Life Style

ভয় দূর করার উপায় | কিভাবে মনের ভয় দূর করা যায়

ভয় দূর করার উপায় গুলোর তালিকা

মনের ভয় দূর করার উপায়: প্রত্যেকটি ব্যক্তি  জীবনে কোনো না কোনো জিনিস বা কথা নিয়ে ভয় অনুভব করেই থাকে।

যদি কোনো ব্যক্তি বলে থাকে তার কোনো কিছুতে ভয় লাগেনা, তাহলে সেটা একেবারেই মিথ্যা হবে।

কারণ, ভয় এমন একটি জিনিস যা ছোটো থেকে বড়ো সকলের মনের মধ্যে কিছু না কিছু নিয়ে থেকেই যায়।

ভয় এমন একটি জিনিস যেটা আপনি যতো মানবেন, নিজের জীবনে জায়গা দিবেন সে ততটাই আপনাকে ঘিরে বসবে।

তাই ভয় কে কখনো নিজের চার দিকে জাল বুনতে দেওয়া উচিত নয়।

ভয় যদিও সকলেরই থাকে কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তি এই ভয় থেকে বের হওয়ার উপায় খুজে নেয় যার ফলে এমন ব্যক্তিরা ভয় কে পেছনে ছেড়ে দিয়ে জীবনে আগে বাড়তে থাকে।

তাহলে চলুন বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিস্তারিতভাবে জেনে নেই মনের ভয় কিভাবে দূর করা যায়।

Post Contents

ভয় দূর করার উপায় গুলোর তালিকা

আমাদের মনের মধ্যে ভয় সাধারণত অনেক কারণে তৈরি হতে পারে। যেমন,

১. পরীক্ষার ভয়

২. ভবিষ্যতের ভয়

৩. অন্ধকার থেকে ভয়

৪. উঁচু থেকে ভয়

৫. মৃত্যুর  ভয়

৬. নিজের শত্রু থেকে ভয়

ভয়ের কারণে হওয়া দুষ্পরিণাম :-

১. মানুষ ডিপ্রেশনে চলে যায়।

২. নকরাত্মক বিচারের ফলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়।

৩. মিথ্যে কথা বলা শুরু হয়

৪ . জীবনে আগে বাড়তে পারেনা

৫. ভয়ের কারণে নিজের মধ্যে থাকা প্রতিভা সকলের সামনে দেখানো সম্ভব হয়ে উঠেনা।

কিভাবে মনের ভয় দূর করা যায়

তাহলে চলুন এখন আমরা এই বিভিন্ন ধরণের ভয় গুলোর থেকে বাঁচার বিভিন্ন উপায় গুলো জেনে নেই :-

১. ভয় কে স্বীকার না করা :-

ভয় তার নিজের অনেক রূপ নিয়ে আমাদের সামনে এসে থাকে এবং বিভিন্নভাবে আমাদের ভয় দেখিয়ে থাকে।

তবে মনে রাখতে হবে যে, ভয় আমাদের মনে তখনি আসে যখন আমরা ভয় কে আসতে দেই।

তাই যখনই কোনো জিনিস বা কথা নিয়ে মনে ভয় এসে থাকে ঠিক সে সময় সেই কথার উল্টোটা ভাবা উচি বা সেই কথার খারাপ থেকে খারাপ পরিণাম না ভেবে ভালো পরিণামের কথা চিন্তা করুন।

এরকম করার ফলে আপনি ভয়ের মুখোমুখি হয়ে ভয়ের সাথে মোকাবেলা করতে পারবেন,

ফলে ভয়ের চোখে চোখ রেখে ভয়কে জয় করতে পারবেন।

২.পুরানো কথা পেছনে ছেড়ে আগে বাড়া :-

আমাদের কিছু পুরানো অনুভব থাকে যেগুলো আমাদের মনে এমন গভীরভাবে গাঁথা থাকে যার ফলে আমরা আগে বাড়তে পারিনা।

