Technology

ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট কি? ওয়াইম্যাক্স কিভাবে কাজ করে?

ওয়াইম্যাক্স সম্পর্কে কতোটুকু জানেন? — বিস্তারিত!

আজকের দিনে ইন্টারনেট কানেকশন পেতে আপনার মাথায় সবার আগে কি আসে? অবশ্যই প্রথমত ব্রডব্যান্ড কানেকশন—যেখানে আইএসপি থেকে ইথারনেট ক্যাবল, ডিএসএল, বা অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল দ্বারা লাইন টেনে ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত হয়তো আপনি মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট মানে ৩জি বা ৪জি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, বিশেষ এই ইন্টারনেট মোবাইলের জন্য, কিন্তু হটস্পট বা মডেম দিয়ে হয়তো পিসিতে ব্যবহার করেন। অথবা আপনি হয়তো ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, বাড়িতে লোকাল ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন যেখানে ব্রডব্যান্ড থেকে বা মোবাইল ব্রডব্যান্ড থেকে ওয়াইফাই হটস্পট তৈরি করেছেন। তাছাড়া আজকের দিনে কফিশপ, রাস্তাঘাট, স্কুল/কলেজ সব জায়গাতেই ওয়াইফাই হটস্পট দেখতে পাওয়া যায়। যদি আপনি এখনো গ্রামে থাকেন, তাহলে হয় মোবাইল ব্রডব্যান্ড বা সেই পুরাতন আমলের ডায়ালআপ বা ২জি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। — আর এখানেই তো সমস্যার শুরু, ব্রডব্যান্ড অনেক দামী হয়ে থাকে, আর গ্রামের এলাকা গুলোতে পাওয়া যায় না, সাথে ওয়াইফাই হটস্পট রেঞ্জ একেবারেই নগণ্য হয়ে থাকে। সৌভাগ্যবশত আমাদের কাছে আরেকটি টেকনোলজি রয়েছে, ওয়াইম্যাক্স (WiMAX); যেটা ওয়াইফাই এর চেয়ে অনেকবেশি রেঞ্জ দিতে সক্ষম এবং সাথে ব্রডব্যান্ডের মতো হাই ব্যান্ডউইথ স্পীড প্রদান করতেও সক্ষম।

এই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করেছি, ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট কি? ওয়াইম্যাক্স কিভাবে কাজ করে? এবং এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে। তো আপনার প্রত্যাশার সবকিছুই পেয়ে যাবেন এই আর্টিকেল থেকে!

এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট

ওয়াইম্যাক্স আসলে “ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইনটেরোপিরাবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েভ অ্যাক্সেস” (Worldwide Interoperability for Microwave Access) এর সংক্ষিপ্ত নাম — মূলত ওয়াইফাই আর ওয়াইম্যাক্স একই টেকনোলজির উপর পরিচালিত, কিন্তু এখানে ওয়াইফাই থেকে আরো বেটার ব্যান্ডউইথ স্পীড, বেশি দূরত্ব কভারেজ, এবং বেশি ইউজার সাপোর্ট পাওয়া যায়। মোবাইল এবং ফিক্সড ওয়্যারলেস কানেকশন উভয় ক্ষেত্রেই এই টেকনোলজি ব্যবহার করা যায়। যদি বড় লেভেলে ভাবা হয়, যেমন সম্পূর্ণ শহরে বা সম্পূর্ণ এলাকা জুড়ে ইন্টারনেট কানেকশন সেক্ষেত্রে এটি অনেক সস্তা হিসেবে প্রমানিত হতে পারে, কিন্তু পার্সোনাল ইউজের ক্ষেত্রে এটি সস্তা নয়, মানে আপনি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাইলে এতে অনেক টাকা খচর হয়ে যাবে, আর এই জন্যই এটি ওয়াইফাইকে রিপ্লেস করে না।

তবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল, বা ডিএসএল থেকে এটি অনেক সস্তা, সাথে হাই ব্যান্ডউইথ রেট প্রদান করতে সক্ষম। এই কমিউনিকেশন সিস্টেমে শুধু ইন্টারনেট নয়, ভয়েস কল, এসএমএস সেন্ড/রিসিভ মানে সেল অপারেটরে যা থাকে, সবই ব্যবহার করা যায়। এজন্য অনেক দেশে ৪জি’তে এলটিই প্রযুক্তি না দিয়ে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৪জি দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও বাংলালায়ন “ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি” ব্যবহার করে অনেকদিন যাবত ৪জি ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে আসছে। সত্যি বলতে এটি অনেক জনপ্রিয় একটি ওয়্যারলেস প্রযুক্তি, যেটা বহু দেশেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিচের প্যারাগ্রাফ থেকে জানবো, এই প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে বা কিভাবে এটি ওয়াইফাই থেকে আলাদা হয়।

ওয়াইম্যাক্স কিভাবে কাজ করে?

