Technology

সিডি, ডিভিডি, ব্লু-রে ডিস্ক? প্ল্যাস্টিকের চাকাতে ডিজিটাল ডাটা?

রেকডেবল সিডি এবং ডিভিডি

সত্যি এটা ভাবতেই অসাধারণ লাগে, একটি প্ল্যাস্টিকের চকচকে চাকাতে কয়েক ঘণ্টার মুভি আর গান সংরক্ষিত করে রাখা যায়, যেটা আঁকারে আমাদের হাতের চেয়ে বড় নয়। কমপ্যাক্ট ডিস্ক বা সিডি ৩০ বছর আগের প্রযুক্তি হলেও এখনো এটা মিউজিক এবং কম্পিউটার ডাটা সংরক্ষিত রাখার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। সিডি’র পরে আমাদের সামনে আসে ডিভিডি (ডিজিটাল ভিডিও ডিস্ক) যেটা সিডি’র মতো আঁকার হওয়া শর্তেও এর চেয়ে প্রায় ৭ গুনবেশি ডাটা সংরক্ষন করতে সক্ষম। আর আমাদের কাছে বর্তমানে রয়েছে ব্লু-রে ডিস্ক; যেটা ডিভিডি থেকে প্রায় ৬ গুনবেশি এবং সিডি থেকে ৪০ গুনবেশি ডাটা সংরক্ষিত রাখার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন; সিডি, ডিভিডি, বা ব্লু-রে ডিস্ক কীভাবে কাজ করে? -চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

সিডি কি?

কমপ্যাক্ট ডিস্ক বা সিডি আঁকারে অনেক পাতলা এবং একটি বৃত্তাকার চাকা যেটি প্ল্যাস্টিক এবং মেটালের সমন্বয়ে গঠিত। এটি আসলে তিনটি ভিন্ন স্তরে তৈরি। বেশিরভাগ সিডি অধিক শক্ত প্ল্যাস্টিক পলিকার্বনেটের সমন্বয়ে গঠিত। সিডি’র উপর এবং নিচে প্ল্যাস্টিক থাকে এবং এই দুই প্ল্যাস্টিকের মাঝখানে একটি পাতলা চকচকে অ্যালুমিনিয়ামের স্তর দিয়ে স্যান্ডুইচ করা থাকে। আপনি হয়তো অবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন, সিডি’র এক পৃষ্ঠ রুক্ষ এবং আরেক পৃষ্ঠ স্বচ্ছ এবং চকচকে হয়ে থাকে; চকচকে অংশটিই সিডির আসল অংশ যেখানে লেজার রশ্মি ছুড়ে মেরে সিডি থেকে ডাটা রীড করা হয়। আর রুক্ষ অংশে বিশেষ করে সিডির নাম, লোগো ইত্যাদি প্রিন্ট করা থাকে।

সিডি আসার আগে ক্যাসেট প্লেয়ারে গান রেকর্ড এবং শোনা হতো। এখানে একটি ক্যাসেট টেপ থাকতো যেটার প্ল্যাস্টিক ফিতা সর্বদা প্লেয়ারের হেডের সাথে লেগে থাকতো এবং মিউজিক প্লে হতো। ক্যাসেট টেপে মিউজিক অ্যানালগ ফরম্যাটে সংরক্ষিত থাকতো, এবং ম্যাগনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এতে মিউজিক সংরক্ষিত করা হতো। প্ল্যাস্টিকের ফিতার উপর ইলেক্ট্রো ম্যাগ্নেটিজমের একটি প্যাটার্ন তৈরি হতো ঠিক যেভাবে শব্দ তরঙ্গ আঁকারে থাকে।