তাই যা গেছে সেটা নিয়ে বসে না থেকে আগে বেড়ে যাওয়াই হলো বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ যারা পুরানো কথা নিয়ে বসে থাকে বা ভয় পায় তাদের এক ধরণের বোকা বলা হয়।

সবসময় এটা জরুরি নয় যে পুরানো কথা সেই সময় আপনাকে যতটুক চিন্তিত করেছিলো ঠিক তেমনভাবে এখনো করবে।

তাই পুরানো অনুভব থেকে শিখে অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্ভয়ের সাথে আগে বাড়া উচিত কারণ ভয় কে আমরা যতো ভয় পাবো ভয় আমাদের ততো ভয় দেখাবে।

৩. ভবিষ্যত নিয়ে বেশি না ভাবা :-

অনেক সময় আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভয় লেগে থাকে।

কাল কি হবে, আমাদের ভবিষৎ কেমন হবে, চাকরি পাবো কি না, বিয়ে হবে কি না, বাচ্চাদের ভবিষৎ কেমন হবে ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের কথা ভেবে ভেবে আমরা আমাদের বর্তমান সময় খারাপ করে ফেলি।

ভবিষ্যতের উপর আমাদের কোনো জোর থাকেনা, কাল আমরা বেঁচে থাকবো না মৃত্যু হবে আমরা কেও আগে থেকে জানিনা।

আমরা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের জীবনে একদিনও অধিক বাড়াতে পারবোনা।

তাই আমাদের হাথে যখন কিছুই নেই তাহলে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সময় নষ্ট না করে বর্তমান নিয়ে ভাবা উচিত।

এছাড়া, আপনি নিজের ভালো ভবিষ্যতের জন্য অবশই এখন থেকেই চেষ্টা করুন এবং নিজের ১০০% দিন, এবং বাকিটা কপালের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজের বর্তমান সময়টিকে আনন্দময়ী বানাতে চেষ্টা করুন।

৪. লক্ষ্য নির্ধারিত করা :-

জীবনে কোনো দিশা বা লক্ষ্য না থাকলে আমরা অনেক সময় চলার পথে উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ি ফলে ভূল চিন্তা ভাবনা, খারাপ কথা, ভয় মস্তিষ্কে ঘর বানাতে শুরু করে দেয়।

কিন্তু যখন আমাদের জীবনে কোনো লক্ষ্য নির্ধারিত থাকে তখন আমাদের পুরো ধ্যান সেই লক্ষ্যের প্রতি থাকে ফলে অন্য চিন্তা ভাবনা থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়।

লক্ষ্য প্রাপ্ত করার সময় পাওয়া ছোটো ছোটো সাফল্য থেকে আমরা খুশি পেয়ে থাকি ফলে আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে থাকে যার ফলে আমাদের মধ্যে ভয় কমে যায়।

তাই ভয় থেকে নিজেকে দূর রাখতে হলে জীবনে যেকোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখা খুব জরুরি।

যেমন উদাহরণস্বরূপ, ছোটো ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার লক্ষ্য রাখা, বড়োদের ক্ষেত্রে ভালো চাকরি পাওয়ার, নিজের ব্যবসা বা বাড়ি বানানো ইত্যাদির লক্ষ্য রাখা উচিত।

৫. ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করা :-

এখানে ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার অর্থ এটা নয় যে আপনি কোনো হিংশ্র জন্তুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং তার মোকাবিলা করবেন।

এখানে বলার অর্থ্য এটাই যে, যেই পরিস্থিতিতে আপনার ভয় লেগে থাকে, যেখানে যেতে আপনার ভয় লেগে থাকে, যে কাজ করতে বা যার সামনে যেতে আপনার ভয় লেগে থাকে সেখানে যাওয়া বা সেই কাজ করা শুরু করে দিতে হবে।

