Google

গুগলকে আপনার জীবন থেকে মুছে ফেলবেন কিভাবে? কেন তা প্রায় অসম্ভব?

গুগল সার্চ রিপ্লেসমেন্ট

এই আর্টিকেলটির টাইটেল দেখেই হয়তো ভাবছেন যে, কেনই বা তা করতে চাইবেন আপনি বা আমি? হয়তো আপনি কখনোই চেষ্টা করবেন না গুগলকে আপনার জীবন থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে। আমিও করবোনা। তবে হতে পারে আপনি আপনার প্রাইভেসি নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত অথবা অন্য কোন কারনে আপনি গুগলের সার্ভিসগুলো ইউজ করা একেবারে বন্ধ করে দিতে চান এবং গুগলকে আপনার অনলাইন লাইফ থেকে একেবারে সরিয়ে ফেলতে চান। যদি সত্যিই মুছে ফেলতে চান তাহলে কিভাবে করতে হবে জানেন? আর এটা কি জানেন যে গুগলকে সম্পূর্ণভাবে আমাদের অনলাইন জীবন থেকে মুছে দেওয়া প্রায় অসম্ভব? কিভাবে অসম্ভব? এই সবকিছু নিয়েই আজকে আলোচনা করবো।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

গুগল সার্চ রিপ্লেসমেন্ট

আপনি আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিতে পারেন। তবুও আপনাকে সর্বপ্রথম যা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে তা হচ্ছে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের একটি রিপ্লেসমেন্ট খোঁজা যেটিকে আপনি গুগলের পরিবর্তে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গুগলের সার্চ ইঞ্জিনটি হচ্ছে এখনও পর্যন্ত গুগলের প্রধান এবং সবথেকে বেশি ব্যবহার করা সার্ভিস। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আমরা গুগল সার্চের ওপরে এতটাই নির্ভরশীল যে আমরা অনেকেই গুগল সার্চ ছাড়া আর কোন সার্চ ইঞ্জিন চিনিই না। আমরা অনেকেই জানি Bing , Yahoo এবং DuckDuckGo নামে আরও কয়েকটি জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন আছে। তবে এগুলোর কোনটাই কখনোই গুগলের মতো এত জনপ্রিয় এবং এত বেশি রিলায়েবল ছিলনা এবং এখনও নেই।

গুগল সার্চের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে যদি কিছু ব্যাবহারই করতে হয়, তবে গুগলের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে সবথেকে কাছাকাছি যে সার্চ ইঞ্জিনটি আসতে পারে তা হচ্ছে DuckDuckGo। এই সার্চ ইঞ্জিনটি মুলত নিজেকে নিজেই অ্যান্টি-গুগল হিসেবে ঘোষণা করে। যেমন, এই সার্চ ইঞ্জিনটি আপনাকে ট্র্যাক করবে না কখনোই যেমনটা গুগল সবসময়ই করে আসছে।

গুগলের অ্যাডভারটাইজাররা যেমন আপনাকে ট্র্যাক করে আপনার ইন্টারেস্ট অনুযায়ী অ্যাড দেখাতে পারে, DuckDuckGo এর অ্যাডভারটাইজাররা কখনোই আপনাকে ট্র্যাক করতে পারবেনা এবং সেই অনুযায়ী অ্যাডও দেখাতে পারবে না। এছাড়া এই সার্চ ইঞ্জিনটি কখনোই আপনার পার্সোনাল ডেটা স্টোর করে রাখবে না। এই একটি অ্যাডভান্টেজই আপনি পাবেন যদি আপনি গুগলের পরিবর্তে এটিকে আপনার ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে সত্যি কথা বলতে, পৃথিবীর কোন সার্চ ইঞ্জিনই কখনো গুগলের থেকে বেশি ভালো এবং বেশি জনপ্রিয় হতে পারবে না।

