Technology

কিউআর কোড, বারকোড কি?

কীভাবে কিউআর কোড কোন তথ্য সংরক্ষিত রাখে?

আপনারা কিউআর কোড এবং বারকোড অনেক স্থানে ব্যবহার হতে দেখেছেন নিশ্চয়। এগুলো আপনার যেকোনো পার্সেলের উপরে, কোন বইয়ের উপরে, কোন সফট ড্রিঙ্কের বোতলের উপরে কিংবা আপনার টি-শার্টের উপরে দেখতে পাওয়া যায়। বারকোড সাধারনত অনেক বেশি কমন হয়ে থাকে এবং এতে অনেক গুলো লম্বা লাইন দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া আজকের দিনে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তো কিউআর কোড সম্পর্কে জানেনই।

বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করতে, অনলাইনে কোন সাইট ভিজিট করতে এই কোড আপনারা অবশ্যই ব্যবহার করে থাকবেন। এই সাদাকালো লম্বা রেখা এবং চারকোনা কালো ঘরগুলোর মধ্যে কীভাবে কোন তথ্য লুকিয়ে থাকে এবং কীভাবে আপনার স্ক্যানার বা স্মার্টফোন সেগুলো পড়তে পারে, এনিয়েই আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো বন্ধুরা। তো কোন প্রকারের বকবক না করে, চলুন শুরু করি।

এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

বারকোড

বন্ধুরা, বারকোডে লম্বা সাদাকালো রেখার ভেতরে কোন তথ্য সংরক্ষিত করা থাকে—এবং এখানে অনেক ছোট পরিমানের তথ্য সংরক্ষিত রাখা সম্ভব। কিন্তু কোন তথ্য সংরক্ষন করার পরে এথেকে অনেক সহজে সেই তথ্য রীড করাও সম্ভব, আপনাকে ম্যানুয়ালি কোন নাম্বার বা কোড প্রবেশ করানোর প্রয়োজন পরেনা, শুধু কোডটি স্ক্যান করলেই আপনি সকল তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারেন।

আপনি যদি কোন দোকানের মালিক হয়ে থাকেন, তবে বারকোড আপনার প্রোডাক্ট ম্যানেজ করতে আপনাকে অনেক সাহায্য করে থাকবে। মনে করুন আপনার দোকানে ১৫ ধরনের আইটেম রয়েছে, এবং প্রত্যেকের গায়ে আলাদা প্রকারের বারকোড রয়েছে। এখন যখন কোন প্রোডাক্ট বিক্রি হবে, তখন আপনার দোকানের কর্মচারী সেই কোড স্ক্যান করে সহজেই সেই প্রোডাক্টের দাম, সেই প্রোডাক্টটি আর কতটা স্টকে রয়েছে, কতটা বিক্রি হয়েছে ইত্যাদি তথ্য জানতে পারা সম্ভব হবে। আপনি একজন গ্রাহক হিসেবে আপনিও সেই প্রোডাক্টটির গায়ের কোড স্ক্যান করে অনেক তথ্য যেমন, প্রোডাক্টটির প্রস্তুতকারী কোম্পানির নাম, প্রোডাক্টটির তৈরি হওয়ার তারিখ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারেন।

এখন কথা বলি বারকোড রিডার নিয়ে, এটি কীভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে। দেখুন বারকোডের ভেতরে সাধারনত কোন নাম্বার স্টোর করা থাকে—অর্থাৎ ০ থেকে শুরু করে ৯ পর্যন্ত যেকোনো নাম্বার এতে সংরক্ষিত থাকতে পারে, এবং সেই নাম্বার গুলো বিভিন্ন সন্নিবেশে থাকতে পারে। প্রত্যেকটি লম্বা লম্বা লাইনের মধ্যে আলাদা আলাদা নাম্বার সংরক্ষিত করা থাকে। এখন যে স্ক্যানার থাকে সেখান থেকে একটি লেজার লাইট ঐ কোডটির দিকে ছুড়ে মারা হয়। কোডটির যেখানে কালো রেখা থাকে সেখান থেকে কোন প্রতিফলন স্ক্যানারে ফিরে আসেনা এবং সাদা অংশ থেকে আলো প্রতিফলন ফিরে আসে। এখন যেখানে থেকে আলো আসছে না সেটাকে ০ এবং যেখান থেকে আলো ফিরে আসে সেটাকে ১ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এখন এই নাম্বার গুলোকে বিভিন্ন সেগমেন্টে বিভক্ত করার মাধ্যমে সহজেই স্ক্যানারে থাকা রিসিভারটি কোডটি পড়তে পারে।

