News

চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত এভাবে লিখবেন

ইস্তফা বা রেসিগ্ন্যাশন লেটার লেখার নিয়ম

চাকরিতে নতুন জয়েন করা ও পুরোনো চাকরি ছেড়ে দেওয়া- এই দুটোই হল আমাদের প্রায় প্রত্যেকের জীবনেরই একটা অঙ্গ।

প্রায় সকলকেই কম-বেশি চাকরি পরিবর্তন করতেই হয়।

আর, এই চাকরি পরিবর্তনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল, পুরোনো চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার ব্যাপারটি।

ইস্তফা দেওয়ার সময় আমাদের যে চিঠিটা অফিস কর্তৃপক্ষকে লিখতে হয়, সেটার ব্যাপারে আমাদের অনেকের মনেই নানানধরণের আশঙ্কা কাজ করে।

তবে, যাই হোক না কেন, আমাদেরকে সবসময়ই একটা সুন্দর করে লেখা ইস্তফাপত্রই জমা দিতে হয়।

আর, আপনি যদি এই চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত লিখতে কুন্ঠা বোধ করেন, তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবেই আপনার জন্যে।

এখান থেকে আপনি সবিস্তারে বুঝতে পারবেন, সঠিকভাবে দরখাস্ত লেখার ব্যাপারগুলো সম্পর্কে –

প্রথমে জানি যে, পদত্যাগপত্র বা রেসিগন্যাশন লেটার কি ?

পদত্যাগপত্র বা রেসিগন্যাশন লেটার কি ?

এটি হল একটি লিখিত নোটিশ, যা একজন ব্যক্তি তার নিজের অফিস বা প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার অভিপ্রায় ঘোষণা করতে লিখে থাকেন।

একটি কাজের ইস্তফাপত্র লেখার প্রাথমিক উদ্দেশ্য থাকে, সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির নোটিশের একটি অফিসিয়াল রেকর্ড তৈরি করা।

তবে, এটিকে কর্মচারীর তরফ থেকে একটা সৌজন্য প্রকাশের মাধ্যম হিসেবেও দেখা হয়।

একটি রেসিগন্যাশন লেটারের সাহায্যে আপনি আপনার পুরোনো অফিসে কাজের শেষ দিন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ প্রদান করতে পারেন,

ফাইনাল ট্রানজিশনে সহায়তা করতে পারেন ও আপনার নিয়োগকর্তাদের তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদও জানাতে পারেন।

একটি রেসিগ্ন্যাশন লেটারে কি কি থাকা উচিত ?

কোনো পদত্যাগপত্র তৈরির আগে বেশ কয়েকটি বিষয় আপনাকে স্পষ্টভাবে সেখানে উল্লেখ করতে হবে, সেগুলো হল –

১. অভিবাদন জানানো:

আপনার পদত্যাগপত্রটি উপযুক্ত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে লিখুন।

সম্ভবত, একটি পদত্যাগপত্র আপনাকে সরাসরি আপনার এইচ.আর প্রতিনিধি বা ম্যানেজারের কাছে পাঠাতে হয়।

তবে কখনও কখনও, আপনি আবেদনপত্রটি আপনার বিভাগ বা সামগ্রিক সংস্থার কাছেও পাঠাতে পারেন।

আপনি বিসনেস লেটারের ক্ষেত্রে সাধারণ সম্ভাষণ, যেমন- “প্রিয় স্যার/ম্যাডাম” ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

২. আপনার উদ্দেশ্য:

আপনার পদত্যাগ পত্রের মূল অংশে স্পষ্টভাবে আপনি কেন এই পদ ও কোম্পানি ছেড়ে দিতে চাইছেন, সে সম্পর্কে লিখতে হবে।

সেখানে, অবশ্যই আপনার বর্তমান পদ ও কোম্পানির নাম উল্লেখ করবেন।

আপনি এই বিবৃতিতে আপনার শেষ কাজের তারিখ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, কিংবা পরবর্তী অনুচ্ছেদে আরও বিশদে লেখা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

