ComputerLife Style

ল্যাপটপ ব্যাটারি আয়ু বাড়ানোর কিলার টিপস!

ল্যাপটপ ব্যাটারি আয়ু বাড়ান খুব সহজেই

আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি যে, এখনকার  ল্যাপটপগুলোতে সাধারনত কেনার সময় যে ধরনের ব্যাটারি লাইফের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কিংবা ল্যাপটপের অ্যাডে যে ধরনের ব্যাটারি লাইফ প্রোভাইড করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, অধিকাংশ ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ এত বেশি পাওয়া যায় না। হ্যা, স্পেশালি ব্যাটারি লাইফ ফোকাসড ল্যাপটপও মার্কেটে পাওয়া যায়, তবে সেগুলো খুব বেশি জনপ্রিয় না এবং সবাই ব্যাবহারও করে না, যদিনা তার কাছে ব্যাটারি লাইফটাই ল্যাপটপ কেনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে কিছু টিপস মেনে চললে আপনি আপনার রেগুলার ল্যাপটপটির ব্যাটারি লাইফও অনেক বেশি না হলেও কিছুটা ইমপ্রুভ করতে পারবেন, যদিনা আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারির কোন হার্ডওয়্যারজনিত সমস্যা থাকে। আজকে এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো যেগুলো ফলো করলে আপনি ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ কিছুটা ইমপ্রুভ করতে পারবেন।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ব্যাটারি পারফরমেন্স স্লাইডার ব্যাবহার করুন

আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ এর লেটেস্ট স্প্রিং ক্রিয়েটরস আপডেট ব্যাবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার ল্যাপটপে আগে থেকেই এই ফিচারটি আছে। আপনি উইন্ডোজের টাস্কবারে ব্যাটারি আইকনে ক্লিক করলে একটি স্লাইডার দেখতে পাবেন যেখানে আপনি স্লাইডারটিকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মুভ করে আপনার ল্যাপটপকে বেস্ট ব্যাটারি লাইফ অথবা বেস্ট পারফরমেন্সের জন্য অপটিমাইজ করতে পারবেন।

অধিকাংশ ল্যাপটপ ইউজার যা করে থাকে, তা হচ্ছে এই স্লাইডারটিকে সবসময়ই বেস্ট পারফরমেন্সে সিলেক্ট করে রাখে ভালো পারফরমেন্স পাওয়ার লক্ষ্যে। সেখানে লেখাই আছে যে, আপনি যদি বেস্ট পারফরমেন্স চান, তাহলে আপনাকে ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ অনেকটা স্যাক্রিফাইস করতে হবে, আর যদি বেস্ট ব্যাটারি লাইফ চান, তাহলে আপনাকে কিছুটা পারফরমেন্স স্যাক্রিফাইস করতে হবে।

তাই এই স্লাইডারটিকে সবসময় যদি বেস্ট পারফরমেন্সের দিকে না রেখে লাইট টাস্ক করার সময় বেস্ট ব্যাটারি লাইফের দিকে সরিয়ে রাখেন, তাহলে আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ অবশ্যই কিছুটা ইমপ্রুভ হবে। সবসময়ই বেস্ট ব্যাটারি লাইফ ব্যাবহার করতে হবে এমনটা নয়। তবে ইন্টেনসিভ টাস্ক যেমন ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, গেমিং এসব কাজের সময় বেস্ট পারফরমেন্স মোড ব্যাবহার করতে পারেন এবং লাইট টাস্ক যেমন ভিডিও প্লেয়িং, টাইপিং ইত্যাদি কাজের সময় বেস্ট ব্যাটারি লাইফ মোড ব্যাবহার করতে পারেন। এভাবে আপনার ব্যাটারি লাইফ কিছুটা হলেও ইমপ্রুভ হবে।

