কম্পিউটার পোর্ট কি? What is Computer Port in Bengali/Bangla?
কম্পিউটার পোর্ট (Computer Port) হলো এক ধরনের পয়েন্ট বা সংযোগ মুখ। কম্পিউটারের সিস্টেম ইউনিটের সাথে কীবোর্ড (Keyboard), মাউস (Mouse), স্পিকার (Speaker), স্ক্যানার (Scanner) ইত্যাদি যন্ত্রের সংযোগ পয়েন্ট থাকে। এই সংযোগ পয়েন্ট (Point)-কে বলা হয় পোর্ট (Port)। পোর্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমনঃ
১। প্যারালাল পোর্ট (Parallel Port)
২। সিরিয়াল পোর্ট (Serial Port)
৩। ইউএসবি পোর্ট (USB Port)
৪। ভিজিএ বা মনিটর পোর্ট (VGA or Monitor Port)
৫। কীবোর্ড পোর্ট (Keyboard Port)
৬। মাউস পোর্ট (Mouse Port)
৭। নেটওয়ার্কিং পোর্ট (Networking Port)
৮। অডিও পোর্ট (Audio Port)
৯। ভিডিও পোর্ট (Video Port)
১০৷ গেম পোর্ট (Game Port)
১১। MIDI পোর্ট
১২। PS/2 পোর্ট
প্যারালাল পোর্ট (Parallel Port)
এই পোর্টে ডেটা সমান্তরালভাবে আদান প্রদান হয়। দ্রুতগতিতে তথ্য আদান প্রদানের জন্য এই ইন্টারফেসটি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ১ বিট বা ৮ বাইট ডেটা পাশাপাশি ৮টি লাইনের মাধ্যমে আদান প্রদান হয় বলে এটিকে প্যারালাল পোর্ট বলে। এই পোর্টে প্রিন্টার, স্ক্যানার, সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ, জিপ ড্রাইভ, ইত্যাদি যন্ত্র যুক্ত করা হয়। এই জন্যে এই পোর্টেকে প্রিন্টার পোর্টও বলা হয়। এর লজিক্যাল নাম LPT (Line print terminal)। এমএস ডস (MS-DOS) এর ক্ষেত্রে তিন ধরনের LPT ব্যবহার করা হয়। যথাঃ
- LPT
- LPT2
- LPT3
এ ধরনের পোর্টে তিনটি পৃথক রেজিস্টার থাকে। যথাঃ
১. ডেটা রেজিস্টার (Data Register)
২. স্ট্যাটাস রেজিস্টার (Status Register)
৩. কন্ট্রোল রেজিস্টার (Control Register)
সিরিয়াল পোর্ট (Serial Port)
সিরিয়াল কমিউনিকেশন ডিভাইস সংযোগ দেওয়ার পোর্টকে সিরিয়াল পোর্ট বলা হয়। Electronics Industry Association (EIA) এ পোর্টের উন্নয়ন সাধন করে। সিরিয়াল পোর্টের মাধ্যমে সিরিয়াল ডিভাইসগুলো ডেটা আদান-প্রদান করে থাকে। সিরিয়াল পোর্টগুলো সাধারণত কম বা বেশি RS-232 স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সমন্বয়কারী হার্ডওয়্যারগুলোকে সনাক্ত করে থাকে। মনিটর, প্রিন্টার, মডেম প্রভৃতি আউটপুট পেরিফেরালসমূহ কম্পিউটারের ইনপুট/আউটপুট পোর্টের সাথে সিরিয়াল ইন্টারফেস ব্যবস্থায় যুক্ত থাকে। সিরিয়াল পোর্ট Male বা Female উভয় ধরনেরই হতে পারে। ভিজিএ পোর্টও একটি সিরিয়াল পোর্ট। বর্তমানে সিরিয়াল পোর্টগুলো অনেকাংশেই ইউএসবি এবং ফায়ারওয়্যার পোর্টের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এমএস ডস (MS-DOS) এর ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়ে থাকে COM1 ও COM2 নামে। সিরিয়াল পোর্টে মোট ৯টি পিন থাকে। মডেম এবং মাউস সিরিয়াল কমিউনিকেশন ডিভাইস এর উদাহরণ।