তাহলে দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে আপনার মনে হতে শুরু হবে যে, যে ভয়ের জন্য আপনি এতদিন পিছিয়ে ছিলেন তা আসলে কিছুই না শুধু আপনার মনের কল্পনা মাত্র।

অর্থাৎ যেখানে আপনার ভয় থাকে সেখানের আসে পাশে থাকলে বা তার সাথে সময় কাটালে কিছু দিনের মধ্যেই ভয় দূরে ভেগে যায়।

৬. মেডিটেশন করা :-

প্রত্যেকদিন মেডিটেশন বা ধ্যান করা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই লাভদায়ক।

তাই দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট শান্তিতে একা বসে ধ্যান করা দরকার।

যদি আপনি ঈস্বরে বিশ্বাসী তাহলে এই সময়টুকু প্রার্থনা করে, ঈশ্বরের ধ্যান করে কাটাতে পারেন।

মেডিটেশনের অর্থ হলো কোনো এক বিশেষ জায়গায় ধ্যান লাগানো, এবং নিজের মনের আওয়াজ শুনার চেষ্টা করা।

ধ্যান করার সময় কিছু সময়ের জন্য বাইরের দুনিয়া থেকে নিজেকে দূরে রেখে শুধু নিজের মনের ভেতরের আত্মার আওয়াজ শুনা চেষ্টা করুন।

যে কথা বা ভয় আপনাকে চিন্তিত করছে সেগুলো ঈশ্বরের কাছে বলুন এবং ঈশ্বরের চরণে ছেড়ে দিন।

এরকম করার ফলে দেখবেন আপনি ভেতর থেকে এক অদভূত শক্তির অনুভব করতে পারছেন এবং আপনার মন শান্ত এবং পসিটিভ থাকতে শুরু হচ্ছে।

৭. সকরাত্মক বিচার ভাবা :-

আমরা আমাদের মনকে নকরাত্মক বিচার দিয়ে ভরিয়ে ফেলি, ফলে কোনো ভালো বিচারের জন্য আমাদের মনে জাগাই থাকেনা।

তাই ভয় থেকে  দূরে থাকতে  হলে নিজেকে পুরোভাবে পসিটিভ রাখা উচিত কারণ আপনি ভালো ভাবলেই আপনার সাথে ভালো হবে।

আমাদের বিচারশক্তিতে অনেক বেশি ক্ষমতা থাকে, আর তাই আমাদের চিন্তা ভাবনা যত উন্নত এবং ভালো থাকবে আমাদের মন ততটাই শক্তিশালী হবে।

আপনারা মোটিভেশনাল ভিডিও দেখতে পারেন, সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়তে পারেন বা ভালো, উন্নত এবং পসিটিভ চিন্তাধারা থাকা ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটাতে পারেন।

এগুলো নিয়মিত করতে থাকলে আপনার মধ্যে সকরাত্মক বিচার (positive thinking) তৈরি হতে শুরু হবে এবং মনের ভয় কমে আসবে।

এছাড়া, যেকোনো পরিস্থিতে আমাদের সকরাত্মক বিচার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা দরকার।

এই সকরাত্মক বিচারের মাধ্যমেই আমরা নিজেকে ভয় থেকে সত্যি দূরে রাখতে পারবো।

৮. মৃত্যুর সত্যতা বুঝার চেষ্টা করা :-

“মৃত্যু “, এই শব্দটি শুনেই অনেকের মনে ভয় চলে আসে। যেমন, আমি কি জলদি মরে যাবো, আমার মরার সময় পাশে কি কোনো লোক থাকবেনা ?