প্রয়োজনমতো এয়ারপ্লেন মোড ব্যাবহার করুন

যারা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিংবা আইফোন কিংবা যেকোনো মডার্ন ফোন ব্যাবহার করেন, তারা সবাই এয়ারপ্লেন মোড বা ফ্লাইট মোডের সাথে ভালোভাবেই পরিচিত। এয়ারপ্লেন মোড অন করলে মুলত ফোনের ইনকামিং এবং আউটগোইং সবধরনের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ডিজেবল হয়ে যায়। অর্থাৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস ইত্যাদি সবধরনের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ডিজেবল হয়ে যাবে। এর ফলে স্মার্টফোনের ব্যাটারি অনেক বেশি সেভ হয়, যখন আপনার ব্যাটারিতে চার্জ প্রায় শেষের পথে।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে উইন্ডোজ ১০ চালিত ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপেও এই এয়ারপ্লেন মোড ফিচারটি আছে এবং এখানেও এই ফিচারটি একই কাজ করে। তাই প্রয়োজনমতো এয়ারপ্লেন মোড ব্যাবহার করুন যাতে আপনি আরও ভালো ব্যাটারি লাইফ পেতে পারেন। ধরুন আপনি এমন কোন কাজ করছেন যেখানে আপনার ইন্টারনেট কিংবা অন্য কোন ধরনের নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটির দরকার নেই। হয়তো কোন অফলাইন গেম খেলছেন, কিংবা কোন অফলাইন মুভি দেখছেন, এসব সময়ে এয়ারপ্লেন মোড অন রাখলে ব্যাটারি কিছুটা হলেও সেভ হবে।

অতিরিক্ত ব্যাটারি ড্রেইন করা অ্যাপসগুলো খুঁজে বের করুন

আপনারা সবাই হয়তো জানেন যে উইন্ডোজ ১০ এ আপনার ল্যাপটপে ইন্সটল করা অ্যাপগুলোর মধ্যে কোন কোন অ্যাপস কেমন ব্যাটারি ড্রেইন করছে সেগুলো আপনি উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট সেটিংস মেনু থেকেই চেক করতে পারবেন অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের মতো। এখান থেকে প্রোগ্রেস বার ইন্ডিকেটরের সাহায্যে দেখতে পারবেন যে কোন কোন অ্যাপ এবং প্রোগ্রাম আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারিকে ড্রেইন করছে। যে অ্যাপসগুলো ব্যাটারি বেশি ড্রেইন করছে সেগুলো কিছুটা কম ব্যাবহার করার চেষ্টা করুন।

এছাড়া এখান থেকে সবগুলো অ্যাপের নামের ওপরে ক্লিক করে কিছু অ্যাডভান্সড অপশন পাবেন যেগুলোর মধ্যে সিলেক্ট করা অ্যাপটির সকল ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি ডিজেবল করে দেওয়ারও অপশন পাবেন। অ্যাপটি যদি আপনার সবসময় দরকার না হয় এবং অ্যাপটির থেকে কন্সট্যান্টলি ব্যাকগ্রাউন্ড নোটিফিকেশনের দরকার না থাকে, তাহলে আপনার কম প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি অফ করে দিতে পারেন যা আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ আরও একটু ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করবে।

গ্রাফিক্স ও ডিসপ্লে সেটিংস অ্যাডজাস্ট করুন

আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ এর লেটেস্ট বিল্ডটি ব্যাবহার করেন এবং আপনার ল্যাপটপে ইন্টাগ্রেটেড জিপিইউ এর পাশাপাশি একটি হাই পারফরমেন্স জিপিইউও থাকে, তাহলে আপনি চাইলে স্পেসিফিক কোন অ্যাপের জন্য কোন জিপিইউটি ব্যাবহার করতে চান, তা নিজের ইচ্ছামত সেট করতে পারবেন। আপনি উইন্ডোজ ১০ এর সেটিংস মেনু থেকে Display অপশনে গিয়ে Advanced Graphics Settings অপশনে গেলেই এই সেটিংসটি পাবেন।

