আর্টিকেল

রবি’র আর্থিক অগ্রগতিতে বৈদেশিক বিনিময় হারের নেতিবাচক প্রভাব

রবি’র আর্থিক অগ্রগতিতে বৈদেশিক বিনিময় হারের নেতিবাচক প্রভাব

আয়ের ক্ষেত্রে স্পষ্ট অগ্রগতি এবং গ্রাহক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পরও বৈদেশিক লেনদেনের হারের নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র আর্থিক অগ্রগতি ব্যহত হয়েছে। মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টাকার মান কমে যাওয়ায় এ প্রান্তিকে রবি’র মোট লোকসানের পরিমাণ ১৭২ কোটি টাকা।  বৃহস্পতিবার ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করার সময় এসব তথ্য জানায় অপারেটরটি।

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র আয় ২ হাজার ১০৫ দশমিক কোটি ৪০ টাকা হলেও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে পরিবর্তনের কারণে লোকসানের পরিমাণ ১২ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিনিময় হারের নেতিবাচক প্রভাব না থাকলে আলোচ্য প্রান্তিকে রবি’র মুনাফার পরিমাণ হতো ৮৬ দশমিক ১৩ কোটি টাকা। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকসহ বছরের প্রথম ছয় মাসে রবি’র আয়ের পরিমাণ ৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা এবং কর পরবর্তী মুনাফার (পিএটি) পরিমাণ ২৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক লেনদেনের হারের নেতিবাচক পভাব না পড়লে রবি’র পিএটি’র পরিমাণ হতো ১৩১ দশমিক ৮৮ কোটি টাকা।

এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র আয় গত প্রান্তিকের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় তা বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। গত প্রান্তিকের তুলনায় ভয়েস সেবা থেকে আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় তা বেড়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। গত প্রান্তিকের তুলনায় ডাটা সেবা থেকে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় তা কমেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র মোট গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৫ লাখে, গত প্রান্তিকের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ০ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছরের একই প্রান্তিকে তুলনায় তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫ লাখে যা গত প্রান্তিকের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

এক নজরে ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন):
· সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা ৫ কোটি ৪৫ লাখ।
· ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৫ লাখ যা মোট গ্রাহকের ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ, এ হার দেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পে সর্বোচ্চ।
· মোট গ্রাহকের ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ ফোরজি প্রযুক্তি ব্যবহার করেন।
· মোট আয় ২ হাজার ১০৫ দশমিক ৪ কোটি টাকা।
· ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ মার্জিনসহ আর্নিংস বিফোর ইনটারেস্ট, ট্যাক্সেস, ডেপ্রিসিয়েশন অ্যান্ড অ্যামোর্টাইজেশন (ইবিআইটিডিএ) ৯৬৭ কোটি টাকা।
· শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) (-) ০ দশমিক ০২ টাকা।
· মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৮৩ দশমিক ৪ কোটি টাকা।
· কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি): (-) ১২ দশমিক ২ কোটি টাকা লোকসান।
· সরকারী কোষাগারে জমা ১ হাজার ৪৭৫ দশমিক ৩ কোটি টাকা যা এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মোট আয়ের ৭০ দশমিক ১ শতাংশ।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট গ্রাহকের ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ফোরজি গ্রাহক নিয়ে এক্ষেত্রে বাজারে অগ্রণী অবস্থান ধরে রেখেছে রবি। রবি’র প্রায় ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন যা টেলিযোগাযোগ শিল্পে সর্বোচ্চ এবং মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ ফোরজি প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। দেশজুড়ে ১৪ হাজার ৯৬১টি ফোরজি সাইটের মাধ্যমে দেশের ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ জনসংখ্যাকে ফোরজি সেবার আওতায় এনেছে রবি।

এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রবি’র ফোরজি গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখে। গত প্রান্তিকের তুলনায় তা ৬ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।

এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গড়ে ৫ দশমিক ১জিবি ডাটা ব্যবহার করেছেন। যা গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

গত প্রান্তিকের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ মার্জিনসহ ইবিআইটিডি‘র পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬৭ কোটি টাকায়। গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ বৃদ্ধির হার ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। গত প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ মার্জিন বেড়েছে ৩ দশমিক ৮ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট, গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় যা ৩ দশমিক ৯ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বেশি।

এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রবি’র শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) (-) ০ দশমিক ০২ টাকা। বৈদেশিক লেনদেনের নেতিবাচক হারের প্রভাব না পড়লে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইপিএস’র পরিমাণ হতো ০ দশমিক ১৬ টাকা। অন্যদিকে ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে ইপিএস’র পরিমাণ হতো ০ দশমিক ২৫ টাকা।

রবি এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরকারী কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ দশমিক ৩ কোটি টাকা যা উক্ত প্রান্তিকের মোট আয়ের ৭০ দশমিক ১ শতাংশ। একই প্রান্তিকে মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৮৩ দশমিক ৪ কোটি টাকা।

রবি’র ভারপ্রাপ্ত সিইও এবং সিএফও এম. রিয়াজ রশীদ বলেন, “মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমাদের কষ্টার্জিত মুনাফা হারিয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। টেলিযোগযোগ সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়, তাই বৈদেশিক লেনদেনের হারের অস্থিতিশীলতা আমাদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বাজার প্রতিযোগিতার আলোকে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবও আমাদের ভোগাচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একইসাথে গ্রাহকবৃন্দ, অপারেটররা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সবাই উপকৃত হবে। এক্ষেত্রে আমরা যত দেরি করব, তীব্র প্রতিযোগীতার এই বাজারে তুলনামূলকভাবে ছোট অপারেটটরা তত বেশি ভোগান্তির শিকার হবে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button