Technology

ড্রোন কি ? ড্রোন কিভাবে কাজ করে ?

ড্রোনের মূল উপাদান গুলো কি কি ?

এখনকার সময়ে ড্রোন কথাটি বেশ অনেক মানুষের কাছেই পরিচিত।

ইনস্টাগ্রাম রিলিসের দৌলতে, ড্রোন দিয়ে শুট করা ভিডিওগুলো তো রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

এমনকি, এখনকার স্পোর্টসের লাইভ কভারেজ, বিয়ের মতো কোনো ইভেন্টের ফুটেজ কিংবা ভিডিও-ও এই ড্রোনের সাহায্যেই তোলা হয়ে থাকে।

তবে, মনুষ্যহীন বায়বীয় বাহন বা সাধারণভাবে ড্রোন নামেই পরিচিত – এই বস্তুটি আসলে কি, এর কাজ কি, ও বৈশিষ্ট্যই বা কি?

য.দি আপনার মনেও ড্রোন সম্পর্কে এই ধরণের প্রশ্ন এসে থাকে, তাহলে, ড্রোন নিয়ে লেখা এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে চলেছেন আপনার এইসব প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তরগুলো।

 

আসুন, প্রথমে জানি, ড্রোন মানে কি ?

ড্রোন কি বা কাকে বলে ?

ড্রোন (Drone) প্রধানত হল এক ধরণের উড়ন্ত রোবট।

এই ধরণের রোবটকে আপনি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

এমনকি, অনেক সময় এই ড্রোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেও উড়তে পারে।

এই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলোর মধ্যেকার এমবেডেড সিস্টেমে থাকা সফ্টওয়্যার-নিয়ন্ত্রিত ফ্লাইট প্ল্যানগুলো, এদের নিজে থেকেই কোনোরকম কোনো বাহক ছাড়াই উড়তে সাহায্য করে।

এই এম্বেডেড সিস্টেমটি অনবোর্ড সেন্সর ও একটি গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS)-এর সাথে মিলিত হয়ে কাজ করে থাকে।

প্রথম দিকের ড্রোনগুলো বেশিরভাগই সামরিক বাহিনীর কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতো।

মূলত, এই যানের সাথে ভালো-মানের ক্যামেরা ফিট করা থাকে।

ড্রোন নামে পরিচিত হলেও, এর প্রকৃত নাম কিন্তু, আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল (Unmanned aerial vehicle) বা ইউ.এ.ভি

আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল কিভাবে ড্রোন হিসেবে জনপ্রিয় হল ?

ইংরেজিতে “ড্রোন” শব্দের অর্থ হল পুরুষ মৌমাছি বা গুঞ্জনধ্বনি

এই যন্ত্রটি প্রথম ব্যবহার হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে শত্রুপক্ষের যোদ্ধা ও বিমানগুলোকে আকাশপথ থেকে পর্যবেক্ষণ করার জন্যে।

আর এই রেডিও-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রগুলোকে আরপিভি বা “রিমোটলি পাইলটেড ভেহিকেল”-ও বলা হয়ে থাকতো।

এই পোশাকি নাম খুব বেশিদিন ধরে সামরিক নির্মাতা ও ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করেননি।

এর বদলে, তাঁরা এর কিছু সংক্ষিপ্ত নাম দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।

তখনই এই যানগুলো চলার সময়, একসাথে মৌমাছির দলের গুঞ্জনের মতো শোনাতো, আর মৌমাছিদের দলে সর্বাপেক্ষা গুঞ্জন-সৃষ্টিকারী প্রাণী হল পুং-মৌমাছি বা ড্রোন।

আর, এর থেকেই ইউ.এ.ভি যানগুলোর নাম হয়ে যায় ড্রোন

এই ড্রোন শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হল ১৯৪৬ সালের একটি মনুষ্যবিহীন বায়বীয় আকাশযানের জন্য।

তাহলে আশা করছি, ড্রোন বলতে কি বুঝায়, এবার আপনারা অবশই বুঝতেই পেরেছেন।

ড্রোন কিভাবে কাজ করে ?

