Technology

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স | ভবিষ্যতে মানুষ কি করবে রোবটের দাসত্ব?

ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে রোবটরাই কি করবে

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে কিছুদিন আগের পোস্ট মেশিন লার্নিং এ হালকা কিছু আলোচনা করা হয়েছিলো। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কোন মেশিন মানে কোন কম্পিউটারকে মানুষের মতো বুদ্ধিমান করে তোলা সম্ভব। তো চলুন আজকের পোস্টে আরো নিকট থেকে পরিদর্শন করে আসি এই ব্যাপারটি। আজ আমরা জানবো এই প্রযুক্তির বর্তমান নিয়ে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার সাথে উপলব্ধি করার চেষ্টা করবো কিছু ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের!

এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

যদি একটি কম্পিউটার মানুষের মতো ভাবতে পারে এবং মানুষের মতো কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করে তবে আমরা এটিকে বলবো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই। দেখুন অনেকে আমাকে বলেন যে, ভাই প্রযুক্তি তো অনেক উদ্ভবন হচ্ছে কিন্তু আমরা তা এখনো ব্যবহার করতে পারছি না। এআই কিন্তু আমরা আজকের দিনেও ব্যবহার করছি। মেশিন লার্নিং নিয়ে পোস্টটিতে আমি এর কিছু ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আসলে এআইতে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরি। আর ক্যাটাগরি অনুসারে এআই কে ভাগ করা হয়েছে মোট ৩ ভাগে।

  • উইক এআই (Weak AI)
  • স্ট্রং এআই (Strong AI)
  • সিঙ্গুলারিটি (Singularity)

# উইক এআই (Weak AI)

উইক এআই কে বলা হয়ে থাকে আর্টিফিশিয়াল নার‍্যো ইন্টেলিজেন্স (Artificial Narrow Intelligence)। এই ইন্টেলিজেন্স শুধু কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কাজ করতে পারে। যেমন ধরুন আপনার কম্পিউটার যদি দাবা খেলার জন্য এক্সপার্ট হয়ে থাকে তবে সে শুধু দাবাই খেলতে পারবে, আর কোন কাজে বুদ্ধিমত্তা দেখাতে পারবেনা। আবার ধরুন এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল করার জন্য যে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় সেটি এয়ার ট্র্যাফিক মানুষের চেয়ে অনেক ভালো নিয়ন্ত্রন করতে পারবে কিন্তু দাবা খেলতে পারবে না। তো এমন ইন্টেলিজেন্স যা শুধু একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই কাজ করতে পারে সেটাকে আমরা বলবো আর্টিফিশিয়াল নার‍্যো ইন্টেলিজেন্স বা উইক এআই।

বন্ধুরা, উইক এআই আমরা পেছনের কয়েক বছর থেকে লাগাতার ব্যবহার করে আসছি। আমাদের কম্পিউটারে, আমাদের স্মার্টফোনে, আমাদের কারে ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে। এভাবেই দিনের পর দিন এই ইন্টেলিজেন্স আমাদের জীবনের একটি উৎস হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। এবং সামনের দিনে এর ব্যবহার আরো বেশি দেখতে পাওয়া যাবে।

# স্ট্রং এআই (Strong AI)

কিন্তু বন্ধুরা আমাদের মানে মানুষের মস্তিস্ক কিন্তু অনেক জটিল একটি জিনিষ। আমাদের ভেতর একটি কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি সাধারন জ্ঞান রয়েছে, ইন্টেলিজেন্স রয়েছে। আর এখানেই চলে আসে স্ট্রং এআই এর কথা যাকে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স বলা হয়ে থাকে। এটি এমন একটি মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি যার ফলে কোন কম্পিউটার মানুষের মস্তিস্কের বরাবর ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। যেকোনো সাধারন কাজ বা চিন্তা ভাবনা আপনি বা আমি যে ভঙ্গীতে সম্পূর্ণ করতে পারি, যদি কোন কম্পিউটার তা একইভাবে করতে পারে তবে আমরা একে বলবো স্ট্রং এআই।

বন্ধুরা হতে পারে ২০৫০ সালের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স বাজারে দেখতে পাওয়া যাবে। যদিও আমরা এই প্রযুক্তি থেকে এখনো অনেক দূরে কিন্তু ঐ দিন অবশ্যয় আসবে যখন আপনি এমন রোবট দেখতে পাবেন যার বুদ্ধিমত্তার স্তর মানুষের বরাবর হবে। তবে এটা কখনোই ভেবে নেবেন না যে স্ট্রং এআই চলে আসলেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর সামনের দিকে এগবেনা। একবার যদি কোন মেশিনকে মানুষের বরাবর করানো যায় তবে সে নিজে থেকেই আরো উন্নত হতে থাকবে। যেমন ধরুন একটি কম্পিউটার তার চেয়ে উন্নত আরেকটি কম্পিউটার তৈরি করবে আবার আরেকটি কম্পিউটার আরেকটি তৈরি করবে ইত্যাদি।

