Tech

বিটরেট কি? কেন এটি এতো গুরুত্বপূর্ণ? — বিস্তারিত

বিটরেট কিভাবে কাজ করে?

আজকের প্রযুক্তি থেকে আমরা সবকিছু সুপার ফাস্ট স্পীড আশা করি। আমাদের ইন্টারনেট চাই সুপার ফাস্ট, কম্পিউটার চাই সুপার ফাস্ট এমনকি স্মার্টফোনও চাই সুপার ফাস্ট। সুপার ফাস্ট ডিমান্ড থাকার সাথে আজ কোয়ালিটিরও অনেক ডিমান্ড বেড়েছে। মুভিজ, ভিডিও, অডিও হাই কোয়ালিটি না হলে মজা পাওয়া যায় না। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই সুপার ফাস্ট ইন্টারনেটের স্পীড আর আলট্রা হাই ডেফিনিশন ভিডিওর কোয়ালিটির জন্য কে দায়ী? বিটরেট নামক এক টার্ম ইন্টারনেট স্পীড বা হাই কোয়ালিটি ভিডিও প্রদান করার প্রধান প্রভাবক। তো চলুন এর সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসি এবং বোঝার চেষ্টা করি এটি কেন প্রয়োজনীয়।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

বিটরেট কি?

বিটরেট মূলত একটি টার্ম বা বলতে পারেন একধরণের গণনা; এটি দ্বারা বোঝা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে কতো গুলো বিট (কম্পিউটার ডাটা) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর করা হচ্ছে। বিটরেটকে সাধারনত বিট/প্রতিসেকেন্ড বা বিপিএস (bps), কিলোবিট/প্রতি সেকেন্ড বা কেবিপিএস (Kbps), মেগাবিট/প্রতি সেকেন্ড বা এমবিপিএস (Mbps) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

যখন মামলা আসে ইন্টারনেট স্পীডের ক্ষেত্রে তখন বিটরেট যতোবেশি হবে ততোই ফাস্ট ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব এবং অডিও বা ভিডিওর ক্ষেত্রে বিটরেট যতোবেশি হয় ততোবেশি ভালো কোয়ালিটি দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ফাইল সাইজ অনেক বেড়ে যেতে পারে। ইন্টারনেট প্রভাইডার কোম্পানি তাদের ইন্টারনেট প্ল্যান গুলোকে বিভিন্ন বিট স্পীডে সাইজে রাখে। তাদের প্ল্যান সবসময়ই কিলোবিট বা মেগাবিট এই রূপে হয়ে থাকে। অনেকে কিলোবিট বা মেগাবিটকে কিলোবাইট বা মেগাবাইট মনে করে ভুল করে। কেনোনা কিলোবিট/প্রতি সেকেন্ডকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে কেবিপিএস (Kbps) লিখা হয় এবং কিলোবাইট/প্রতি সেকেন্ডকেও কেবিপিএস (KBps) লিখা হয়। তবে সেখানে বাইট না বিট লেখা আছে সেটি নির্ভর করে ইংরেজি অক্ষর “কে” (K) এর পরে ছোট হাতের “বি” (b) রয়েছে নাকি বড় হাতের “বি” (B) রয়েছে। ছোট হাতের অক্ষর হলে সেটা বিট এবং বড় হাতের অক্ষর হলে সেটা বাইট। মনে রাখবেন ১ বাইটে ৮টি বিট থাকে; তাই বাইট সাধারনত বিট থেকে বড়

ইন্টারনেট

আগেই বলেছি, যখন প্রশ্ন আসে ইন্টারনেটের তখন সবসময়ই হাই বিটরেট বেস্ট। ইন্টারনেট স্পীড কম বা বেশি হওয়াতে আপনার হার্ডওয়্যারের উপর কোন চাপ ফেলে না বরং বিটরেট বেশি বা স্পীড বেশি হলে আপনার কাছে কোন ডাটা অনেক দ্রুত পৌঁছে যেতে পারে। হাই বিটরেটস ইন্টারনেট কানেকশনের অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমন— আপনি হাই কোয়ালিটি ভিডিও স্ট্রিম করতে পারবেন, কোন আটকা আটকি ছাড়া অনলাইন গেমিং করতে পারবেন, দ্রুত ওয়েব পেজ ব্রাউজ করতে পারবেন, দ্রুত গতিতে ফাইল আপলোড (যে ফাইল আপনার কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেটে ছাড়া হয়) এবং ডাউনলোড (যে ফাইল ইন্টারনেট থেকে আপনার কম্পিউটারে নেওয়া হয়) করতে পারবেন। বেশি বিটরেটস ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে বড় বড় সাইজের ফাইল ডাউনলোড করতে মাত্র কয়েক মিনিটই প্রয়োজন।