কেবলমাত্র একটা জয়স্টিক ও জিপিএস সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকলেই একটা ড্রোনকে নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক একটা ভিডিও গেম খেলার মতোই সহজ।

তবে, এই যন্ত্রগুলোর মসৃণভাবে কাজ করার জন্যে রয়েছে, একধরণের সহজ, ব্যবহারকারী-বান্ধব ইউজার ইন্টারফেস।

এই ইন্টারফেসের সহজ পরিচালনার পিছনে রয়েছে – অ্যাক্সিলোমিটার, জাইরোস্কোপ ও আরও নানান জটিল প্রযুক্তি।

যার ফলে, এই ড্রোনগুলোর মেকানিক্স অনেক বেশি মসৃণ ও সহজভাবে কাজ করে৷

ড্রোনের বৈশিষ্ট্য:

বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ড্রোন ক্যামেরার নিজস্ব কতগুলো ফাঙ্কশন আছে, যা এই যন্ত্রগুলোকে অনন্য করে তোলে –

১. দক্ষতা:

ড্রোন অনেকটাই ছোট, মজবুত ও সাধারণ যানবাহনের তুলনায় অধিক উচ্চ স্তরে উড়তে সক্ষম।

যা এদেরকে সহজেই কঠিন রুটে চলাচল করতে সাহায্য করে ও কোনো রকমের কোনো ট্রাফিক জ্যামে না আটকে দ্রুত লোকেশানে পৌঁছতে পারে।

২. মনুষ্যহীন ও রিমোটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত:

এই যন্ত্রটি এমন এক যন্ত্র, যেটিতে মানুষকে বাহক হিসেবে চড়তে হয় না।

বরং, নয় ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে, আর নাহলে আপনাকে রিমোট বা কোনো অ্যাপ ব্যবহার করে, যেকোনো জায়গা থেকে তার যাত্রাপথকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

৩. সহজেই বহনযোগ্য:

এই ড্রোনগুলো নানান ধরণের ও আকারের হয়ে থাকে।

তবে, এর সব কটি মডেলই কম-বেশি হালকা, দ্রুত উড়তে সক্ষম ও সহজেই বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

৪. কম ব্যয়সাপেক্ষ:

কোনো প্রয়োজনে হেলিকপ্টার বা সাধারণ বাহন যা খরচা নেবে, ড্রোন তার থেকে বহু কম খরচেই আপনাকে উন্নত মানের পরিষেবা দিতে পারে।

৫. কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত:

কম্পিউটারের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হওয়ায় ড্রোনগুলো সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে কাজ করতে সক্ষম।

এখানে কোনো ধরণের ত্রুটির সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

এইবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, একটি ড্রোন আসলে কিভাবে ওড়ে ?

আসলে সহজ, তারহীন প্রযুক্তি ও পদার্থবিদ্যার সংযুক্ত প্রয়াসেই বাধাহীনভাবে একটা ড্রোন আকাশে উড়তে পারে।

ড্রোনের মূল উপাদান গুলো কি কি ?

একটা ড্রোন প্রধানত ৪টি মূল উপাদানের দ্বারা গঠিত –

১. কানেক্টিভিটি:

ড্রোনকে নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

অনেক সময়েই স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকেই এই যানকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি বা তারবিহীন সংযোগের কারণে, এই যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই বার্ড’স আই-ভিউ দৃষ্টিকোণ থেকে আকাশের অনেক উপর থেকেই ভূ-পৃষ্ঠের যেকোনো কোণের চলমান ছবি তোলা সম্ভব।

ব্যবহারকারীরা নানান অ্যাপ্লিকেশন গুলোর সাহায্যে পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট জিপিএস স্থানাঙ্ক উল্লেখ করে তাদের ড্রোনের স্বয়ংক্রিয় ফ্লাইট পাথ প্রি-প্রোগ্রাম করে রাখতেও পারে।

ড্রোনের এই কানেক্টিভিটির আরেকটি অন্যতম সুবিধা হল এই যে, এটি ওয়্যারলেস-এনাব্লেড।

অর্থাৎ, এটির রিয়েল টাইম বা প্রকৃত সময়ে ব্যাটারির চার্জ পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে।

এই বৈশিষ্ট্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ ড্রোনগুলোর ওজন কম রাখতে এইগুলোতে ছোট ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়।

