Technology

যেসব উপায়ে পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করতে পারবেন!

যেসব উপায়ে পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করতে পারবেন!

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ কি তা আমরা সবাই জানি। আমরা প্রত্যেকদিন ব্যবহারও করছি। কিন্তু সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপগুলো আমরা অ্যান্ড্রয়েডস্মার্টফোন বা অ্যান্ড্রয়েডট্যাবলেট বা অন্য কোনো অ্যান্ড্রয়েডডিভাইস ছাড়া রান করতে পারিনা। কিন্তু অনেকসময়ই আমাদের উইন্ডোজ পিসিতে অ্যান্ড্রয়েডঅ্যাপ রান করার দরকার পড়ে। পিসিতে অ্যান্ড্রয়েডঅ্যাপ রান করার কারণ একেকজনের জন্য একেকরকম হতে পারে, তবে মাঝে মাঝেই পিসিতে যে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করার দরকার হয় তা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না।

পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করার বিভিন্ন ধরণের ওয়ে আছে। কয়েকটি অনেক বেশি রিলায়েবল এবং কয়েকটি মোটামোটি কাজ চালানোর মতো। আজকে এমন কয়েকটি মেথড নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি উইন্ডোজ পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করতে পারবেন। হতে পারে এর মধ্যে কয়েকটি মেথড আপনি অনেক আগে থেকেই জানেন এবং ব্যবহারও করছেন, তবে যারা সবগুলো জানেন না, তাদের জন্যই মূলত আজকের আর্টিকেলটি।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Bluestacks

পিসিতে অ্যান্ড্রয়েডঅ্যাপ রান করার এটা সবথেকে জনপ্রিয় মেথড। আপনি যদি পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করার মেথড নিয়ে অনলাইনে সার্চ করেন তাহলে আপনি সবার প্রথমে এই টুলটির নামই জানতে পারবেন। আর এর আরেকটা কারণ হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করার জন্য এটা সবথেকে পুরাতন মেথড। এভাবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করার জন্য আপনাকে শুধুমাত্র Bluestacks ডাউনলোড করতে হবে এবং পিসিতে ইনস্টল করতে হবে অন্যান্য ট্রেডিশনাল উইন্ডোজ প্রোগ্রামের মতো করেই। এরপর আপনাকে জাস্ট একটি ভার্চুয়াল অ্যান্ড্রয়েড এনভার্নমেন্ট এর মতো দেওয়া হবে যেখানে আপনি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ এবং অ্যান্ড্রয়েড গেমস ইনস্টল করতে পারবেন এবং রান করতে পারবেন।

আপনার পিসি যদি মোটামোটি পাওয়ারফুল পিসি হয়, তাহলে আপনি Bluestacks থেকে ডিসেন্ট থেকে মোটামোটি ভালো পারফর্মেন্স এক্সপেক্ট করতে পারেন। যারা এখন থেকে ২-৩ বছর আগে Bluestacks ব্যবহার করেছেন, তারা এখন আরেকবার Bluestacks এর লেটেস্ট ভার্সন ডাউনলোড করে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটি পূর্বের তুলনায় অনেক অনেক বেশি স্ট্যাবল এবং ফিচার প্যাকড। এছাড়া এখন এখানে নিজের একটি গেমস স্টোরসহ সম্পূর্ণ একটি অ্যান্ড্রয়েড গেমিং প্লাটফর্ম এর মতো ফিচার আনা হয়েছে। এছাড়া এটার পারফর্মেন্সও অন্যান্য থার্ড পার্টি অ্যান্ড্রয়েড ইমুলেটরের থেকে ভালো। এছাড়াও এখন Bluestacks এর বিটা ভার্সনে অ্যান্ড্রয়েড৭.০ (নুগাট) দেওয়া হয়েছে।

Android Studio

লিস্টের মধ্যে শুধুমাত্র এটাই হচ্ছে পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করার জন্য গুগলের অফিশিয়াল মেথড। অন্য যেসব মেথড এখানে বলেছি বা আপনি জানেন সেগুলো সবই শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্টের একেকটি ভিন্ন ভিন্ন ইমপ্লিমেন্টেশন যেটা থার্ড পার্টি ডেভেলপাররা নিজের ইচ্ছামতো কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু Android Studio হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপ করার জন্য গুগলের তৈরী করা নিজের একটি প্রোগ্রাম ঠিক যেমন মাইক্রোসফট ভিজুয়াল স্টুডিও। কিন্তু Android Studio হচ্ছে শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েডঅ্যাপ ডেভেলপ করার জন্য। কিন্তু এই প্রোগ্রাটির সাহায্যে আপনি শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপই নয়, বরং যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ এর APK ফাইল রানও করতে পারবেন।

এখানে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করার ক্ষেত্রে আপনি কিছু এডভান্টেজ পাবেন যেগুলো অন্যান্য ইমুলেটরে পাবেন না। যেমন, আপনি একটি ভার্চুয়াল অ্যান্ড্রয়েড ফোন তৈরী করে সেখানে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি রান করতে পারবেন। এখানে আপনি প্রায় মডার্ন অনেক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ভার্চুয়াল ইমুলেটর পাবেন। এছাড়া আপনি নিজের ইচ্ছামতো সব অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে অ্যাপগুলো রান করে টেস্ট করতে পারবেন এবং আপনি ভার্চুয়াল ডিভাইসে ঠিক কি পরিমান রিসোর্স দিতে চাচ্ছেন, তাও নিজের ইচ্ছামতো সিলেক্ট করে নিতে পারবেন। আর এই মেথডে যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করলে আপনি এই লিস্টের অন্যান্য মেথডের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো পারফর্মেন্স পাবেন এবং ওভারঅল অনেক বেশি রেস্পন্সিভ এক্সপেরিয়েন্স পাবেন।

