Technology

ডিভাইজ ড্রাইভার কি? কেন এটি এতো গুরুত্বপূর্ণ

ডিভাইজ ড্রাইভার কিভাবে কাজ করে?

১৯৮০ দিকের কম্পিউটার গুলোর কথা আলাদা ছিল। তখন আলাদা কম্পিউটারে আলাদা আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হতো এবং নির্দিষ্ট মডেলের উপর টার্গেট করে সফটওয়্যার তৈরি করা হতো। হার্ডওয়্যারের বেলায়ও ঠিক একই, কোন নির্দিষ্ট কম্পিউটারের জন্য বিশেষ টার্গেট করে এবং শুধু ঐ মেশিনের জন্যই কোন ডিভাইজ উন্নতি করা হতো। কিন্তু বর্তমানের ব্যাপার আলাদা। অগুনতি কম্পিউটার ব্র্যান্ড রয়েছে, হাজারো টাইপের ডিভাইজ রয়েছে এবং একসাথে শতাধিক অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। আর বর্তমানে অবশ্যই কোন ডিভাইজকে শুধু নির্দিষ্ট কোন কম্পিউটার মেশিন বা নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম টার্গেট করে তৈরি করা হয় না। ডিভাইজ প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা চায়, তাদের ডিভাইজ যেকোনো টাইপের কম্পিউটার এমনকি স্মার্টফোনেও পর্যন্ত সমর্থন করে।

এখানেই চলে আসে সমস্যার আসল ব্যাপার। যদিও আজকের কম্পিউটার গুলো প্রায় যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম ধারণ করতে পারে, কিন্তু আলাদা অপারেটিং সিস্টেম গুলো আলাদা আলাদা কোডে বা আলাদা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের উপর কাজ করে। সাথে প্রত্যেকটি ডিভাইজের কার্যকলাপ বা তৈরি করার উদ্দেশ্য কিন্তু এক থাকে না। কোন একই ডিভাইজ, যেমন প্রিন্টার, অবশ্যই আলদা আলাদা কোম্পানির প্রিন্টারের আলাদা আলাদা ফিচার রয়েছে এবং এরা আলাদা স্টাইলে অপারেশন পারফর্ম করে। তো কোন অপারেটিং সিস্টেমে তো প্রত্যেকটি প্রিন্টার কিভাবে কাজ করবে, তার তথ্য আগে থেকে ঢুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আর এখানেই চলে আসে ডিভাইজ ড্রাইভার টার্মটি—যেটি কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমকে বুঝিয়ে দেয় ঐ হার্ডওয়্যারটির সাথে কম্পিউটার কিভাবে যোগাযোগ করবে এবং ঐ হার্ডওয়্যারটি কি কাজ করার ক্ষমতা রাখে।

আজকের এই আর্টিকেলে আমি ডিভাইজ ড্রাইভার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি, এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কেও বিস্তারিত জানবো। তো দেরি কীসের?


ডিভাইজ ড্রাইভার

এক কথায় বলতে গেলে, ডিভাইজ ড্রাইভার মূলত একটি সফটওয়্যার, যেটার ঐ ডিভাইজটির সাথেই আসে। আপনাকে ঐ সফটওয়্যারটি কম্পিউটারে ইন্সটল করতে হয়, তারপরে কম্পিউটার ঐ ফিজিক্যাল ডিভাইজটিকে কাজ লাগাতে আরম্ভ করে। ড্রাইভার সফটওয়্যারটির মধ্যে বর্ণিত থাকে, কিভাবে ঐ ডিভাইজ হার্ডওয়্যারের সাথে কম্পিউটার যোগাযোগ করবে এবং কিভাবে ঐ ডিভাইজ পারফর্ম করবে। এখন যদি ঐ ডিভাইজটি আলাদা আলাদা অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি করা হয়, তাহলে অবশ্যই সকল অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তার ডিভাইজ ড্রাইভার সফটওয়্যার থাকবে। আলাদা অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সফটওয়্যার গুলো আলাদা কোডে লেখা থাকে, কিন্তু এর আদেশ গুলো একই থাকে।

কম্পিউটারের সাথে লাগানো প্রত্যেকটি ডিভাইজের জন্য ড্রাইভার সফটওয়্যার প্রয়োজনীয় হয়। যেমন- প্রিন্টার, সাউন্ড কার্ড, মাউস, কী-বোর্ড, গ্রাফিক্স কার্ড – ইত্যাদি। তবে এখনকার অনেক মডার্ন অপারেটিং সিস্টেমে বিল্ডইন ভাবে অনেক ডিভাইজ ড্রাইভার আগে থেকেই ইন্সটল থাকে। কিন্তু তারপরেও আলাদা ডিভাইজ গুলোর জন্য ড্রাইভার সফটওয়্যার প্রয়োজনীয় হয়।