গুগল ক্রোম রিপ্লেসমেন্ট

এটাও আরেকটি হার্ড ডিসিশন। গুগল ক্রোম সম্পর্কে বলার কিছু নেই। আমরা প্রায় সবাই গুগল ক্রোমকে আমাদের ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে ব্যবহার করি। আমাদের পিসিতে এবং স্মার্টফোনে দুই জায়গাতেই গুগল ক্রোম প্রাইমারিলি ব্যবহার করে অধিকাংশ ইউজার। প্রথম অধিকাংশ ইউজার গুগল ক্রোম ভালো না লাগলেও ক্রোমকে বাদ দিতে পারেন না ক্রোমের সহজ ইউআই, গুগলের সাথে ডিপ ইন্টাগ্রেশন এবং অনেকটা অভ্যাসের কারনে। গুগলের থেকে অনেক ভালো ব্রাউজার তৈরি হলেও অধিকাংশ ইউজার অভ্যাসের কারনে ক্রোমকে বাদ দিতে পারেন না। তবে গুগলকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে চাইলে গুগল ক্রোম ব্রাউজারেরও একটি রিপ্লেসমেন্ট দরকার হবে আপনার।

এখন আপনি যতগুলো জনপ্রিয় ব্রাউজার দেখবেন, তার মধ্যে অধিকাংশই ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের ওপর তৈরি। অর্থাৎ সেগুলোর সাথে গুগল ক্রোমের খুব একটা ডিফারেন্স নেই। যদি গুগলকে বাদ দেওয়া বলতে যতকিছুর সাথে গুগলের বা গুগলের কোন প্রোডাক্টের সম্পর্ক আছে সবকিছুই বাদ দিতে চান, তাহলে হয়তো আপনি ক্রোমিয়াম বেজড কোন ব্রাউজারও ইউজ করতে চাইবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে সম্পূর্ণ একটি নতুন প্লাটফর্মে মুভ করতে হবে। যেমন- মাইক্রোসফট এজ অথবা মজিলা ফায়ারফক্স। মাইক্রোসফট এজ ব্যবহার করার তো প্রশ্নই আসেনা, সঙ্গত কারনেই।

তাই সবশেষে ক্রোম ছাড়তে চাইলে আপনার কাছে একমাত্র ভালো অপশন হচ্ছে মজিলা ফায়ারফক্স। ফায়ারফক্সের নতুন ভার্সন অর্থাৎ ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম অনেক ভালো এবং আমি সহ অনেকেরই পছন্দের। তবে সত্যি কথা বলতে, এটি এখনো ক্রোমের থেকে ভালো হয়ে পারেনি। এছাড়া ক্রোমের সমান ভালোও আমি বলবোনা। ফায়ারফক্স ব্যবহার করলে আপনাকে কিছু জিনিসের কথা ভুলে যেতেই হবে। যেমন, গুগলের সাথে ডিপ ইন্টাগ্রেশন। যেহেতু গুগলকেই বাদ দিচ্ছেন, তাই এটি কোন ইস্যু হওয়ার কথা না। এছাড়া এক্সটেনশনের স্বল্পতা নিয়েও সমস্যায় পড়তে পারেন। এছাড়া গুগল ক্রোমের অন্যান্য প্রায় সবকিছুই ফায়ারফক্সে পেয়ে যাবেন।

জিমেইল রিপ্লেসমেন্ট

আমি যখন কাউকে তার ইমেইল অ্যাড্রেস জিজ্ঞাসা করি এবং সে যখন একটি ইয়াহু ইমেইল অ্যাড্রেস দেয়, তখন আমি আক্ষরিক অর্থেই তার দিকে ৫ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকি এটা বোঝার জন্য যে, এমন মানুষও এখনো আছে। সত্যি বলতে, জিমেইল ছাড়া অন্য কোন ইমেইল আমার মতো বা আপনার মতো অধিকাংশ মানুষের কাছেই স্ট্যান্ডার্ড মনে হয়না। যদিও ইমেইলের দিক থেকে মাইক্রোসফটের আউটলুক অনেক ভালো, কিন্তু জিমেইলের সাথে তুলনা করার মতো নয়। এর কারন হচ্ছে, গুগলের অন্যান্য প্রোডাক্ট যেমন গুগল কিপ, গুগল ক্যালেন্ডার ইত্যাদির সাথে জিমেইলের ডিপ ইন্টাগ্রেশন। এর আরো একটি কারন হচ্ছে, প্রত্যেকটি গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে জিমেইল অ্যাকাউন্ট ডিফল্টভাবে থাকেই।