৩. আপনার চাকরির শেষ তারিখ:

আপনার পদত্যাগপত্রে আপনার কাজের শেষ দিন কবে হবে, সে সম্পর্কে বিশদে লেখা প্রয়োজনীয়।

কমপক্ষে, দুই সপ্তাহের নোটিশ সব জায়গাতেই বাঞ্চনীয় থাকে।

তবে, আপনার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আপনি যদি অবিলম্বে ইস্তফা দেন, তবে তা দিতেই পারেন কিংবা আরও নোটিশ দিতে পারেন।

আপনি কোম্পানী ছেড়ে যাওয়ার আগে যেসব তথ্য আপনাকে সম্পূর্ণ করতে হবে; সে সম্পর্কেও বিস্তারিত লিখুন; যেমন- বাকি থাকা প্রজেক্ট বা বকেয়া পেমেন্ট।

একটি সঠিক রেসিগ্ন্যাশন লেটার আপনার প্রতিষ্ঠানকে আপনার আসন্ন অনুপস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে ও আপনার স্থানে অন্য কাউকে খুঁজতে অফিসিয়ালভাবে অনুমতি দেয়।

৪. আপনার কোম্পানি ছাড়ার কারণ:

তা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত হোক, স্থানান্তরের জন্যে হোক, আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি কিংবা অন্যান্য যেকোনো কারণই হোক না কেন, আপনাকে স্পষ্টভাবে পদত্যাগের কারণ সম্বন্ধে লিখতে হবে।

আপনি কেন চাকরি ছাড়ছেন, সেই ব্যাপারে আপনার নিয়োগকর্তাকে স্পষ্ট কারণ দেখতে হবে।

আপনার ইস্তফা পত্রে ব্যক্তিগত বিবরণ দেওয়ার কোনো দরকার নেই।

আপনার লেখার ভঙ্গিটি নম্র-ভদ্র ও পেশাদারী রাখুন।

৫. ধন্যবাদ জানানো:

একটি পদত্যাগপত্র হল আপনার নিয়োগকর্তার শেখানো, প্রতিভাবান সহকর্মীদের সাথে কাজ করার, মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন ও আয়ের সুযোগের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনের একটি মাধ্যম।

কোম্পানির জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, আপনার নোটিস পিরিয়ড চলাকালীন বেশ একটা মসৃণ সময় নিয়ে আসতে পারে।

এমনকি, কোম্পানির প্রতি একটা ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ, কোম্পানি ছাড়ার পরেও, সেখানের সাথে আপনার একটা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৬. নোটিস পিরিয়ডে কোম্পানিকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি:

এই পদত্যাগপত্রের মধ্যে আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবর্তনকে সহজ করে তুলতে আপনার সাহায্যের প্রস্তাব দিতে পারেন।

যেমন- আপনি বলতে পারেন, যে আপনি কোনো নতুন কর্মচারীকে আপনার পোস্টটিতে যথাযোগ্য করে তুলতে কোম্পানিকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক।

৭. আপনার যোগাযোগের সঠিক তথ্য:

একটি উপযুক্ত প্রশংসামূলক লেখার মাধ্যমে আপনার রেসিগন্যাশন লেটার শেষ করুন।

পদত্যাগপত্রের হার্ড কপি জমা দিলে আপনার টাইপ করা নামের উপরে স্বাক্ষর করুন।

আপনি যদি ইতিমধ্যেই আপনার চিঠির মধ্যে ব্যক্তিগত বিবরণ না যোগ করে থাকেন, তাহলে আপনার স্বাক্ষরের পরে তা যোগ করুন।

এখানে, কোম্পানিতে আপনার বর্তমান পোস্ট ও পেশাদার যোগাযোগের বিবরণ যোগ করা উচিত।

আপনি আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্যও দিতে পারেন যাতে, আপনার ছেড়ে যাওয়ার পরেও কোম্পানির যাতে আপনার কাছে পৌঁছানো সহজ হয়।