# সিঙ্গুলারিটি (Singularity)

একবার যদি আমরা আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স পর্যন্ত পৌছাতে পারি তবে এই প্রযুক্তি আর থেমে থাকবে না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তখন নিজে থেকেই উন্নতি লাভ করতে আরম্ভ করবে। আর এভাবেই জন্ম নিবে সিঙ্গুলারিটি (Singularity) বা আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স। এটি এমন এক লেভেলের ইন্টেলিজেন্স যার সামনে মানুষ কিছুই না। একবার মেশিন যদি মানের লেভেলে চলে আসে তবে তাদের ইন্টেলিজেন্স একের পর এক বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে যাবে যা এই মুহূর্তে কল্পনা করার মতো ক্ষমতা আপনার বা আমার মস্তিস্কে নেই। একবার যদি স্ট্রং এআই পর্যন্ত আমরা পৌছাতে পারি তবে হতে পারে কয়েক দিন বা কয়েক মাসের মধ্যেই সিঙ্গুলারিটি দেখতে পাওয়া যাবে।

তো একদিক থেকে বলতে গেলে আপনি বলবেন যে সিঙ্গুলারিটি আসার পরে আমাদের প্রযুক্তি আরো বেশি উন্নত করা সম্ভব হবে। আমরা বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত দক্ষ রোবট ব্যবহার করতে পারবো। এবং নতুন নতুন আবিষ্কার করাতে পারবো এসকল রোবট দ্বারা। কিন্তু আরেকদিক থেকে ভাবতে গেলে দেখতে পাওয়া যায় যে সিঙ্গুলারিটি আসার পরে মানুষ বিপদে পরে যেতে পারে। কারন তখনকার রোবট হবে মানুষের থেকে কয়েক হাজার গুন বেশি বুদ্ধিমান এবং উন্নত। তাহলে তারা কেন শুনবে আমাদের কথা?

ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে রোবটরাই কি করবে

উপরের শিরোনামটি লেখার সময় মনে পড়ে যাচ্ছিল অনেক সায়েন্স ফিকশন মুভির কথা। যেখানে মানুষের রাজত্ব শেষ আর পুরো দুনিয়া দখল করে নিয়ে আছে রোবটস রা। তবে বাস্তবিকভাবে ভেবে দেখলে সিঙ্গুলারিটি আসার পরে এমনটা হওয়া আর বেশি দূরে হয়তো থাকবে না। অনেক সময়তো আমাদের মানুষ মানুষের সাথে মতের মিল হয়না, তো রোবট কেমন করে একমত থাকবে আমাদের সাথে?

হ্যাঁ আপনি বলতে পারেন যে, আমরা রোবটে এমন প্রোগ্রাম ব্যবহার করবো যাতে থাকবে যে তারা সর্বদা মানুষের আদেশ পালন করবে এবং আমাদের মেরে ফেলবে না। কিন্তু ভেবে দেখুন এতো উন্নত সিস্টেমের রোবট কি পারবেনা নিজের সিস্টেমকে পরিবর্তন করে নিতে? আমরা যেমন জানি যে আমরা মানুষ আর আমরা কি কি করতে পারি। তো তখনকার রোবটরাও জানবে যে তারা কম্পিউটার আর তারা কি কি করতে পারে।

তারপরেও আমরা এটাই আশা রাখি যে সিঙ্গুলারিটি আসার পরেও তারা মানুষের আদেশ পালন করবে এবং আমাদের কোন ক্ষতি পৌঁছাবেনা। কেনোনা তাদের মধ্যে তো অবশ্যই ইমোশনাল বলে কিছু থাকবে! কেনোনা ঐ রোবট গুলো তো জানবে যে আমরা মানুষেরাই হলাম তার সৃষ্টিকর্তা। আর সৃষ্টিকর্তার আদেশ পালন করায় হবে তাদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু সত্যি বলতে আমরাই কতটুকু সৃষ্টিকর্তার আদেশ পালন করছি?

শেষ কথা

পোস্টটি পড়তে পড়তে কোন কোন হলিউড মুভির কথা মাথায় এসেছিলো তা নিচে অবশ্যয় আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানলেন, তাই নিচে মন্তব্য করুন আপনার মতে কি রকম হতে পারে এর ভবিষ্যৎ। আর ভুল করেও শেয়ার না করে পোস্টটি ক্লোজ করে দিবেন না। ধন্যবাদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button