Technology

ন্যানো টেকনোলজি কি? ব্যবহার, সুবিধা এবং অসুবিধা

কবিংশ শতাব্দিতে ন্যানো টেকনোলজি  বা ন্যানো প্রযুক্তি পুরো বিশ্বে এক বিষ্ময়কর পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক নতুন দ্বার উন্মোচন করছে। ন্যানো টেকনোলজির ভিত্তিতে অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব হচ্ছে। নতুন নতুন দ্রব্য এর সূচনা করছে। ন্যানো টেকনোলজির ফলে বৃহৎ আকারের জিনিসগুলো ক্রমে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক- ন্যানো টেকনোলজি আসলে কি? এর ব্যবহার, সুবিধা-অসুবিধা এবং উদ্ভাবক।

ন্যানো টেকনোলজি কি?

ন্যানো (Nano) শব্দটি গ্রিক Nanos শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ dwarft (বামন)। ন্যানো হলো একটি পরিমাপের একক। ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে ১ ন্যানো মিটার বলা হয়। আর এই ন্যানোমিটার (1 থেকে 100 ন্যানোমিটার) স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে।

১৯৫৯ সালে আমেরিকান বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান তার “There’s Plenty of Room at the Bottom” আলোচনায় প্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বর্ননা করেছিলেন। তিনি পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লেষণের সম্ভাবনা বর্ণনা করেছিলেন। এজন্য রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো টেকনোলজির জনক বলা হয়।

১৯৭৪ সালে “Nanotechnology” শব্দটি সর্বপ্রথম নোরিও তানিগুচি ব্যবহার করেছিলেন, যদিও এটি তখন ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিল না। ফাইনম্যানের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, কে. এরিক ড্রেক্সলার (K. Eric Drexler) তাঁর ১৯৮৬ সালের বই ‘‘ইঞ্জিনস অফ ক্রিয়েশন: দ্য কামিং এরা অফ ন্যানোটেকনোলজিতে “Nanotechnology” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার

অস্বাভাবিক যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, অপটিক্যাল এবং চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করছি। যেমন কার্বন ন্যানোটিউব, মেডিসিন, তথ্য প্রযুক্তি, ন্যানো রোবট, ন্যানো সেন্সর, ন্যানো কম্পিউটার, সৌর কোষ, কাগজের ব্যাটারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

ন্যানোটেকনোলজি বিশেষ করে প্রযুক্তি এবং শিল্প খাতে যথেষ্ট উন্নতি ও বিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করছে। যেমন তথ্য প্রযুক্তি, সিকিউরিটি, মেডিসিন, পরিবহন, শক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ইত্যাদি সেক্টরে।

স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য অসংখ্য সম্ভাব্য সুবিধা ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রহণ এবং ব্যাটারি সঞ্চয়, জল বিশুদ্ধকরণ, খাদ্য প্যাকেজিং, পরিবেশগত সেন্সর, সেইসাথে সবুজ প্রকৌশল এবং উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিনিয়ারড ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরি করা হচ্ছে।

ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা

  • ন্যানো পার্টিকেল মানবদেহের মারাত্মক অসুস্থতা বা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • কার্বন ন্যানোটিউব ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  • খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের ব্যাপক উৎপাদনের ফলে অপচয়ের সম্ভাবনা।
  • তেল এবং হীরা মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে। 
  • উৎপাদন ও কৃষিকাজে চাকরি হারানো।
  • পারমাণবিক অস্ত্র আরও সহজলভ্য এবং ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
  • সম্পদের ব্যবধান বাড়িয়ে সামাজিক কলহ সৃষ্টি করে।
  • বিষাক্ত বর্জ্য দ্বারা ন্যানো দূষণ তৈরি হয়।

ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা

  • ন্যানোটেকনোলজির সাহায্যে বিভিন্ন উপকরণ এবং পণ্য তৈরি করতে পারি যা শক্তিশালী, হালকা, সস্তা, টেকসই এবং নির্ভুল। 
  • ন্যানোম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পিউটারগুলো এক বিলিয়ন গুণ দ্রুত এবং ক্ষুদ্র হতে পারে।
  • স্বয়ংক্রিয় দূষণ পরিষ্কার।
  • খুব কম খরচে বা বিনা খরচে উৎপাদন।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে – অসুস্থতার অবসান (ক্যান্সার, হৃদরোগ)।
  • সার্বজনীন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- যেমন এইডস, ফ্লু,।
  • চেহারা পরিবর্তন (সার্জারি)।
  • দূষণমুক্ত পরিবেশ। 
  • খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যে ব্যাপক উৎপাদন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button