এছাড়াও অনেক ব্যক্তির নিজের প্রিয়জনের মৃত্যু যেমন ভাই, বোন, বিশেষ করে মা, বাবা কে নিয়ে খুব ভয় হয়।

তারা কোনোভাবেই এই সত্যটি মানতে রাজি হয়না, তাই তাদের  মনে সবসময় মৃত্যুর ভয় থেকেই যায়।

কিন্তু আমরা সকলেই জানি জন্ম মৃত্যু আমাদের কারো হাথে নেই এবং সব ঈশ্বরের উপর নির্ভর।

তাই মৃত্যু নিয়ে ভেবে ভেবে সময় নষ্ট না করে যে সময়টুকু আমরা পাচ্ছি সেটা সুন্দর মতো কাটানোর চেষ্টা করা উচিত।

মৃত্যু থেকে কেও বাঁচতে পারবেনা, জন্ম যখন হয়েছে মৃত্যু অনিবার্য, তাই এই সত্যতা মেনে জীবনে আগে বাড়া উচিত।

বিশ্বাস করুন, যখন আপনি মন থেকে এই মৃত্যুর সত্যটি মেনে নিতে পারবেন, আপনার মনে আর মৃত্যুর ভয় থাকবেনা।

৯. নেশা থেকে দূরে থাকা :-

এই কথাটি সত্য যে নেশা করার পর প্রথম প্রথম আপনি চিন্তা, অস্থিরতা, ভয় থেকে নিজেকে দূর রেখে ভালো অনুভব করবেন।

মানে, হয়তো নেশা করা সময়টুকু আপনার মনে কোনো ধরণের ভয় বা চিন্তা থাকবেনা এবং কিছু সময়ের জন্য আপনার মনে হবে যে নেশা করে আপনি ভালোই করেছেন আপনার সব দুশ্চিন্তা, ভয় শেষ হয়ে গেছে।

যেকোনো নেশা আমাদের নার্ভাস সিস্টেমে প্রভাব ফেলে থাকে ফলে আপনার ভয়ের আভাস হয়না এবং আপনি রিলাক্স অনুভব করেন।

কিন্তু একবার নেশা শুরু করার পর দিন দিন এর আসক্তি বেড়েই চলে এবং নার্ভাস সিস্টেমকে দুর্বল করে ফেলে।

ফলে আপনি প্রতিদিন নেশা করতে বাধ্য হয়ে পড়বেন এবং একদিন নেশা না করলে অধিক ভয়ে ভয়ে থাকতে শুরু করবেন।

তাই ভয় থেকে দূরে থাকতে হলে নেশা থেকে দূরে থাকা খুবই জরুরি। আপনাকে নিজের মনের ভয়কে নেচারেলি দূর করতে শিখতে হবে।

১০. নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শিখুন

আপনি যত বেশি একা একা কোনো কাজ কর্ম ছাড়া বসে থাকবেন, দুঃশ্চিন্তা এবং তার ফলে ভয় ততটাই আপনাকে ঘিরে ধরবে।

তাই, মনের দুঃশ্চিন্তা এবং ভয় থেকে বাঁচার সব থেকে কার্যকরী উপায় হলো, কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

নিজেকে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত রাখার ফলে আপনার মাইন্ডে সেই দুশ্চিন্তা বা ভয় বেশিক্ষন ঘর করতে পারবেনা এবং কিছু সময়ের মধ্যেই আপনি সেগুলো ভুলে যাবেন।

আপনি চাকরিতে যুক্ত হতে পারেন, জিম (GYM) করতে পারেন, মা বাবার সাহায্য করতে পারেন বা নিজের কোনো ব্যবসা শুরু করতে পারেন ইত্যাদি।

এছাড়া, যদি অন্যের সাহায্য করে আপনি মনে শান্তি অনুভব করেন, তাহলে অবশই কোনো সোশ্যাল ওয়ার্ক করার সাথে NGO সাথে সংযুক্ত হতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, “ভয় দূর করার উপায়” নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল এখানেই শেষ হলো।

আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই পছন্দ হবে।

কিভাবে ভয় দূর করা যাবে, নিয়ে লিখা আমাদের আর্টিকেল যদি সত্যি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশই শেয়ার করবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, সেটা আপনারা নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button