এখানে মুলত আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে যে আপনি কোন অ্যাপটি ব্যাবহার করার সময় আপনার ইন্টাগ্রেটেড পাওয়ার সেভিং ইন্টেল এইচডি জিপিইউ ব্যাবহার করতে চান এবং কোন অ্যাপটি ব্যাবহার করার সময় হাই পারফরমেন্স এনভিডিয়া কিংবা এএমডি জিপিইউ ব্যাবহার করতে চান।

ইন্টাগ্রেটেড জিপিইউ ব্যাবহার করলে আপনি অনেক বেশি ব্যাটারি সেভ করতে পারবেন। যেমন ধরুন- আপনি এমনভাবে সেটিংস করে রাখলেন যে, আপনি যখন ফটোস অ্যাপটি ব্যাবহার করবেন বা ভিডিও প্লেয়ারটি ব্যাবহার করবেন, কিংবা মাইক্রোসফট অফিস প্রোগ্রাম ব্যাবহার করবেন, তখন ইন্টাগ্রেটেড পাওয়ার সেভিং জিপিইউটি ইউজ হবে, যেহেতু এগুলো কোন ইন্টেনসিভ টাস্ক নয়। আর অন্যান্য ইন্টেনসিভ টাস্ক করার সময় যেমন ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটর ব্যাবহার করার সময় কিংবা গেম খেলার সময় হাই পারফরমেন্স জিপিইউটি ব্যাবহার হবে। এভাবে নিজের প্রয়োজনমতো ডিসপ্লে এবং গ্রাফিক্স অ্যাডজাস্ট করে নিলে আপনি বেশ লক্ষ্যনীয় পরিমান ব্যাটারি লাইফ ইপ্রুভ করতে পারেন।

এক্সটারনাল ব্যাটারি প্যাক ব্যাবহার করুন

বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ব্যাবহার করে তবে এক্সট্রা ব্যাটারি প্যাক বা পাওয়ার ব্যাংক ব্যাবহার করেনা এমন ফোন ইউজার খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বিশেষ করে হাই এন্ড স্মার্টফোন ইউজাররা এক্সট্রা পাওয়ার ব্যাংক ব্যাবহার করে থাকে যেহেতু হাই এন্ড স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারি ব্যাকআপ বাজেট স্মার্টফোনগুলোর মতো এত ভালো হয়ে থাকে না। ব্যাপারটা হাই এন্ড বা মিড এন্ড ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও সত্যি।

আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ যদি খুব ভালো না হয়, তাহলে আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে, আপনার ল্যাপটপের জন্য একটি এক্সট্রা ব্যাটারি রাখতে পারেন ট্রাভেল করার সময় কিংবা এমন সময় যেখানে ল্যাপটপ ফ্রিকুয়েন্টলি চার্জ করা সম্ভব নয়। একটি ব্যাটারি সবসময় ফুল চার্জ করে রেখে দিতে পারেন যাতে দরকারের সময় সেটি ব্যাবহার করতে পারেন।

এছাড়া যা করতে পারেন, তা হচ্ছে কাছে একটি হাই এন্ড পাওয়ার ব্যাকআপ রাখতে পারেন, যাকে আমরা পাওয়ার ব্যাংক বলে থাকি। সাধারনত ২০,০০০ বা এর বেশি মিলিঅ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংকগুলো স্মার্টফোনের পাশাপাশি আপনার ল্যাপটপকে যথেষ্ট পরিমান চার্জ প্রোভাইড করতে সক্ষম হয়। এছাড়া এখনকার মডার্ন প্রায় সব ল্যাপটপেই ইউএসবি সি পোর্ট থাকে যেগুলোর সাহায্যে খুব সহজেই পাওয়ার ব্যাংক কানেক্ট করতে পারবেন ল্যাপটপে এবং চার্জ দিতে পারবেন। ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ ইমপ্রুভ করার সবথেকে প্র্যাকটিকাল এবং সবথেকে পারফেক্ট সল্যুশন এটাই।


এই ছিলো কয়েকটি টিপস যেগুলো আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ ইমপ্রুভ করতে সাহায্য করবে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button