কিন্তু সিডি আসার পরে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সিডি ক্যাসেটের মতো ঘুরলেও এতে ম্যাগনেটের বদলে ব্যবহার করা হয় লেজার রশ্মি। এই লেজার ব্যবহার করে সিডিতে কোন ডাটা রেকর্ড এবং ডাটা রীড উভয়ই করা যায়। ক্যাসেট প্লেয়ারের মতো এতে ফিতা প্লেয়ারের সাথে সর্বদা ঠেকে থাকার দরকার পড়ে না, বরং একটি লেজার রশ্মি এতে লেগে থাকে। সিডি’র আরেকটি সুবিধা হচ্ছে সিডি যেহেতু বৃত্তাকার এবং একটি মুভিং লেজারের সাথে কাজ করে তাই যেকোনো সময় লেজারটি খুব দ্রুত সিডির যে কোন অংশে মুভ করে সেখান ঠেকে ডাটা রীড করতে পারে, ক্যাসেটের মতো নয়; কোন নির্দিষ্ট অংশ রীড করার জন্য ফিতাকে মোটর দিয়ে ঘুরিয়ে ঐ অংশে নিয়ে যেতে হয়। তবে সত্যিকার অর্থে সিডিতে কোন মিউজিক থাকেনা, থাকে ডিজিটাল ডাটা অর্থাৎ জিরো বা ওয়ানের প্যাটার্ন।

সিডি রাইট করার সময় লেজার দ্বারা এতে বার্ন করানো হয় আর বার্ন করা স্থানে সিডি সংরক্ষিত করে জিরোকে এবং বার্ন না হওয়া স্থান ওয়ান হিসেবে। এভাবে জিরো আর ওয়ানের নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দ্বারা সিডি ডিজিটাল যেকোনো ডাটা সংরক্ষিত করতে পারে।

রেকডেবল সিডি এবং ডিভিডি

যখন আমরা প্রথম সিডি’র সাথে পরিচিত হই, তখন বাজারে শুধু রীড-অনলি অডিও কমপ্যাক্ট ডিস্ক পাওয়া যেতে যেটা ঠেকে শুধু রীড করা যেতো কিন্তু ঐ প্রকারের সিডিতে কোন ডাটা রাইট করা যেতো না। কিন্তু এই টাইপের সিডি খুব বেশিদিন বাজারে টিকেনি, কেনোনা কম্পিউটার কোম্পানি গুলো ভেবে দেখল তারা অনেক কম খরচে সিডি’র মধ্যে সফটওয়্যার এবং কম্পিউটার ডাটা লোড করে সেগুলোকে বাজারজাত করতে পারছে। আর এভাবেই রেকডেবল সিডি বা সিডি-আর বাজারে চলে আসে। কিন্তু সিডি-আর এর সাথে সমস্যা হচ্ছে আপনি এই টাইপের সিডি মাত্র একবারই রাইট করতে পারবেন এবং একবার রাইট করার পরে এথেকে কোন ডাটা রিমুভ করা বা আবার ডাটা রাইট করা সম্ভব হবে না। তবে আনলিমিটেড ডাটা রীড করতে পারবেন।

এর পরে বাজারে আসে রি-রাইটেবল সিডি বা সিডি-ডাবলুআর; যেখানে ইচ্ছা মতো ডাটা রাইট এবং রীড করা সম্ভব এবং সেটা যেকোনো সময় যতো খুশি ততোবার। সিডি-আর এ রাইটার লেজার ব্যবহার করে সিডির চকচকে দিকে রশ্মি ছুড়ে মারে এতে রশ্মি পড়া স্থানে কালো হয়ে যায় এবং সেটাকে জিরো হিসেবে সেভ করে এবং যেখানে রশ্মি পড়েনা সেটা নর্মাল থাকে, সেটাকে ওয়ান হিসেবে সেভ করে। রাইট করার সময় জিরো আর ওয়ানের প্যাটার্ন এতো লেগে দেওয়া হয় যে, সেটা চোখে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি এমনিতে সিডি’র চকচকে অংশের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন যেখান পর্যন্ত ডাটা সেভ করা আছে বা লেজার যেখানে বার্ন করেছে সে অংশটি কালো হয়ে রয়েছে। যেহেতু সিডি-আর এ লেজার দ্বারা এর চকচকে অংশকে পরিবর্তন করে দেওয়া হয় তাই দ্বিতীয়বার এটা আর রাইট করা যায় না।

সিডি-ডাবলুআর এর ব্যাপারটা একটু আলাদা। এখানে কোন লেজার দ্বারা পার্মানেন্ট দাগ বা ডট তৈরি করা হয় না, বরং এতে এমন মেটালের তৈরি হয়ে থাকে যেটা লেজার লাইট পেয়ে নিজের অণুর অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। সিস্টেম হিসেবে সেখানে জিরো দরকার সেখানে কালো এবং যেখানে ওয়ান দরকার সেখানে আনবার্নড অংশ সাজিয়ে যায়। নিজের অণুর অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি ইচ্ছা মতো প্যাটার্নে সাজিয়ে ডাটা প্রদর্শিত করতে পারে।