২. রোটর্স:

একটি ড্রোন আকাশের অভিমুখে ওড়ার জন্যে রোটারের উপর নির্ভর করে।

এই রোটরগুলোতে একটা মোটর ও তার সাথে সংযুক্ত একটা প্রপেলার থাকে।

জেনেরাখুন, ড্রোনের নিম্নগামী ধাক্কা কিন্তু মহাকর্ষীয় শক্তির সমান ও এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে এই যন্ত্র আকাশে উড়ে চলার ক্ষমতা রাখে।

ড্রোনের ব্যবহারকারীরা রোটরগুলোর গতি বাড়িয়ে দেয় সেগুলোকে উপরে ওঠানোর জন্যে, আর গতি কমিয়ে দেয় সেগুলোকে নিচে নামিয়ে আনার জন্যে।

আর ড্রোনের মোট চারটে রোটারের মধ্যে দুটো ঘড়ির কাঁটার দিকে ও অন্য দুটি ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘোরে।

যাতে, ড্রোনের পার্শ্ব গতিবেগের ভারসাম্য বজায় থাকে।

উর্ধমুখী গতির ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত ঘূর্ণন এড়াতে ড্রোনের অপর দুটো রোটর তাদের ঘোরার গতি বাড়াতে থাকে।

সমানভাবেই, সামনে ও পিছন দিকে যাওয়ার জন্যে এই যন্ত্রগুলো একইভাবে কাজ করে।

৩. অ্যাক্সিলোমিটার ও অল্টিমিটার:

একটি অ্যাক্সিলোমিটার যেকোনো ড্রোনকে তার গতি ও দিক সম্পর্কে সারাক্ষণ তথ্য দিতে থাকে।

আর, অল্টিমিটার ড্রোনকে তার উচ্চতা সম্পর্কে জানান দিতে থাকে।

এই অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলো ড্রোনকে ধীরেসুস্থে ও নিরাপদভাবে অবতরণ করতে সাহায্য করে।

যাতে, নামার সময়ে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।

৪. ক্যামেরা:

অনেক ড্রোনেরই একটা করে ইনবিল্ট ক্যামেরা থাকে।

যাতে, পাইলটকে ড্রোনটি কোথায় উড়ছে, তার ডিভাইসে সরাসরি দেখতে সাহায্য করে।

ড্রোন-মাউন্ট করা ক্যামেরাগুলো ব্যবহারকারীদের প্রতিকূল অবস্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে থাকে।

তাই, অনুসন্ধান ও উদ্ধারের কাজে ড্রোন ক্যামেরা বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে।

ড্রোন এর ব্যবহার –

বর্তমানে, ড্রোনের বিভিন্ন ধরণের ব্যবহার হয়ে থাকলেও, প্রথম দিকে ড্রোন শুধু সামরিক বাহিনীর কাজেই লাগতো।

তাই, ড্রোনের ব্যবহারকে আমরা মূলত সামরিক ও অসামরিক ব্যবহার, এই দু’ভাগে ভাগ করে করলাম।

প্রথমে আমরা জানি, সামরিক ক্ষেত্রে ড্রোনের কাজগুলো সম্পর্কে। 

বোমা সনাক্তকরণ:

ড্রোনের আকার ছোট হওয়ায় এটি সংকীর্ণ জায়গায় সহজেই ঢুকতে পারে।

আর, অনেক ড্রোনেরই ইনবিল্ট ক্যামেরা থাকে, তাই এটিকে বোমা সনাক্তকরণের কাজে ব্যবহার করাই যায়।

এইভাবে, এই মনুষ্যহীন বায়বীয় যানগুলো জীবন্ত বোমা সম্পর্কে সচেতন করতে ও দ্রুত বোমা উদ্ধার করে বহু জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।

নজরদারি:

কোনো দেশের প্রতিরক্ষার জন্যে সম্ভাব্য বিপজ্জনক এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চালানো একান্ত জরুরি।

আর, নজরদারির ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করাও বেশ আকর্ষণীয় একটা ব্যাপার।

