রসায়ন বিজ্ঞান

স্ফটিক বা কেলাস কাকে বলে? কেলাস প্রস্তুতির বিভিন্ন প্রক্রিয়া।

গঠন প্রকৃতি অনুসারে কঠিন পদার্থ দুই প্রকার। যথা- (১) কেলাস বা দানাদার প্রকৃতির এবং (২) দানাদার নয় এমন প্রকৃতির কঠিন বস্তু। আমরা খাদ্য লবণ ও চিনি প্রায় প্রতিদিনই ব্যবহার করি। এই পদার্থগুলি দানাদার। এছাড়া ফিটকিরি, তুতে, ইউরিয়া সার এই পদার্থগুলিও দানাদার। চুন, পানি এ দুটি বস্তু দানাদার নয়। দানাদার বস্তুসমূহের নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতি এবং সমতল ও মসৃণ পৃষ্ঠদেশ আছে, যেগুলাে একটি অপরটির সাথে সরল রেখায় মিলিত হয়। এ ধরনের দানাদার বস্তুকেই স্ফটিক বা কেলাস বলে।

অর্থাৎ, যে সব কঠিন পদার্থ ক্ষুদ্রাকার ও সমসত্ব, যাদের পৃষ্ঠদেশ সমতল ও মসৃণ এবং পৃষ্ঠদেশগুলাে একে অপরের সাথে সরল রেখায় মিলিত হয়ে সুনির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতি গঠন করে (যে আকৃতি প্রস্তুতির সময় স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠে) তাদেরকে কেলাস বা স্ফটিক বলে।
কোন একটি নির্দিষ্ট পদার্থের সব স্ফটিকের আকৃতি সবসময়ই এক হবে তবে আকার ছােট-বড় বা ভিন্ন হতে পারে। চিনির বিভিন্ন স্ফটিকের আকার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে- যা খালি চোখেও বুঝা যায়।
ভিন্ন ভিন্ন স্ফটিক পদার্থের আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন (কোন কোন সময় একই হতে পারে)। কোন স্ফটিক পদার্থের আকৃতি পদার্থের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিচয়বহন করে। NaCl এর কেলাস ঘনক (Cubic) আকৃতির, ফিটকিরি অষ্টতলকীয় (Octahedral) আর সালফারের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ মনােক্লিনিক (Monoclinic) আকৃতির। কোন পদার্থের কেলাস আকৃতি পদার্থটিকে সনাক্ত করতে সাহায্য করে। যখন দুই বা ততােধিক পদার্থের কেলাস আকৃতি একই ধরনের হয়, তখন পদার্থগুলিকে পরস্পরের সমরূপী বলা হয় এবং এই বিষয়টিকে সমরূপতা (isomerism) বলে। সােডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) এবং পটাসিয়াম ক্লোরাইড (KCI) এই দু’টি পদার্থের স্ফটিকের গঠনই ঘনক আকৃতির। তাই এরা পরস্পরের সমরূপী।

গ্রীন ভিট্রিয়ল (FeSO4.7H2O) , হােয়াইট ভিট্রিয়ল (ZnSO4.7H2O) এবং ইপসম লবণ (MgSO4.7H2O) এই তিনটি পদার্থও পরস্পরের সমরূপী। তাই এদের কেলাসের গঠন প্রকৃতি একই রকম।

কেলাস প্রস্তুতির বিভিন্ন প্রক্রিয়া
কোন পদার্থের উত্তপ্ত সম্পৃক্ত দ্রবণকে ধীরে ধীরে শীতল করে দ্রবণ থেকে পদার্থটিকে কেলাস আকারে আলাদা করার প্রক্রিয়াকেই কেলাসন বা স্ফটিকীকরণ বলে। কেলাস প্রস্তুতির জন্য নিচে বর্ণিত প্রক্রিয়াগুলাে ব্যবহার করা হয়:

  • কোন পদার্থের উত্তপ্ত সম্পৃক্ত দ্রবণকে ধীরে ধীরে শীতল করলে কেলাস প্রস্তুত হয়।
  • কোন পদার্থের অসম্পৃক্ত দ্রবণকে উত্তপ্ত করে দ্রাবককে বাষ্পাকারে দূরীভূত করার পর ঘনীভূত দ্রবণকে ধীরে ধীরে শীতল করলেও কেলাস প্রস্তুত হয়।
  • কঠিন পদার্থের কেলাস প্রস্তুতির জন্য প্রথমে পদার্থটিকে উত্তাপের সাহায্যে বিগলিত করে পরে বিগলিত দ্রবণকে ধীরে ধীরে শীতল করা হয়।
  • অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড (নিশাদল), আয়ােডিন এই ধরনের উদ্বায়ী (উর্ধপাতন যােগ্য কঠিন) পদার্থকে উর্ধপাতিত করলে কেলাস পাওয়া যায়।

এই প্রক্রিয়াগুলাের মধ্যে উত্তপ্ত সম্পৃক্ত দ্রবণকে ধীরে ধীরে শীতল করে কেলাস প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াই বহুল ব্যবহৃত হয়। যে সব ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়ানাের সাথে দ্রবের (লবণের) দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায়, সে সব ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়ার সার্থক প্রয়ােগ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উচ্চতর তাপমাত্রার সম্পৃক্ত দ্রবণে অধিক পরিমাণ লবণ দ্রবীভূত হয়। ধীরে ধীরে শীতল করলে নিম্নতর তাপমাত্রায় অতিরিক্ত লবণ কেলাস আকারে বের হয়ে আসে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button