বন্ধুরা এই বারকোডে লুকিয়ে থাকা তথ্য পড়ার জন্য আগে অনেক বড় আকারের বাল্ব ব্যবহার করা হতো—কিন্তু বর্তমানে একটি হাতের সাহায্যে পরিচালিত স্ক্যানার থাকে এবং সেখান থেকে একটি লেজার রশ্মি ছুড়ে মারা হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমেই অনেক সহজেই বারকোড রীড করা সম্ভব হয়ে থাকে। কিন্তু বন্ধুরা, বারকোডে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন ধরুন, বারকোডে যদি কোন দাগ পড়ে বা কেটে যায় তাহলে সঠিক তথ্য বেড় করতে মুশকিল হতে পারে, এবং দ্বিতীয়ত এই কোডে অনেক কম পরিমানে তথ্য সংরক্ষন করা যায়। আর এই সমস্যা গুলো অবসান করানোর জন্য আমরা ব্যবহার করে থাকি কিউআর কোড (QR Code)। চলুন এবার এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কিউআর কোড

যেকোনো প্রোডাক্টের গায়ে, টিকিটের গায়ে, কোন পত্রিকার বিজ্ঞাপনের উপর বা অনলাইনে কোন ওয়েবসাইটে অবশ্যই কিউআর কোড ব্যবহার হতে দেখেছেন। এই কোডে অনেকগুলো ডট ডট থাকে এবং সম্পূর্ণ কোডটি একটি চারকোনা ঘরের মধ্যে অবস্থিত থাকে। সাধারন বারকোডের মতো এটিও কোন স্ক্যানার দিয়ে পড়া সম্ভব, তাই অতি সহজেই এ থেকে সংরক্ষিত তথ্য গুলো বেড় করে আনা সম্ভব হয়ে থাকে।

কিউআর কোডকে টু ডাইমেন্সনাল বারকোড বা ২ডি বারকোডও বলা হয়ে থাকে। সাধারন বারকোডে এদের রেখাংশের মধ্যে তথ্য লুকিয়ে রাখা হয়, কিন্তু কিউআর কোডে এর সাদাকালো এবং একসাথে অনেক ডট ডটের মধ্যে অনেক বেশি তথ্য রাখা সম্ভব হয়ে থাকে। এই কোড কীভাবে কাজ করে তা জানার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, এর ব্যাবহারের বিশেষ সুবিধা গুলো সম্পর্কে।

২ডি বারকোড ব্যাবহারে সুবিধা সমূহ

  • আরো তথ্য সংরক্ষনঃ হ্যাঁ বন্ধুরা, কিউআর কোডে একসাথে অনেক তথ্য সংরক্ষন করে রাখা সম্ভব হয়ে থাকে। সাধারন বারকোডে লম্বালম্বি ভাবে কালো রেখা দেওয়া থাকে ফলে এতে বেশি তথ্য সংরক্ষিত রাখা সম্ভব হয়ে থাকে না—সাধারনত ডজন খানেক ডিজিট সংরক্ষন করা সম্ভব হয়ে থাকে (যদি এই ডজন খানেক ডিজিট কোন প্রোডাক্ট চিনতে যথেষ্ট, কিন্তু তারপরেও অনেক কাজ করা সম্ভব নয়)। সাধারন বারকোডকে লম্বা না করলে এতে আরো বেশি তথ্য আঁটানো সম্ভব হয়না। কিন্তু ২ডি বারকোড বা কিউআর কোড চারকোনা হওয়ার ফলে এবং দুইদিক থেকে এর তথ্য অ্যাক্সেস হওয়ার ফলে একে আকারে না বাড়িয়েই অনেক বেশি তথ্য সংরক্ষন করা সম্ভব। সাধারনত এটি ২ডি বারকোড ২০০০ অক্ষরে কোন তথ্যকে চিত্রিত করতে পারে।
  • কম ভুল হয়ঃ সাধারন বারকোডের কোন অংশ নষ্ট হয়ে গেলে বা এতে দাগ পড়ে গেলে এথেকে কোন তথ্য বেড় করে আনা অনেক সমস্যার হয়ে পড়ে। কেনোনা এতে তথ্য সংরক্ষিত রাখার জন্য শুধু কয়েকটি লম্বা রেখা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে কোন তথ্য ব্যাকআপ রাখার কোন সিস্টেম থাকেনা। কিন্তু ২ডি বারকোডে একই তথ্য আলাদা ফর্মে একাধিকবার সেভ করা থাকে। ফলে একটি তথ্য অ্যাক্সেস না হলেও আরেকটি থেকে এর তথ্য পাওয়া যায়। তাই কোড ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কিউআর কোডে কোন সমস্যা হয়ে থাকেনা।
  • তথ্য পড়া অনেক সহজঃ ২ডি বারকোড গুলো স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটারের ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে অতিসহজেই পড়া সম্ভব। তাই কিউআর কোড পড়তে কোন স্পেশাল স্ক্যানারের প্রয়োজন পড়েনা। এই কোডে অনেক বেশি তথ্য থাকার পরেও একে অনেক দ্রুত পড়া সম্ভব হয়ে থাকে।
  • প্রেরন করা অনেক সহজঃ কিউআর কোডকে সাধারন ম্যাসেজের মাধ্যমে এক সেলফোন থেকে আরেক সেলফোনে পাঠানো সম্ভব।
  • আরো নিরাপদঃ বন্ধুরা এর ভেতরে সংরক্ষিত থাকা ডাটা গুলো ইনক্রিপটেড করে রাখা সম্ভব তাই এটি সাধারন কিউআর কোড থেকে আরো বেশি নিরাপদ।