উদাহরণ স্বরূপ যদি সাউন্ড কার্ডের কথা চিন্তা করা হয়, তো এখানে দুইটি ব্যাপার থাকে। প্রথম অবশ্যই আপনার কম্পিউটার সেভ থাকা যেকোনো অডিও ফাইল ডিজিটাল ফরম্যাটের হয়ে থাকে। কিন্তু যখন সেটা স্পীকার বা আপনার হেডফোনে বাজানো হয়, সেটা প্রথমে ডিজিটাল থেকে অ্যানালগে কনভার্ট হয় তারপরে অ্যানালগ সিগন্যাল আপনার স্পীকারে সাউন্ডের সৃষ্টি করে। এখন অবশ্যই এক্ষেত্রে সাউন্ড ড্রাইভার সফটওয়্যারটিতে নির্দেশ থাকতে হবে, কিভাবে ডিজিটাল ফাইল থেকে অর্থাৎ জিরো বা ওয়ান থেকে অ্যানালগ সিগন্যাল তৈরি করা হবে এবং সাউন্ড কার্ড সেটাকে আউটপুট রুপে দেখাবে। একইভাবে ভিডিও কার্ড, মাউস, কী-বোর্ড ইত্যাদির ক্ষেত্রে একই জিনিষ ঘটে।

ডিভাইজ ড্রাইভার কিভাবে কাজ করে?

চলুন সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে একটি সহজ উদারহনের সাহায্য নেওয়া যাক। ধরুন ডিভাইজ ড্রাইভার হচ্ছে সফটওয়্যার এবং কোন নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যারের মধ্যে ট্র্যান্সলেটর স্বরূপ। দেখুন কোন সফটওয়্যার তৈরি করে আলাদা কোম্পানি এবং অবশ্যই ডিভাইজ আরেক কোম্পানি তৈরি করে থাকে। যেমন- ফটোশপ তৈরি করেছে অ্যাডবি কোম্পানি, কিন্তু হতে পারে আপনার প্রিন্টার এইচপি তৈরি করেছে। এবার মনে করুণ ফটোশপ চাইনিজ ভাষায় কথা বলে এবং প্রিন্টার বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাহলে কিভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে? ঠিক এই জায়গায় ডিভাইজ ড্রাইভার কাজটি করে দেয়। সে ফটোশপের কথা প্রিন্টারকে বুঝায় এবং প্রিন্টার কিভাবে কাজ করবে সেটা ফটোশপকে বুঝিয়ে দেয়। কি এখন বিষয়টি পরিষ্কার তো?

প্রথমত, সফটওয়্যার প্রোগ্রামটি ড্রাইভারের কাছে তথ্য পাঠায়, তার কাজ করতে কি ধরনের হার্ডওয়্যার অ্যাক্সেস প্রয়োজন এবং সে কিভাবে তা অ্যাক্সেস পাবে। ড্রাইভার প্রোগ্রামকে হার্ডওয়্যার কিভাবে কাজ করে তার অনুসারে প্রোগ্রাম করা থাকে, তাই ড্রাইভার সহজেই এই বিষয়টি হার্ডওয়্যারের উপর চাপিয়ে দিতে পারে। যদি সফটওয়্যার ড্রাইভার না থাকতো, অবশ্যই সফটওয়্যারের মধ্যে বিল্ডইনভাবে প্রত্যেকটি ডিভাইজের কাজ করার বা যোগাযোগ করার ফর্মুলা ইন্সটল করা থাকতে হতো, না হলে কখনোই সফটওয়্যার ঐ হার্ডওয়্যারের সাথে যোগাযোগ করতে পারতো না।

আর এটা সকলের জন্যই ভালো কথা যে, যেকোনো সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের মধ্যে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অসংখ্য ডিভাইজ ড্রাইভার রয়েছে, তাই আপনার কম্পিউটার প্রায় যেকোনো ডিভাইজকেই কাজে লাগাতে পারেন। বর্তমানে উইন্ডোজ এবং আরো অপারেটিং সিস্টেম, ডিসপ্লে ড্রাইভার, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, সাউন্ড ইত্যাদি আলাদা ড্রাইভার সফটওয়্যার ইন্সটল না করেই কাজ করতে পারে।

