দূষণ (Pollution) কাকে বলে? দূষণ কত প্রকার ও কি কি?
দূষণ কি বা কাকে বলে? (What is Pollution in Bengali/Bangla?)
যখন প্রাকৃতিক বা মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবেশের অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি ও ভারসাম্য নষ্ট করে, তখন তাকে দূষণ বলে। কিছু ক্ষতিকারক উপাদান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের পরিবেশ দূষিত করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গায় অপসারণ করা হয়, ফলে বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত হয়ে মানুষসহ বিভিন্ন জীবের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দূষণের প্রকারভেদ (Types of Pollution)
দূষণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন–
১। পানি দূষণ;
২। মাটি দূষণ;
৩। বায়ু দূষণ;
৪। শব্দ দূষণ;
১। পানি দূষণ (Water Pollution)
পানি দূষণ হল মানুষের কার্যকলাপের ফলে জলাশয়ে দূষণ ঘটা। জলাশয় বলতে হ্রদ, নদী, সমুদ্র, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং ভৌমজলকেই বোঝায়। স্বাভাবিক পরিবেশে পানিতে দূষণকারী পদার্থ উপস্থিত থাকলে তাকে পানি দূষণ বলা হয়। অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়, তবে তা জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে পারে। এর ফলে, ভাটির দিকে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা এই দূষিত জল পান এবং স্নানের কাজে অথবা সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারে। জলবাহিত রোগের প্রকোপে সারা বিশ্বে যত মানুষ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, তাদের সিংহভাগই ঘটে পানি দূষণের কারণে।
২। মাটি দূষণ (Soil Pollution)
প্রাকৃতিক অথবা মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে মাটির বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ বেড়ে বা কমে যাচ্ছে, যা পরিবেশ ও আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। মাটির এ ধরনের পরিবর্তনই মাটি দূষণ নামে পরিচিত। বর্তমানে মাটিকে আমরা বিভিন্নভাবে দূষিত করছি। প্লাস্টিক, পলিথিন, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও শিল্প বর্জ্য ইত্যাদি মাটিকে বিভিন্নভাবে দূষিত করছে। যার ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।
মাটি দূষণের কারণ : বর্তমানে আমরা মাটিকে বিভিন্নভাবে দূষিত করছি। মাটিতে প্লাস্টিক, পলিথিন, বিভিন্ন আবর্জনা, কীটনাশক, রাসায়নিক সার ইত্যাদি যুক্ত হওয়ার কারণে মাটি দিন দিন দূষিত হয়ে যাচ্ছে।
মাটি দূষণের উৎস : প্লাস্টিক, পলিথিন, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং শিল্পকারখানার বর্জ্য ইত্যাদি।
৩। বায়ু দূষণ (Air Pollution)
ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মেশার ফলে বায়ু দূষণ হয়। বায়ু দূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, পরিবেশ এবং সম্পদও নষ্ট হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে জলবায়ুর উপর এবং তা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনেরও কারণ হয়।
শিল্প, যানবাহন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং নগরায়ন বায়ু দূষণের কয়েকটি প্রধান কারণ। নানা কারণে বায়ু দূষণ ঘটে যার অনেকগুলিই আবার মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। মরুভূমি অঞ্চলে ধুলোঝড় এবং অরণ্যে বা ঘাসে আগুন লাগার ফলে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে রাসায়নিক ও ধুলিকণাজনিত দূষণ ঘটিয়ে থাকে।
৪। শব্দ দূষণ (Sound Pollution)
শব্দদূষণ বলতে মানুষের বা কোনো প্রাণীর শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী কোনো শব্দ সৃষ্টির কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বোঝায়। যানজট, কলকারখানা থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী এরকম তীব্র শব্দের উৎপত্তি হয়। মানুষ সাধারণত ২০-২০,০০০ হার্জের কম বা বেশি শব্দ শুনতে পায় না। তাই মানুষের জন্য শব্দদূষণ প্রকৃতপক্ষে এই সীমার মধ্যেই তীব্রতর শব্দ দ্বারাই হয়ে থাকে।
দূষণের প্রভাব (Effect of Pollution)
পানি দূষণের প্রভাব (Effect of air pollution)
পানি দূষণের প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো–
- দূষিত পানি পান করলে আমাশয়, ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ হয়।
- দূষিত পানিতে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বাঁচতে পারে না, ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
শব্দ দূষণের প্রভাব (Effect of water pollution)
- অতিরিক্ত শব্দ মানুষের হৃৎপিন্ডের স্বাভাবিক রক্ত চলাচলের ক্ষতি করে।
- অতিরিক্ত শব্দ মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়।
- এর ফলে মানুষের শ্রবণ শক্তি লোপসহ মানুষ আংশিক বা পুরোপুরি বধির হয়ে যেতে পারে।
- এর ফলে পরিপাক যন্ত্রের কাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে আলসার ও অন্যান্য অনেক পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
দূষণ রোধের উপায়
পানি দূষণ রোধের উপায়
পানি দূষণ রোধের উপায় হলো–
- পয়োনিষ্কাশন ও শিল্পবর্জ্য পানিতে না ফেলা।
- জমিতে অধিক রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করা।
- গরু, মহিষ, ছাগল নদীর পানিতে গোসল না করানো।
- বাঁশ, বেত, পাট পানিতে না ভেজানো।
- গৃহস্থালি বর্জ্য পানিতে না ফেলা।
- কাঁচা পায়খানার বর্জ্য যেন পানিতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা।
- যেকোনো মৃতদেহ মাটিতে ভালোভাবে পুঁতে রাখা।