ইউএসবি পোর্ট (USB Port)
USB এর পূর্ণ অর্থ Universal Serial Bus। সিস্টেম ইউনিটের সাথে ইউএসবি বাস ও ইউএসবি সমর্থিত ডিভাইসসমূহের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য মাদারবোর্ডের সাথে যে পোর্ট ব্যবহার করা হয় তাকে ইউএসবি পোর্ট বলা হয়।
মনিটর পাের্ট (Monitor Port)
মনিটরকে মাদারবাের্ডে সংযােগের জন্য মাদারবাের্ডে একটি এক্সপানশন কার্ড বসিয়ে উক্ত স্লটে অবস্থিত পাের্টের মাধ্যমে মনিটরকে সংযােগ দেওয়া হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত অধিকাংশ মাদারবাের্ডেই এক্সপানশন কার্ডের প্রয়ােজন হয় না। কেননা মনিটর সমন্বয় করার জন্যে ব্যবহৃত ডিসপ্লে কার্ডটি অধিকাংশ মাদারবাের্ডে বিল্ট-ইন থাকে। ফলে কেবল মাদারবাের্ডের নির্ধারিত পাের্টের মাধ্যমে মনিটরকে সংযােগ দেওয়া যায়। মনােক্রম মনিটরের জন্য ৯ পিনের পাের্ট ব্যবহৃত হয়। ভিজিএ (ভিডিও গ্রাফিক্স অ্যারে) মনিটরের সংযােগক্ষেত্রে পিন সংখ্যা ১৫।
কীবাের্ড পাের্ট (Keyboard Port)
কম্পিউটারের সাথে কীবাের্ডকে যুক্ত করার জন্য তিন ধরনের কানেক্টর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলাে হলােঃ
১. এটি কীবাের্ড কানেক্টর (AT keyboard connector)
২. পিএস/২ কীবাের্ড কানেক্টর (PS/2 keyboard connector)
৩. ইউএসবি কানেক্টর (USB connector)
এটি কীবোর্ড কানেক্টর (AT keyboard connector – DIN5)
এই কানেক্টরগুলোকে DIN5 কানেক্টরও বলে। এটি ৫ পিন বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এই কানেক্টরগুলো এখন আর খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না।
পিএস/২ কিবোর্ড কানেক্টর (PS/2 keyboard connector)
বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত কানেক্টরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। একে MINI-DIN6 কানেক্টরও বলা হয়। এতে ৬টি পিন থাকে। ১৯৮৭ সালে আইবিএম কর্তৃক PS/2 ইন্টারফেস বিশিষ্ট কম্পিউটার বাজারে আসার পর থেকেই বিভিন্ন কীবোর্ড উৎপাদকগণ এই পোর্টের কীবোর্ড তৈরি করা শুরু করেন।
ইউএসবি কানেক্টর (USB connector)
বহুল ব্যবহৃত এবং নতুন একটি কানেক্টর হলো ইউএসবি কানেক্টর। এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলাে প্লাগ-এন্ড-প্লে সুবিধা। কম্পিউটার কেসের সাথে যুক্ত যেকোনাে ইউএসবি পাের্টে লাগিয়ে দিলেই এই ধরনের কীবাের্ডের সাহায্যে কাজ করা যায়। ফলে একটি পাের্ট নষ্ট থাকলেও সমস্যা হয় না। কারণ বর্তমানে কম্পিউটার কেসগুলােতে অনেকগুলাে ইউএসবি পাের্ট থাকে।
মাউস পাের্ট (Mouse Port)
মাউস দিয়ে কাজ করতে হলে কম্পিউটারে এটি সংযুক্ত করে নিতে হয়। মাউস থেকে কম্পিউটারে ডেটা ট্রান্সমিট করতে তিন ধরনের ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। এগুলাে হলােঃ
১. আরএস-২৩২সি সিরিয়াল পাের্ট (RS-232C serial Port)