ইস্তফা বা রেসিগ্ন্যাশন লেটার লেখার নিয়ম:

যেহেতু, একটি রেসিগন্যাশন লেটার একটা ফর্মাল লেখার ফরম্যাট মেনে চলে, তাই এটি লেখার সময়ে বেশ কয়েকটি কড়া নিয়ম মেনে লিখতে হয় –

১. তারিখ:

যেদিন অফিস ছেড়ে দেবেন সেই তারিখটা অবশ্যই এখানে থাকতে হবে।

কমপক্ষে, একমাস কোনো কোম্পানিকে আপনার জায়গায় কোনো নতুন কর্মী যুক্ত করার সময় দেওয়া উচিত।

শর্ট নোটিস পিরিয়ডে চাকরি ছাড়তে চাইলে, অবশ্যই কোম্পানির সাথে আলোচনা করে তবেই পদত্যাগপত্রের তারিখ লেখা ভালো।

২. ঠিকানা:

ফর্মাল লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের ঠিকানা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিবরণ যোগ করতে ভুলবেন না।

৩. সম্বোধন: 

আপনার কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে যে সম্বোধন আপনি করবেন, তা যেন স্পষ্ট থাকে।

৪. লেখার ভঙ্গি:

আপনার লেখার ধরণটি যেন ভদ্র ও মার্জিত হয়।

কোনোরকম কটু কথা কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতি ও পেশাগত জীবনের পক্ষে ক্ষতিকারক।

তাই, শব্দ নির্বাচন ও লেখার ভঙ্গির প্রতি যত্নশীল হন।

যতটা সম্ভব ছোট করে, কিন্তু গুছিয়ে আপনার বক্তব্যগুলোকে লেখার চেষ্টা করুন।

একই ধরণের বক্তব্য বারবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

এখানে যেন আপনার কোম্পনি ছাড়ার কারণগুলো স্পষ্টভাবে লেখা থাকে, তা নাহলে এই চিঠির কোনো মানেই থাকে না।

৫. শুরু ও সমাপ্তি:

একটি ভালো পদত্যাগপত্রের শুরু ও শেষ দুটো ভাগই আকর্ষণীয় হওয়া দরকার।

সবসময় জানবেন, যেকোনো অফিসিয়াল চিঠিতে কোনো ভুল-ত্রুটি থেকে যাওয়া, কোনোভাবেই ভালো দেখায় না।

তাই, যতটা সম্ভব ভুল-ভ্রান্তি এড়িয়ে স্পষ্টভাবে আপনার রেসিগন্যাশন লেটার লেখার চেষ্টা করুন।

কয়েকটি চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত লেখার নমুনা:

একটি বাংলা পদত্যাগপত্রের নমুনা নিচে দেওয়া হল-

তারিখ:

কর্তৃপক্ষের নাম ও পদ

কোম্পানির নাম

কোম্পানির ঠিকানা

বিষয়: চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যে আবেদন 

স্যার/ম্যাডাম,

আমি, (আপনার নাম) দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ আপনার কোম্পানির (অফিসের নাম) (আপনার বিভাগে) একজন কর্মচারী (আপনার পদ) হিসেবে নিযুক্ত রয়েছি। তবে, বর্তমানে আমি আমার এই কোম্পানি থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার জোরে, অন্য একটি বহুজাতিক সংস্থায় (এখানে আপনি আপনার নিজস্ব সমস্যা লিখতে পারেন) জেনারেল ম্যানেজার পদে যুক্ত হওয়ার অফার পেয়েছি। আমরা সবাই জীবনে উন্নতি করতে চাই, আর আমি এই সুযোগটিকে হারাতে চাই না।