এটি সামরিক বাহিনীর কায়িক শ্রম কমায় ও একসাথে অনেকটা এলাকা নজরদারি চালাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, বিপজ্জনক এলাকাতে প্রবেশ করার দরকার হয় না বলে এখানে মানুষের প্রাণ সংশয়ের কোনো কারণ থাকে না।

হাওয়াই হামলা:

এই ড্রোনগুলো আকাশপথে হামলার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

আর, এটি ড্রোন পাইলটদের জন্য যুদ্ধকে আরও নিরাপদ করে তোলে।

তবে, যুদ্ধের ব্যাপারে ড্রোনের মাধ্যমে হামলার বিষয়টি নিয়ে বহু দেশেই বিতর্কিত রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে।

এইবার জানা যাক, অসামরিক ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার সম্পর্কে –

ফিল্মিং ও সাংবাদিকতা:

এখনকার বহু সিনেমা কোয়াডকপ্টার কিংবা অন্যান্য ড্রোন ব্যবহার করে ভিডিও শুট করে থাকে।

এই ধরণের ড্রোন অবিশ্বাস্য সুন্দর দৃশ্য ক্যাপচার করতে সক্ষম, আকাশের বহু উঁচুতে উড়তে থাকা সত্ত্বেও।

অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যগ্রহণের জন্যে অনেক ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি ড্রোনের সাহায্যে শুট করা পছন্দ করে।

আবার, এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে সাংবাদিকরা পৌঁছাতে পারে না।

এমন জায়গাগুলোতে পৌঁছানোর জন্যে ড্রোনের ক্ষমতা অনস্বীকার্য।

সাংবাদিকতার জগতে এই যন্ত্রের ব্যবহার লাইভ সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।

এরিয়াল ফটোগ্রাফির জগতেও ড্রোনের প্রচুর চাহিদা।

পেশাদার কিংবা অপেশাদার চিত্রগ্রাহক সকলেই নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উচ্চ-মানের ছবি তোলার জন্যে মুখিয়ে থাকে।

আর, এই ড্রোনগুলো তাদেকে এমন অনেক জায়গায় পৌঁছাতে সাহায্য করে, যেখানে পায়ে হেঁটে পৌঁছানো অসম্ভব।

অথচ, সেখানে সৃজনশীল ফটোগ্রাফির সুযোগ পাওয়াও সম্ভবপর হয়ে ওঠে।

শিপিং ও ডেলিভারি:

ড্রোনের শিপিং ও ডেলিভারির অ্যাপ্লিকেশন গুলো এখনও তৈরি করা হচ্ছে।

তবে, মনে করা হচ্ছে যে, এই অ্যাপ্লিকেশন গুলো অদূর ভবিষ্যতে মানুষের শ্রম কমাতে ও দ্রুত ডেলিভারি করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে পারে।

এই ড্রোনগুলো চিঠি, পিজা, এমনকি ছোট পার্সেল সরবরাহ করার জন্যে প্রোগ্রাম করার প্রস্তুতি চলছে।

মনে করা হচ্ছে যে, এই পরিষেবা সফল হলে জনসাধারণেরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের ডেলিভারি পেয়ে যাবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা:

প্রায়শই দেখা যায় যে, মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেই সম্পদের চরম বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা ঘটে।

এক্ষেত্রে, ড্রোন মানুষকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে পারে।

মূল্যবান সংস্থানগুলোর সমন্বয় সাধন ও বিপুল পরিমাণ জনশক্তির বদলে, কেবল ড্রোনগুলোকে দুর্যোগের পরে অবিলম্বে সাহায্যের জন্যে বা জীবন বাঁচাতে পাঠানো যেতে পারে।

শক্তিশালী ক্যামেরার সাহায্যে এই যন্ত্রগুলো সুরক্ষিতভাবে ধ্বংসাবশেষের ছবি ও তথ্য জোগাড় করে দিতে সক্ষম।

এমনকি, উদ্ধারকার্য কিংবা পরিস্থিতি দেখানোর জন্যে প্রচুর অর্থ হেলিকপ্টারের পিছনে ব্যয় না করেই, দুর্ঘটনাস্থলের স্পষ্ট ফুটেজ পাওয়া সম্ভব।

ছোট আকারের এই যন্ত্রগুলো যেকোনো সংকীর্ণ জায়গা থেকেও ক্লোজ-আপ ভিউ ও উচ্চ-মানের ছবি ক্যাপচার করতে পারে।

