Life Style

আবেগ কাকে বলে ? আবেগ কত প্রকার ও কি কি ?

আবেগ ও অনুভূতির মধ্যে পার্থক্য কি ?

আবেগ কি ? আবেগ কাকে বলে (Emotions meaning in Bengali) এবং আবেগ কত প্রকার ও কি কি ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।

আমরা, মানুষেরা পৃথিবীর সবথেকে শ্রেষ্ঠ ও বুদ্ধিমান জীব।

আমাদের শ্রেষ্ঠ জীব হওয়ার পিছনের সবথেকে বড় কারণ হল আমাদের বুদ্ধি ও চিন্তা-ভাবনা করার শক্তি।

যা পৃথিবীর বেশিভাগ প্রাণীর মধ্যে সেই মাত্রাতে দেখা যায় না।

তবে, মানব সভ্যতার মূল চাবিকাঠি কিন্তু হল মানবজাতির আবেগ ও অনুভূতি।

আমরা সবসময়ই এই আবেগের উপর ভর করেই চলি ও নানান সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

তবে, বাস্তবে এই আবেগ মানে কি ? আবেগ কি শুধুই মানুষের মনের মধ্যে হওয়া অনুভূতির ফলাফল নাকি অন্য কিছু ?

তাই, আজকে আমাদের আলোচনার মুখ্য বিষয়ই হল আবেগ কাকে বলে ? এবং আবেগ কত প্রকার ও কি কি ?

প্রথমে জানা যাক যে, আবেগ বলতে কি বুঝায়। 

Post Contents

আবেগ কি বা কাকে বলে ?

Emotion Meaning in Bengali.

আসলে, এই আবেগ বা ইমোশন হল চেতনা, শারীরিক সংবেদনশীলতা আর আচরণের সংমিশ্রণে ঘটে যাওয়া একটি জটিল অভিজ্ঞতা।

যে অভিজ্ঞতা কোনো একটি জিনিস, ঘটনা, বা বিষয় সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলোকে প্রতিফলিত করে।

বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল ‘আবেগ’ সম্পর্কে বলেছেন, যে আবেগ হল সেই সমস্ত অনুভূতির সমষ্টি, যা মানুষের বিচারকে প্রভাবিত করে তাদের মত পরিবর্তনের জন্যে দায়ী থাকে আর সেই অনুভূতিগুলো ব্যথা বা আনন্দের দ্বারাও প্রভাবিত হয়।

এই আবেগগুলো মধ্যে কয়েকটি হল ক্রোধ, ভয়, করুণা, ও ইত্যাদি।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, এই আবেগ হল সচেতন মানসিক প্রতিক্রিয়া (যেমন- আনন্দ বা ভয়)।

সেই প্রতিক্রিয়া গুলো বিষয়গতভাবে শক্তিশালী অনুভূতি হিসাবে অনুভব করা যায়, যা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বস্তুর দিকে পরিচালিত হয় ও শরীরের শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত পরিবর্তনের জন্যে দায়ী থাকে।

আবেগের সংজ্ঞা:

আবেগ হল কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যক্তির দ্বারা অনুভব করা অনুভূতির প্রতিক্রিয়া।

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএ) মত অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যে ধরনের আবেগ অনুভব করেন; তা তার পরিস্থিতি দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে, যা সেই মানুষটির আবেগকে জাগিয়ে তোলে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একজন ব্যক্তি যখন কোনো ভালো খবর পায়, তখন সে খুশি বোধ করে; আবার কোনো খারাপ খবর পেলে সেই মানুষই আবার দুঃখ অনুভব করে।

আবেগের মূল উপাদান কি কি ?

আবেগগুলোকে ভালোভাবে বুঝতে গেলে, আমাদের প্রয়োজন আবেগের তিনটি মূল উপাদান সম্পর্কে জানা।

এই উপাদানগুলো মূলত তিন ধরণের হয়ে থাকে, যেগুলো হল –

১. ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা (Subjective Experience):

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে সংস্কৃতি বা পটভূমি নির্বিশেষে সারা বিশ্বের মানুষের বেশ কিছু স্বাভাবিক, মৌলিক ও সার্বজনীন আবেগ রয়েছে।

তাঁদের মতে, আবেগ অনুভব করা অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে।

যেমন- সব মানুষের জোকস শুনলে যে একই রকমের মাত্রায় হাসি পাবে, তা কিন্তু নয়।

সেক্ষেত্রে, প্রতিটা মানুষের হাসির প্রতিক্রিয়া আলাদা আলাদা হওয়াটাই বাঞ্চনীয়।

এছাড়াও, আমরা সবসময় প্রতিটা আবেগের বিশুদ্ধ রূপ অনুভব করতে পারি না।

আমাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বা পরিস্থিতি আমাদের মধ্যে মিশ্র আবেগ নিয়ে আসতে পারে।

