাংকের মান 212°F।
প্রশ্ন-৬। 1°C বা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস কাকে বলে?
উত্তরঃ স্বাভাবিক চাপে গলন্ত বরফের এবং ফুটন্ত পানির তাপমাত্রার ব্যবধানের একশত ভাগের এক ভাগকে 1°C বা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে।
প্রশ্ন-৭। এক কেলভিন কাকে বলে?
উত্তরঃ পানির ত্রৈধবিন্দুর তাপমাত্রার 1/273.16 ভাগকে এক কেলভিন বলে।
প্রশ্ন-৮। কঠিন পদার্থের প্রসারণ কাকে বলে?
উত্তরঃ তাপ প্রয়োগ করলে কঠিন পদার্থ সবদিকেই প্রসারিত হয়। একে কঠিন পদার্থের প্রসারণ বলে।
তাপ প্রয়োগ করলে কঠিন পদার্থের অণুগুলোর কম্পন বৃদ্ধি পায় এবং আন্তঃআণবিক শক্তি কমে যায়। ফলে অণুগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব বেড়ে যায় এবং কঠিন পদার্থ প্রসারিত হয়।
প্রশ্ন-৯। আপেক্ষিক তাপ কাকে বলে?
উত্তরঃ 1kg ভরের কোনো বস্তুর তাপমাত্রা 1K বাড়াতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক তাপ বলে।
প্রশ্ন-১০। তাপধারণ ক্ষমতা কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো বস্তুর তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা বলে।
প্রশ্ন-১১। দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ কী?
উত্তরঃ 1 m দৈর্ঘ্যের কোনো কঠিন পদার্থের দণ্ডের তাপমাত্রা 1 K বৃদ্ধির ফলে যতটুকু দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় তাকে ঐ দণ্ডের উপাদানের দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ বলে।
প্রশ্ন-১২। পদার্থের তাপমাত্রিক ধর্ম কাকে বলে?
উত্তরঃ তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে পদার্থের যে ধর্মের পরিবর্তন হয় এবং যে পরিবর্তন সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করে তাপমাত্রা মাপা যায় সেটাকেই তাপমাত্রিক ধর্ম বলে।
প্রশ্ন-১৩। নিম্ন স্থিরাঙ্ক কী?
উত্তরঃ প্রমাণ চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ গলে পানি হয় অথবা বিশুদ্ধ পানি জমে বরফ হয় সেই তাপমাত্রাই নিম্ন স্থিরাঙ্ক।
প্রশ্ন-১৪। বরফ বিন্দু কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ চাপে যে তাপমাত্রায় এক টুকরা বরফ গলতে শুরু করে তাকে বরফ বিন্দু বলে।
প্রশ্ন-১৫। সুপ্ততাপ কাকে বলে?
উত্তরঃ তাপমাত্রার পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র একক ভরের কোনো পদার্থকে এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় রুপান্তরিত করতে প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণকে সুপ্ততাপ বলে।
প্রশ্ন-১৬। তরলের প্রকৃত প্রসারণ কাকে বলে?
উত্তরঃ তরল পদার্থকে পাত্রে না রেখে উত্তপ্ত করা সম্ভব হলে তরলের যে আয়তন প্রসারণ পাওয়া যেত তাকে তরলের প্রকৃত প্রসারণ বলে।
প্রশ্ন-১৭। ঘনীভবন কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো পদার্থের বায়বীয় অবস্থা হতে তরল অবস্থায় রূপান্তর হলো ঘনীভবন।
প্রশ্ন-১৮। পুনঃশিলীভবন কাকে বলে?
উত্তরঃ চাপ প্রয়োগ করে কোনো কঠিন পদার্থকে তরলে পরিণত করা এবং চাপ হ্রাস করে আবার কঠিন অবস্থায় পরিণত করার প্রক্রিয়াকে পুনঃশিলীভবন বলে।
প্রশ্ন-১৯। ভূ-তাপীয় শক্তি কী?
উত্তরঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছে উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরি। এ সকল আগ্নেয়গিরির তাপ ব্যবহার করে এখনো ব্যাপকভাবে শক্তি উৎপাদন করা যায় না। তবে কিছু স্থানে ভূ-প্রাকৃতিক কারণে এ তাপ হতে অল্প পরিমাণে শক্তি উৎপাদন করা যায়। এটিই ভূ-তাপীয় শক্তি।
প্রশ্ন-২০। বাষ্পায়নের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ যে কোনো তাপমাত্রায় তরলের শুধু উপরিতল থেকে ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাষ্পায়ন বলে।
প্রশ্ন-২১। প্লাজমা বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হলো প্লাজমা। এই প্লাজমা হলো অতি উচ্চ তাপমাত্রায় আয়নিত গ্যাস।
প্রশ্ন-২২। 4°C তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি কেন?
উত্তরঃ 4°C তাপমাত্রার পানিকে শীতল বা উত্তপ্ত যাই করা হোক না কেন। তা আয়তনে বৃদ্ধি পায়। তাই 4°C তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্ন-২৩। তাপধারণ ক্ষমতা ও আপেক্ষিক তাপের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন কর।
উত্তরঃ কোনো বস্তুর তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা বলে।
আবার, 1 kg ভরের কোনো বস্তুর তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর আপেক্ষিক তাপ বলে।
অতএব, তাপধারণ ক্ষমতা = ভর x আপেক্ষিক তাপ।
প্রশ্ন-২৪। শীতকালে কাপড় দ্রুত শুঁকায় কেন?