ইন্টারনেট কানেকশনে দুই ধরনের বিটরেটস পরিমাপ থাকে, এটি পরিমাপ আপলোডের জন্য এবং আরেকটি পরিমাপ ডাউনলোড করার জন্য। বেশিরভাগ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার আপলোডের চেয়ে ডাউনলোডে বেশি প্রধান্য দিয়ে থাকে, তাই সাধারনত ডাউনলোড স্পীড আপলোড স্পীড থেকে বেশি হয়—কেনোনা বেশিরভাগ ইন্টারনেট ইউজার আপলোড থেকে ডাউনলোডই বেশি করে। ডাউনলোড মানে কিন্তু শুধু কোন ফাইল ডাউনলোড তা কিন্তু নয়। ইন্টারনেট থেকে যতো ডাটা আপনার কম্পিউটারে আসে এমনকি ওয়েবপেজও, এই সবকিছুই ডাউনলোডের মধ্যে পড়ে।

কিন্তু আপনি যদি ডাউনলোডের চেয়ে আপলোড বেশি করেন কিংবা হয়তো প্রতিনিয়ত বড় ফাইল আপলোড করেন তবে আপনার আপলোড বিটরেট চেক করে নেওয়া উচিৎ। আপনি আপনা আইএসপি থেকে কতো বিটরেটের ইন্টারনেট কিনেছেন এবং আপনি ব্যস্তবে কতো স্পীড পাচ্ছেন তা পরীক্ষা করার জন্য একটি ওয়েবসাইট রয়েছে স্পীড টেস্ট ডট নেট; এটি হয়তো একেবারে নির্ভুল পরিমাপ দেবে না তবে আপনি মুটামুটি ধারণা নিতে পারবেন। ইন্টারনেট কানেকশনে বিটরেটস এর পাশাপাশি আরেক টার্ম রয়েছে যার নাম পিং বা লেটেন্সি; এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে একটি আর্টিকেল রয়েছে পড়ে নিতে পারে।

অডিও এবং ভিডিও

যে অডিও বা এম্পিথ্রি মিউজিক আমরা শুনি সেটা স্টুডিও রেকর্ড থেকে অনেক আলাদা, এটিকে মূলত কমপ্রেস (কমপ্রেস করলে ফাইল সাইজ কমে যায়) করে তবেই লিসেনারদের জন্য যোগ্য করা হয়। আর অডিও ফাইল গুলোকে সাধারনত লসি কমপ্রেস করা হয়, এতে সাইজ কমে যায় এবং কোয়ালিটিরও একটু পার্থক্য আসে। সোর্স ডাটা থেকে কম্প্রেসন করে আলাদা সাইজের এবং আলাদা কোয়ালিটির ফাইল বানানো সম্ভব এবং বিটরেট টার্মের উপর ভিত্তি করে বোঝা সম্ভব কোন অডিওটি সাইজ কতো বেশি বা কম কিংবা কোনটির কোয়ালিটি কতটা ভালো।

সাধারনত একটি অডিও ফাইল প্রতি সেকেন্ড প্লে করার জন্য কতটা বিটরেট প্রয়োজনীয় হচ্ছে সেটা থেকেই কোয়ালিটি বোঝা যায়। অডিওতে সাধারনত ৯৬ কিলোবিট/প্রতি সেকেন্ড থেকে ৩২০ কিলোবিট/প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত বিটরেটস থাকে। যেকোনো লোকাল অডিও বা মিউজিক শোনার জন্য ১২৮ কেবিপিএস অডিও ব্যবহার করা হয় এবং অরিজিনাল সিডি ভার্সন কোয়ালিটি পাওয়ার জন্য ১৬০ কেবিপিএস তে অডিও এনকোড করা হয়। হাই কোয়ালিটি অডিওর জন্য ৩২০ কেবিপিএস এ অডিও এনকোড করা হয়; তবে ১৬০ কেবিএস এবং ৩২০ কেবিপিএস এর মধ্যে অডিও কোয়ালিটির পার্থক্য করার ক্ষমতা আমাদের মানুষের কানে নাই।