যেমন- নতুন চাকরি শুরু করতে গেলে একই সাথে আপনি আনন্দ ও উদ্বেগ বোধ করতে পারেন।

আবার, সন্তান হওয়ার সময়ও মানুষ আনন্দ ও উদ্বেগ দুই-ই অনুভব করতে পারে।

তাই, আবেগগুলো একই সাথে ঘটতে পারে, অথবা আপনি একক সময়ে একক আবেগও অনুভব করতে পারেন।

২. শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া (Physiological Response):

আপনি যদি কখনও দুশ্চিন্তা থেকে মনের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব করেন বা ভয়ে আপনার হৃদয়ের গতি বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে, যে আপনার আবেগগুলোও শক্তিশালী শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র শরীরের অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন- মানুষের পাচন শক্তি ও রক্ত ​​প্রবাহ।

সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্র শরীরের ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী।

হুমকির সম্মুখীন হলে, এই প্রতিক্রিয়াগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনার শরীরকে বিপদ থেকে সরে যেতে বা হুমকির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত করে।

যদিও, প্রাথমিক গবেষণায় আবেগের শারীরবৃত্তীয় ব্যাপারগুলোর ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিক্রিয়াগুলোর উপর নজর দেওয়ার প্রবণতা ছিল।

তবে, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোয় আবেগগুলোর পরীক্ষায় মস্তিষ্কের ভূমিকাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

মস্তিষ্কের স্ক্যানগুলোতে দেখা গেছে, যে অ্যামিগডালা, লিম্বিক সিস্টেমের অংশ, বিশেষ করে আবেগ ও ভয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷

অ্যামিগডালা হল একটি ক্ষুদ্র, বাদাম-আকৃতির কাঠামো। যা খিদে ও তেষ্টার পাশাপাশি স্মৃতি আর আবেগের মতো প্রেরণাদায়ক অবস্থা তৈরী সাথে সরাসরি যুক্ত।

গবেষকরা মস্তিষ্কের ইমেজিং করে দেখিয়েছেন, যে মানুষকে হুমকিমূলক ছবি দেখানো হলে, তার অ্যামিগডালা সক্রিয় হয়ে যায়।

৩. আচরণগত প্রতিক্রিয়া (Behavioral Response):

আচরণগত প্রতিক্রিয়া হল এমন একটি উপাদান, যার সাথে আপনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

এই উপাদানের প্রধান বিষয় হল আবেগের প্রকৃত প্রকাশ।

আমরা আমাদের আশেপাশের লোকেদের সংবেদনশীল অভিব্যক্তি বুঝতে অনেকটা সময় ব্যয় করি।

এই অভিব্যক্তিগুলো সঠিকভাবে বোঝার জন্যে আমাদের যে ক্ষমতা রয়েছে, তা মনোবিজ্ঞানীরা আবেগগত বুদ্ধিমত্তা বলে দাবি করেন।

আর, এই অভিব্যক্তিগুলো আমাদের সামগ্রিক শরীরী ভাষার উপর একটা বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।

আবেগ কত প্রকার ও কি কি ?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের আবেগ আমাদের আচার-ব্যবহারকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

আমরা খুশি, রাগী, দুঃখী, বিরক্ত বা হতাশ কিনা, তার উপর নির্ভর করেই আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

সাধারণত, আমরা উদ্দীপিত আবেগের উপর ভিত্তি করে কার্যকলাপ বা শখ নির্বাচন করে থাকি।

তাই, আবেগগুলোকে ভালোভাবে বোঝা আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং স্থিতিশীলভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

দৈনিকভাবে মানুষ কত ধরণের আবেগ অনুভব করে সে সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। তবে, এখানে নিম্নলিখিত ছয়টি সর্বজনীন আবেগের ব্যাখ্যা করা হল-

১.আনন্দ:

অনেক লোক আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করে, কারণ এটি একটি আনন্দদায়ক আবেগ।

এই আবেগের ফলে লোকেরা আনন্দবোধ করে ও মনের দিক থেকে সন্তুষ্ট বোধ করে।

আনন্দ প্রায়শই হাসিমুখে বা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে কথা বলে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

২. দুঃখ:

আমরা মাঝে মাঝেই দুঃখ অনুভব করি।

দুঃখের প্রকাশ কেউ কেঁদে, কেউ চুপচাপ থেকে, কেউ বা অন্যদের থেকে দূরে সরে এসে দুঃখ প্রকাশ করে।

