তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কী? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব ও ব্যবহার।
তথ্য দেওয়া-নেওয়া, বাঁচিয়ে রাখা বা সংরক্ষণ করা আবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা, বিশ্লেষণ করা এবং নিজের কাজে ব্যবহার করার প্রযুক্তিই হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
অতীতে যে সব কাজ করতে দিনের পর দিন লেগে যেত, যে কাজগুলো ছিল নিরস, আনন্দহীন এবং কষ্টসাধ্য। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দরুন সেই সব কাজগুলোই হয়ে গেছে সহজ ও আনন্দময়। এতে কর্মীরা অধিক কর্মদক্ষ এবং কর্মমুখী হয়ে উঠছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিয়ে শুধু নিজেদের জীবনকে নয়, নিজেদের দেশটাকেও পাল্টে ফেলা সম্ভব। ফলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব। অর্থাৎ দেশকে সমৃদ্ধশালী ও উন্নত করতে এবং আমাদের জীবনকে সহজ করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
ব্যক্তিগত বা সামাজিকভাবে যোগাযোগ : শুধু মোবাইল ফোন দিয়েই আমরা আজকাল একে অন্যের সাথে অনেক বেশি যোগাযোগ করতে পারি। তার সাথে এস.এম.এস, ইমেইল, চ্যাটিং এমনকি সামাজিক যোগাযোগ যদি বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাব যোগাযোগের বেলায় একটা অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। সবটুকুই যে ভালো তা কিন্তু নয় – নতুন প্রজন্মের কেউ এই ব্যাপারে বেশি সময় নষ্ট করছে, কেউ কেউ মনে করছে এই যোগাযোগটি বুঝি সত্যিকারের সামাজিক যোগাযোগ। কাজেই এগুলোতে বেশি নির্ভরশীল হয়ে কেউ কেউ খানিকটা অসামাজিকও হয়ে যেতে পারে।
বিনোদন : এখন বিনোদনও অনেকখানি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছে। বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা থেকে শুরু করে কম্পিউটার গেম খেলায় পর্যন্ত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। ক্রিকেট বা ফুটবল খেলাতে এই প্রযুক্তি কত চমৎকারভাবে ব্যবহার করা হয় আমরা সবাই সেটি দেখেছি। খেলার মাঠে না গিয়েও ঘরে বসে আমরা অনেক বড় বড় খেলা খুব নিখুঁতভাবে দেখতে পারি।
বিনোদন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করার বিষয়ে আমাদের একটু সতর্ক থাকার ব্যাপার আছে। একটি ছোট শিশুর শরীরটাকে ঠিকভাবে গঠন করর জন্য মাঠে ছোটাছুটি করে খেলতে হয়। অনেক জায়গাতেই দেখা যায়, বাবা মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের মাঠে ছোটাছুটি না করিয়ে ঘরে কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘ সময় বিনোদনে ডুবে থাকতে দিচ্ছেন। সত্যিকারের খেলাধুলা না করে শিশুরা কম্পিউটার থেলায় মেতে উঠছে। একটা শিশুর মানসিক গঠনের জন্যে সেটা কিন্তু মোটেও ভালো নয়। সারা পৃথিবীতেই কিন্তু এই সমস্যাটি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে : একজন শিক্ষার্থীর কাছে সবচেয়ে আনন্দের ধ্বনি কি, সেক্ষেত্রে অনেক অনেক কিছু বলতে পারে কিন্তু সবাই জানে শিক্ষার্থীর জন্যে সেটা হচ্ছে ছুটির ঘণ্টা। স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজলে পৃথিবীর সকল স্কুলের শিক্ষার্থীরা আনন্দ প্রকাশ করে। যাঁরা শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করে ভাবনা করেন তাঁরাও সেটা জানেন। তাই সব সময় চেষ্টা করেন কিভাবে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনটা একটু হলেও আনন্দময় করা যায়। লেখাপড়ার ব্যাপারে যখন আইসিটি ব্যবহার করতে শুরু করা হয়েছে তখন হঠাৎ করে সেই কাজটি সহজ হতে শুরু করেছে। এখন শুধু সারাক্ষণ শিক্ষকের বক্তৃতা শুনতে হবে না, মাথা গুঁজে কোনো কিছু মুখস্থ করতে হবে না। এখন মাল্টিমিডিয়াতে লেখাপড়ার অসংখ্য চমকপ্রদ বিষয় দেখানো যায়, বিজ্ঞানের বিষয়গুলো স্ক্রিনে প্রদর্শন করা যায়, এমনকি পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখে সরাসরি কম্পিউটারে পরীক্ষা দেওয়া যায়। এখন ব্যাগ বোঝাই করে পাঠ্য বই নিয়ে যেতে হয়। কিছুদিন পর আর হয়তো প্রয়োজন হবে না। একটা ই-বুক ডিভাইসে শিক্ষার্থীরা শুধু যে তার পাঠ্যবই রাখতে পারবে তা নয়; লাইব্রেরীর কয়েক হাজার বই পর্যন্ত রাখতে পারবে।