ডিভাইজ ড্রাইভার ম্যানেজমেন্ট

আগেই বলছি, আজের মডার্ন অপারেটিং সিস্টেম গুলো নিজে থেকেই অনেক ডিভাইজ ড্রাইভার স্বয়ংক্রিয় সমর্থন করে। যদি কথা বলি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে, আপনাকে বেশিরভাগ ড্রাইভার ইন্সটল করারই প্রয়োজন পড়বে না। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ আপডেট ফিচার ব্যবহার করে আপনার গ্রাফিক্স ড্রাইভার, সাউন্ড ড্রাইভার, ডিসপ্লে ড্রাইভার, মাউস, কী-বোর্ড ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্সটল করে। যদি আপনি সত্যিই অনেক পুরাতন কোন ডিভাইজ ব্যবহার করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে সিডি বা ডিভিডি থেকে ড্রাইভার ইন্সটল করতে হতে পারে। সাথে যেকোনো ডিভাইজ ড্রাইভার সর্বদা ঐ ডিভাইজ প্রস্তুতকারী কোম্পানির ওয়েবসাইটেই পাওয়া যায়।

অবশ্যই ঐ ডিভাইজ ড্রাইভারটিকে লেটেস্ট ভার্সন অপারেটিং সিস্টেম সমর্থন করতে হবে, না হলে হার্ডওয়্যারের সাথে সফটওয়্যার যোগাযোগ করতে সমস্যা হতে পারে। বেশিরভাগ সময় ডিভাইজের বা হার্ডওয়্যারের কোন সমস্যা থাকে না, কিন্তু ড্রাইভার অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ঠিক মতো কাজ না করতে পাড়ার কারনে ডিভাইজটিও কাজ করতে পারে না। তাই অবশ্যই নিয়মিত উইন্ডোজ আপডেট অ্যাপ্লাই করে নিন, সাথে কোম্পানি ওয়েবসাইট থেকে আপডেট ড্রাইভার খোঁজ করুণ, ঐ কোন এক আমলে ডিভাইজের সাথে এক সিডি পেয়েছিলেন, আর ঐটা দিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দেবেন এমনটা করা যাবে না। অবশ্যই ডিভাইজ ড্রাইভার আপডেটেড রাখতে হবে। অনেক সময় কম্পিউটার ঠিক মতো কাজ না করতে পারা বা ব্লু স্ক্রীন অফ ডেথ প্রবলেম হতে পারে শুধু পুরাতন ডিভাইজ ড্রাইভার সফটওয়্যারের জন্য। উইন্ডোজ কম্পিউটারে ডিভাইজ ম্যানেজার অপশন রয়েছে, যেখান থেকে যেকোনো ডিভাইজ ড্রাইভার ম্যানেজ করতে পাড়বেন।

কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যারা সরাসরি হার্ডওয়্যারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, এখানে কোন আলাদা ড্রাইভার সফটওয়্যারের প্রয়োজন পড়ে না। আবার কিছু সফটওয়্যার রয়েছে সরাসরি হার্ডওয়্যারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে বা লেয়ার ড্রাইভার ব্যবহার করে যোগাযোগ করে। যেমন মনে করুণ সফটওয়্যার একটি সফটওয়্যারের সাথে যোগাযোগ করছে, ঐ সফটওয়্যারটি আরেকটি ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করছে এবং শেষে আরেকটি ড্রাইভার ফাইনালি হার্ডওয়্যারের সাথে যোগাযোগ করে। মানে শুধু মাত্র ফাইনাল লেয়ারের ড্রাইভারটিরই ডিভাইজের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকে আর বাকী ড্রাইভার গুলো শুধু সংযোগ ভেরিফাই করে, অনেকটা এটি এপিআই এর মতো কাজ করে।

আশা করছি, আপনি এই আর্টিকেল থেকে পরিস্কারভাবে ডিভাইজ ড্রাইভার কি, এটি কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি টার্ম গুলো বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। যদি আপনার যেকোনো ডিভাইজ হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, আগে অবশ্যই ড্রাইভার সমস্যা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করুণ, তারপরে ফিজিক্যাল প্রবলেমের দিকে নজর রাখতে পারেন।


ড্রাইভার আপডেট করা শুধু নতুন ফাংশনই যুক্ত করে না, অনেক সময় অনেক ত্রুটিও ফিক্স করে দেয়, আপনার কম্পিউটার নিরাপত্তার জন্যও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যাই হোক, ড্রাইভার রিলেটেড বা যেকোনো টেক সমস্যায় নিচে কমেন্ট করতে পারেন, আমি সমাধানের চেষ্টা করবো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button