কীভাবে কিউআর কোড কোন তথ্য সংরক্ষিত রাখে?

সাধারন কিউআর কোড এবং এই প্রকারের সকল কোড মেশিনের দ্বারা রীড করার জন্য প্রস্তুত করা হয়ে থাকে, মানুষের দ্বারা রীড করার জন্য নয়। তাই এই কোড গুলোর একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে, যার মাধ্যমে এরা তথ্য সংরক্ষিত করে থাকে। নিচে https://wirebd.com এর একটি কিউআর কোডের মাধ্যমে এর বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করা হলো।

  1. নীরব এলাকাঃ কোন কিউআর কোডের এই অংশটি মূলত প্রিন্ট কপি থেকে কোডটিকে আলাদা করতে সাহায্য করে। সাধারনত সম্পূর্ণ চারকোনা ঘরের এবং ডট ডটের ভেতর দিয়ে এই সাদা অংশটি থাকে।
  2. নির্দেশকঃ এই সম্পূর্ণ কোডটির তিনকোণায় অবস্থিত তিনটি চারকোনা ঘর, এই কোডটি যে কিউআর কোড তা চিনিয়ে দিতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই তিনটি ঘর স্ক্যানারকে নির্দেশ করে যে, ঠিক কোনদিকে কোডটিকে ধরে রাখা হয়েছে—এবং সে অনুসারে স্ক্যান করে এর ভেতরের তথ্য গুলো পড়ার চেষ্টা করে।
  3. শ্রেণীবিন্যাস করার প্যাটার্নঃ এই অংশটি নির্দেশ করে থাকে যে, কোডটি থেকে এর তথ্য রহস্য বেড় করা যাবে কিনা। এমনকি কোডটি ক্ষতিগ্রস্থ হবার পরেও এথেকে জানা সম্ভব।
  4. টাইমিং প্যাটার্নঃ এই প্যাটার্নটি লম্বালম্বি ভাবে এবং সমতল ভাবে উভয় ভাবেই থাকে—এবং এই প্যাটার্নটি তিন কোনায় অবস্থিত তিনটি প্রধান নির্দেশক প্যাটার্নের গা ঘেঁসে থাকে। এই টাইমিং প্যাটার্ন, কিউআর কোডের ভেতর অবস্থিত পৃথক তথ্য কোষ গুলোকে সনাক্ত করতে সাহায্য করে থাকে—বিশেষ করে তখন, যখন কোডটি ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় থাকে।
  5. সংস্করণ সংক্রান্ত তথ্যঃ কিউআর কোড স্ট্যান্ডার্ডের অনেক গুলো ভার্সন রয়েছে; এই ভার্সন সংক্রান্ত তথ্যটি প্রধান নির্দেশক দুটি চারকোনা ঘরের সাথে লাগানো থাকে—এবং এটি নির্দেশ করে যে, কোডটিতে কোন ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছে।
  6. তথ্য কোষঃ কিউআর কোডের প্রত্যেকটি ডট ডট আর চারকোনা ঘর শুধু কোন কিছু নির্দেশ করার কাজেই ব্যবহার হয়, তা নয়। এদের মধ্যে অনেকে আসল ডাটা সংরক্ষণ করে রাখে, আর একে তথ্য কোষ বলে।

শেষ কথা

আশা করছি, আজকের পোস্টে অনেক মজা নিয়েছেন—কেনোনা এতে সত্যিই অনেক মজার বিষয় লুকিয়ে ছিল। আপনার যেকোনো প্রশ্নে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুন, এবং অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button