২. পিএস/২ পাের্ট (PS/2 Port)
৩. ইউএসবি ইন্টারফেস (USB Interface)
আরএস-২৩২সি সিরিয়াল পাের্ট (RS-232C serial Port)
এই পাের্ট মাউসকে একটি পাতলা বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে। এই তারটি একটি ৯ পিন কানেক্টর ব্যবহার করে। সিরিয়াল পাের্ট মাউসকে COM1 বা COM2 অথবা যেকোনাে সিরিয়াল পাের্টের সাথে সংযােগ করা হয়। মাউসের সাথে সংযুক্ত ক্যাবল কানেক্টরটি 9 PIN FEMALE হয়ে থাকে। কম্পিউটারের পিছনের দিকে আর একটি 9 PIN MALE অবস্থান করে।
পিএস/২ পাের্ট (PS/2 Port)
এই পোর্ট মাউসকে একটি পাতলা বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে। তবে এই তারটি একটি ৬ পিন কানেক্টর ব্যবহার করে। এ পদ্ধতিতে কম্পিউটারের মাদারবাের্ডে মাউস কন্ট্রোল সার্কিট বিল্টইন অবস্থায় থাকে। আইবিএম-এর পিএস/২ (PS/2) রেঞ্জের কম্পিউটারে প্রথম দিকে ব্যবহৃত হত বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। সাধারণত কম্পিউটারের পিছনের দিকে মাউস পাের্টটি 6 PIN FEMALE থাকে। অপরদিকে মাউসের সাথে সংযুক্ত ক্যাবল কানেক্টরটি 6 PIN MALE হয়ে থাকে।
ইউএসবি ইন্টারফেস (USB Interface)
এই ইন্টারফেসটি বিভিন্ন ধরনের মাউসকে একটি ইউএসবি কানেক্টরের মাধ্যমে সংযুক্ত হবার সুযোগ দেয়। এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্লাগ-এন্ড-প্লে সুবিধা। কম্পিউটার কেসের সাথে যুক্ত যেকোনো ইউএসবি পোর্টে লাগিয়ে দিলেই এই ধরনের মাউসের সাহায্যে কাজ করা যায়। ফলে একটি পোর্ট নষ্ট থাকলেও সমস্যা হয় না। কারণ বর্তমানে কম্পিউটার কেসগুলোতে অনেকগুলো ইউএসবি পোর্ট থাকে।
নেটওয়ার্কিং পোর্ট (Networking Port)
এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারকে যুক্ত করার জন্য নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা কার্যকর করতে হলে এতে নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন হয়। পিসিতে নেটওয়ার্কিং কার্ড ব্যবহার করা হয় যেমন LAN Card। ইথারনেট পোর্ট পিসির নেটওয়ার্কিং এর জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও দ্রুতগতি সম্পন্ন ব্যবস্থা। একে RJ-45 Port নামেও ডাকা হয়।
অডিও পাের্ট (Audio Port)
মাল্টিমিডিয়া পিসিতে ও মাইক্রোফোন উভয় ধরনের পোর্টই যুক্ত থাকে। অডিও ইন করার জন্য অডিও ইন বা মাইক্রোফোন পাের্ট এবং অডিও আউটের জন্য অডিও আউট বা স্পিকার পাের্ট থাকে। মাদারবাের্ডে সাউন্ডকার্ড বিল্টইন থাকলে স্বাভাবিকভাবেই অডিও পাের্ট পাওয়া যায়। আর সাউন্ডকার্ড বিল্টইন না থাকলে আলাদা করে সাউন্ডকার্ড ইন্সটল করে নিতে হয় যেখানে প্রয়ােজনীয় অডিও পাের্টগুলাে থাকে।
ভিডিও পোর্ট (Video Port)
ভিডিও ইন বা আউট করার জন্য কম্পিউটারে ভিডিও ইনপুট ও আউটপুটের পোর্ট থাকে। প্রায় সকল কম্পিউটারের জন্য আলাদা কার্ড ব্যবহার করা হয়।