আলাদা করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার দরকার হয়না। তাই যাদের গুগল অ্যাকাউন্ট আছে, তারা জিমেইল ছাড়া অন্য কোন ইমেইল প্রাইমারিলি বাবহার করেন না। তবে গুগলের এর ইকোসিস্টেম থেকে বের হতে হলে আপনাকে জিমেইল ব্যবহার করাও বন্ধ করতে হবে। এর জন্য আপনাকে অন্য কোন ইমেইলে মুভ করতে হবে। যেমন- ইয়াহু, আউটলুক এবং আরও অন্য কোন ইমেইল প্রোভাইডার।

আমি শুধু ইয়াহু এবং আউটলুকই চিনি। আমার কাছে জানতে চাইলে আমি সাজেস্ট করবো আউটলুক ব্যবহার করার জন্য। এর ফলে আপনি জাস্ট গুগলের ইকোসিস্টেম থেকে বেরিয়ে মাইক্রোসফটের ইকোসিস্টেমে প্রবেশ করছেন। আউটলুক ব্যবহার করলে আপনি জিমেইলের থেকে আরও সুন্দর একটি ইউজার ইন্টারফেস পাবেন। এছাড়াও পাবেন আপনার মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের সাথে থাকা প্রোডাক্টগুলোর ডিপ ইন্টাগ্রেশন।

যেমন- ওয়াননোট, ওয়ানড্রাইভ, মাইক্রোসফট অফিস, আউটলুক ক্যালেন্ডার ইত্যাদি। তবে সত্যি কথা বলতে, আউটলুক ইমেইল হিসেবে অনেক ভালো হলেও জিমেইলের সাথে কখনোই কম্পেয়ারেবল না। তবে যদি গুগলকে বাদ দিতে চান, তবে জিমেইলকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে আপনাকে।

ইউটিউব রিপ্লেসমেন্ট

এটা আপনি পারবেন না। সত্যিকার অর্থেই ইউটিউবের মতো ভালো এবং এত বড় কোন ভিডিও প্লাটফর্ম আর একটাও নেই। ভিজটরের কথা তো বাদ দিলাম, আপনি যদি একজন ক্রিয়েটরও হয়ে থাকেন, তাহলেও আপনার ভিডিও পাবলিশ করার জন্য ইউটিউবের থেকে পারফেক্ট জায়গা আর একটাও নেই। অডিয়েন্স বলুন, রেভিনিউ বলুন আর জনপ্রিয়টা বলুন, কোনদিক থেকেই ভিডিও পাবলিশ করার জন্য ইউটিউবের মতো আর কিছুই নেই।

হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন যে ভিডিও প্লাটফর্ম হিসেবে Vimeo অনেক ভালো। তবে সত্যি কথা বলতে এটি ইউটিউবের ধারে-কাছেও কম্পেয়ারেবল কিছু না। Vimeo তে আপনি নিজের ভিডিও হোস্ট করতে পারবেন ঠিকই, তবে আপনার টারগেটেড অডিয়েন্স খুব কম পাবেন এখানে। Vimeo প্লাটফর্মটি বিশেষভাবে ফিল্মমেকার এবং ভিডিওগ্রাফারদের টার্গেট করেই তৈরি করা। ইউটিউবের মতো এত বড় ফ্যান বেস আর কোথাও পাবেন না, অন্তত ভিডিওর ক্ষেত্রে।