তাই অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, যে আমার পক্ষে এই কোম্পানিতে আর কাজ করা সম্ভব হবে না। আমার আপনার এই কোম্পানিতে কাজ করার সর্বশেষ তারিখ হল ২০/০৬/২০২২।

আপনার দেওয়া সাহচর্য ও সহকর্মীদের অমূল্য সাহায্যের জন্যে আমি এই কোম্পানি থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আপনার এই কোম্পানিতে কাজ করে আমি অনেক পেশাদারী অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, যা আমাকে ভবিষ্যতেও সমৃদ্ধ করবে আশা রাখি। এই কোম্পানির প্রত্যেকের আন্তরিক ব্যবহার আমার চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।

আমি আরও আশা রাখি যে, আমাদের এই কোম্পানি (অফিসের নাম) ভবিষ্যতে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। আর, আমার ইচ্ছা রইল যে, এই কোম্পানিও আমাকে তাদের একজন মূল্যবান কর্মী হিসেবে চিরকাল মনে রাখবে। আপনাদের সকলের অবদান আপনি কোনোদিনও ভুলবো না।

এই কোম্পানি চাইলে আমি আমার স্থানে নিযুক্ত হওয়া নতুন কর্মচারীকে ট্রেনিং-ও দিতে পারি, যাতে কোম্পানির কোনোরূপ সমস্যা না হয়।

সুতরাং, আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যে, আমার এই পদত্যাগপত্রটি মঞ্জুর করে আমাকে বাধিত করবেন।

ধন্যবাদান্তে,

আপনার নাম/স্বাক্ষর

কোম্পানি পরিচয়পত্রের কপি

আপনার ঠিকানা

যোগাযোগের নম্বর, ইমেইল আইডি

একটি ইংরেজি ভাষায় লেখা রেসিগন্যাশন লেটারের ফরম্যাট –

(Date)

(Your Name)

(Company Name)

(Company Address)

 

Subject: Resignation letter of (your name)

Dear (employer or HR representative),

I’m sorry to let you know that I’ll be departing [company name] in two weeks.

I cannot continue carrying out all the responsibilities of my role due to some unforeseen personal circumstances, and I believe it is in the company’s best interest that I resign.

(Date of my last working day) will be my last day.

It was a difficult decision, and I hope my departure does not cause you or [business] any hardship or discomfort.

Please don’t hesitate to contact me if I can help you find a replacement or do anything else to make the transition as painless as possible.

Thank you for the opportunity to contribute to your team and for your patience. I’ve enjoyed working for [company] and will cherish my time here.

I hope we keep in touch.

And I’m looking forward to seeing how [company name] develops in the future.

Sincerely,

(Your signature) (hard copy only)

(First and last name)

(Your title)

(Your company)

(Company Address)

(Your phone number) (optional)

(Your email address) (optional)

 

শেষ কথা:

আপনি যেকোনো কারণেই আপনার কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

তবে, একটা ভালোভাবে লেখা পদত্যাগপত্র কিন্তু আপনাকে আপনার কোম্পানির সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে।

তাই, আপনার উচিত এমন একটি গুণগতমানসম্পন্ন রেসিগন্যাশন লেটার তৈরী করা যা, পেশাদারি চালে ও সংক্ষিপ্তভাবে আপনার কোম্পানি ছাড়ার অভিপ্রায় ব্যাখ্যা করে, কোম্পানির প্রতি আপনার ভালোবাসা ব্যক্ত করে; আর তার পাশাপাশি নতুন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার সময়ে কোম্পানির ট্রান্সিশন প্রক্রিয়ায় সহায়তার প্রস্তাব দেয়।

চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত নিয়ে লিখা আমাদের আজকের লেখাটি এখানেই শেষ হল।

আশা করছি, চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত কিভাবে লিখতে হয়, এই বিষয়ে আপনারা বুঝতেই পেরেছেন হয়তো।

লেখাটি পছন্দ হলে ও সহায়ক মনে হলে অবশ্যই একটা ছোট্ট কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button