ব্লু-রে ডিস্ক

আমরা মানুষেরা কোন জিনিসকে সহজেই ভুলে যাই, আর এই ভুলে যাওয়া জিনিস গুলোকে পুনরায় মনে করিয়ে দিতে বই, কম্পিউটার, সিডি, ডিভিডি ইত্যাদি প্রযুক্তি গুলো ব্যবহার করে থাকি। একটি ডিভিডি’তে ১০,০০০ মতো মোটামোটা বই সংরক্ষিত করে রাখা সম্ভব যেটা একটি সিডি ঠেকে প্রায় ৭ গুন বেশি। কিন্তু ধরুন আপনার আরোবেশি তথ্য সংরক্ষন করার প্রয়োজন পড়লো, আর এভাবে ডিভিডি’তে সেগুলো সংরক্ষিত করতে করতে আবার অনেক ডিভিডি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমাদের কাছে আরেকটি প্রযুক্তি রয়েছে যেটাকে ব্লু-রে ডিস্ক বলা হয়, যেটা ডিভিডি ঠেকে ৬ গুন বেশি ডাটা সংরক্ষিত করতে পারে। একটি ব্লু-রে ডিস্ক ৫০ গিগাবাইট পর্যন্ত ডাটা সংরক্ষিত করতে পারে যেখানে একটি ডিভিডি ৪.৭ গিগাবাইট এবং সিডি ৬৫০ মেগাবাইট ডাটা সংরক্ষিত করতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একই আঁকার হওয়া শর্তেও ব্লু-রে ডিস্ক কীভাবে ডিভিডি থেকে বেশি ডাটা এবং কীভাবে ডিভিডি সিডি থেকে বেশি ডাটা সংরক্ষিত করে? উত্তরটি অনেক সহজ, ধরুন আপনাকে একটি সাদা কাগজ দেওয়া হলো এবং সেখানে কিছু লিখতে বলা হলো এবং আপনি সেখানে কিছু লিখলেন। এবার ঐ কাগজেই আপনাকে আরো বেশি লেখা আটাতে বলা হলো, তাহলে আপনি কি করবেন? অবশ্যই লেখার সাইজ ছোট করে দেবেন তাই না? ব্লু-রে ডিস্ক, ডিভিডি, সিডি’র ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটে থাকে।

লেজার দিয়ে রাইট করার সময় ধরুন সিডি’র গায়ে অনেক গুলো ডট ডট তৈরি করে যেখানে বার্ন করা ডট গুলো জিরো এবং আনবার্নড ডট গুলো ওয়ান এভাবে ধরুন ১ মেগাবাইট ডাটা সংরক্ষন করতে ১ মিলিয়ন ডটের দরকার পড়ে। কিন্তু আরো বেশি ডট একই আঁকারে আটাতে চাইলে কি করতে হবে? অবশ্যই ডটের আঁকার গুলো আরো ছোট করতে হবে তাই না?

শেষ কথা

সিডি’র জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গেলেও ডিভিডি এবং ব্লু-রে ডিস্ক কম্পিউটার সফটওয়্যার, গেম, হাই কোয়ালিটি মুভি সংরক্ষিত রাখার জন্য এখনো পর্যন্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় মাধ্যম। এতে কম খরচে অনেক বেশি ডাটা সংরক্ষিত করা সম্ভব। তাছাড়া গেমিং কনসোল গুলোতে এখন বিশদভাবে ব্লু-রে প্লেয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনি যদি অরিজিনাল হাই-ডেফিনিশন মুভি উপভোগ করতে চান তবে সেটা ইন্টারনেট থেকে স্ট্রিম করে বা ডিভিডি’তে দেখা সম্ভব হবে না; এর জন্য অবশ্যই ব্লু-রে ডিস্ক প্রয়োজনীয়। তো আপনার কি মনে হয়, ব্লু-রে ডিস্ক কি ভবিষ্যৎ প্রুফ? নিচে কমেন্ট করে আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button