উত্তরঃ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে গেলে বাম্পায়ন দ্রুত হয়। শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে। ফলে শীতকালে ভেজা কাপড়ের পানি দ্রুত বাস্পীভূত হতে পারে। তাই শীতকালে কাপড় দ্রুত শুকায়।
প্রশ্ন-২৫। বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
উত্তরঃ বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
বাষ্পায়ন
- যেকোনো তাপমাত্রায় তরলের শুধুমাত্র উপরিতল থেকে ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাষ্পায়ন বলে।
- বাষ্পায়ন ঘটে সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রায় বা নিম্নতর তাপমাত্রায়।
স্ফুটন
- তাপ প্রয়োগে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তরলের সকল স্থান থেকে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে স্ফুটন বলে।
- স্ফুটন ঘটে তরলের স্ফুটনাঙ্কের তাপমাত্রায়।
প্রশ্ন-২৮। রেল লাইনে যেখানে দুইটি লোহার বার মিলিত হয় সেখানে ফাঁক থাকে কেন?
উত্তরঃ রেল লাইন ইস্পাতের তৈরি হয়। লাইনের ওপর দিয়ে যখন ট্রেন চলে তখন ঘর্ষণের কারণে এবং সূর্যের উত্তাপে লাইনের তাপমাত্রা অনেক খানি বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রার এই বৃদ্ধির ফলে ধাতব উপাদানে তৈরি রেল লাইন দৈর্ঘ্যে প্রসারিত হয়। এ সময় পাশাপাশি অবস্থিত দুটি লাইনের মাঝে ফাঁকা না থাকলে রেললাইন বাঁকা হয়ে যেতো এবং ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতো। এ কারণে রেললাইনে যেখানে দুটি লোহার বার মিলিত হয় সেখানে ফাকা থাকে।
প্রশ্ন-২৯। দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটির মাঝের তারকে টান টান করে সংযোগ দেওয়া হয় না কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটির মাঝের তারকে টান টান করে সংযোগ দেওয়া হয় না। কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বস্তুর দৈর্ঘ্য প্রসারণ ঘটে, আবার তাপমাত্রা হ্রাস পেলে দৈর্ঘ্য সংকোচন ঘটে। টান টান করে সংযোগ দেয়া হলে শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে তারের দৈর্ঘ্য আরো সংকুচিত হবে। ফলে খুঁটিদ্বয়ের উপর বল প্রযুক্ত হবে। এ অবস্থায় তার ছিড়ে যেতে পারে এবং ফলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকে।
প্রশ্ন-৩০। একটি কাচের পাত্রে পারদ রেখে উত্তপ্ত করা হলে, প্রথমে পারদের উচ্চতা কমে, তারপর আবার বাড়ে কেন?
উত্তরঃ একটি কাঁচ পাত্রে পারদ নিয়ে সেটাকে উত্তপ্ত করলে প্রথমে তাপ গ্রহণের ফলে কাঁচ পাত্রের কিছুটা প্রসারণ ঘটবে। এতে পাত্রে রাখা পারদের উচ্চতা কিছুটা কমবে। পাত্রের প্রসারণ সম্পন্ন হলে, প্রদত্ত তাপের জন্য পারদের প্রসারণ ঘটবে। ফলে, পারদের উচ্চতা বাড়তে থাকবে। সেজন্যই একটি কাঁচ পাত্রে পারদ রেখে তাপ দিলে প্রথমে পারদের উচ্চতা কমে, আবার পরবর্তীতে বাড়ে।
প্রশ্ন-৩১। 371K তাপমাত্রায় পানি ফুটানো সম্ভব- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ 371 K = (371 – 273)°C = 98°C = 100°C – 2°C
আমরা জানি, বায়ুচাপ 2.7 cm পরিমাণ হ্রাস পেলে পানির স্ফুটনাংক 1°C পরিমাণ হ্রাস পায়। সুতরাং বায়ুচাপ 2.7 cm × 2 = 5.4 cm পরিমাণ হ্রাস পেয়ে (76 cm – 5.4 cm) = 70.6 cm হলে পানির স্ফুটনাংক 2°C হ্রাস পাবে। তখন পানির স্ফুটনাংক হবে 98°C বা 371K। সুতরাং 37IK তাপমাত্রায় পানি ফুটানো সম্ভব।
প্রশ্ন-৩২। একই উচ্চতাবিশিষ্ট একটি বড় পাত্র ও একটি ছোট পাত্রে সমপরিমাণ পানি রাখলে, কোন পাত্রের পানি দ্রুত বাষ্পায়িত হবে এবং কেন?
উত্তরঃ পানির বাম্পায়ন এর উষ্ণতা, এর ওপর বায়ুর চাপ, বায়ুর শুষ্কতা, পানির উপরিতলের ক্ষেত্রফল ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। একই উচ্চতা বিশিষ্ট পানি একই স্থানে রাখা হলে বায়ুর চাপ, শুষ্কতা একই হয় কিন্তু পানির উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি হলে বেশি স্থান জুড়ে পানি বাষ্পায়িত হওয়ার সুযোগ পায়। একই পরিমাণ পানি বড় ও ছোট পাত্রে রাখলে বড় পাত্রের পানির উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি হয় বলে বড় পাত্রের পানির বাষ্পায়ন দ্রুত হয়।