একই লজিক ভিডিওর ক্ষেত্রেও— হাই বিটরেটের ভিডিওতে বেশি ভালো কোয়ালিটি পাওয়া যায়। একই রেজুলেসন হওয়া শর্তেও যদি বিটরেটস কম থাকে তবে কোয়ালিটি ভালো হবে না। আগেই বলেছি ১ বাইটে ৮টি বিট থাকে; অর্থাৎ কোন ভিডিও যদি প্রতি সেকেন্ডে ১ মেগাবাইট ডাটারেট ব্যবহার করে তবে ভিডিওটি হবে ৮ মেগাবিট/ প্রতি সেকেন্ড বিটরেটের। একটি এইচডি ব্ল্যু রে ভিডিও সাধারনত ২০ মেগাবিট/প্রতিসেকেন্ড বিটরেটের, স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন ডিভিডি ভিডিও সাধারনত ৬ মেগাবিট/প্রতিসেকেন্ড এবং অনলাইন ভিডিও গুলো ২ মেগাবিট/প্রতিসেকেন্ডের হয়ে থাকে। অনলাইন ভিডিও গুলোতে কম বিটরেট থাকার কারণ হলো, এতে স্লো বিটরেটস ইন্টারনেট কানেকশন থেকেও প্লে করা যায়।

ভিডিওর সাইজ কমানোর জন্য কমপ্রেস করে এর বিটরেটস কমিয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওতে বিটরেটস এর ভূমিকা অনেক বেশি, আপনি হাই রেজুলেসন ভিডিওতেও ভালো কোয়ালিটি পাবেন না যদি বিটরেটস বেশি না হয়। তবে কিছু কম্প্রেসন টেকনিক এবং অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে কম বিটরেটের ভিডিওতে অসাধারণ কোয়ালিটি পাওয়া সম্ভব। ভিডিও কোয়ালিটি নষ্ট না করে কীভাবে ভিডিও কমপ্রেস করা যায় এনিয়ে একটি আর্টিকেল রয়েছে, পড়ে আসতে পারেন।

আবার অনেক সময় দেখা যায় সাধারন এইচডি ভিডিও আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে আটকে যায়। সব সময়ই কিন্তু এমন হয়না যে আপনার মিডিয়া প্লেয়ারের সমস্যা; হতে পারে আপনার ভিডিওটির বিটরেট অনেক বেশি কিন্তু আপনার মেমোরি কার্ড বা হার্ডড্রাইভের বিটরেট অনেক কম, তাই এরকম সমস্যা হতে পারে। তাই হাই বিটরেটস ফাইল রীড করতে আপনার হার্ডড্রাইভেরও বিটরেটস বেশি থাকতে হবে; এনিয়ে নিচে আরো আলোচনা করছি।

হার্ডড্রাইভ এবং এসএসডি

হ্যাঁ শুধু কোন ফাইলের বা ইন্টারনেটের নয়, আপনার হার্ডড্রাইভ বা এসএসডি বা যেকোনো মিডিয়া স্টোরেজেরও পর্যাপ্ত বিটরেট থাকতে হবে। হার্ডড্রাইভের বিটরেটস বলতে এর রীড এবং রাইট স্পীডকে নির্দেশ করা হচ্ছে, যেটা অপারেটিং সিস্টেম লোড, সফটওয়্যার বা গেম ওপেন, বড় ফাইল সেভ করার সময় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি টার্ম।

হার্ডড্রাইভ রীড এবং রাইট স্পীড নির্ভর করে এর আরপিএম (হার্ডড্রাইভের ভেতরে থাকা ডিস্ক প্রতি মিনিটে কতোবার ঘুরতে পারে তার হিসেব) এর উপর। কিন্তু এসএসডি এর স্পীড আরপিএম এর সাথে নির্ভরশীল নয়, এতে কোন মেকানিক্যাল অংশ থাকে না বরং এর ফ্ল্যাশ নির্ভর স্টোরেজ এবং এর সাথে লাগানো কন্ট্রোলার চিপ থাকে—যা এর রীড এবং রাইট স্পীড নির্ধারণ করে।

আপনার হার্ডড্রাইভের স্পীড অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ধরুন আপনার ইন্টারনেট স্পীড অনেক বেশি, কিন্তু পর্যাপ্ত হার্ডড্রাইভ স্পীড না থাকলে আপনার সম্পূর্ণ ইন্টারনেট স্পীড ব্যবহার করে কখনোই ডাউনলোড করা সম্ভব হবে না। আবার আপনার কম্পিউটারে অনেক শক্তিশালী প্রসেসর এবং অনেক পরিমানে র‍্যাম লাগানো পরেও যদি হার্ডড্রাইভ বিটরেট কম হয় তবে কম্পিউটার পারফর্মেন্স খারাপ হয়ে যেতে পারে।

শেষ কথা

আশা করছি এতোক্ষণে বিটরেটের গুরুত্ব সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়ে গেছে এবং আপনি জানলেন কীভাবে বিটরেট প্রত্যেক (কম্পিউটার থেকে মোবাইল পর্যন্ত) স্থানে বিরাজমান। তো বিটরেটস আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আপনার ইন্টারনেট এবং হার্ডড্রাইভ বা এসএসডি স্পীড কতো? সবকিছু নিচে আমাদের কমেন্ট করে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button