চিকিৎসা : আজকাল আইসিটি ব্যবহার না করে চিকিৎসার কথা কল্পনাও করা যায় না। আগে কারও অসুখ হলে ডাক্তাররা রোগীর নানা ধরনের উপসর্গ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে রোগ নির্ণয় করতেন। এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নিখুঁতভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়। শুধু তাই নয়, কেউ যদি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়, তখন তার সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে তার চিকিৎসার বিভিন্ন খুঁটিনাটি আইসিটি ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা সম্ভব। দূর থেকে টেলিফোন ব্যবহার করেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যায়। সেটার নাম দেওয়া হয়েছে টেলিমেডিসিন, সেটা আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞান ও গবেষণা : সম্ভবত আইসিটির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় বিজ্ঞানে এবং গবেষণায়। আইসিটির কারণে এখন বিজ্ঞানীরা গবেষণার অনেক জটিল কাজ অনেক সহজে করে ফেলতে পারেন। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরাও যখন পাটের জিনোম বের করেছিলেন তখন তাঁরা আইসিটির ব্যবহার করেছিলেন।
কৃষি : আমাদের দেশ হচ্ছে একটি কৃষিনির্ভর দেশ, আধুনিক উপায়ে চাষ করে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আইসিটি ব্যবহারের ফলে আমাদের দেশের চাষিরা কৃষিতে সুফল পাচ্ছে। রেডিও টেলিভিশনে কৃষি নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে, ইন্টারনেটে কৃষির ওপর ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে, এমনকি চাষিরা মোবাইল ফোনে কৃষি কল সেন্টারে ফোন করেও কৃষি সমস্যার সমাধান পেয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ ও আবহাওয়া : আমাদের দেশে এক সময় ঘুর্ণিঝড়ে অনেক মানুষ মারা যেত। ১৯৭০ সালে প্রলয়ংকরী একটা ঘুর্ণিঝড়ে এই দেশে প্রায় ৫ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। বাংলাদেশে এখন ঘূর্ণিঝড়ে আগের মতো এতবেশি মানুষ মারা যায় না; তার কারণ আইসিটি ব্যবহার করে অনেক আগেই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। আবার রেডিও টেলিভিশনে উপকূলের মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া যায়।
প্রচার ও গণমাধ্যম : রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ বা অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে আমরা বলি প্রচার ও গণমাধ্যম। এই বিষয়গুলো আজকাল অনেক উন্নত হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো খবর শুধু যে মুহূর্তের মধ্যে আমরা পেয়ে যাই তা নয় তার ভিডিওটিও দেখতে পাই। এই ব্যাপারগুলো সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আইসিটির কারণে।
প্রকাশনা : আমাদের দেশের স্কুলের ছেলেমেয়েদের সরকার থেকে প্রতিবছর নতুন বই দেওয়া হয়। এই নতুন বইয়ের সংখ্যা প্রায় পঁয়ত্রিশ কোটি। এই বিশাল সংখ্যক বই ছাপানো সম্ভব হয় শুধুমাত্র আইসিটির কল্যাণে আইসিটি ব্যবহার করে শুধু যে নির্ভুল আর আকর্ষণীয় করে বই ছাপানো যায় তাই নয় – বইগুলো ওয়েবসাইটে রেখেও দেওয়া যায়; যেন যে কেউ সেগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারে। যেমন – এনসিটিবির ওয়েবসাইট (www.nctb.gov.bd) থেকে সকল পাঠ্যপুস্তকের সফটকপি বা ই-বুক ভার্সন পাওয়া যায়।