এই প্রযুক্তি মূলত দুইটি অংশের উপর নির্ভরশীলঃ প্রথমত একটি টাওয়ার, যেটাকে সেলফোন টাওয়ারের সাথে তুলনা করতে পারেন এবং দ্বিতীয়ত এটি রিসিভার, যেটা আপনার ফোন বা পিসিতে বিল্ডইনভাবে থাকে অথবা মডেমে থাকে কিংবা আলাদা রিসিভার ডিভাইজ আইএসপি থেকে প্রদান করে। টাওয়ারটি মূলত বিশাল এরিয়া জুড়ে সিগন্যাল ছুঁড়ে মারে এবং মোটামুটি ৩,০০০ বর্গ মাইল (~৮০০০ বর্গ কিলোমিটার) পর্যন্ত কভারেজ প্রদান করতে পারে (এই আর্টিকেল থেকে জানুন, এন্টেনা এবং ট্রান্সমিটার কিভাবে কাজ করে?)।

ওয়াইম্যাক্স টাওয়ার ষ্টেশনের সাথে সরাসরি হাই ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট কানেক্টেড থাকে, হতে পারে কোন তারের মাধ্যমে টাওয়ারে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস দেওয়া থাকে, আর ঐ ইন্টারনেটই টাওয়ার জাস্ট WiMAX টেকনোলজি ব্যবহার করে আপনার ফোন বা রাউটার পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়। আবার একটি টাওয়ার আরেকটি টাওয়ারের সাথে মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক ব্যবহার করে কানেক্টেড থাকে, যেটাকে ব্যাকহোল (Backhaul) বলা হয়। এই টেকনোলজিতে ব্যবহার করা ট্রান্সমিটার অনেক বেশি দক্ষ হয়ে থাকে ফলে অনেক পরিমানে ডাটা অনেক কম এররে সেন্ড করা সম্ভব হয়। এর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অনেক বেশি হয়ে থাকে, মোটামুটি ৬৬ গিগাহার্জ পর্যন্ত ফ্রিকুয়েন্সি পাওয়া যেতে পারে, তাই অত্যন্ত হাই ব্যান্ডউইথ রেট প্রদান করতে সক্ষম হয়।

ওয়াইফাই ব্যান্ডউইথ রেট অনেক ভালো দিলেও, রেঞ্জের ক্ষেত্রে কিন্তু অনেক কম, যেখানে ওয়াইফাই কেবল ৪-৬ মাইল ব্যাসার্ধ কভারেজ দিতে সক্ষম, সেখানে WiMAX ট্রান্সমিটার ৩০ মাইল ব্যাসার্ধ কভারেজ দিতে সক্ষম। ওয়াইফাই আর ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট টেকনোলজি একই নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত, এটি একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটি কম্পিউটারে ডাটা রেডিও সিগন্যালের সাহায্যে সেন্ড করে থাকে। মানে টাওয়ারে বা ষ্টেশনে একটি কম্পিউটার থাকে যেটা ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড হয়, তারপরে যখন আপনার কম্পিউটার সিগন্যালের আওতাভুক্ত হয়, আপনার কম্পিউটার স্টেশন কম্পিউটারকে রিকোয়েস্ট করে, এভাবেই ইন্টারনেট কানেকশন সম্পূর্ণ হয় (এই আর্টিকেল থেকে পড়ুন, ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?)। ওয়াইফাই এর মতো এখানেও এনক্রিপশন কী প্রয়োজনীয় হয়, যাতে কেউ অঝথা কানেক্ট করে ইন্টারনেট চুরি না করতে পারে। ওয়াইফাই কানেকশনে যেখানে ভালো সিগন্যাল পেলে ৫৪ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত ডাটা ট্র্যান্সফার সম্ভব হয় সেখানে ওয়াইম্যাক্স দ্বারা ৭০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড পেতে পারেন, সাথে ইউজার ভাগ হয়ে গেলেও প্রত্যেকটি বাড়িতে বা ইউজাদের একই স্পীড প্রদান করতে সক্ষম হবে, কিন্তু ওয়াইফাই এ ইউজার বেড়ে গেলে স্পীড ভাগ হয়ে যায়।

ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা

সত্যি এই টেকনোলজির কিছু ভালো সুবিধা রয়েছে, আর এই জন্যই এটি এখনো এতো জনপ্রিয়। WiMAX লো কোস্ট এবং ফ্লেক্সিবল তাই গ্রামীণ এলাকা গুলোতে তার দিয়ে অনেক টাকা খরচ করে ইন্টারনেট না ছড়িয়ে WiMAX সহজ পদ্ধতি। এই টেকনোলজিতে পুরা শহর বা পুরা এলাকা বা সম্পূর্ণ দেশই নেটওয়ার্ক কভারেজ দেওয়া সম্ভব। এটি শুধু মাত্র ফিক্সড কানেকশন নয়, সাবস্ক্রাইবার রুপেও এটি বিতরন করা সম্ভব। মোবাইল ডিভাইজের কল, ইন্টারনেট, টেক্সট ম্যাসেজ ইত্যাদি সব হ্যান্ডেল করা যেতে পারে। তাছাড়া ইউএসবি মডেম বা WiMAX USB dongles ব্যবহার করে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটারে সহজেই ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করা সম্ভব।

যদি আপনার ল্যাপটপ বা ফোনে বিল্ডইন রিসিভার থাকে, সেক্ষেত্রে আলাদা ইউএসবি ডিভাইজ লাগানোরও প্রয়োজনীয়তা পড়বে না। সাথে ফোনে ভয়েস কল, ভিডিও কনফারেন্স, এবং টেলিফোন অ্যাক্সেসও সম্ভব এই টেকনোলজিতে। দুরের কানেকশনের ক্ষেত্রে ৩০-৪০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত আরামে স্পীড উঠে যাবে, তবে ফিক্সড কানেকশনে আরো স্পীড পাওয়া সম্ভব, মোটামুটি ১ গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ ট্র্যান্সফার করা সম্ভব। মানে এই প্রযুক্তিতে একসাথে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড, হাই ব্যান্ডউইথ রেট, মোবাইল ৪জি নেটওয়ার্ক, এবং দুরের লোকেশনেও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সেন্ড করা সম্ভব হয়।

কিছু অসুবিধা

প্রত্যেকটি প্রযুক্তিরই কিছু না কিছু অসুবিধা থাকবেই, যদিও এক্ষেত্রে WiMAX সুবিধাই বেশি প্রদান করে। যেহেতু এটি ওয়্যারলেস টেকনোলোজির উপর কাজ করে, তাই সোর্স থেকে যতো দূরত্বে চলে যাওয়া হবে, ব্যান্ডউইথ স্পীড ততো ড্রপ করতে থাকবে। ধরুন ভালো সিগন্যালে আপনি স্পীড পাচ্ছেন ৩০ মেগাবিট/সেকেন্ড কিন্তু দূরে চলে যেতে যেতে সেই স্পীড ১ মেগাবিট/সেকেন্ড হয়ে যেতে পারে, আবার একসময় কোন আর ইন্টারনেট রেসপন্সই থাকবে না। আমি জানি, স্লো ইন্টারনেট অনেক বেশি ব্যাথাদায়ক, এর চেয়ে ইন্টারনেট না থাকায় ভালো। তাই আপনার বাড়ি যদি মেইন টাওয়ার থেকে বেশ কিছু দূরে হয় সেক্ষেত্রে WiMAX নেবেন কিনা ভেবে দেখতে হবে।

যদিও একটি সম্পূর্ণ টাওয়ার অনেক ভালো পরিমানে ইউজার হ্যান্ডেল করতে পারে, কিন্তু যদি একটি সিঙ্গেল রাউটার থেকে অনেক ইউজার কানেক্টেড হোন, সেক্ষেত্রে স্পীড অনেক কমে যাবে। ওয়াইফাই অবশ্যই WiMAX থেকে অনেকবেশি জনপ্রিয় আর এজন্য প্রায় প্রত্যেকটি মোবাইল ডিভাইজ এবং ল্যাপটপে ডিফল্ট ওয়াইফাই সাপোর্ট থাকে, কিন্তু ওয়াইম্যাক্স ততোটা জনপ্রিয় না হওয়ার জন্য আলাদা রাউটার বা ডঙ্গল প্রয়োজনীয় হয়।


যদি এই প্রযুক্তি নিয়ে মন্তব্য করি, সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটি ভালো একটি প্রযুক্তি যেটা হয়তো ওয়াইফাইকে রিপ্লেস করতে পাড়বে না, কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় অনেক কম খরচে হাই স্পীড ইন্টারনেট পৌছাতে পাড়বে। আর এর হাই ব্যান্ডউইথ রেট দেখে নিশ্চয় আপনিও অনেক চমৎকৃত হয়েছেন। বর্তমানে একটি গ্রুপ WiMAX Forum এই প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রন করে, যেকোনো ডিভাইজ সার্টিফাইড করে এবং এই টেকনোলজি IEEE 802.16 নির্ভর। যাই হোক, আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক সাহায্যপূর্ণ ছিল, যেকোনো প্রশ্নে আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button