৩. ভয়:

ভয় আমাদের হৃদস্পন্দনকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বা, এমন সময় দুশ্চিন্তার কারণে আমাদের মস্তিষ্কে ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

এটি কোনো হুমকি বা অনুভূত হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (এমন কিছু প্রতিক্রিয়া, যা আমরা হুমকি মনে করলেও আসলে সেটা হুমকি নয়) হতে পারে।

অনেক মানুষ আবার এই অ্যাড্রেনালিন রাসের ব্যাপারটা উপভোগ করে, ঠিক যেমন ভীতিকর সিনেমা দেখে, স্কাইডাইভিং করে বা রোলার কোস্টারে চড়ে মানুষ একটা রোমাঞ্চ অনুভব করে থাকে।

৪. বিতৃষ্ণা:

বিতৃষ্ণা যেকোনো শারীরিক ব্যাপার দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে, যেমন- পচা খাবার, বা খারাপ স্বাস্থ্যবিধি।

অন্যদিকে, নৈতিক বিতৃষ্ণা তৈরী হতে পারে; যখন কোনো ব্যক্তিকে এমন কিছু কাজ করে, যা অপর মানুষটির কাছে অনৈতিক বা কুরুচিকর বলে মনে হয়।

৫. রাগ:

মানুষের মধ্যে রাগের প্রকাশ ঘটে ভ্রুকুটি করা, চিৎকার করা বা হিংস্র আচরণের মতো মুখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে।

রাগ অনেক সময় আপনার জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করতে পারে, কিন্তু একজন ব্যক্তির রাগ প্রকাশের জন্যে একটি ভালো জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, যাতে এই ক্ষতিকর আবেগটি তার বা অন্যের কোনো ক্ষতিসাধন না করে।

৬. বিস্ময়:

বিস্ময় কখনও কখনও আনন্দদায়ক বা অপ্রীতিকরও হতে পারে।

আপনি অবাক হয়ে গেলে আপনার মুখ হাঁ হয়ে যেতে পারে বা আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যেতে পারে৷

এক্ষেত্রে, ভয়ের মতো বিস্ময়ের সময়ও মানুষের মস্তিষ্কে ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷

আবেগ ও অনুভূতির মধ্যে পার্থক্য কি ?

অনেকেই মনে করেন, যে “অনুভূতি” ও “আবেগ” শব্দগুলো হল একে অপরের প্রতিশব্দ।

কিন্তু, আসলেই এই দুটো শব্দ কিছুতেই একে অপরের স্থানে ব্যবহার করা যায় না।

যদিও, তাদের উপাদানগুলো এক হলেও, অনুভূতি এবং আবেগের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে-

১. অনুভূতি:

মানসিক অভিজ্ঞতা ও শারীরিক সংবেদনশীলতা (যেমন ক্ষুধা, ব্যথা, তেষ্টা ও ইত্যাদি) দুই-ই মানুষের মনে অনুভূতির জন্ম দিতে পারে।

অনুভূতি আসলে হল এক ধরণের সচেতন অভিজ্ঞতা।

যদিও, প্রতিটি সচেতন অভিজ্ঞতা, যেমন দেখা বা বিশ্বাস করা, সবকিছুই অনুভূতির অংশ হতে পারে।

২. আবেগ:

একটি আবেগ কেবল তখনই অনুভব করা যায়, যখন আবেগগত অভিজ্ঞতা সেই আবেগের জন্ম দেয়।

যদিও আবেগগুলো আমাদের চিন্তা, বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা এবং কর্মের দ্বারা তৈরী হতে পারে।

আমাদের মধ্যে আবেগ সচেতন মনে নয় বরং অচেতন মনেই প্রকাশিত হয়।

এই আবেগগুলো বর্ধিত সাইকোথেরাপির মাধ্যমে মনের সচেতন অবস্থায় নিয়ে আসা যেতে পারে।

অনুভূতি ও আবেগের মধ্যেকার একটি মৌলিক পার্থক্য হল, যে অনুভূতিগুলো সচেতনভাবে অনুভব করা সম্ভব।

যেখানে, আবেগগুলো সচেতনভাবে বা অবচেতনভাবে প্রকাশ পেতে পারে।

অনেক মানুষই বছরের পর বছর এমনিক সারা জীবনেও তাদের আবেগের গভীরতা বুঝতে না পেরেই, সারাজীবন কাটিয়ে দেয়।

আবেগ কাকে বলে (What Is Emotion in Bangla) নিয়ে লেখা আমাদের এই আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button