তাই আপনি ইউটিউবের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে Vimeo ব্যবহার করতেই পারেন, তবে সেটি ইউটিউবের মতো কখনোই হবেনা। তবে গুগলের সব সার্ভিসের মধ্যে ইউটিউব অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। তাই গুগলের ইকোসিস্টেম থেকে সম্পূর্ণভাবে বের হতে হলে ইউটিউবকেও স্যাক্রিফাইস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

অ্যান্ড্রয়েড রিপ্লেসমেন্ট

এটাই সম্ভবত গুগলের ইকোসিস্টেম থেকে বের হওয়ার সবথেকে কঠিন ধাপ। আপনি যতক্ষন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করছেন, ততক্ষন আপনি যৌক্তিকভাবে গুগলের ইকোসিস্টেমের ভেতরেই আছেন। যদিও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে যদি আপনি আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট সাইন ইন না করেন তাহলে গুগলের অনেক সার্ভিস আপনাকে ব্যবহার করতে হচ্ছেনা, তবুও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মালিক যেহেতু গুগল, তাই অ্যান্ড্রয়েডের ওপরে গুগলের কিছুটা কনট্রোল থেকেই যায়।

তাই গুগলকে সম্পূর্ণভাবে লাইফ থেকে মুছে ফেলতে চাইলে আপনাকে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করাও বন্ধ করতে হবে। এর জন্য নিশ্চই ধারনা করতে পারছেন, আপনার একমাত্র গন্তব্য হবে আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক ইত্যাদি অর্থাৎ সহজ কথায় বলতেম অ্যাপলের ইকোসিস্টেম। তবে আমরা সবাই জানি, আইফোন এবং অ্যাপলের অন্যান্য ডিভাইস অনেক বেশি এক্সপেনসিভ এবং অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে অ্যান্ড্রয়েডের মতো এত বেশি সুযোগ-সুবিধা নেই।

ঠিক এই কারণেই, অনেকেই অ্যাপলের ডিভাইস ব্যবহার করতে চান না। তবে ২০১৮ তে এসে উইন্ডোজ ফোন এবং ব্ল্যাকবেরি ব্যবহার করার প্রশ্নই আসেনা। তাই স্মার্টফোনের জন্য আপনার কাছে একমাত্র যা অপশন বাকি থাকলো, তা হচ্ছে আইফোন।

গুগলের অন্যান্য প্রোডাক্টের রিপ্লেসমেন্ট

গুগলকে সম্পূর্ণভাবে অনলাইন লাইফ থেকে মুছে ফেলতে হলে গুগলের যে কয়েকটি প্রোডাক্ট আপনি ব্যবহার করেন, তার প্রত্যেকটি কিছু না কিছু অলটারনেটিভের সাথে রিপ্লেস করে নিতে হবে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই গুগলের প্রোডাক্টগুলোর মতো রিলায়েবল হবেনা, তবে মোটামুটি কাজ চালানোর জন্য এগুলো যথেষ্ট। যেমন-

গুগল প্রোডাক্ট রিপ্লেসমেন্ট
গুগল সার্চ বিং/ইয়াহু/ডাকডাকগো
জিমেইল ইয়াহু মেইল/ আউটলুক মেইল/ অন্যকিছু
গুগল ক্যালেন্ডার আউটলুক ক্যালেন্ডার
গুগল ড্রাইভ ড্রপবক্স/বক্স/মেগা/ওয়ানড্রাইভ
ইউটিউব ভিমিও
গুগল কিপ ওয়াননোট/এভারনোট
গুগল ডক মাইক্রোসফট অফিস অনলাইন
গুগল অ্যাডসেন্স মিডিয়া ডট নেট/অন্য অ্যাড নেটওয়ার্ক

আশা করি এতক্ষনে কিছুটা হলেও ধারনা দিতে পেরেছি যে গুগলকে কিভাবে আপনার অনলাইন লাইফ থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে হবে এবং এটাও কিছুটা বোঝাতে পেরেছি যে কেন তা করা প্রায় অসম্ভব। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button