Remix OS and Player

এই লিস্টের মধ্যে আমার পার্সোনাল ফেভারিট মেথড হচ্ছে এই রিমিক্স ওএস। এটি শুধুমাত্র একটি অ্যান্ড্রয়েড ইমুলেটর নয়, বরং এটি সম্পূর্ণ একটি অপারেটিং সিস্টেমের মতো কাজ করে। আমরা যেমন পিসিতে উইন্ডোজ ইনস্টল করি, লিনাক্স ইনস্টল করি, ঠিক তেমনি এটিও একটি অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে পিসিতে ইনস্টল করতে পারবেন। লিস্টের অন্যান্য মেথডগুলোর সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে রিমিক্স ওএস আপনাকে প্রায় ডেস্কটপ ইউজ করার মতো এক্সপেরিয়েন্স দেবে। ডেস্কটপের মতো টাস্কবার, উইন্ডো সাপোর্ট, অ্যাপ রিসাইজিং, ইথারনেট সাপোর্ট, আকর্ষণীয় এবং মিনিমাল ইউজার ইন্টারফেস ইত্যাদি অনেক ফিচারস আছে এখানে যেগুলো আপনি এই লিস্টের অন্যান্য ইমুলেটরে পাবেন না। আপনার যদি একটি সেকেন্ডারি ল্যাপটপ থাকে যেটিতে উইন্ডোজ ভালোভাবে পারফর্ম করেনা, তাহলে আপনি চাইলে ওই ডিভাইসে রিমিক্স ওএস ইনস্টল করে ফুল ফিচারড একটি অপারেটিং সিস্টেমের মতোই ব্যবহার করতে পারবেন চাইলে। রিমিক্স ওএসের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েডকে ডেস্কটপের জন্য অপ্টিমাইজ করা।

আপনি চাইলে রিমিক্স ওএস আপনার পিসির প্রাইমারি ওএস হিসেবে ইনস্টল করতে পারবেন এবং চাইলে ডুয়াল বুট হিসেবেও ইনস্টল করতে পারবেন। এছাড়া চাইলে ভার্চুয়াল বক্সেও ইনস্টল করতে পারবেন এবং যদি আপনার উইন্ডোজের মধ্যেই রান করতে চান, তাহলে আপনি রিমিক্স ওএসের একটি কাস্টমাইজড ভার্সন, Remix OS Player ইনস্টল করতে পারেন যেটি আপনাকে অন্যান্য ইমুলেটরের মতো একটি আলাদা প্রোগ্রাম হয়ে অ্যান্ড্রয়েডএক্সপেরিয়েন্স দেবে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও রিমিক্স ওএস এবং রিমিক্স ওএস প্লেয়ারের ইউজার ইন্টারফেস ওবং ফিচারস একই থাকবে।

তবে রিমিক্স ওএসের ইনস্টলেশন অন্যগুলোর তুলনায় একটু বেশি ঝামেলাপূর্ণ। আপনারা চাইলে রিমিক্স ওএসের ফুল ইনস্টলেশন টিউটোরিয়াল, সেটাপ এবং সকল ফিচারস নিয়ে আরেকটি ডেডিকেটেড আর্টিকেল লিখবো যদি কেউ ইন্টারেস্টেড হন। যদি চান, তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Android X86 Project

এটিও বলতে পারেন রিমিক্স ওএসের মতো একটি অপারেটিং সিস্টেম যেটি আপনি আপনার পিসির প্রাইমারি অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আপনি ইনস্টল করতে পারবেন এবং চাইলে ডুয়াল বুটেও ইনস্টল করতে পারবেন এবং চাইলে আপনি উইন্ডোজের মধ্যেই ভার্চুয়াল বক্সেও রান করতে পারবেন এটি। তবে রিমিক্স ওএসের সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে, রিমিক্স ওএস অ্যান্ড্রয়েডকে  ডেস্কটপের জন্য অপ্টিমাইজ করে রান করে, তবে এই মেথডে আপনি যা পাবেন তা হচ্ছে একেবারেই স্টক ক্লিন অ্যান্ড্রয়েড, একেবারে স্টক অ্যান্ড্রয়েড চালিত ট্যাবলেটের মতো। কিন্তু আপনি এটিকে আপনার মাউস কার্সর এবং কীবোর্ড ব্যবহার করেই অপারেট করতে পারবেন। এটিকে আপনার পিসিতে বা ভার্চুয়াল বক্সে ইনস্টল করতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র এর ওয়েবসাইট থেকে ISO ফাইল ডাউনলোড করে ইউএসবি ড্রাইভে বার্ন করতে হবে এবং পিসির বুট মেনু থেকে লাইভ রান করতে হবে অথবা ডুয়াল বুটে ইনস্টল করতে হবে। অথবা ISO ফাইল ব্যবহার করে সরাসরি  ভার্চুয়াল বক্সে ইনস্টল করতে হবে। তবে আমার মতে, Android X86 এর এই বিল্ডগুলো খুব বেশি স্ট্যাবল না। ইউজ করার সময় মাঝে মাঝেই আপনি হালকা কিছু বাগস, গ্লিচ এবং মাঝে মাঝে ফ্রিজ হয়ে যাওয়ার মতো প্রবলেমে পড়তে পারেন। তাই আমি সাজেস্ট করবো লিস্টের অন্যগুলো ট্রাই না করে এটির কথা ভাববেন না।

তো এই ছিল কয়েকটি মেথড যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি উইন্ডোজ পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করতে পারবেন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button