উদ্ধারকার্য ও স্বাস্থ্যসেবা:

উদ্ধার অভিযানের ক্ষেত্রে সময়ের মধ্যে পৌঁছনোটা খুবই জরুরি।

আর, এখানেই ড্রোন অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

এর থার্মাল সেন্সরের সাহায্যে সহজেই হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

এগুলো রাতে কিংবা কোনো বিপদসংকুল ভূখণ্ডেও বিশেষভাবে কাজ করে।

এই যন্ত্রগুলোর পক্ষে এমন জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব, যেখানে মানুষ কখনোই পৌঁছতে পারে না।

তাই, সময়মতো উদ্ধার করতে গেলে এই ডিভাইস খুবই প্রয়োজনীয়।

উদ্ধারকারী দল পৌঁছনোর আগেই, এই যন্ত্রগুলো দুর্ঘটনা-কবলিত ব্যক্তিদের কাছে খাদ্য বা চিকিৎসা পাঠাতেও সাহায্য করতে পারে।

তাই, উদ্ধার অভিযানের ক্ষেত্রে ড্রোন প্রথমে পৌঁছে গিয়ে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে আনতেও সক্ষম।

আবহাওয়া, কৃষিক্ষেত্র, আর্কিওলজিক্যাল অনুসন্ধান:

কিছু বিশেষ ক্যামেরা ও কার্যকরী সেন্সরযুক্ত ড্রোনগুলো সফলভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য এনে দিতে পারে।

বড় চাষ জমিতে নিয়মিত বায়বীয় পর্যবেক্ষণ কৃষকদের ফসলের কার্যক্ষমতার আরও গভীর বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, বছরের পর বছর বহু মানুষ প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের জন্য অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করেছেন।

বর্তমানে, এই যন্ত্রগুলো প্রত্নতত্ত্বের কাজগুলোকে আরও সহজ করে তুলছে।

ড্রোনগুলো আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ ও প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আসতে সক্ষম।

জিও-ম্যাপিং:

3D ভৌগলিক ম্যাপিংয়ের জন্যে এই যন্ত্রগুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পৃথিবীতে এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে, যা আমাদের পক্ষে অগম্য।

যেমন – কিছু বিপজ্জনক উপকূলরেখা বা দুর্গম পর্বত চূড়ায় যাওয়া আমাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।

তবে, এইসব জটিল ভূখণ্ড অধ্যয়ন ও 3D মানচিত্র তৈরী করার জন্যে ড্রোন খুবই জরুরি।

নিরাপত্তা পরিদর্শন:

পাওয়ার, তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন, বায়ু টারবাইন, সেতু ও নির্মাণাধীন ভবনের মতো কোম্পানিগুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।

এই কারণে, এইসব ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করা যেতে পারে।

কারণ, নিয়মিত বায়বীয় পর্যবেক্ষণ, এই কোম্পানিগুলোর অবকাঠামো নির্মাণে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাতে পারে, যা তাদের সর্বতোভাবে উন্নতি করতে সাহায্য করে।

বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ:

বন্যপ্রাণীদের বিরক্ত না করে নিঃসাড়ে বন্যপ্রাণীর উপর নজরদারি চালানো সম্ভব এই যন্ত্রের দ্বারা।

এর থেকে পাওয়া ফুটেজ থেকে আমরা সহজেই প্রাণীদের আচরণ সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে ও তাদের ধরণ বিশ্লেষণ করতে পারি।

আর, ড্রোনের সাহায্যে নিয়মিত বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের ফলে, চোরাশিকারীদের প্রতিরোধ করা আর বন্যপ্রাণীর অবলুপ্তিও বন্ধ করা সম্ভব।

 

আমাদের শেষ কথা,,

ড্রোন কি এবং ড্রোন কিভাবে কাজ করে নিয়ে লিখা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

আমাদের আর্টিকেলটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্ট করে জানাবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, সেটাও কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।

শেষে, ড্রোন বলতে কি বুঝায় বা ড্রোন কাকে বলে নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক গুলোতে শেয়ার করার জন্যে আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button